এ বছর ৬ জানুয়ারি কুখ্যাত ক্যাপিটল দাঙ্গার এক বছর পূর্ণ হল। বিশৃঙ্খলাটি সৃষ্টি হয় যখন গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ররোচনায় বিশাল জনতা প্রবেশ করে। এই দলটি ভবনে প্রবেশ করে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চালায়। এই অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের গণনা এবং জো বাইডেনকে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রূপে স্বীকৃতি দেওয়া। যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ‘জনগণ সংক্রান্ত’ দিকটির আক্ষরিক ব্যাখ্যাস্বরূপ শতাধিক বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে, দেওয়াল বেয়ে এবং জানালা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে প্রবেশ করে। প্রকৃত পক্ষেই মার্কিন গণতন্ত্রের বৃহত্তম প্রতীকটি কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্য সূচকগুলির পাশাপাশি এই ঘটনাও বিশেষ ভাবে ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। কারণ এটি আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বের অন্য দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছে। এই ঘটনায় যে হিংসা, বর্বরতা, নির্লজ্জ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদের প্রকাশ এবং প্রাণহানি ঘটেছে, তা মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কলঙ্ক। বর্তমানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে সব কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হল আমেরিকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত দুর্বলতা। রাজনৈতিক দলাদলি দ্বারা চালিত হয়ে এই দুর্বলতাই আমেরিকার ক্যাপিটল দাঙ্গার জন্ম দেয়।
এই ঘটনায় যে হিংসা, বর্বরতা, নির্লজ্জ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ এবং প্রাণহানি ঘটেছে, তা মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কলঙ্ক।
বর্তমানে মার্কিন গণতন্ত্র একাধিক আশঙ্কাময় পরিস্থিতির সম্মুখীন। আমেরিকার মাটিতে গণতন্ত্রের এই দুর্বলতার বিষয়টিকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বয়ং, যিনি এ বছর ক্যাপিটল দাঙ্গার এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে আমেরিকাবাসীদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দেন। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটার এক বছর পরেও আমেরিকান গণতন্ত্র যে এখনও এক বিপদসঙ্কুল অবস্থাতেই আছে, সে বিষয়ে তিনি আমেরিকাবাসীদের সতর্ক করেন। সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ভাবে দ্বিধাবিভক্ত হলেও আমেরিকান গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে গিয়ে বাইডেন মূলত গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতাকে তুলে ধরেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচ জন আমেরিকাবাসীর মধ্যে এক জন মনে করেন যে, ২০২১ সালের নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং জো বাইডেন এক জন অবৈধ প্রেসিডেন্ট। এর পাশাপাশি ২ কোটি ১০ লক্ষ আমেরিকাবাসী এ-ও বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্পকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে বহাল করার জন্য বলপ্রয়োগের ঘটনাটি যথাযথ। এই সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, এই ২ কোটি ১০ লক্ষ বিদ্রোহী মানসিকতার মানুষের মধ্যে ৭০ লক্ষ মানুষের কাছে একটি করে বন্দুক ছিল। ৬০ লক্ষ মানুষ জানিয়েছেন যে, তাঁরা দক্ষিণপন্থী মিলিশিয়াদের সমর্থন করেন। এবং অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ‘ওথ কিপারস’ এবং ‘প্রাউড বয়েজ’-এর মতো দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত। উল্লিখিত ২ কোটি ১০ লক্ষ আমেরিকানের মধ্যে ৬৩% প্রতিস্থাপন তত্ত্বে বা রিপ্লেসমেন্ট থিওরিতে বিশ্বাস করেন। এটি এমন এক জাতিবিদ্বেষমূলক চক্রান্ত তত্ত্ব যেখানে এমনটা মনে করা হয় যে সাদা চামড়ার জনগোষ্ঠীকে অন্য গাত্রবর্ণের মানুষ প্রতিস্থাপিত করবেন। এবং ৫৪% মানুষ কোয়ানন বিপ্লবে বিশ্বাসী— একটি চূড়ান্ত দক্ষিণপন্থী আমেরিকান রাজনৈতিক চক্রান্ত নীতি যেটি এই অপপ্রচারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে যে, শয়তানসুলভ, নরখাদক, শিশুদের যৌন শোষণকারী মানুষ দ্বারা পরিচালিত, যৌনতার জন্য বিশ্বব্যাপী শিশুদের পাচারকারী একটি গোষ্ঠী প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর তাঁর মূল নীতিগুলির বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়েছে। গত বছরের ৬ জানুয়ারির ঘটনা এই সব বিভাজন এবং চরম দক্ষিণপন্থী মতবাদ ও বিশ্বাসগুলিকে ক্রমশ সুদৃঢ় করে তুলেছে।
