Author : Manoj Joshi

Published on Jul 27, 2023 Updated 0 Hours ago

বেজিংয়ের সাম্প্রতিক কোভিড বৃদ্ধির অব্যবস্থাপনা দল ও তার নেতা শি জিনপিং উভয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই বিরূপভাবে প্রভাবিত করছে

চিনের জিরো–কোভিড নীতির পতন

সরকারের তথ্য ব্ল্যাকআউট সত্ত্বেও কোনও সংশয় নেই যে চিন কোভিড সুনামিতে মারাত্মকভাবে ভুগছে। প্রতিবেদনগুলি থেকে বোঝা যায় যে এর কথিত শীর্ষবিন্দুর পরেও বেজিং  সাংহাইয়ের  হাসপাতালগুলিতে ভিড় উপছে পড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যা কত তা নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ চিন শুধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা বা নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কোভিডকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখনও অবধি দেশটি হাতেগোনা কিছু কোভিড মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর বেজিংয়ের ‘‌জিরো–কোভিড’‌ নীতির উলটো পথে হাঁটা ছাড়া খুব কম বিকল্পই খোলা ছিল। প্রথমত, নীতিটি রপ্তানি ও খুচরো বিক্রয় কমিয়ে ইতিমধ্যেই মন্থর হয়ে পড়া অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করছে। দ্বিতীয়ত, এবং এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ, এটি সামাজিক উত্তেজনা তৈরি করছিল যা অভূতপূর্ব প্রতিবাদের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেছিল। সাংহাইয়ের মতো শহরগুলি ২০২২ সালে কয়েক মাস লকডাউন অবস্থায় ছিল।

২০২০ সালের প্রথম দিকে একটি কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে উহানে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার পরে চিন কোভিডকে দূরে রাখার প্রয়াসে বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জিরো–কোভিড কৌশল, যার মধ্যে ছিল কঠোর লকডাউন, আগ্রাসী কনট্যাক্ট ট্রেসিং, বলপূর্বক হাসপাতালে ভর্তি করা এবং বিচ্ছিন্ন করে রাখা, তা ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করেছিল, এবং চিনাদের কাজ করার পদ্ধতির শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত বুদ্বুদের মধ্যে চিনের অর্থনীতি এক বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, এবং অতিমারি বিশ্বজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও সে দেশে জীবন অনেকাংশে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কোথাও নীতিটি তার পথ হারিয়ে ফেলে, এবং যখন বিশ্বজুড়ে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা জনসংখ্যা টিকা ও সংক্রমণের মাধ্যমে অনাক্রম্যতা গড়ে তুলেছিল, সেই সময় চিন নিজেই নিজের ফাঁদে পড়ে গেল।

চিনা আখ্যানটি হল কমিউনিস্ট পার্টি ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘‌জনগণের যুদ্ধের’‌ সর্বাধিনায়ক শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিন তিন বছর ধরে ‘‌অধ্যবসায়ী ও কার্যকর’‌ পদ্ধতিতে অতিমারির সঙ্গে লড়াই করেছে।

যদিও নীতিটি গণমৃত্যু ও অসুস্থতা রোধ করেছিল, সেইসঙ্গেই কিন্তু এই বিষয়টিও নিশ্চিত করেছিল যে মাত্র ১ মিলিয়ন মানুষ বা জনসংখ্যার ০.০৭ শতাংশের কোভিড হওয়ার প্রেক্ষিতে, এবং ৯০ শতাংশ টিকা দেওয়ার সরকারি পরিসংখ্যান সত্ত্বেও, বাকিদের সামান্যই প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল। তাই তারা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল অত্যন্ত সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্য, যা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। ফলে ২০২২ সালের মে মাসে সাংহাইতে দুই মাসের জন্য কঠোর লকডাউন হয়েছিল। সেই সময়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক চিনকে সতর্ক করেছিলেন যে  তার জিরো–কোভিড পদ্ধতিটি টেকসই নয়, কিন্তু তাঁকে বলা হয়েছিল যে তাঁকে সঠিক তথ্য পেতে হবে এবং ‘‌দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে’‌।

