Author : Hari Bansh Jha

Published on Jul 31, 2023 Updated 0 Hours ago

নেপালে সাম্প্রতিকতম বিমান দুর্ঘটনা বিমান পরিষেবার দুর্বলতাগুলিকে প্রকট করে তুলেছে। একটি সামগ্রিক সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

নেপালে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা: বিমান পরিষেবার সুরক্ষাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

২০০৭ সালে ফরাসি-ইতালীয় কনসর্টিয়াম দ্বারা নির্মিত নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ১৫ জানুয়ারি সকালবেলা সদ্যনির্মিত পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময়ে ভেঙে পড়ে। বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে পোখরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল (যা কাঠমান্ডুর পশ্চিমে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত)। পোখরা অন্নপূর্ণা সার্কিটের প্রধান প্রবেশপথ এবং নেপালে পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। ৬৮ জন যাত্রী এবং ৪ জন বিমানকর্মী-সহ বিমানে উপস্থিত ৭২ জনের কেউই এই দুর্ঘটনায় রক্ষা পাননি। যাত্রীদের মধ্যে ১৫ জন বিদেশি ছিলেন, যার মধ্যে পাঁচ জন ভারতীয়, চার জন রুশ, দু’জন দক্ষিণ কোরীয় এবং আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স থেকে একজন করে যাত্রী ছিলেন।

১৯৫৫ সালে দেশটিতে প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ঘটার দিন থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন বিমান দুর্ঘটনায় ৯১৪ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পোখরায় ইয়েতি  এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনাটি এই তালিকায় ১০৪তম এবং প্রাণহানির নিরিখে তৃতীয় ভয়ঙ্করতম। সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালে, যখন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের বিমান কাঠমান্ডুতে অবতরণ করতে যাওয়ার সময়ে পাহাড়ে ধাক্কা দেয় এবং বিমানে উপস্থিত ১৬৭ জন মানুষ প্রাণ হারান।

পোখরায় ইয়েতি এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনাটি এই তালিকায় ১০৪তম এবং প্রাণহানির নিরিখে তৃতীয় ভয়ঙ্করতম।

পোখরায় ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনাটি গত ন’মাসে ঘটা দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। প্রথমটি ঘটেছিল ২০২২ সালের ২৯ মে, যখন তারা এয়ারক্রাফট-এর বিমানটি মাস্তাং জেলায় ভেঙে পড়ে। ১৫ জানুয়ারির বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শোকজ্ঞাপনের জন্য ইয়েতি এয়ারলাইন্স ১৬ জানুয়ারি তার সকল বিমান পরিষেবা বাতিল করে। একই দিনে নেপাল সরকারও শোকজ্ঞাপনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’ বিমান দুর্ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন।

ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে মাত্র ১.৬ কিলোমিটার দূরে ভেঙে পড়ার দরুন উদ্ধারকারী দলগুলির ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু দলগুলির সঙ্গে অগ্নিনির্বাপক দল, জলের উৎস এবং আপৎকালীন উদ্ধারকার্য চালানোর মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল না। ফলে মানুষগুলির প্রাণ বাঁচানোর জন্য যথাযোগ্য চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি।

কাসকির (পোখরা) চিফ ডিস্ট্রিক্ট অফিসার ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার মতো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। …উদ্ধারকারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, যেমন সেফটি কিট, স্যুট এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র প্রদানে আমরা ব্যর্থ।’

পোখরায় বিমান বিপর্যয়ের অব্যবহিত পরেই দুর্ঘটনার তদন্ত করা এবং ৪৫ দিনের মধ্যে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য নেপাল সরকার প্রাক্তন সচিব নগেন্দ্র ঘিমিরে-র তত্ত্বাবধানে পাঁচ সদস্যের দুর্ঘটনা তদন্তকারী কমিশন গঠন করে। ইতিমধ্যেই ফ্রান্সের এক বিশেষজ্ঞ দল পোখরায় বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে থাকা কারণগুলির অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে। সংস্কৃতি, পর্যটন এবং অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের নবনিযুক্ত মন্ত্রী সুদান কিরাতি জানিয়েছেন যে, তিনি বিমান সুরক্ষার দিকটি সুনিশ্চিত করার উপর বিশেষ জোর দেবেন।

