Author : Sunaina Kumar

Expert Speak India Matters
Published on Feb 22, 2022 Updated 11 Hours ago

বর্তমান বেকারত্ব ও শিক্ষাক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য দেশের যুব সম্প্রদায়ের উপর ভারী বোঝা হয়ে রয়েছে।

বাজেট ২০২২: আজকের তরুণদের জন্য সম্ভাবনাগুলি ছোঁওয়ার চেষ্টা

Source Image: Kyle Taylor — Flickr/CC BY 2.0

বাজেট ২০২২: আজকের তরুণদের জন্য সম্ভাবনাগুলি ছোঁওয়ার চেষ্টা

এই নিবন্ধটি ‘‌বাজেট ২০২২: পরিসংখ্যান ও তদুপরি’‌ সিরিজের অংশ।


শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ও বেকারত্বের কণ্টকিত বিষয়গুলি সহ যুবসমাজের ভবিষ্যতের উপর অতিমারি মারাত্মক ছায়া ফেলেছে। এই বছরের বাজেটটি ছিল কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় বাজেট, এবং আশা করা হয়েছিল তা গত দুই বছরের শিক্ষার ক্ষতি, কাজ হারানো ও সঞ্চিত ভীতির সামগ্রিক বোঝা লাঘব করবে।

শিক্ষা

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১-২২-এ সরকারের নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শিক্ষা ক্ষেত্রে বার বার লকডাউনের প্রভাব সরকার পরিমাপ করতে পারেনি, কারণ শেষ যে উপলব্ধ সরকারি তথ্য আছে তা ২০১৯–২০ সালের। শিক্ষা বাজেট গত বছরের ৯৩,২২৪ কোটি টাকা (সংশোধিত হিসেব ৮৮,০০১ কোটি টাকা) থেকে ১১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে এই বছর দাঁড়িয়েছে ১০৪,২৭৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণ এখনও ১৯৬৮ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় শিক্ষানীতিতে যা সুপারিশ করা হয়েছে সেই জিডিপি–র ৬ শতাংশের কম। এই বাজেটে ডিজিটাল শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলার একটা বড় ধরনের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। পিএম ইবিদ্যা–র ‘ওয়ান ক্লাস-ওয়ান টিভি চ্যানেল’ অনুষ্ঠানটি ১২ থেকে বাড়িয়ে ২০০টি চ্যানেলে সম্প্রচারের কথা বলা হয়েছে, এবং তা সমস্ত আঞ্চলিক ভাষায় উপলব্ধ হবে। হাব ও স্পোক মডেল–সহ একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, একটি উচ্চ মানের ডিজিটাল কনটেন্ট লাইব্রেরি তৈরি করা, বিজ্ঞান ও গণিতে ৭৫০টি ই-ল্যাব এবং দক্ষতায়নের জন্য ৭৫টি ই-ল্যাব তৈরির প্রস্তাবও আছে।

ডিজিটাল শিক্ষা ভারতে বৈষম্য বাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় গভীরতর ডিজিটাল বিভাজনের বিষয়ে শিক্ষার বার্ষিক অবস্থা রিপোর্টে (এএসইআর) ২০২১-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পুরো দেশে স্মার্টফোন আছে এমন অর্ধেকেরও বেশি শিশু তা (৫৩.৮ শতাংশ) শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে সক্ষম নয়।

শিক্ষা বাজেট গত বছরের ৯৩,২২৪ কোটি টাকা (সংশোধিত হিসেব ৮৮,০০১ কোটি টাকা) থেকে ১১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে এই বছর দাঁড়িয়েছে ১০৪,২৭৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণ এখনও ১৯৬৮ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় শিক্ষানীতিতে যা সুপারিশ করা হয়েছে সেই জিডিপি–র ৬ শতাংশের কম।