চিনা আখ্যানটি হল কমিউনিস্ট পার্টি ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘‌জনগণের যুদ্ধের’‌ সর্বাধিনায়ক শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিন তিন বছর ধরে ‘‌অধ্যবসায়ী ও কার্যকর’‌ পদ্ধতিতে অতিমারির সঙ্গে লড়াই করেছে। তারপর দেশটি ‘‌সংক্রমণ প্রতিরোধ থেকে চিকিৎসায়’‌ নজর স্থানান্তরিত করেছে, যার জন্য ‘ধারাবাহিকভাবে (‌‌সম্পদের)‌ সর্বোত্তম ব্যবহার এবং (‌ফলাফলের জন্য)‌ পরিবর্তিত হওয়া’‌ প্রয়োজন। এইভাবে নাকি তারা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, যদিও (চিনের মতে) পশ্চিমী গণমাধ্যম নানা অন্ধকার দৃশ্যের কল্পকাহিনি তৈরি করছিল।

সাম্প্রতিক অবস্থা

পরে আজ যখন শহরগুলিতে স্বাভাবিকতার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, তখন মর্গে ও গণঅন্ত্যেষ্টির জন্য মৃতদেহ স্তূপীকৃত হওয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছিল। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন আর আক্রান্তের বা মৃত্যুর দৈনিক সংখ্যা প্রকাশ করে না। তারা বলেছে যে নভেম্বরের শুরু থেকে এক ডজনেরও কম লোক কোভিড–এ মারা গিয়েছে।

একই সময়ে চিনা কর্তৃপক্ষ কোভিডে মৃত্যু গণনা করার পদ্ধতি পরিবর্তন করে শুধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা ও নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাব ধরছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি ব্রিফিংয়ে বলেছিল যে ওমিক্রন তরঙ্গ সম্পর্কে চিনকে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। এর মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রেইসাস চিনা সরকারকে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর বিষয়ে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করার আহ্বান জানান।

চিনা কর্তৃপক্ষ কোভিডে মৃত্যু গণনা করার পদ্ধতি পরিবর্তন করে শুধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা ও নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাব ধরছে।

কর্মকর্তারা যাই বলুক না কেন, বাস্তবতা হল লক্ষ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন এবং আরও অনেকে মারা যাবেন। কিন্তু সরকারি তথ্যের মাধ্যমে সে সব জানা যাচ্ছে না। সরকারি সূত্রের উপর ভিত্তি করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছিল যে ১–২০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন। এতে বেজিংয়ের ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেক অন্তর্ভুক্ত ছিল। গ্লোবাল টাইমস–এর মতে বেজিং, সাংহাই ও গুয়াংঝুর মতো বেশ কয়েকটি বড় শহর ইতিমধ্যে সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছেছে এবং মাঝারি শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছনোর সম্ভাবনা।

এরপর এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হল যেখান ৮ জানুয়ারি চিনা সীমান্তগুলি সম্পূর্ণরূপে খুলে গেল এবং কোভিড কোয়ারেন্টাইন বন্ধ হয়ে গেল, যদিও অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকারীদের প্রস্থানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নেওয়া একটি নেতিবাচক আরটি–পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হচ্ছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে সব কিছু সহজেই স্থিতিশীল হবে, বিশেষ করে যেহেতু কোভিড নিয়ে ইউ–টার্ন আকস্মিকভাবে এবং প্রস্তুতি ছাড়াই নেওয়া হয়েছিল।

চিনা কর্তৃপক্ষ বলেছে যে তারা এখন সংক্রমণ রোধ থেকে তাদের নজর ঘোরাচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা ও গুরুতর ঘটনা প্রতিরোধের দিকে। এই লক্ষ্যে তারা বলেছে যে তারা একটি ‘‌চিনা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে যেখানে ঐতিহ্যগত চিনা ওষুধ (টিসিএম) ও পাশ্চাত্য ওষুধ উভয়ই ব্যবহৃত হয়’‌।

