Author : Shoba Suri

Published on Jan 27, 2023 Updated 0 Hours ago
উত্তর-পূর্ব ভারতে অপুষ্টি এবং তার সম্ভাব্য সমাধান

ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (এনএফএইচএস) চতুর্থ (২০১৫-১৬) এবং পঞ্চম পর্যায়ের (২০১৯-২০২০) মধ্যে ভারতে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই দশকের প্রথমার্ধে হওয়া অগ্রগতি পুরো নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। একটি শিশুর মস্তিষ্কের চালিকাশক্তি,অনুভবের ক্ষমতা, ভাবনাচিন্তার ক্ষমতা, সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের উপর অপুষ্টির প্রভূত দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। এটি কর্মক্ষমতা এবং শিক্ষাগত অগ্রগতিতে বাধা দেয়, যা ভবিষ্যতের অর্জনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে অপুষ্টির হার দেশের গড় থেকেও খারাপ। উত্তর-পূর্বের চারটি রাজ্য – মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরায় – পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের মধ্যে খর্বতার বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে। খর্বতা বা বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা, শিশুদের বিলম্বিত বিকাশের জন্য একটি স্বীকৃত ঝুঁকির কারণ। বিশ্বব্যাঙ্ক অর্থায়িত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শৈশব খর্বতার ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চতা ১% হ্রাস অর্থনৈতিক উত্পাদনশীলতার ১.৪% হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। খর্বতায় ভোগা শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ২০% কম উপার্জন করে। খর্বতা সবচেয়ে বেশি মেঘালয়ে (৪৬.৮%), তার পরে নাগাল্যান্ড (৩২.৭%), ত্রিপুরা (৩২.৩%) এবং মিজোরামে (২৮.৯%) পরিলক্ষিত হয়। মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরায়, খর্ব, ওজন ক্ষয়, কম ওজন বা অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন শিশুদের শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এনএফএইচএস-৫-এ দেখা গিয়েছে যে, অসম, মণিপুর এবং সিকিমে খর্বতার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। অসমে খর্বতা প্রায় এক শতাংশ বিন্দু কমেছে, যদিও অতিরিক্ত ওজনের হার (২.৩% থেকে ৪.৯%), কম ওজন (২৯.৮% থেকে ৩২.৮%) এবং খর্বতা (১৭% থেকে ২১.৭%) সবেরই হার বেড়েছে, যেখানে ওজন হ্রাসের হার এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে কম ওজনসম্পন্ন শিশুর হার ২%-এর বেশি কমেছে। খর্বকায়, ওজন হ্রাস এবং কম ওজনসম্পন্ন শিশুদের  সংখ্যা কমে যাওয়ায় সিকিম পূর্ববর্তী রাজ্যগুলির তুলনায় যথেষ্ট ভাল করেছে। তেমনই আবার মণিপুরও অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬.৮% থেকে ৯.৯% পর্যন্ত ওজন ক্ষয়ের পরিমাণ কমিয়েছে। উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যে অতিরিক্ত ওজনের মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রাজ্যগুলিতে অপুষ্টির ক্রমবর্ধমান দ্বিগুণ বোঝাকেই বাড়িয়ে দিয়েছে।

শিশুদের উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথাযথ খাবার এবং খাওয়ানোর অভ্যাস দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। শুধুমাত্র মেঘালয় এবং ত্রিপুরায় মাতৃস্তন্য পানকারী শিশুদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিপূরক খাবার গ্রহণকারী শিশুদের শতাংশের উন্নতি হয়েছে। আটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের মধ্যে ছ’টিতে মাতৃস্তন্য পানের প্রাথমিক সূচনা হ্রাস পাচ্ছে, যার সর্বোচ্চ মাত্রা সিকিম (৩৩.৫%) এবং অসমে (১৫.৩%) পরিলক্ষিত হয়। সিকিম, ত্রিপুরা এবং মণিপুর… সব রাজ্যেই শুধু স্তন্যপান করানোর (ইবিএফ) হারে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে। সিকিমে এই হ্রাসের পরিমাণ প্রায় ২৬ শতাংশ বিন্দু। সিকিমে ইবিএফ-এর  হার সর্বনিম্ন অর্থাৎ ২৮.৩ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৬৩.৭ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। ত্রিপুরা অর্ধ শক্ত খাদ্যের সময় মতো প্রবর্তনের অনুশীলনে ৩৯.৫ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে, যেখানে মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে সামান্য হ্রাস দেখা গিয়েছে। ন্যূনতম পর্যাপ্ত খাদ্য (বা খাদ্যের পর্যাপ্ততা) হল খাওয়ানোর পৌনঃপুনিকতা এবং খাদ্যের বৈচিত্র্যের সম্মিলিত সূচক। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি জুড়ে এই হার ৮% থেকে ২৯.৮% পর্যন্ত লক্ষ করা গিয়েছে। অসম ব্যতীত সমস্ত রাজ্যই এই পরিমাপে সামগ্রিক ভাবে দেশের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভাল ফল করেছে।

