Author : Premesha Saha

Published on Jul 27, 2023 Updated 0 Hours ago
কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল
কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২–এ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (আরওকে) তার ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল প্রকাশ করেছে। ইউন সুক ইওল প্রশাসন ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই আরওকে এই কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। কৌশল–নথি বলেছে যে আরওকে একটি ‘‌গ্লোবাল পিভটাল স্টেট’‌ (‌বৈশ্বিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র)‌ হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার লক্ষ্য রাখে, অর্থাৎ দেশটি ‘‌সক্রিয়ভাবে সহযোগিতার জন্য কর্মসূচি খোঁজে, এবং এই অঞ্চল ও বিস্তৃত বিশ্বে আলোচনাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়’‌।

আরওকে–র জন্য ইন্দো–প্যাসিফিক অর্থনৈতিকভাবে প্রাণবন্ত এলাকা হওয়ার পাশাপাশি এমন একটি অঞ্চল যা সেমিকন্ডাক্টরের মতো কৌশলগত শিল্পের অংশীদারদের আবাসস্থল। অন্যদিকে এই অঞ্চলটি এমন সব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে যা একটি শান্তিপূর্ণ, মুক্ত, সমৃদ্ধ ও নিয়মভিত্তিক আঞ্চলিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে  ফেলেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে মহাশক্তি প্রতিযোগিতা, ক্রমবর্ধমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও আস্থা তৈরির জন্য পদক্ষেপের অভাব, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা তৈরি করা, এবং সরবরাহ শৃঙ্খল নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত।

ইন্দো–প্যাসিফিক অর্থনৈতিকভাবে প্রাণবন্ত এলাকা হওয়ার পাশাপাশি এমন একটি অঞ্চল যা সেমিকন্ডাক্টরের মতো কৌশলগত শিল্পের অংশীদারদের আবাসস্থল।

আরওকে তার ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করেছে সহযোগিতার তিনটি নীতির ভিত্তিতে:‌ ‘‌অন্তর্ভুক্তি, বিশ্বাস ও প্রতিদান’‌। অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আরওকে–র ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল–নথি বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘‌‘‌আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল কোনও নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে বা বাদ দিয়ে নয়। আমরা এমন প্রত্যেক অংশীদারের সঙ্গে কাজ করব যারা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার নীতির সঙ্গে সহমত। আমরা ইন্দো–প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এর বাইরে সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত থাকব।’‌’‌ দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করার পাশাপাশি একটি ‘‌গ্লোবাল পিভটাল স্টেট’‌ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরওকে একটি ‘‌বহুস্তরীয় ও সর্বাত্মক পদ্ধতি’‌র মাধ্যমে সহযোগিতা বাড়ানোর এবং স্বল্পপাক্ষিক  মঞ্চের (‌মিনিল্যাটরাল প্ল্যাটফর্ম)‌ পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারির পথ অনুসরণ করবে। সহযোগিতার সুযোগ শুধু উত্তর–পূর্ব এশিয়ায় সীমাবদ্ধ না–থেকে ছড়িয়ে পড়বে ইন্দো–প্যাসিফিকের অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলসমূহে, যেমন দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও ওশিয়ানিয়ায়, এবং তা ভারত মহাসাগরের আফ্রিকার উপকূল, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে  ‘প্রতিটি অঞ্চলের উপযোগী কৌশলগত অংশীদারির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে’‌।

ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আসিয়ান যেহেতু একটি মূল ও অগ্রণী অংশীদার , তাই ‘‌কোরিয়া–আসিয়ান সলিডারিটি ইনিশিয়েটিভ’ ঘোষণা করা হয়েছে। কৌশলটিতে আরও বলা হয়েছে যে ইন্দো–প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে আসিয়ান–এর দৃষ্টিভঙ্গিকে আরওকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। যে প্রধান ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা জোরদার করা হবে তা হল: ডিজিটাল, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ, এবং স্বাস্থ্য। বলা হয়েছে নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রশ্নে ফোকাস শুধু দক্ষিণ চিন সাগরের মতো পুরনো নিরাপত্তা ইস্যুতেই নয়, সেইসঙ্গেই অর্থনৈতিক, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য উদীয়মান নিরাপত্তা প্রশ্নের উপরেও নিবদ্ধ থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ‘‌ভারতের সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত অংশীদারি’‌ আরও জোরদার করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কৌশলটির রূপরেখা অনুসারে, ‘‌‘‌বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা হওয়ায় এবং ‌অত্যাধুনিক আইটি ও মহাকাশ প্রযুক্তির কারণে ভারত বৃদ্ধির জন্য বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।’‌’‌ তা ছাড়া উচ্চপর্যায়ের আদান–প্রদান এবং আরওকে–ভারত সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সিইপিএ) হালনাগাদ করার মাধ্যমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত করার কথা বলা হয়েছে। ওশিয়ানিয়াতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জাতীয় প্রতিরক্ষা, প্রতিরক্ষা শিল্প, নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের মতো একত্রীকরণ ও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় জলবায়ু পরিবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা হবে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে পার্টনারস ইন ব্লু প্যাসিফিক (পিবিপি)–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৫০ স্ট্র‌্যাটেজি ফর দ্য ব্লু প্যাসিফিক কন্টিনেন্ট প্রসারিত করা হবে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা হবে পূর্ব আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্র। এইভাবে সমগ্র ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে সহযোগিতার ভৌগোলিক পরিধিকে প্রসারিত করাই ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের প্রাথমিক অ্যাজেন্ডা।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় জলবায়ু পরিবর্তন হবে ফোকাস এলাকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে পার্টনারস ইন ব্লু প্যাসিফিক (পিবিপি)–এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৫০ স্ট্র‌্যাটেজি ফর দ্য ব্লু প্যাসিফিক কন্টিনেন্ট প্রসারিত করা হবে।

মুন জায়ে–ইন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় আরওকে ‌নতুন দক্ষিণী নীতি (‌নিউ সাদার্ন পলিসি)‌–র সূচনা করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল কোরীয় উপদ্বীপ তথা উত্তর–পূর্ব এশিয়ার বাইরে দেশের দৃষ্টি ও আগ্রহের ক্ষেত্র প্রসারিত করা। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও ভারত ছিল এই নীতির কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলটি আগের নতুন দক্ষিণী নীতি থেকে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। এ কথা বলা যেতে পারে যে নতুন দক্ষিণী নীতি বর্তমান সরকারের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের বিবর্তনের ভিত্তি প্রদান করেছিল। এখনকার নথিটি ব্যাপকতর ও বিস্তৃততর, কারণ ইন্দো–প্যাসিফিক ভূগোলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত প্রধান অঞ্চল যেমন এই কৌশলটিতে উল্লেখ খুঁজে পেয়েছে, তেমনই উপযোগিতা ও প্রয়োজনের দিক থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ওশিয়ানিয়া, ভারত মহাসাগরের আফ্রিকী উপকূল, ইউরোপ, বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে একটি সঠিক কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। কূটনীতি ও সম্পৃক্ততা শুধু দ্বিপাক্ষিকভাবেই ঘটবে না, সেইসঙ্গেই অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের অংশীদার স্বল্পপাক্ষিক মঞ্চগুলিতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করা হয়েছে। চতুর্ভুজ (‌কোয়াড্রিল্যাটরাল)‌–এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে, এবং কোয়াডের অধীনে সংক্রামক রোগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতি–গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তির মতো কিছু উদ্যোগে যোগদানের আগ্রহও প্রকাশ করা হয়েছে।

বাস্তবায়ন কৌশল

ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য নথিতে প্রচেষ্টার নয়টি মূল সূত্র তৈরি করা হয়েছে। এই বিভাগটিতে এর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সূত্রগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

১। নিয়ম  মূল্যবোধভিত্তিক আঞ্চলিক ব্যবস্থা তৈরি করা: আরওকে–র লক্ষ্য হল ‘‌ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা নেটওয়ার্কের কেন্দ্র’‌ হয়ে ওঠা। বলা হয় এই ইস্যুভিত্তিক স্বল্পপাক্ষিকগুলি বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার ভরবেগ প্রদান করে, এবং ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল, নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে। উপরন্তু, এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে সরবরাহ শৃঙ্খল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

২। অঞ্চল জুড়ে পরমাণু অস্ত্র প্রসাররোধ  সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা: এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে যে উত্তর কোরিয়ার সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কোরীয় উপদ্বীপে, পূর্ব এশিয়ায় এবং বৃহত্তর বিশ্বে স্থিতিশীল শান্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে, এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মার্কিন–জাপান–আরওকে ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের প্রসাররোধ ক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করার প্রচেষ্টা চলবে। তাছাড়া প্রসাররোধ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আলোচনার জন্য বহুপাক্ষিক ও ক্ষুদ্রতর মঞ্চগুলিতে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়েছে।

