Expert Speak Raisina Debates
Published on Nov 17, 2022 Updated 15 Days ago

প্রতিদ্বন্দ্বী সাইলোগুলির মধ্যে বিভক্ত ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সিগুলির জন্য একটি সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ প্রয়োজন

সি বি ডি সি: বৈশ্বিক সাইলোগুলি দক্ষতা কমাচ্ছে
সি বি ডি সি: বৈশ্বিক সাইলোগুলি দক্ষতা কমাচ্ছে

সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (সি বি ডি সি) একটি নতুন সম্পদ শ্রেণি এবং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থপ্রদান ও নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা, যা ২০১৫ সাল থেকে সক্রিয় গবেষণা ও উন্নয়নের আওতায় রয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউ এস) এই প্রতিযোগিতায় যোগদানের বিষয়ে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি সামাল দেওয়া

এই প্রাতিষ্ঠানিক আলস্যের প্রতিফলন স্বরূপ ইউ এস ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়ার ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বলেছিলেন, ‘আমরা প্রথম হওয়ার তাগিদ অনুভব করি না বা প্রয়োজনও বোধ করি না… রিজার্ভ কারেন্সি হওয়ার সুবাদে আমাদের ইতিমধ্যেই প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুবিধা (মার্কিন ডলার) রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফেড-এর তরফে সিবিডিসি প্রকাশ করার জন্য কয়েক মাসের পরিবর্তে কয়েক বছর সময়ও লাগতে পারে।’ এই আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্বল্পস্থায়ী।

২০২২ সালের মার্চ মাসে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে দেশটি বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থপ্রদানের একটি বিকল্প ও অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ব্যক্তিগত ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে এবং এর পাশাপাশি ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ডিজিটাল রুবল সংক্রান্ত কাজকেও ত্বরান্বিত করে।

২০২২ সালের ৯ মার্চ ইউক্রেন সঙ্কটের উত্তাপের মাঝেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রয়োজনীয় আইনি প্রস্তাব-সহ সাত মাসের মধ্যে মার্কিন ডিজিটাল ডলারের জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োগের বিকল্পগুলি প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত নেতৃত্ব প্রদান সুনিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী সি বি ডি সি ফোরামগুলিতে সক্রিয়তা বাড়াতে উদ্যোগী হন। সর্বোপরি ২০২০ সালে জি৭-এর  প্রেসিডেন্ট হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সি বি ডি সি, স্টেবলকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে জি৭ ডিজিটাল পেমেন্ট এক্সপার্টস গ্রুপের সূচনা করে।

এই মত পরিবর্তনটি কি ‘অর্থের ভবিষ্যৎ’ অর্থাৎ ডিজিটাল ফিয়াট অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় বা ফোমো দ্বারা চালিত? না কি এটি একটি বিলম্বিত উপলব্ধি যে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে পশ্চিমী জোটশক্তি দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া এবং তার মিত্রদের এই নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে বাঁচতে একাধিক সি বি ডি সি, ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট সিস্টেমে চিনের সঙ্গে যোগদানের দিকে চালিত করবে? ‘এমব্রিজ প্রকল্পের’ আওতায় চিন হংকং, তাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ব্যাঙ্ক অফ ইন্টারনাল সেটেলমেন্টস (বি আই এস) হাবের সঙ্গে একটি আন্তঃপরিচালনযোগ্য পাইকারি সি বি ডি সি-এর প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সহযোগিতা করে। একাধিক প্রতিযোগী সি বি ডি সি ব্যবস্থা ব্যবসার ৫০ শতাংশ ভাগসম্পন্ন অর্থপ্রদান নির্দেশাবলির বাহক এবং ক্রস বর্ডার পেমেন্টের জন্য পরিচয়পত্র প্রদানকারী ব্রাসেলসকেন্দ্রিক সুইফট-এর আধিপত্যের অবসান ঘটাতে সক্ষম।

রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন

ক্রিপ্টো কারেন্সিকে প্রথাগত ভাবে খারিজ করে আসা রাশিয়া এর ঠিক বিপরীত পথে হেঁটে একটি বিকল্প পেমেন্ট ব্যবস্থা প্রদানের জন্য ২০২০ সালে সি বি ডি সি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে দেশটি বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থপ্রদানের একটি বিকল্প ও অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ব্যক্তিগত ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে এবং এর পাশাপাশি  ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ডিজিটাল রুবল সংক্রান্ত কাজকেও ত্বরান্বিত করে।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে খুচরো ব্যবহারের জন্য নাইজেরিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ফিয়াট  মুদ্রা ই-নাইরা চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদান এবং অর্থ স্থানান্তরের জন্য ব্যক্তিগত ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যাঙ্কের ভূমিকা দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকার মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে মধ্যস্থতাকারী সম্পূর্ণ গণনা পরিকাঠামো গড়ে তোলা।

