Expert Speak India Matters
Published on Mar 02, 2022 Updated 12 Hours ago

জাতীয় বাজেট এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে যে অর্থনীতি অতিমারির কারণে সৃষ্ট ব্যাঘাত থেকে বেরিয়ে এসেছে, তবে অবশ্য পরিসংখ্যান অন্য কথা বলছে।

বাজেট ২০২২: সুদূর অমৃতের সন্ধানে

Source Image: Illustration: dawnxisoul393 via Flickr

বাজেট ২০২২: সুদূর অমৃতের সন্ধানে

পরবর্তী ২৫ বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এর আগে কখনও কোনও কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হয়নি। কিন্তু এই বছর তা ঘটেছে। ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষের দিকে যাত্রার এই সময়কালটিকে ‘‌অমৃত কাল’‌ হিসেবে বর্ণনা করে অর্থমন্ত্রী ভারত@১০০–র জন্য একটি বিশাল রূপকল্প উন্মোচন করেছেন৷

এই অভূতপূর্ব প্রয়াসটি অন্য কোনও সময়ে ভূয়সী প্রশংসা পেতে পারত;‌ কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান কঠিন সময়ে তা যে কোনও স্বাধীন পর্যবেক্ষককে সংশয়াপন্ন করে তুলবে। পৃথিবী এখনও একটি যুগান্তকারী অতিমারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রধান অর্থনীতিগুলি এখনও তার প্রভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে, এবং ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই, খুব কম করে বললেও, এখন এমন একটি জমকালো রূপকল্পের উদ্বোধন সময় আসার আগেই করা হয়েছে।

পৃথিবী এখনও একটি যুগান্তকারী অতিমারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রধান অর্থনীতিগুলি এখনও তার প্রভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে, এবং ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।

এই পরিস্থিতিতে, যাঁকে বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সেই জন মেনার্ড কেইনসের বার বার পুনরাবৃত্তি করা উদ্ধৃতিটি মনে পড়ে যাবেই:‌ “কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদ হল বর্তমান বিষয়গুলির জন্য একটি বিভ্রান্তিকর নির্দেশিকা। দীর্ঘমেয়াদে, আমরা সবাই মৃত। অর্থনীতিবিদরা যদি তুফানের সময় শুধু এটুকুই বলতে পারেন যে তুফানের পর অনেকটা সময় পেরোলে সমুদ্র আবার শান্ত হবে, তা হলে নিজেদের জন্য তাঁরা খুব সহজ, খুব অকেজো একটি কাজ নির্ধারিত করে রেখেছেন।” কেইনস ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘‌আ ট্র্যাক্ট অন মানিটারি রিফর্ম’‌-এ এই কথা লিখেছেন।

বাজেটে সন্নিবদ্ধ ২৫ বছরের দীর্ঘ রূপকল্প সংক্রান্ত বিবৃতি কার্যত এই অনুমান করে নিয়েছে যে ভারতীয় অর্থনীতি ইতিমধ্যে আগের জায়গা পুনরুদ্ধার করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি, কর এবং করবহির্ভূত উভয়ই, গত বছরের বাজেটের অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে;‌ এবং এই বছর জিএসটি সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য উন্নতির ফলে সৃষ্ট প্লবতাই এর কারণ (সারণি ১)। এই আর্থিক বছরে বাজেটের রাজস্ব অনুমান ছাপিয়ে যাওয়াকে পুনরুজ্জীবনের একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়েছে।

২০২১-২২ বাজেট নথিতে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি–র ৫.১ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হলেও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে সংশোধিত ‌হিসেবে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মোট ব্যয় এখন ২০২১-২২ সংশোধিত প্রাপ্তির হিসেবের, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৩৭.৭ লক্ষ কোটি টাকার সঙ্গে, মিলে গিয়েছে। চলতি অর্থবছরে সুদের পরিমাণ বেড়েছে, কিন্তু মূলধনী ব্যয়ও বেড়েছে। ২০৪৭ সালের এক সমৃদ্ধ ভারতের দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাজেট বক্তৃতায় মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে৷ ২০২১-২২ সংশোধিত হিসেবে (সারণি ১) মূলধনী ব্যয় দাঁড়াবে ৬০১,৭১১ কোটি টাকা৷ যাই হোক, এই হিসেবটিতে এয়ার ইন্ডিয়ার অতীতের সম্পদ–সমর্থিত নয় এমন দায়-দেনার নিষ্পত্তির জন্য ঋণ ধরা আছে, যার পরিমাণ ৫১,৯৭১ কোটি টাকা৷ এটি বাদ দিয়ে সংশোধিত হিসেবে মূলধনী ব্যয় ৫৫০,৭৪০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা বাজেটে অনুমিত মূলধনী ব্যয় ৫৫৪,২৩৬ কোটি টাকার থেকে কম৷

