Author : Ankita Dutta

Published on Jul 26, 2023 Updated 0 Hours ago
অধরা সংযোজনের পশ্চাদ্ধাবন: ইইউ সদস্যপদের জন্য পশ্চিম বলকানের প্রয়াস

অধরা সংযোজনের পশ্চাদ্ধাবন: ইইউ সদস্যপদের জন্য পশ্চিম বলকানের প্রয়াস

ইউক্রেনে সংঘাত এবং অঞ্চলটিতে চিনা উপস্থিতি ইইউ-এর সম্প্রসারণ প্রচেষ্টাকে জোরদার করলেও ইইউ-এর কি এমনটা করার ক্ষমতা আছে?

জ্বালানি ও জীবনধারণের ক্রমবর্ধমান সঙ্কট এবং বিদ্যমান ইউক্রেনীয় সঙ্কটের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যেগুলি ইউনিয়নের সমন্বিতকরণের উপরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এগুলির মধ্যে প্রথমটি হল, ইইউ-পশ্চিম বলকান শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে পশ্চিম বলকান দেশগুলিকে(১) ইইউ-তে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা;  এবং দ্বিতীয়টি হল ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য বসনিয়া-হের্জেগোভিনা-র প্রার্থী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা। ইইউ ২০২২ সালের জুন মাসে ইউক্রেন এবং মলডোভা উভয়কেই সদস্য হওয়ার জন্য প্রার্থীর মর্যাদা দিতে রাজি হওয়ার পরবর্তী সময়ে আলোচ্য ঘটনাপ্রবাহের সূচনা হয়। ইউনিয়নের সম্প্রসারণের জন্য ইইউ-এর প্রতিশ্রুতি প্রদানের ঘটনা এই প্রথম নয়, তবে ইউক্রেন সঙ্কট এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে। এই প্রতিবেদনে ইইউ-পশ্চিম বলকান শীর্ষ সম্মেলন, সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং অঞ্চলভুক্ত দেশগুলির প্রার্থী হওয়ার আবেদনের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ডিসেম্বর শীর্ষ সম্মেলন

ইইউ-পশ্চিম বলকান শীর্ষ সম্মেলনটি আলবানিয়ার তিরানায় ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি ছিল পশ্চিম বলকান দেশগুলিতে আয়োজিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের সময়ে ইইউ ‘পশ্চিম বলকান দেশগুলির ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়টির প্রতি তার সম্পূর্ণ দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করেছে’ এবং একই সঙ্গে ‘অংশীদার দেশগুলির ন্যায্য ও কঠোর শর্তসাপেক্ষ ও যোগ্যতার নীতির নিরিখে বিশ্বাসযোগ্য সংস্কারের উপর ভিত্তি করে যোগদান প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছে।

তিরানা ঘোষণার উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল: ‘প্রথমত, ১ বিলিয়ন ইউরোর শক্তি সহায়তা প্যাকেজ, যা শক্তি সঙ্কটের প্রভাব কাটাতে এবং অঞ্চলটির দূষণমুক্ত রূপান্তরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। দ্বিতীয়ত, অঞ্চলস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এরাসমাস প্লাস, ইউরোপিয়ান সলিডারিটি কোর এবং ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিজ উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করে অঞ্চলটিতে  বসবাসকারী যুব সম্প্রদায়ের জন্য সুযোগ তৈরি করা। তৃতীয়ত, ইইউ এবং পশ্চিম বলকান দেশগুলির মধ্যে ২০২৩ সালে রোমিং খরচ হ্রাস এবং পরবর্তী সময়ে এই খরচের সম্পূর্ণ অপসারণ। চতুর্থত, ইউরোপিয়ান পিস ফেসিলিটি বা ইউরোপীয় শান্তি ব্যবস্থা কাজে লাগানোর পাশাপাশি তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বিকাশের জন্য ইইউ বলকান দেশগুলির সঙ্গে একজোটে কাজ করতে প্রস্তুত।’