ভবিষ্যতের জন্য চিনের পরিকল্পনা

চিন ২০১৪ সালে ই-ইউয়ান নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১৭ সাল নাগাদ এটির উন্নয়ন ও পরীক্ষা শুরু হয় এবং ২০২০ সালে এটি পাইলট পর্যায়ে প্রবেশ করে। বৃহদায়তন দেশ হিসেবে চিনই প্রথম এমনটা করতে সক্ষম হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেজিং শীতকালীন অলিম্পিকসে ওয়ালেটের মাধ্যমে দর্শকদের জন্য ই-এন ওয়াই সি উপলব্ধ করা হয়। এটি আসলে এক ধরনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ফিয়াট মুদ্রা, খুচরো ও পাইকারি লেনদেনের জন্য ব্যবহারযোগ্য, মনোনীত সংস্থাগুলির মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ করা হয়, অ্যাকাউন্টিং ব্যবহার করে পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়নার সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানে (অপেক্ষাকৃত বেনামি ‘টোকেন’ ফর্মের বিপরীতে) এই অর্থের যাবতীয় লেনদেন নথিবদ্ধ এবং নিরীক্ষণ করা হয়। পাইলট পর্যায়ে ২৬১ মিলিয়ন ওয়ালেট নিবন্ধিত হয়েছে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১০,০০০ লেনদেনের গতি অর্জন করা হয়েছে (টি পি এস) যেখানে ৩,০০,০০০ টি ও এস-এর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে, ভিসা ১৭০০ টিপিএস, বস্টনের ফেড-এম আই টি-র উদ্যোগে হ্যামিলটন প্রজেক্ট ১,৭০,০০০ থেকে ১.৭ মিলিয়ন টি পি এস পরিচালনা করে, যখন আলিপে এবং টেনপে ২০১৯ সালে ৫,৪৪,০০০ টি পি এস পর্যন্ত গতি নথিবদ্ধ করেছে। চিনের মুদ্রা সূচনার তারিখটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নতি স্থিতিশীল

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ডিজিটাল ইউরো সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়া্র পরে পরবর্তী গবেষণাগুলি এ কথাই তুলে ধরে যে, তাত্ক্ষণিক অর্থপ্রদানের জন্য ইউরোসিস্টেমের বিদ্যমান পরিকাঠামো টার্গেট ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সেটেলমেন্ট (টি আই পি এস) এবং বিতরিত লেজার প্রযুক্তি প্রতি বছর ইউরো ক্ষেত্রে মোটামুটি ৩০০ বিলিয়ন খুচরো লেনদেন প্রক্রিয়া করার জন্য বাড়ানো যেতে পারে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইউরো শীর্ষ সম্মেলনের সদস্যরা ডিজিটাল মুদ্রার লক্ষ্যে অব্যাহত কর্মপ্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানায়। ই-ইউরো চালু করার জন্য ই ইউ ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে।

সি বি ডি সি দৌড়

সি বি ডি সি বিবেচনাকারী ১০০টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ এটি চালু করেছে। বাহামা দ্বীপপুঞ্জ (৪ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট ও ২১টি দ্বীপ জুড়ে বিস্তৃত) প্রথম ‘স্যান্ড ডলার’ চালু করেছিল, যা একটি অনন্য সি বি ডি সি এবং যা আন্তঃদ্বীপ সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে অফলাইনেও কাজ করে। পূর্ব ক্যারিবিয়ান আটটি দেশ একই পথে হেঁটেছে।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে খুচরো ব্যবহারের জন্য নাইজেরিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ফিয়াট  মুদ্রা ই-নাইরা চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদান এবং অর্থ স্থানান্তরের জন্য ব্যক্তিগত ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ব্যাঙ্কের ভূমিকা দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকার মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে মধ্যস্থতাকারী সম্পূর্ণ গণনা পরিকাঠামো গড়ে তোলা। জামাইকা জ্যাম-ডেক্স চালু করার মাধ্যমে সি বি ডি সি-র পথে হাঁটার এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ দেশ।