১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দ্বারা উদ্বোধনের সময়সীমা পালন করার লক্ষ্যে নবনির্মিত বিমানবন্দরটি তাড়াহুড়ো করে চালু করা হয় এবং এটির নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হয় চিনের এক্সিম ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়। পোখরায় বিমান দুর্ঘটনার প্রভাব ইতিমধ্যেই অনুভূত হয়েছে। রিপোর্ট দর্শাচ্ছে যে, বিভিন্ন উড়ানপথের ভাড়া হ্রাস করা সত্ত্বেও বিমান-সফরকারী যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দ্বারা উদ্বোধনের সময়সীমা পালন করার লক্ষ্যে নবনির্মিত বিমানবন্দরটি তাড়াহুড়ো করে চালু করা হয় এবং এটির নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হয় চিনের এক্সিম ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়।

প্রযুক্তিগত ত্রুটি সম্পর্কিত গণমাধ্যমের রিপোর্টে এ কথা নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে, বিমানবন্দরের সকল সরঞ্জাম পরীক্ষাকারী ফ্লাইট ক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়াটি পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্পূর্ণ করা হয়নি। এর পাশাপাশি বিমানবন্দরে কোনও গ্রিড মানচিত্র ছিল না। ফলে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দ্রুততম উপায়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেননি। অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দুর্ঘটনার প্রায় ৩০ মিনিট পরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সমর্থ হন।

১৬ জানুয়ারি, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার ঠিক পরের দিন, পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় একটি পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর অন্য একটি বিমান সামান্যর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। ল্যান্ডফিল সাইট-এর কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার দরুন এই বিমানবন্দরে বিমানের সঙ্গে পাখির ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। এমনকি ২০ জানুয়ারি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অপর দু’টি নবনির্মিত বিমানবন্দর অর্থাৎ ভাইরাহাওয়ায় অবস্থিত গৌতম বুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পোখরায় অবস্থিত পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করতে পারার দরুন নেপালি এয়ারলাইন্সের বিমানটিকে অবতরণের জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে পাঠাতে হয়।

বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তার উন্নতি সাধনে বৈশ্বিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি নেপালের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষকে নিজেদের পরিষেবা প্রদানকারী এবং নিয়ন্ত্রক… এই দুই ভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।

নেপাল বিমান দুর্ঘটনাপ্রবণ একটি দেশ হলেও নেপাল সরকার কখনওই বিপদকালীন উদ্ধার প্রক্রিয়া এবং দেশটির বিমান নিরাপত্তার বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেয়নি। নিরাপত্তার মানদণ্ডে ত্রুটি থাকার দরুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৩ সাল থেকে নেপালের সকল এয়ারলাইন্সকে তার ২৭টি দেশের ব্লকের সকল দেশেই উড়ানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যদিও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা নেপালের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সামান্য উন্নতির কথাও ঘোষণা করেছে। বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তার উন্নতি সাধনে বৈশ্বিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি নেপালের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষকে নিজেদের পরিষেবা প্রদানকারী এবং নিয়ন্ত্রক… এই দুই ভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।

ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা নেপালের সমগ্র বিমান চলাচল ক্ষেত্রটির জন্য এক বিপদঘণ্টা ধ্বনিত করেছে এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সে দেশের বিমান সুরক্ষার পরিসংখ্যান নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত। এ কথা অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে, নেপালের বিমান চলাচল ব্যবস্থাটি যথাযথ নয় এবং এটির সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন। কঠিন ভৌগোলিক অবস্থান সত্ত্বেও দেশটির অধিকাংশ বিমানবন্দরই প্রযুক্তিগত ত্রুটির সম্মুখীন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপস করা হয়েছে। এই নেপাল সরকারকে বিমান চলাচল নিরাপত্তার উন্নতি সাধনের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে এবং বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোগত সুবিধার অভাব, পুরনো বিমান, খারাপ নিরাপত্তা প্রবিধান, বিমানচালক ও এয়ারট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদের অপ্রতুল প্রশিক্ষণের মতো সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.