এএসইআর রিপোর্টটি ছোট বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাবও তুলে ধরে। এতে বলা হয়েছে যে ‘‌বর্তমানে স্কুলে নথিভুক্ত নয়’‌ এমন ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ২০১৮ সালে ছিল ২.৫ শতাংশ, আর ২০২১-এ তা বেড়ে হয়েছে ৪.৬ শতাংশ৷ ভারতে সরকারি স্কুল শিক্ষাকে শক্তিশালী করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে৷ জাতীয় শিক্ষা নীতি শিক্ষার বেসরকারিকরণকে উৎসাহিত করে, কিন্তু অতিমারির অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে সরকার শিক্ষায় তার ভূমিকা থেকে সরে যেতে পারে না। এএসইআর সহ অনেকগুলি সমীক্ষা দেখিয়েছে কী ভাবে শিশুরা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, নানা কারণে বেসরকারি স্কুল ছেড়ে সরকারি স্কুলে চলে গেছে। কারণগুলির মধ্যে আছে কম খরচের বেসরকারি স্কুল বন্ধ হওয়া, অভিভাবকদের আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হওয়া, এবং পরিবারগুলির গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়া।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা স্বীকার করেছে বেসরকারি থেকে সরকারি স্কুলে ও শহর থেকে গ্রামীণ অঞ্চলে অভিবাসিত শিক্ষার্থীদের স্থান করে দেওয়ার জন্য সরকারি স্কুলগুলিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শ্রেণিকক্ষের স্থান ও শিক্ষা/শিক্ষার উপকরণের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারপরেও বাজেটে এর জন্য সংস্থান সামান্য। সবচেয়ে বড় স্কুল শিক্ষা প্রকল্প ‘‌সমগ্র শিক্ষা অভিযান’‌–এর জন্য ৩৭,৩৮৩.৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ ২০২১ বাজেটের থেকে ৬,০০০ কোটি টাকা বেশি, কিন্তু তা-ও ২০১৯–এর বরাদ্দ ৩৮,৭৫০.৫০ কোটির থেকে কম।

শিশুদের পুষ্টির উপর অতিমারির প্রভাবও ক্ষতিকর হয়েছে, এবং আশা করা হয়েছিল যে এই বছর প্রধানমন্ত্রী পোষণ অভিযান জোরদার হবে, কিন্তু মিড ডে মিল প্রকল্পে বরাদ্দ ২০২১-২২ সালের ১১,৫০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১০,২৩৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

মানসিক কল্যাণের প্রশ্ন

এ বছরের বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তি একটি সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ। ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভে (২০১৫-১৬) বলছে ভারতে গুরুতর মানসিক ব্যাধিসম্পন্ন ৭৬ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষের কোনও চিকিৎসা হয়নি। অতিমারি চলাকালীন এই পরিস্থিতি সম্ভবত আরও খারাপ হয়েছে। আগের বাজেটে এমওএইচএফডবলিউ–র অধীনে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫৯৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল বেঙ্গালুরুর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট (‌নিমহান্‌স)–এ।‌

অতিমারি চলাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকটি কাজ চালু হয়েছে, যেমন নিমহান্‌স-এর জাতীয় টোল-ফ্রি হেল্পলাইন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের আরেকটি টোল-ফ্রি হেল্পলাইন।

এই বছরের বাজেটে একটি জাতীয় টেলি-মেন্টাল হেল্‌থ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং ও যত্ন–পরিষেবা পাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করার প্রয়াস করা হয়েছে। প্রোগ্রামটি ২৩টি টেলি-মেন্টাল হেলথ সেন্টার অফ এক্সিলেন্স–এর নেটওয়ার্কের অধীনে পরিচালিত হবে, যার মধ্যে নিমহান্‌স হবে নোডাল সংস্থা ও বেঙ্গালুরুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। অতিমারি চলাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকটি কাজ চালু হয়েছে, যেমন নিমহান্‌স-এর জাতীয় টোল-ফ্রি হেল্পলাইন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের আরেকটি টোল-ফ্রি হেল্পলাইন।

কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন বাজেট তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে। ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যুব জনসংখ্যা রয়েছে, যাদের গড় সুস্বাস্থ্য, খেলাধুলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং যুবদের রাজনীতি ও শাসনে অংশগ্রহণকে চিহ্নিবয়স ২৮ বছর। কিন্তু নীতিনির্ধারণের সময় তরুণদের বিষয়টি তেমন আমল পায় না। জাতীয় যুব নীতি (২০১৪) যুবসমাজের ক্ষমতায়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে শিক্ষা, উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ও দক্ষতায়ন, ত করেছে। তবে নীতিগত বিষয়গুলি তুলে ধরা হলেও তা বাস্তবায়িত করার জন্য তেমন কিছু করা হয়নি।

রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ দেখে বোঝা গিয়েছে যে গত দুই বছরে যুবসমাজের জন্য ভবিষ্যতের সম্ভাবনা মারাত্মক ভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কোভিড হানা দেওয়ার আগে অল্পবয়সী কর্মীরাই অন্যান্য বয়সের গোষ্ঠীভুক্তদের তুলনায় বেশি করে কাজ হারিয়েছিলেন। বাজেটে বলা হয়েছে কেন্দ্রের প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আছে। পিএম গতিশক্তি সকলের, বিশেষ করে যুবকদের, কাজের ও নতুন উদ্যোগ খোলার সুযোগের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। সরকার অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস, গেমিং ও কমিকস (এভিজিসি) সেক্টরের জন্য একটি টাস্কফোর্স ঘোষণা করেছে, কারণ সেখানে যুবকদের কর্মসংস্থানের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভূ-স্থানিক সিস্টেম ও ড্রোন, সেমিকন্ডাক্টর ও এর বাস্তুতন্ত্র, স্পেস ইকোনমি, জিনোমিক্স ও ফার্মাসিউটিক গ্রিন এনার্জি, এবং স্বচ্ছ পরিবহণ ব্যবস্থার মতো যে সব ক্ষেত্র তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, সেই সব নতুন বিষয়গুলিতে সরকার সহায়তা দেবে।

ভারত দক্ষতায়নের প্রশ্নে এক বিশাল ঘাটতির মুখোমুখি, এবং দক্ষতায়নের প্রয়োজন মেটাতে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যেগুলির সরাসরি প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের উপর। কিন্তু দক্ষতায়নের জন্য বাজেটের ব্যয় সব সময়ই তুলনামূলক ভাবে পরিমিত ছিল। এই বাজেটে সরকার দক্ষতায়ন ও জীবিকার জন্য একটি ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র ঘোষণা করেছে:‌ দেশ স্ট্যাক ই-পোর্টাল নামের এই পোর্টালটি অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নাগরিকদের দক্ষতায়ন, পুনর্দক্ষতায়ন ও আরও দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা করবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভূ-স্থানিক সিস্টেম ও ড্রোন, সেমিকন্ডাক্টর ও তার বাস্তুতন্ত্র, স্পেস ইকোনমি, জিনোমিক্স ও ফার্মাসিউটিক গ্রিন এনার্জি, এবং স্বচ্ছ পরিবহণ ব্যবস্থার মতো যে সব ক্ষেত্র তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, সেই সব নতুন বিষয়গুলিতে সরকার সহায়তা দেবে।

উচ্চশিক্ষার ব্যয় ৩৮,৩৫০.৬৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪০,৮২৮.৩৫ কোটি হয়েছে৷ বড় ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা শিক্ষার প্রসারে, নতুন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও বিদ্যমান সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন বৃদ্ধিতে, এবং ন্যাশনাল মিশন ইন এজুকেশন থ্রু আইসিটি (এনএমইআইসিটি)‌–তে, যা যুবাদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি)‌ প্রসার ঘটায়।

যুব প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ সামগ্রিক ভাবে বৃদ্ধি পেলেও সেগুলি যুব জনসংখ্যার চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের কাছাকাছি নেই। ক্রীড়া বাজেট বরাবরের মতোই প্রতারিত হয়েছে, যদিও ‘খেলো ইন্ডিয়া’‌র উপর জোর দিয়ে বরাদ্দ ৩০৫.৫৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। যুব সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য ছত্র প্রকল্প রাষ্ট্রীয় যুব সশক্তিকরণ কার্যক্রম পেয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের থেকে ২৯ কোটি বেশি৷ ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম (এনএসএস)–এ বরাদ্দ গত বছর ২৩১ কোটি থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৮৩.৫০ কোটি টাকা, এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ কোরকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা৷

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.