পনেরোটি দেশ পাইলট প্রকল্পের অগ্রণী পর্যায়ে রয়েছে, যার মধ্যে ২০১৭ সালের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সুইডেনের লক্ষ্য হল নাগরিকদের ব্যক্তিগত ডিজিটাল মুদ্রা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। বাকিরা হল চিন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (শেষ তিনটি দেশ প্রজেক্ট ডানবারের আওতায় সংযুক্ত), তাইল্যান্ড এবং ইউক্রেন।

সি বি ডি সি বিদ্যমান বিকল্পের চেয়ে নিয়ন্ত্রক এবং নীতি বিধিনিষেধগুলি আরও ভালভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম – কী ভাবে অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল তার পরবর্তী নিরীক্ষার সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থ হিসাবে নাগরিকদের অনুদানের শর্তসাপেক্ষ স্থানান্তর।

এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইরান, তুরস্ক, কানাডা, ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিল-সহ আরও ২৬টি দেশ উন্নয়নশীল পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪৬টি দেশের মতো গবেষণায় রত।

তা হলে সি বি ডি সি-র জন্য এত তাড়া কেন?

প্রথমত নগদ ফিয়াট অর্থের উলটোপথে হেঁটে সি বি ডি সি অনেক নমনীয়। এগুলি সস্তায় এবং কার্যকর ভাবে খুচরো ও পাইকারি দেশীয় বা ক্রস বর্ডার পেমেন্টের মতো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য নির্মিত হতে পারে। সি বি ডি সি বিদ্যমান বিকল্পের চেয়ে নিয়ন্ত্রক এবং নীতি বিধিনিষেধগুলি আরও ভালভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম – কী ভাবে অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল তার পরবর্তী নিরীক্ষার সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থ হিসাবে নাগরিকদের অনুদানের শর্তসাপেক্ষ স্থানান্তর। এর পাশাপাশি অর্থপ্রদান মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে, লেনদেনের সংখ্যা বা মূলধনের স্টক (চিনের মতো) সম্পর্কিত, এবং খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষা, জন পরিবহণ সুবিধা বা কর প্রদানের মতো নির্দিষ্ট পণ্য ও পরিষেবাগুলির সঙ্গে সংযুক্ত হতে সক্ষম।

দ্বিতীয়ত, সি বি ডি সি-র লেনদেনের উপর নজর রাখা সম্ভব, যেখানে নগদ অর্থের ক্ষেত্রে অডিট করার কোনও সুবিধেই থাকে না। এটি একই সঙ্গে আশীর্বাদ এবং দুঃস্বপ্ন। এটি আশীর্বাদ কারণ এর মাধ্যমে অবৈধ কার্যকলাপের উপর লাগাম টানা যায়। এটি দুঃস্বপ্ন কারণ এর ফলে কার্যকারিতার জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা বিধানগুলির আইনিকরণ, বাস্তবায়ন এবং পর্যায়ক্রমিক ভাবে স্বাধীন নিরীক্ষণ সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এমন সব এক্তিয়ার যেখানে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা কম, সেখানে নাগরিক অধিকার খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা এর একটি বড় নেতিবাচক দিক।

তৃতীয়ত, সি বি ডি সি-র মধ্যে ক্রস বর্ডার পেমেন্ট মেটানোয় গতিশীলতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বিভেদমূলক আইন, প্রক্রিয়া, যথাযথ অধ্যবসায় পদ্ধতি এবং এমনকি টাইম জোনের পার্থক্যের জন্য বিলম্ব হয় ও উচ্চ মূল্য চোকাতে হয়। সার্বভৌম এক্তিয়ার জুড়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রাতিষ্ঠানিক এবং নিয়ন্ত্রক সমন্বয় অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দক্ষতা বৃদ্ধির বেশির ভাগই এর আওতায় পড়বে। জি২০, বি আই এস এবং ফিন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি বোর্ডের সঙ্গে একজোটে বেশ কিছুটা সময় যাবৎ এ নিয়ে কাজ করছে। উভয়ই আন্তর্জাতিক সংস্থা। প্রথমটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অধীনস্থ এবং ফিন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি বোর্ড ২০০৯ সালে ওয়েস্টার্ন ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের অব্যবহিত পরেই স্থাপিত।

ভারতীয় পন্থা

ভারত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে একটি ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস মঞ্চে একাধিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার (ব্যাঙ্ক, পেমেন্ট অ্যাপস এবং ওয়ালেট) প্রসার ঘটাতে চাইছে। এই ভাবে ২০২২ অর্থবর্ষে ৪৫ বিলিয়ন লেনদেন হয়েছে যার মোট মূল্য ৭৮ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা এবং ২০২৩ অর্থবর্ষের জন্য এই লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ১ বিলিয়ন।