গত বছরের ক্যাপিটল বিদ্রোহের প্রভাব এখনও বিবিধ রূপে বর্তমান। এমনটা ঘটার তিনটি প্রধান কারণ হল: বিশৃঙ্খলার দায় নির্ধারণ এবং ন্যায়বিচার করে তবেই ব্যাপারটির উপরে ইতি টানা দরকার ছিল, রিপাবলিকান পার্টির ঘটনার তদন্তে গড়িমসি করা এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে পুনরায় ফিরে আসতে পারার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলাদলিকে উস্কে দিতে ট্রাম্পের ক্রমাগত প্রচেষ্টা। ক্যাপিটল দাঙ্গার সত্য নির্ধারণে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং হাউজ সিলেক্ট কমিটি দ্বারা দুটি পৃথক তদন্ত এখনও চলছে। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফ বি আই) ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার প্রেক্ষিতে তাদের নিজস্ব তদন্ত অনুসারে ৬ জন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মানুষের তালিকা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি কংগ্রেসও সম্ভবত তার দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে যেখানে দাঙ্গার বর্ষপূর্তির দিনটিকে এক দিকে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা পুনর্বহাল করা এবং অপর দিকে দিনটিকে ভুলে যাওয়াই বাঞ্ছনীয় মনে করার মধ্যে নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। প্রথম বর্ষপূর্তিতে তীব্র ভাবে দ্বিধাবিভক্ত সতর্কতা এই মনোভাবেরই অন্যতম প্রতিচ্ছবি। এ বছরের ৬ জানুয়ারি বাইডেনের বক্তব্যেও দুই রাজনৈতিক চরমাবস্থা পরিলক্ষিত হয় এবং তার পর দাঙ্গায় প্রাণ হারানো ক্যাপিটল পুলিশকর্মীদের স্মরণসভায় মাত্র দু’জন রিপাবলিকান নেতা উপস্থিত হন। আমেরিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর ঘনিয়ে আসা দুর্যোগের রাজনৈতিক দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা এবং স্বীকৃতি প্রসঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক ঐকমত্যের অভাব দুশ্চিন্তাজনক। রিপাবলিকান পার্টির অন্য সদস্যদের ছাপিয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত সমর্থন এবং তাঁর সমর্থকদের ক্রমাগত উসকানি দেওয়ার অবিরাম প্রচেষ্টা পরবর্তী মার্কিন নির্বাচন এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী বছরগুলিতে সমস্যাগুলিকে আরও জটিলতর করে তুলবে। যদিও ট্রাম্প ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিমত প্রকাশ করেননি, তবে তিনি ‘এ বিষয়ে ভাবছেন’। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্টানিসের চেয়ে তিনি ৪৩% পয়েন্টে এগিয়ে আছেন, যা সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে তাঁর সম্ভাবনাকেই দর্শায়। এমনকি, পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতা বদলের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ বর্তমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতির আপাত সামরিকীকরণ, যা তাঁর শাসনকালে শুরু হয়েছিল, আমেরিকার বর্তমান অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ক্যাপিটল দাঙ্গার সত্য নির্ধারণে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং হাউজ সিলেক্ট কমিটি দ্বারা দুটি পৃথক তদন্ত এখনও চলছে।
বাইডেনের ৬ জানুয়ারির বক্তব্যে এক রাজনৈতিক আশঙ্কা ফুটে উঠেছে যা দেশের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিকে জটিল করে তুলেছে। মার্কিন গণতন্ত্র সংক্রান্ত ধারণা দেশে এবং দেশের বাইরে এক চরম ধাক্কা খেয়েছে, যেটি থেকে আজ ক্যাপিটল দাঙ্গার এক বছর পরেও দেশ উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এই পিছিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বেশ কিছু এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেছেন এবং মার্কিন নীতিগুলিকে নতুন অভিমুখ দেওয়ার জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করার মাধ্যমে তাঁর নিজের প্রশাসনকে পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে আলাদা রাখতে চেয়েছেন। বেশ কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন এমন কতগুলি ভূ-রাজনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে যেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমেরিকায় উদ্ভূত নয়। আমেরিকায় বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক দলাদলি দেশে এবং দেশের বাইরে তার কাঠামোগত উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে ক্ষতি প্রশমনের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে বাধা দিয়েছে। যে হেতু দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি দ্বারা বিদেশ নীতি প্রভাবিত এবং বর্তমান সময়ে এই দু’টি দিক একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতিও সে দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা পরম্পরা দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। অভ্যন্তরীণ কারণগুলি দেশের বাইরের ঘটনা পরম্পরার চেয়ে অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে এবং তা এতটাই বেশি যে, সেগুলি আন্তর্জাতিক স্তরেও নীতিগ্রহণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং চিন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার ক্ষমতার পরিসর এবং তার কাছে থাকা বিকল্পের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় হ্রাস