রাজস্ব প্রাপ্তির বৃদ্ধি ব্যবহার করা যেতে পারত বরাদ্দের আনুপাতিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক খাতে। পরিবর্তে প্রাপ্ত সুবিধাটি ব্যবহার করা হয়েছে রাজস্ব ঘাটতিকে জিডিপির ৬.৯ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার বাজেট–বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রাখতে। ২০২২-২৩ সালে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি-র ৬.৪ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা আর্থিক বাঁধুনির অনুসারী পথে ঘাটতি কমিয়ে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে জিডিপি–র ৪.৫ শতাংশে নামানোর প্রস্তাবিত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

রাজস্ব প্রাপ্তির বৃদ্ধি ব্যবহার করা যেতে পারত বরাদ্দের আনুপাতিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক খাতে।

সংক্ষেপে, বাজেট জোর দিয়ে বলেছে যে ভারতীয় অর্থনীতি গভীর সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছে, যদিও কোভিড–১৯ অতিমারি এখনও শেষ হয়নি। রাজস্ব বৃদ্ধিকে এই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, এবং ঘাটতি অর্থায়নের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ঘাটতি কম রাখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

ভারতীয় অর্থনীতি কি অতিমারির ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে?

বাজেটের আলোচনা ‘‌প্রাক- অতিমারি স্তরে ফিরে আসা’র‌ চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু এই প্রাক– অতিমারি স্তর কী? সর্বশেষ প্রথম সংশোধিত হিসেব ২০১৯-২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৩.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমতে থাকে, এবং তা ২০১৯-২০ সালে সর্বনিম্ন ছিল। এই হল ‘‌প্রাক- অতিমারি স্তর’‌।

যদি ২০২১-২২ (প্রথম অগ্রিম হিসেব)–এর সংখ্যাগুলোকে এই ‘‌প্রাক- অতিমারি স্তর’‌ ২০১৯-২০ পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তা হলে দুই বছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার হল নগণ্য ১.৩ শতাংশ। বিনিয়োগ (গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফরমেশন) সবে ২.৬ শতাংশে উঠেছে;‌ সরকারি ব্যয় (গভর্নমেন্ট ফাইনাল কনসাম্পশন এক্সপেনডিচার) জিডিপি স্তরকে সম্মানজনক রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে;‌ একটু অপ্রত্যাশিত ভাবে রফতানি বৃদ্ধি স্থিত ছিল;‌ কিন্তু আমদানি আরও বেশি বেড়েছে (সারণি ২)। এবারের বাজেটে রফতানির উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হলে তা আড়াই দশকের রূপকল্পের চেয়ে বেশি কাজের হতে পারত। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ এখনও আমদানি বিলের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বাস্য বিপদ হিসেবে রয়েছে।

এবারের বাজেটে রফতানির উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হলে তা আড়াই দশকের রূপকল্পের চেয়ে বেশি কাজের হতে পারত।

যাই হোক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল উপভোগ (প্রাইভেট ফাইনাল কনসাম্পশন এক্সপেনডিচার বা পিএফসিই)। বৃদ্ধির হার এখনও -২.৯ শতাংশে নেতিবাচক, এবং এটাই প্রকৃত প্রমাণ যে ভারতীয় অর্থনীতি এখনও পুনরুজ্জীবিত হতে পারেনি, এবং বজায় রাখা যাবে এমন বৃদ্ধির পথেও পৌঁছতে পারেনি। ২০১৯-২০ সালের ৫৭.১ শতাংশের তুলনায় ২০২১-২২ জিডিপি–তে পিএফসিই-র অবদান কমে গিয়ে ৫৪.৮ শতাংশ হওয়ার ঘটনা এই বিষয়টিকে আরও নিশ্চিত করে। এর থেকে বোঝা যায় চাহিদা এখনও চাপা পড়ে আছে, এবং অর্থনীতিতে ক্রয়ক্ষমতা কম। টু-হুইলারের ক্রমাগত কম চাহিদা এই ঘটনার আরেকটি নির্দেশক।

এমজিএনরেগা বা একশো দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ ২০২১-২২–এর সংশোধিত ৯৮,০০০ কোটি টাকা থেকে ২০২২-২৩-এর বাজেটে ৭৩,০০০ কোটিতে কমিয়ে দেওয়া সরকারের মধ্যে পুনরুজ্জীবন সংক্রান্ত প্রভাবশালী বিশ্বাসের প্রতীক৷ অর্থনীতির দুর্দশা এবং নতুন করে তৈরি হওয়া ধনী-দরিদ্র ও আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন কল্যাণমূলক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পান। দুর্ভাগ্যবশত, সরকার এখন ২৫ বছর পরের ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.