Published on Jul 31, 2023 Updated 0 Hours ago

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে গেলে কেএমটি-কে দেশের জনসাধারণকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তারা চিন-পন্থী নয় এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখায় আগ্রহী।

তাইওয়ানে ২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচন: ভবিষ্যতে কী রয়েছে?

স্থানীয় নির্বাচন এবং বাঁকবদলের বিন্দু

২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল – যা দেশের অধিকাংশ শহর ও পরিষদের ক্ষমতা কুয়োমিনতাং-এর (কেএমটি) হাতে তুলে দেয় – ঘোষণা  হওয়ার পর থেকেই তাইওয়ানের গণতন্ত্র বিপদগ্রস্ত… এই মর্মে একটি ভাবনা  স্পষ্ট হচ্ছে। এর নেপথ্যে প্রধান কারণ হিসেবে এমনটা মনে করা হয় যে, চিন দ্বারা সৃষ্ট চাপ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কেএমটি যথাযথ সক্রিয় মনোভাবের অভাব দর্শিয়েছে এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) প্রতি দলটির দুর্বলতা রয়েছে।

নেতৃস্থানীয় কেএমটি রাজনীতিকদের একাধিক কর্মকাণ্ড এহেন দাবিকে জোরালো করতে সাহায্য করেছে। এগুলির মধ্যে প্রথমটি হল কাওহসিউং শহরের মেয়র রূপে নির্বাচিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই ২০১৯ সালে হান-কুয়ো-য়ু-এর চিন, হংকং এবং ম্যাকাও সফরে যাওয়ার ঘটনা। চিনের শেনজেন-এ তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিসের প্রধান লিউ জিয়েই-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ঘটনা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সাক্ষাৎ দু’টি পৃথক ভৌগোলিক পরিসরকে একটি দেশের আওতায় একীভূত করার জন্য ‘এক দেশ, দু’টি ব্যবস্থা’র ভাবধারার প্রতি কেএমটি-র সমর্থন সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহকে উস্কে দেয়। যদিও হানের সমর্থকেরা দাবি করেছেন যে, এই সফরের লক্ষ্য ছিল চিনে তাইওয়ানের কৃষিপণ্য রফতানির ব্যবসায়িক পরিসর বৃদ্ধি করা।

দ্বিতীয় কারণটির সময়কাল ২০২২ সালের অগস্ট মাসের মতো সাম্প্রতিক, যখন ন্যান্সি পেলোসি (ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার) ২-৪ অগস্ট তাইওয়ান সফরে আসেন। তাঁর সফরের পরপরই ক্রুদ্ধ চিন তাইওয়ানের আশপাশে সামরিক মহড়া চালায়। তবে যে ঘটনা সমালোচকদের সন্দেহ বৃদ্ধি করছে, তা হল ১০ অগস্ট কেএমটি-র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু সিয়া-র চিন সফরে যাওয়া। তাঁর এই সফরকে কেএমটি চেয়ারম্যান এরিক চু ‘অত্যন্ত সাহসী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ বলে ব্যাখ্যা করলেও সিয়া-র সফরের সময়ের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলি কেএমটি-কে তাইওয়ান সংক্রান্ত চিনা মনোভাবের পক্ষ অবলম্বনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের ক্ষেত্রে ভোটদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন নির্বাচনের সময় স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে জনগণের মনোভাবকেই প্রতিফলিত করে।

তবুও কেএমটি নেতাদের এহেন সন্দেহজনক আচরণ সত্ত্বেও ২৬ নভেম্বর ‘নাইন-ইন-ওয়ান’ নির্বাচনে তাইওয়ানের জনসাধারণ কেএমটি-র পক্ষে ব্যাপকভাবে মতদান করেন। তাইপে শহরের মেয়রের অতিকাঙ্ক্ষিত আসনটি কেএমটি যুব নেতা চিনাগ-ওয়ান-আন-এর দখলে আসে, যিনি এখনও পর্যন্ত শহরটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। এর আগে তাইপে শহরের মেয়রের কার্যালয়ে কেএমটি শেষবার নির্বাচিত হয়েছিল হাউ-লুং-পুন-এর (২০০৬-২০১৪) সময়, যিনি দু’দফায় মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন।

‘চিনকে প্রতিরোধ এবং তাইওয়ানকে রক্ষা’— এই শ্লোগানকে তুরুপের তাস রূপে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত স্থানীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) ভরাডুবি ঘটিয়েছে। জাতীয় সমস্যাগুলিকে ডিপিপি দ্বারা স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত মতদাতাদের মনে দ্বিধার জন্ম দেয়। পেলোসির সফরের পর তাইওয়ানের চারপাশে চিনের কর্মকাণ্ডের তুলনায় স্বল্প মজুরি, আদিবাসী জমি বণ্টন, কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মতো স্থানীয় বিষয়গুলি অধিবাসীদের কাছে অধিক প্রাসঙ্গিক বলেই প্রমাণিত হয়।