করেছে। সেনা প্রত্যাহারের প্রধান কারণ রূপে বাইডেন প্রশাসন তাদের ‘প্রকৃত কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চিন এবং রাশিয়া’র সঙ্গে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই দর্শিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাইডেন প্রশাসন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং বাইডেনের অ্যাপ্রুভাল রেটিং সর্বকালীন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আন্তর্বিভাজনের ফলে জটিলতর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মডারেটস (মধ্যপন্থী) এবং এক্সট্রিম লেফট (অতি বাম) ও প্রগ্রেসিভদের (প্রগতিশীল) মধ্যে দ্বন্দ্ব চোখে পড়ার মতো। সাম্প্রতিক সময়ে এ হেন আন্তর্দলীয় আদর্শগত বিভাজনগুলি বিজনেসপন্থী নিউ ইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক মেয়র পদপ্রার্থী এরিক অ্যাডামস এবং ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট কংগ্রেস সদস্যা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাশিও-কর্টেজের দ্বন্দ্বে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে প্রগতিশীল এবং মধ্যপন্থীদের এই বিভাজনের ফলে আশঙ্কার মুখে পড়েছে ৩.৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সামাজিক ব্যয় সংক্রান্ত কর্মসূচি, যার আওতায় রয়েছে শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, শিক্ষা, পরিবেশবান্ধব শক্তি সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং এক লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের দ্বিদলীয় পরিকাঠামো বিল। যদিও এগুলির মধ্যে শেষেরটি ইতিমধ্যেই বাইডেন দ্বারা স্বাক্ষরিত আইনে রূপান্তরিত হয়েছে, তবুও অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলে বিলটির বাস্তবায়ন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি, এই বছরের মিড টার্মে ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। বাইডেনের নিম্ন অ্যাপ্রুভাল রেটিং হাউজ এবং সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং স্বাধীন ভোটারদের মধ্যে তাঁর প্রতি সমর্থন ক্রমশ কমছে।
যে হেতু দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি দ্বারা বিদেশ নীতি প্রভাবিত এবং বর্তমান সময়ে এই দু’টি দিক একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতিও সে দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা পরম্পরা দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত।
যে হেতু প্রেসিডেন্ট বাইডেন আমেরিকার অভ্যন্তরে এক দ্বন্দ্বদীর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছেন, তাই তিনি দেশের বাইরে অবস্থা মজবুত করার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির উপরে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার কৌশলে মনোনিবেশ করেছেন। এই কৌশলের সফলতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আন্তর্জাতিক স্তরে ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরে আসা এবং আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠাই বাইডেনের প্রধান লক্ষ্য। যেমন ট্রাম্প-যুগে গৃহীত নীতিগুলির ফলে হওয়া ‘ক্ষতি’ সামলাতে বাইডেন প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলি হল- ট্রান্স-আটলান্টিক-সহ বিশ্বব্যাপী মার্কিন জোটগুলির সম্পর্কের সশক্তিকরণ, গণতন্ত্রগুলিকে একজোট করার মাধ্যমে বিশ্বে নিজেদের নেতৃত্ব পুনর্বহাল করা, কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অভিপ্রেত ক্ষমতার সমতা বিধানের জন্য আন্তঃসমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে নীতিভিত্তিক নেতৃত্বদানের লক্ষ্যগুলিকে তুলে ধরা।
এই বাহ্যিকতাগুলি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত বাইডেন কী ভাবে তাঁর সময়কে কাজে লাগান, শুধু তার উপরেই নির্ভরশীল নয়। তার চেয়েও বেশি তা নির্ভর করবে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করেন, তার উপরে। যদিও চলতে থাকা আইনি তদন্ত ট্রাম্পের সপক্ষে রাজনৈতিক সংহতিকে খর্ব করতে পারে, নির্বাচনী ফলাফল তাঁর পক্ষেই যেতে পারে। সম্প্রতি ক্যাপিটল দাঙ্গার প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে পরিকল্পিত একটি সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করে দেন। তার পরবর্তী সপ্তাহে তিনি অ্যারিজোনায় একটি সমাবেশের ভাষণ পিছিয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের জনসভা ভবিষ্যতে গণ অভ্যুত্থানের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্পের এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণ রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত রাখবে।
বাইডেন প্রশাসনের সামনেও এই প্রতিবন্ধকতাগুলি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন মূল প্রশ্নটি হল: বাইডেন কি আমেরিকাকে ‘গণতান্ত্রিক জরুরি অবস্থা’র যুগ থেকে বার করে আনতে পারবেন?
মতামত লেখকের নিজস্ব।