২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (সি বি ডি সি) ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে বড় রকম উৎসাহ জোগাবে এবং আরও দক্ষ এবং সস্তা মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় জোয়ার আনবে… ব্লকচেন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ থেকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ডিজিটাল রুপি চালু করবে।’ গবেষণা, উন্নয়ন এবং পাইলট পর্যায় থেকে সচল হওয়ার নিরিখে অন্য দেশগুলির ধার্য ন্যূনতম পাঁচ বছরের তুলনায় এই এক বছরের সময়সীমা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। ভারতের তাড়াহুড়ো করার কারণ ২০২৩ সালে জি২০ প্রেসিডেন্সির সময়ে সি বি ডি সি-র কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে চায় ভারত।

সর্বোচ্চ স্তরে হস্তক্ষেপ না-করা হলে ই-আইএনআর সম্ভবত ভারতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ভাঙন সৃষ্টিকারী সাইলোগুলির মধ্যে অকেজো হয়ে থাকবে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার আট মাস পরে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনও উল্লেখ ছাড়াই একটি কনসেপ্ট নোট প্রকাশ করে। সেখানে প্রাথমিক স্তরে এ কথা সুপারিশ করা হয় যে ই-আইএনআর হবে এমন একটি ফিয়াট মুদ্রা, যা সুদবহনকারী সম্পদ নয়, খুচরো এবং পাইকারি উভয় লেনদেনের জন্য ব্যবহারযোগ্য। এটি ‘মধ্যস্থতা’ পরিকাঠামোর (আর বি আই ইস্যু করবে এবং আর্থিক সংস্থার মাধ্যমে বণ্টিত হবে, কারণ আর বি আই থেকে ‘ডিরেক্ট ইস্যু’র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ব্যয় অনেক বেশি এবং অবিরাম উদ্ভাবনের জন্য ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক শিল্প উভয় ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ের মধ্যে সংযুক্ত করা হবে) পক্ষেই কথা বলে।

খুচরো ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত অফলাইনেও ব্যবহারযোগ্য একটি ‘টোকেন’ ফর্ম আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রসারের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। পাইকারি ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীভূত ‘অ্যাকাউন্টস’ পদ্ধতিটি সুবিধাজনক। নাম প্রকাশ না করার গুণগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া, একটি সঙ্কর, স্তরীভূত পদ্ধতির (নিম্ন মান, উচ্চ নামহীনতা এবং তার বিপরীত) পরামর্শ দেওয়া হয়… এটি স্পষ্টতই কঠিন কাজ। যেহেতু বর্তমানে মোবাইল অ্যাপের জন্য একটি ঠিকানার পরিচয়পত্র অথবা ফোন নম্বর থাকা ন্যূনতম প্রয়োজন। সি বি ডি সি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে আর বি আই-এর প্রবিধানের প্রসার ঘটানোর জন্য ১৯৩২ সালের আর বি আই অ্যাক্টে আইনি পরিবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

আর বি আই কখনওই ভারতে অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়া স্বরূপ ব্যক্তিগত ক্রিপ্টো কারেন্সি বৈধ করার পক্ষে ছিল না। আর বি আই-এর আশংকা ছিল, এটি ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অস্থির সম্পদ শ্রেণির কাছে সঞ্চয়ের উল্লেখযোগ্য ভিন্নতার কথা তুলে ধরবে, যেটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আর বি আই-এর আর্থিক নীতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি সত্ত্বেও ‘দ্রুত সম্পদ’ অর্জনের একমুখী পথ ছিল। সর্বোচ্চ স্তরে হস্তক্ষেপ না-করা হলে ই-আইএনআর সম্ভবত ভারতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ভাঙন সৃষ্টিকারী সাইলোগুলির মধ্যে  অকেজো হয়ে থাকবে। বিবদমান সাইলোগুলির মধ্যে বিদ্যমান ভূ-রাজনীতির ভাঙনের ফলে দুঃখজনক ভাবে ডিজিটাল মুদ্রার প্রতি একীভূত বৈশ্বিক মনোভাবের সম্ভাবনা বিশেষ ভাল নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ডিজিটাল মুদ্রাগুলি বিশ্বায়নের সন্তান। একমাত্র বৈশ্বিক নেতৃত্বই পারে জন্মের সময়েই তাদের অনাথ হওয়া থেকে বাঁচাতে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sanjeev Ahluwalia

Sanjeev Ahluwalia

Sanjeev S. Ahluwalia has core skills in institutional analysis, energy and economic regulation and public financial management backed by eight years of project management experience ...

Read More +