শি–এর বাজি

চিনের জিরো–কোভিড নীতি এবং পরে এর আকস্মিক প্রত্যাহার শি–র নেতৃত্বাধীন চিনের কমিউনিস্ট পার্টিরই কৃতকর্ম, এবং তাঁদের অবশ্যই এর পরিণতির দায় নিতে হবে। জুন মাসে উহানে একটি পরিদর্শন–সফরের সময় শি একটি বক্তৃতায় বলেন যে অতিমারিতে চিনের প্রতিক্রিয়া মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। চিন যদি ‘‌হার্ড ইমিউনিটি’‌ নীতি গ্রহণ করত বা হাত তুলে নিত তাহলে দেশটি বিপর্যয়কর পরিণতি ভোগ করত। তিনি বলেছিলেন যে জিরো–কোভিড নীতি চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) দ্বারা প্রণয়ন করা হয়েছিল, এবং অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও ‘‌আমরা জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপদের মুখে ফেলব না এবং আমাদের অবশ্যই রক্ষা  করতে হবে বয়স্ক এবং বিশেষ করে শিশুদের’‌।

২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন চিনা মানুষ তখন দ্রুত ছড়িয়ে–পড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কোনও না কোনও লকডাউনের মধ্যে ছিলেন। ইতিমধ্যেই নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতাও লক্ষণ দেখা যায়, যার কারণ ছিল কঠোর লকডাউন, যার কবলে পরে সাংহাইকেও পড়তে হয়েছে। হাইনান সফরে শি জনগণকে ‘‌পঙ্গুত্ব নিয়ে আসে এমন চিন্তা’‌ ও ‘যুদ্ধজনিত ক্লান্তির’‌ বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ শিথিল করা যাবে না, এবং পুরনো দলীয় স্লোগান পুনরাবৃত্ত করে বলেন, ‘‌অবিচলতাই বিজয়’।

নীতির নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক অস্থিরতার প্রমাণ সত্ত্বেও ২০২২ সালের অক্টোবরে সিপিসি কংগ্রেসের সময়, যেখানে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন, শি তাঁর অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। এক বক্তৃতায়  শি বলেছিলেন যে জিরো কোভিড নীতি ছিল ‘‌ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য জনগণের যুদ্ধ’‌। তিনি এই কারণে কঠোর পদ্ধতির ন্যায্যতা দিয়েছেন যে ‘আমাদের জনগণ এবং তাঁদের জীবনকে সব কিছুর উপরে রাখতে হবে’‌।

শহরটি ইতিমধ্যেই তিন মাস লকডাউনের অধীনে ছিল, এবং তারপর বিক্ষোভ নানজিং, উহান, চেংডু, জিয়ান, সাংহাই এবং বেজিংয়েও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কিছু প্রতিবাদকারী স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আহ্বান জানান এবং কয়েকজন এমনকি শি–র পদত্যাগ দাবি করেন।

তবে কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার লক্ষণ তখনই ছিল। কংগ্রেসের পরপরই ১০ নভেম্বর শি জিনপিংয়ের সভাপতিত্বে পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা করেছিল যে দেশটি জিরো–কোভিড নীতিতে অবিচল থাকলেও আরও লক্ষ্যযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করবে, এবং আশা করেছিল ২০২৩ সালের বসন্ত পর্যন্ত কঠোর পদক্ষেপগুলি বজায় থাকবে।

কিন্তু নভেম্বরের শেষের দিকে এমনকি এই লক্ষ্যযুক্ত পদ্ধতিও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করছিল না। জিনজিয়াংয়ের একটি ঘটনার পর ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে যখন উরুমচির হান বিভাগে অগ্নিকাণ্ডের ফলে লকডাউনের আওতায় থাকা একটি এলাকায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছিল। শহরটি ইতিমধ্যেই তিন মাস লকডাউনের আওতায় ছিল, এবং তারপর বিক্ষোভ নানজিং, উহান, চেংডু, জিয়ান, সাংহাই এবং বেজিংয়েও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কিছু প্রতিবাদকারী স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আহ্বান জানান এবং কয়েকজন এমনকি শি–র পদত্যাগ দাবি করেন।

এরপর শি চুপ হয়ে গেলেন, কারণ সিপিসি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিল।  ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সিপিসি আকস্মিকভাবে উলটো পথ নেয়। বাধ্যতামূলক গণপরীক্ষা ও লকডাউন এবং অন্যান্য নিয়ম অবসানের নির্দেশ জারি করা হয়। যাঁরা ভাইরাস থেকে বিপদের কথা বলছিলেন, তাঁরাই এবার এর অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর প্রকৃতির কথা বলতে শুরু করেন।

