-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইরানে রুশ প্রধানের রাষ্ট্রীয় সফর পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রত্যুত্তরকে জোরালো করেছে।
নতুন অংশীদারি নির্মাণ: ইরানের মুখাপেক্ষী পুতিন
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পরবর্তী সময়ে মধ্য এশীয় অঞ্চলের বাইরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর প্রথম সফরে ১৯ জুলাই ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট তেহরানে তুর্কিয়ের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এরদোগানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন, যা ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) কোনও নেতার সঙ্গে পুতিনের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
বেশ কিছু সময় যাবৎ রাশিয়া এবং ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করলেও দেশ দু’টি নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি না করার বিষয়ে সতর্ক থেকেছে। যদিও আন্তর্জাতিক পৃথগীকরণ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে পুতিনের এই সফরকে মস্কোকে শাস্তি দেওয়া ও বহিষ্কার করার পশ্চিমী প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এক পদক্ষেপ রূপে দেখা যেতে পারে। এ কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, ইরান ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং সে দেশের শীর্ষ নেতা তাঁর বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। খামেনেই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুর্দশা নিয়ে ইরানের অসন্তোষ প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলেন যে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া তৎপর না হলে পশ্চিমী শক্তিগুলি তেমনটা করত এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত করত।
দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার নিরিখে সিরিয়া ও লিবিয়ায় তুর্কিয়ে এবং ইরান একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। অন্য দিকে যুদ্ধে ব্যবহৃত তুরস্কের ড্রোনগুলি ইউক্রেনীয় সেনাকে বিদ্যমান যুদ্ধে শুধু সাহায্যই করেনি, বরং ইউক্রেনীয় প্রত্যুত্তরের অগ্রভাগে থেকে সেগুলি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ইরান এবং তুর্কিয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার নেপথ্যে রয়েছে বাধ্যবাধকতা। কারণ তেহরান এবং আঙ্কারা উভয়ের সঙ্গেই রাশিয়ার সম্পর্ক খুব একটা সহজ ছিল না। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার নিরিখে সিরিয়া ও লিবিয়ায় তুর্কিয়ে এবং ইরান একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। অন্য দিকে যুদ্ধে ব্যবহৃত তুরস্কের ড্রোনগুলি ইউক্রেনীয় সেনাকে বিদ্যমান যুদ্ধে শুধু সাহায্যই করেনি, বরং ইউক্রেনীয় প্রত্যুত্তরের অগ্রভাগে থেকে সেগুলি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও ইরান এবং রাশিয়া বৈশ্বিক শক্তি বাজারে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। ইজরায়েল ও আরব দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার প্রেক্ষিতে দেশগুলির সঙ্গে এক পূর্ণাঙ্গ জোট গড়ে তোলা থেকে অতীতেও পুতিন ইচ্ছাকৃত ভাবে দূরে থেকেছেন। ইরান এবং রাশিয়া উভয়েই পশ্চিমী বাজারগুলিতে শক্তি পণ্যের বিক্রয়জনিত ক্ষতি প্রশমন করতে এশীয় বাজারগুলির মুখাপেক্ষী হয়েছে। যদিও এশিয়াতেও তেহরান ও মস্কো বাজার দখলের প্রেক্ষিতে একে অন্যের সঙ্গে লড়ছে।
পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠার দরু্ন ইউক্রেন আক্রমণের অনেক আগে থেকেই রাশিয়া ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ সুদৃঢ় করতে তৎপর হয়। এ বছর পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি তৃতীয় বারের মতো পারস্পরিক সাক্ষাৎ সারেন। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এ কথাই দর্শায় যে, পশ্চিমী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া ইরানকে ক্রমশ তার অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। উভয় দেশকেই তাদের নিজ নিজ অর্থনীতির ভেঙে পড়া রুখতে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে এবং ইরান এই কাজ দীর্ঘ সময় ধরে করে চলেছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৃহৎ শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরুদ্ধে ইরানের সঙ্গে জোট গড়ে তোলার চেষ্টা এর আগেও লক্ষ করা গিয়েছে যখন ২০২১ সালে চিন তেহরানের সঙ্গে বহু বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী এক চুক্তি হিসেবে চিনের তুলনায় ইরান এ বিষয়ে সক্রিয়তা দেখায় এবং এ হেন চুক্তির উপযোগিতার কথা তুলে ধরে। এই চুক্তির ফলে এখনও পর্যন্ত চিন থেকে ইরানে বিনিয়োগের ব্যাপক প্রবাহ পরিলক্ষিত না হলেও এটি আন্তর্জাতিক পরিসরে বেজিংয়ের ভাবমূর্তি জোরদার করার নিরিখে যথেষ্ট আলোড়ন ফেলে দেয়।
এ ছাড়াও রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় কমব্যাট ড্রোনগুলি ইরানের কাছ থেকে কিনতে তৎপর হতে পারে, এমনটা শোনা গেলেও সে প্রসঙ্গ উক্ত আলোচনায় উঠে আসেনি।