কোপেনহেগেন ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ডের অধীনে ইইউ-এর সম্প্রসারণের  সম্ভাবনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসনের প্রতি সম্মান এবং একটি কার্যকর বাজার অর্থনীতির মতো বিষয়।

শীর্ষ সম্মেলনটিতে বহুবিধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও যে প্রধান বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে, তা হল অঞ্চলস্থিত ছ’টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইউনিয়নের সম্প্রসারণ। ইইউ অঞ্চলটির প্রতি তার দায়বদ্ধতাকে পুনর্ব্যক্ত করলেও কার্য সমাধার জন্য কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। ২০২২ সালের জুন মাসে মলডোভা ও ইউক্রেনের সদস্যপদের জন্য প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষিতে ইইউ নেতৃত্বের সহমত হওয়া, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইউনিয়নের তরফে আলবানিয়া ও উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার সঙ্গে যোগদান সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করা এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনিয়ন দ্বারা বসনিয়াকে প্রার্থিপদের স্বীকৃতি প্রদান করার মতো ইতিবাচক ঘটনাগুলি ২০২২ সালে ঘটে থাকলেও প্রস্তুতির ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ভুক্ত দেশগুলি কত দ্রুত ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।

একনজরে প্রার্থী হওয়ার অবস্থা

কোপেনহেগেন ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ডের অধীনে ইইউ-এর সম্প্রসারণের সম্ভাবনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসনের প্রতি সম্মান এবং একটি কার্যকর বাজার অর্থনীতির মতো বিষয়। ইইউ আইন এবং নীতি বাস্তবায়নের প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকার পাশাপাশি ইচ্ছুক দেশগুলিকে উল্লেখ্য শর্তগুলি পূরণ করতে হবে। এই দেশগুলিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল করার জন্য স্টেবিলাইজেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন প্রসেস-এর (এসএপি) অধীনে ১৯৯৯ সালে সদস্যপদের শর্তগুলি ঘোষণা করা হয়। এর অধীনে প্রত্যেকটি দেশ সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইইউ-এর সঙ্গে একটি স্টেবিলাইজেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন এগ্রিমেন্ট বা চুক্তি (এসএএ) স্বাক্ষর করে।

পশ্চিম বলকানের মানচিত্র

সূত্র: বিবিসি নিউজ

এখনও পর্যন্ত ইইউ মন্টেনেগ্রো (২০১২) এবং সার্বিয়ার (২০১৪) সঙ্গে যোগদান সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করেছে। উভয় দেশই যোগদান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখনও আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে। আলবানিয়া ও উত্তর ম্যাসিডোনিয়া যথাক্রমে ২০১৪ ও ২০০৯ সালে সদস্য হওয়ার প্রার্থিপদের মর্যাদা লাভ করে। ব্রাসেলস দেশ দু’টির আবেদনকে একই সঙ্গে বিবেচনা করলেও উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার সদস্যপদ পাওয়ার বিরুদ্ধে গ্রিস(২) এবং বুলগেরিয়ার ভেটো আলাপ-আলোচনাকে স্তব্ধ করে দেয়। যদিও সে দেশে বসবাসকারী বুলগেরিয়ান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উত্তর ম্যাসিডোনিয়া তার সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইইউ পুনরায় আলোচনা শুরু করে। কসোভো ২০১৬ সালে ইইউ-এর সঙ্গে এসএএ স্বাক্ষর করলেও ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। কসোভোর ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল ২৭টি ইইউ সদস্য দেশের মধ্যে পাঁচটি (স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, গ্রিস, সাইপ্রাস এবং স্পেন) এখনও দেশটির স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় না। বসনিয়া ও হের্জেগোভিনা-কে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রার্থীর মর্যাদা দেওয়া হলেও সদস্যপদ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা এখনও শুরু হয়নি।