৩। সর্বাত্মক নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রসারিত করা: ঐতিহ্যগত ও অপ্রচলিত উভয় নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা  এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রয়াসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগের সমুদ্রপথ রক্ষা, এবং দক্ষিণ চিন সাগরের মতো বিতর্কিত জলসীমায় নৌ–চলাচল ও বিমান উড়ানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তথ্য আদান–প্রদান, সামুদ্রিক ক্ষেত্র সচেতনতা, নৌবহরের জাহাজ হস্তান্তর ও অন্যান্য সামরিক সরবরাহ সহায়তার মাধ্যমে আসিয়ান সদস্য দেশগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার উল্লেখও আছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অন্য অপ্রচলিত নিরাপত্তা সমস্যাগুলিকেও ইন্দো–প্যাসিফিকের দেশগুলির সঙ্গে ব্যাপক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

৪। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করা: এর লক্ষ্য হল স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল নেটওয়ার্ক তৈরি করা, অর্থনৈতিক অংশীদারির বৈচিত্র্যকরণ, এবং ইন্দো–প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ), রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) ও কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি)–এর অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা ও নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা।

৫। বিজ্ঞান  প্রযুক্তির জটিল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা  ডিজিটাল ব্যবধান পূরণ করা: প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসাবে আরওকে সেমিকন্ডাক্টর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম বিজ্ঞান, উন্নত জীববিজ্ঞান, পরবর্তী প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অতি–গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা সহজতর করবে, এবং এই অঞ্চলে ডিজিটাল ব্যবধান পূরণ করতে সাহায্য করবে। এখানে আবারও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও কানাডাকে সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে দেখা হয়েছে।

৬। উপযোগিতাভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগিতা অংশীদারির মাধ্যমে ‘অবদানমূলক কূটনীতিতে নিয়োজন: প্রচেষ্টার এই ক্ষেত্রটিতে আরওকে–র লক্ষ্য ‘‌ইন্দো–প্যাসিফিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন’‌। এই কাজটি করার উপায় হিসাবে উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাপক দেশগুলির জন্য ওডিএ ভলিউম বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। যেমন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ডিজিটাল শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্মার্ট সিটি বা পরিবহণের মতো ক্ষেত্রে সহায়তা বাড়ানো হবে। এই কাজটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইইউ বা ব্রিটেনের মতো অন্য দাতা দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে করা হবে। সামুদ্রিক পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল ও সাইবার ক্ষেত্রের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী করা যাবে তা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, পরিবহণ, আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং জ্বালানির মতো খাতে সহায়তা বাড়ানো হবে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলির ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য, এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির ক্ষেত্রে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, বৈদ্যুতিক শক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিক্রিয়া বাস্তবায়নের মতো স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণে সহায়তা প্রদান করা হবে।

আরওকে–র ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের মূল বিষয় হল ‘‌এই অঞ্চলের মধ্যে এবং বাইরের দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন’‌। উপরে যেমন বলা হয়েছে, আরওকে এখন ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি বৃহত্তর ও আরও প্রভাবশালী ভূমিকা পালনের জন্য একটি ‘‌গ্লোবাল পিভটাল স্টেট’‌ হতে চায়। দেশটি প্রতিটি অঞ্চলের উপযোগী সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির মানচিত্রায়ণের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এই নথিটি অঞ্চল ও ভৌগোলিক ক্ষেত্রের অনন্য চ্যালেঞ্জগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে চিহ্নিত করেছে এবং ইন্দো–প্যাসিফিকের অন্যান্য সমমনা দেশ, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের সহযোগিতায় সেগুলির মোকাবিলা করার জন্য একটি নীল নকশা প্রদান করেছে। এই দস্তাবেজটি শুধুমাত্র সহযোগিতার কিছু সাধারণ ক্ষেত্র তুলে ধরে না, সেইসঙ্গেই খুব স্পষ্টভাবে এমন ক্ষেত্র ও চ্যালেঞ্জগুলিকে নির্দেশিত করে যা ইন্দো–প্যাসিফিকের দেশগুলির জন্য সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ, এবং সেই কারণেই সেগুলিতে মনোনিবেশ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.