ইতিমধ্যেই খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, রুশ শক্তি সংস্থা গাজপ্রম ইরানে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বাধ্যবাধকতাহীন এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়াও রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় কমব্যাট ড্রোনগুলি ইরানের কাছ থেকে কিনতে তৎপর হতে পারে, এমনটা শোনা গেলেও সে প্রসঙ্গ উক্ত আলোচনায় উঠে আসেনি। তেহরানের বৈঠকে পুতিন জানান যে, ‘অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক’ ঘটনাপ্রবাহের নিরিখে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং রাইসি জ্বালানি, শিল্প ও পরিবহণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত আন্তঃসহযোগিতার বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছেন। এর পাশাপাশি, রাশিয়া এবং ইরান উভয়েই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে ধীরে ধীরে মার্কিন ডলারের অপসারণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সহমত হয়েছে।
এই সব পরিকল্পনার কথা বলা সহজ হলেও করা ততটা সহজ নয়। গুরুতর নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানে বিনিয়োগ করা মস্কোর জন্য একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করবে। ভারতের মতো দেশগুলির জন্য, যারা বাজারে অপরিশোধিত রুশ তেলের ব্যারেল প্রতি দামে ব্যাপক পতনের সুবিধে ভোগ করছে এবং একই সঙ্গে মস্কো ও পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে, রাশিয়ার জ্বালানি-শিল্পের উপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে তাদের পক্ষে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বের ইতিহাসে কোনও দেশের উপরে জারি করা কঠোরতম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সাক্ষী ইরানের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার মডেল অনুসরণ করে রাশিয়া উপকৃত হতে পারে বলে মনে হলেও মস্কো জানে যে, তেহরান ছাড়া অন্য বন্ধু দেশগুলির সঙ্গেও বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এবং মার্কিন ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য খণ্ডন করার যে কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটি নির্দিষ্ট সীমার পর গ্লোবাল সাউথের অধিকাংশ দেশকেই, যারা এত দিন ইউক্রেন সংঘাতের নিরিখে কোনও পক্ষ অবলম্বন করেনি, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করবে, যা শেষ পর্যন্ত মস্কো বা তেহরান কারও জন্যই লাভজনক হবে না।
এ হেন আলোচনায় তুর্কিয়ের অংশগ্রহণ করা আগামী দিনে তার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ ন্যাটো সদস্য দেশটি এমন একটি অঞ্চলে কূটনৈতিক ভারসাম্য বহাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যেখানে তার নিজস্ব প্রতিবেশ নীতি এবং ন্যাটোর বৃহত্তর লক্ষ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাক বিদ্যমান।
এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এবং ইরানকে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে আরও দূরে অপসারণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গালফ আরব-ইজরায়েলি ব্লকের উত্থানের প্রেক্ষিতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। সিরিয়ায় আসাদ-বিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন জোগানো তুর্কিয়েদের উপরে চাপ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও ইরান রুশ সমর্থনের ফলে উপকৃত হবে। বেশ কিছু বিশ্লেষকের মতে, পুতিনের সফর চলাকালীন এরদোগানের ইরানে উপস্থিত হওয়ার ঘটনাটি তেমন ভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি। ইউক্রেন নয়, এই পারস্পরিক আলোচনার মূল উপজীব্য ছিল সিরিয়া। উত্তর সিরিয়ায় আঙ্কারার ভূমিকাকে ইউক্রেনীয় সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে দেখার মাধ্যমে রাশিয়া এবং ইরান উভয় দেশই বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়েছে। এ হেন আলোচনায় তুর্কিয়ের অংশগ্রহণ করা আগামী দিনে তার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ ন্যাটো সদস্য দেশটি এমন একটি অঞ্চলে কূটনৈতিক ভারসাম্য বহাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যেখানে তার নিজস্ব প্রতিবেশ নীতি এবং ন্যাটোর বৃহত্তর লক্ষ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাক বিদ্যমান। ইরান ও রাশিয়ার প্রসঙ্গের বাইরেও এমনটা সম্প্রতি ঘটতে দেখা যায় যখন ইউরোপের প্রধান ভূখণ্ডে কুর্দিশ গোষ্ঠীগুলি ও তাদের বাস্তুতন্ত্র সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি সুনিশ্চিত করতে আঙ্কারা ন্যাটোয় ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের যোগদানে বাধা দেয়।
মধ্যপ্রাচ্য সামগ্রিক ভাবে রাশিয়ার পূর্ণ বিরোধিতার পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। আরব গালফ এ সম্পর্কে অবগত যে, মস্কো পৃথিবীর তিনটি সর্বাধিক তেল উৎপাদনকারীর একটি। এবং সে কথা মাথায় রেখেই দেশগুলিকে মস্কো ও পুতিনের সঙ্গে যৌথ ভাবে তেলের দাম নির্ধারণে কাজ করতে হবে, যাতে একাধিক আরব গালফ দেশ ও রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতার নেপথ্যে থাকা আর্থিক পরিস্থিতি বহাল থাকে। এখানে রাশিয়ার প্রধান ভূমিকা হল ইরানের সঙ্গে যে কোনও সর্বাত্মক অংশীদারিত্বকে কাজে লাগানো, বিশেষ করে সেই সকল ক্ষেত্রে যেখানে মস্কোকে আঞ্চলিক সংঘাতের নিরিখে তেহরানকে প্রকাশ্যে সহায়তা করতে দেখা গিয়েছে। আপাতত পুতিনের সফরের ভূ-রাজনীতি খুবই স্বল্পমেয়াদি এবং প্রতীকী লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যাকে বিশ্লেষক এসফান্দিয়ার ব্যাটম্যানগেলিডজ ‘একটি সাড়ম্বর রাষ্ট্রীয় সফর’ বলে অভিহিত করেছেন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +Saaransh Mishra was a Research Assistant with the ORFs Strategic Studies Programme. His research focuses on Russia and Eurasia.
Read More +