ত্রিপুরা অর্ধ শক্ত খাদ্যের সময় মতো প্রবর্তনের অনুশীলনে ৩৯.৫ শতাংশ বিন্দু বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে, যেখানে মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে সামান্য হ্রাস দেখা গিয়েছে।

উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যেই কম ওজনের মহিলাদের (বিএম আই <১৮.৫) সংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা ইতিবাচক। স্থূলতার পরিস্থিতি আরও জটিল: শুধুমাত্র মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে তা হ্রাস পেয়েছে এবং অন্য ছ’টি রাজ্যে সেই ক্ষেত্রে বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে। উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের মধ্যে ছ’টিতে প্রজননক্ষম মহিলাদের মধ্যে রক্তশূন্যতা বেড়েছে। ত্রিপুরায় এই পরিমাণ সবচেয়ে খারাপ অর্থাৎ ৬৭.২% এবং অসমে ৬৫.৯%।

কী ভাবে উত্তর-পূর্বে অপুষ্টির মোকাবিলা করা সম্ভব?

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিশুদের মধ্যে খর্বতা নানা কারণে ঘটে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল মাতৃস্বাস্থ্য, প্রসব-পূর্ববর্তী যত্নের অভাব, অপ্রতুল পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধা, মহিলাদের জন্য অপ্রতুল খাদ্য ও পুষ্টি, এবং  শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও পয়ঃপ্রণালীর সীমিত ব্যবস্থা। উত্তর-পূর্বের জনজাতিদের উপর করা ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, বাড়ির পরিবেশে শৌচাগার, পানীয় জল এবং রান্নার জ্বালানির অভাব শিশুদের অপুষ্টির উপর প্রভাব ফেলে।

সিকিমে শৈশব খর্বতার হার সর্বনিম্ন এবং মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্য নির্ধারকগুলির সর্বোচ্চ স্তর বিদ্যমান। মণিপুর, মিজোরাম এবং সিকিম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতীয় গড়ের তুলনায় ভাল ফল করেছে। গর্ভধারণের আগে, গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে মায়ের উন্নত পুষ্টির দ্বারা নবজাতকের খর্বতার সম্ভাবনা হ্রাস করা সম্ভব। সিকিম, মণিপুর এবং মিজোরামের তথ্য অনুসারে, কম ওজনের মায়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিশুদের মধ্যে খর্বতার ঝুঁকিও হ্রাস পায়।

উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পরিপূরক খাবারের ব্যবহারে ব্যাপক তারতম্য লক্ষ করা যায়। অরুণাচল প্রদেশে সেই পরিমাণ প্রায় ৩৫% থেকে ত্রিপুরায় ৭০% পর্যন্ত। উত্তর-পূর্ব জুড়ে এএনসি কভারেজে নাগাল্যান্ডে সর্বনিম্ন ২০.৭% এবং মণিপুরে সর্বোচ্চ ৭৯.৪%। সমস্ত রাজ্যে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড (আইএফএ) গ্রহণের হার জাতীয় গড় অর্থাৎ ২৬%-এর চেয়ে কম। একমাত্র মণিপুরই ব্যতিক্রম, যেখানে ৩০.৩% গর্ভবতী মহিলা আইএফএ ট্যাবলেটের সম্পূর্ণ ১৮০ দিনের কোর্স সম্পন্ন করেন। নাগাল্যান্ডে এর হার সর্বনিম্ন অর্থাৎ মাত্র ৪.১%। সামগ্রিকভাবে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি পরিষেবার প্রাপ্যতা এবং গ্রহণে বিস্তৃত তারতম্য দেখায়।

উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পরিপূরক খাবারের ব্যবহারে ব্যাপক তারতম্য লক্ষ করা যায়। অরুণাচল প্রদেশে সেই পরিমাণ প্রায় ৩৫% থেকে ত্রিপুরায় ৭০% পর্যন্ত।

মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উত্তর-পূর্ব জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প এবং সর্বোত্তম অনুশীলন চালু করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অসম সরকার গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মহিলাদের ‘পুষ্টি উদ্যান’ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছে যেখানে তাঁরা সবজি চাষ করতে পারেন। ‘কান সিকুল, কান হুয়ান (আমার বিদ্যালয়, আমার খামার)’ কর্মসূচি মিজোরামের সবচেয়ে দরিদ্র এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকা লংৎলাই-এ গৃহীত হয়েছে। এর পাশাপাশি খাবারের তালিকায় উন্নত পুষ্টি এবং বৈচিত্র্যের প্রচারের জন্য অসমের হাইলাকান্দি জেলায় ‘ডিব্বি আদান প্রদান (লাঞ্চবক্স বিনিময়)’ উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।

প্রত্যক্ষ পুষ্টি হস্তক্ষেপে মানোন্নয়নের মাধ্যমে এবং পুষ্টির ফারাক বন্ধ করার জন্য  পুষ্টি-সংবেদনশীল ব্যবস্থাগুলির সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে উত্তর-পূর্বে অপুষ্টিকে সামগ্রিক ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে পোষণ অভিযান এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির উপর ভিত্তি করে বর্তমান হস্তক্ষেপগুলির নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হতে পারে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এবিপি লাইভ-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.