ডিপিপি-র জন্য একটি মূল্যবান আসন ছিল তাওয়ুআন শহরের মেয়রের আসনটি। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শহরটির ক্ষমতাসীন মেয়র ডিপিপি-র চেং ওয়েন-সান তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তার দরুন দেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের অন্যতম হলেও নির্বাচনে কেএমটি-কে আসনটিতে জয়লাভ করা থেকে আটকাতে সমর্থ হননি। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের ক্ষেত্রে ভোটদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন নির্বাচনের সময় স্থানীয় সমস্যা সম্পর্কে জনগণের মনোভাবকেই প্রতিফলিত করে।

আগামী দিনের পথ কী?

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কোন দিকে যাবে, আগের মতোই এখনও তা অনুমান করা কঠিন। আন্তঃপ্রণালী অঞ্চলটি একটি অস্থির পরিসর হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনের পর থেকে ক্ষমতাসীন ডিপিপি এবং কেএমটি ‘নিউ নর্মাল’-এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মনোযোগ গিয়ে পড়েছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপর।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডিপিপি এবং কেএমটি-র মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি তাইওয়ানের অবস্থান এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে লড়াই চালাবে। তাইওয়ানের চারপাশে চিনের ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া চালানোর সর্বশেষ ঘটনাটি এখনও পর্যন্ত সে দেশের সীমান্তের নিরিখে নিকটতম হওয়ার দরুন বর্তমান তাইওয়ান প্রশাসন বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা প্রদানের সময়সীমাকে ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ হেন সিদ্ধান্তের নেপথ্যে প্রধান কারণগুলি হল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সশক্ত করা এবং চিনের সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে ক্রমহ্রাসমান সেনাকে এক উল্লেখযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করা।

ক্রমপরিবর্তনশীল আন্তঃপ্রণালী সম্পর্কের নিরিখে প্রধানত জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক ও প্রধান শক্তিগুলির প্রতিক্রিয়াও ২০২৪-এর নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।

স্থানীয় নির্বাচনের তুলনায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। ক্রমপরিবর্তনশীল আন্তঃপ্রণালী সম্পর্কের নিরিখে প্রধানত জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক ও প্রধান শক্তিগুলির প্রতিক্রিয়াও ২০২৪-এর নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই তাইওয়ান ও চিনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত হওয়ার দরুন অঞ্চলটি সংক্রান্ত তাদের নীতি গ্রহণের উপর নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

অপর যে দলটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থী দিতে পারে, সেটি হল তাইওয়ান পিপলস পার্টি (টিপিপি)। এর আগে দু’বার তাইপে শহরের মেয়র পদে নির্বাচিত কো ওয়েন-জে টিপিপি-র প্রতিষ্ঠাতা। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছার কথা সকলেই জানেন। এমনকি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি একজন ডিপিপি কাউন্সিলরকে টিপিপি-র পক্ষে ভোট দেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু ওয়েন-জে-র সম্মুখে আরও একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি নবনির্মিত দল হওয়ার দরুন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের কাছেই টিপিপি অপরিচিত। প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর ক্ষেত্রে দলটি যে ‘দায়িত্ববান’ তার প্রমাণ টিপিপি-কে দিতে হবে। কো ওয়েন-জে তাইপের মেয়র পদে দু’-দু’বার নির্বাচিত হলেও দেশের সর্বোচ্চ কার্যালয়ের দায়ভার তাঁর হাতে ন্যস্ত হওয়ার পথ মোটেও মসৃণ হবে না।

২০২২ সালের স্থানীয় নির্বাচনে টিপিপি-র সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সিনচু মেয়রের আসনটি দখল করা। নতুন দল হওয়ার দরুন টিপিপি-র প্রয়োজনীয় পুঁজি ও মাঠে নেমে কাজ করার জন্য লোকবলের অভাব রয়েছে। জনমানসে তাঁদের প্রতি আস্থার সঞ্চার করা টিপিপি সদস্যদের জন্য এক পাহাড়প্রমাণ কাজ হতে চলেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ঘণ্টা বাজার প্রাক্কালে কো ওয়েন-জে এবং তাঁর সমর্থকদের জন্য বাস্তবে কিছু কাজের কাজ করে দেখানোর ক্ষেত্রে সময়ের অভাব এক বিশেষ প্রতিবন্ধকতা।

প্রধান পরিবর্তনটি হল এই যে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চিরাচরিত দুই পক্ষের বদলে এ বার তিন দলের প্রার্থীদের মধ্যে ঘটতে চলেছে। নির্বাচনের সময়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যে চিনপন্থী নীতির সমর্থক নন এবং স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই আন্তঃপ্রণালী অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম, সে কথা মতদাতাদের বোঝানোর মতো সময় কেএমটি-র হাতে কম।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.