দুই মাস নীরবতার পরে প্রেসিডেন্ট শি অবশেষে তাঁর নববর্ষের বার্তায় এই সমস্যাটি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, এবং স্বীকার করেছিলেন যে দেশ ‘‌কোভিড প্রতিক্রিয়ার একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে যেখানে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলি থেকে গিয়েছে’‌। তিনি বলেছিলেন যে ‘‌বিজ্ঞানভিত্তিক ও লক্ষ্যযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা ক্রমবিকাশমান পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের কোভিড প্রতিক্রিয়াকে মানিয়ে নিয়েছি…’‌।

স্পষ্টতই, চিনের জিরো–কোভিড পদ্ধতিতে অটল থাকাকে চিনের রাজনৈতিক অগ্রগতি থেকে আলাদা করা যায় না, যেখানে শি–র আধিপত্য অভ্যন্তরীণ নীতিগত বিতর্কের পরিসর হ্রাস করেছে এবং বিপরীত মতামতকে  উপেক্ষা ও সেন্সর করেছে

উপসংহার

চিনে কোভিডের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অনেক দেশ উদ্বিগ্ন। তারা উদ্বিগ্ন যে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া এবং সীমান্ত পুনরায় খোলার সঙ্গেসঙ্গে চিনা পর্যটকদের আগমন হতে পারে। এই উদ্বেগের কারণ চিনে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব থেকে ভাইরাসটির কিছু এখনও–অজানা ভ্যারিয়ান্ট উদ্ভূত হতে পারে এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এই কারণে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলি চিন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষার উপর জোর দিচ্ছে।

দুই মাস নীরবতার পরে প্রেসিডেন্ট শি অবশেষে তাঁর নববর্ষের বার্তায় এই সমস্যাটি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, এবং স্বীকার করেছিলেন যে দেশ ‘‌কোভিড প্রতিক্রিয়ার একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে যেখানে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলি থেকে গিয়েছে’‌।

একই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেজিংয়ের কাছে আরও বেশি স্বচ্ছতা দাবি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড–১৯ টেকনিক্যাল লিড মারিয়া ভ্যান কেরখোভের মতে বিশ্ব এই কারণে তথ্য চাইছে যাতে চিনে ‘‌মিউটেশনের পর মিউটেশন’‌ করে ভাইরাস কীভাবে এগোচ্ছে সে দিকে নজর দেওয়া যায় এবং সম্ভাব্য সেই নতুন রূপগুলি ট্র্যাক করা যায় যা শুধু চিনে নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এখনই জিরো–কোভিড নীতির পতনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতির পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। তবে বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিটিই কী ঘটতে যাচ্ছে তার পূর্বানুমান বা ভালভাবে নীতিগত পরিবর্তন পরিচালনার ক্ষেত্রে শি এবং সিপিসি–র ব্যর্থতার সাক্ষ্য দেয়।

এটা সম্ভব যে চিনা অর্থনীতি একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীক্ষ্ণ ব্যাঘাতের মধ্য দিয়ে যাবে, এবং তারপরে স্থিতিশীল হবে। মৃতের সংখ্যা নিয়েও তেমন কোনও সমস্যা হবে না, কারণ গোপনীয়তার মোহে আচ্ছন্ন বেজিং প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করতে পারবে না। তিনটি অবরুদ্ধ বছরের পর চিনের নিজেকে বন্ধনমুক্ত করা থেকে একটি অর্থনৈতিক উত্থান ঘটাতে পারে, যার প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বের উপর।

সিপিসি আশা করে যে এমন ঘটনা মানুষকে তাদের জিরো–কোভিড ট্রমা ভুলে যেতে সাহায্য করবে, তবে তারা যেভাবে অতিমারি-ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছে তার দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক পরিণতি হতে পারে। ২০২০ সালে উহানে এর প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব থেকে শুরু করে জিরো–কোভিড লকডাউন এবং তারপর আকস্মিক ইউ–টার্ন শুধু সিপিসি নয়, এর সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। একটি অপ্রতিরোধ্য দলের অভ্রান্ত নেতা হিসাবে যাঁকে তুলে ধরা হয়েছিল তিনি বা সিপিসি–ব্যবস্থা কঠিন পরীক্ষার মুখে মোটেই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.