কমিশনের বার্ষিক বৃদ্ধির প্রতিবেদনে আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলি দর্শিয়েছে যে, দেশগুলি ইইউ প্রদত্ত নির্দেশিকার বাস্তবায়নে সামান্যই অগ্রগতি করেছে। যেমন মন্টেনেগ্রোর ক্ষেত্রে প্রধানত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দেশটির ‘ইইউ-এর অভ্যন্তরে বিদ্যমান প্রতিযোগিতামূলক চাপ ও বাজার শক্তিগুলির সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য মাঝারি মানের প্রস্তুতি’র দরুন আলাপ-আলোচনা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। যদিও সার্বিয়ার ক্ষেত্রে কারণটি পৃথক। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বেলগ্রেডকে ইইউ-এর বিদেশনীতির সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রেখে চলতে হবে, যা দেশটির রাশিয়ার উপর ইইউ কর্তৃক জারি করা নিষেধাজ্ঞা মেনে না চলার দিকেই ইঙ্গিত করে। একই সঙ্গে এটিতে সদস্যপদ প্রদানের প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কসোভোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রাসেলস দেশ দু’টির আবেদনকে একই সঙ্গে বিবেচনা করলেও উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার সদস্যপদ পাওয়ার বিরুদ্ধে গ্রিস এবং বুলগেরিয়ার ভেটো আলাপ-আলোচনাকে স্তব্ধ করে দেয়।

আলবেনিয়া এবং উত্তর ম্যাসিডোনিয়া প্রবিধান বাস্তবায়নে মধ্যম মানের সাফল্য অর্জন করলেও কসোভোকে ‘আরও গঠনমূলক ভাবে সম্পৃক্ত থাকার জন্য এবং পূর্ববর্তী সকল চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি সার্বিয়ার সঙ্গে একটি সর্বাত্মক আইনগত ভাবে বাধ্যতামূলক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তিতে পৌঁছনোর জন্য যথাযোগ্য অবদান রাখা’র কথা বলা হয়েছে। বসনিয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল যে, রিপাবলিকা সর্পস্কা ২০২২ সালে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কাজে বাধা দান করে এবং ‘ইইউ-এর মনোভাবের সঙ্গে দেশটির সমন্বয় সাধনের বিরোধিতা করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে বাধা দেয়।’

ত্বরান্বিত সদস্যপদ

পশ্চিম বলকান দেশগুলি সদস্যপদের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও সদস্য দেশগুলির মধ্যে অনেকেরই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার ক্লান্তির দরুন প্রক্রিয়াটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইইউ-কে প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার জন্য গতিশীলতা প্রদান করেছে। প্রথমটি হল, ইউক্রেনীয় সঙ্কট ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও প্রভাব রক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কারণ সদস্য দেশগুলি অঞ্চলটিতে রুশ প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট সঙ্কট এই উপলব্ধিরই জন্ম দিয়েছে যে, ইইউ-এর উচিত তার সম্প্রসারিত প্রতিবেশের জন্য আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠা। এই ভাবনা হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেলের বক্তব্যেও প্রতিফলিত হয় – ‘এই যুদ্ধ প্রতিঘাতের তরঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা প্রত্যেককে এবং বিশেষ করে এই অঞ্চলটিকে প্রভাবিত করছে।’ সম্প্রসারণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, ‘সংযোজনের পথটি এক উভমুখী রাস্তা’ এবং একই সঙ্গে তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দেন যে, ইউনিয়নের সদস্য হয়ে ওঠার আগে এই দেশগুলিকে একাধিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যদিও এই শীর্ষ সম্মেলনটিকে এই দেশগুলির বিদেশনীতিকে ইইউ-এর ভাবধারার সঙ্গে সমন্বিত করার এক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই প্রয়াসের নেপথ্যে প্রধান কারণ হল সার্বিয়ার অবস্থান। বেলগ্রেড রাশিয়াকে তার কার্যকলাপের জন্য নিন্দা করা এবং মস্কোর উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রয়াসে শামিল হওয়া, উভয় থেকেই বিরত থেকেছে।

ইউক্রেনীয় সঙ্কট ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও প্রভাব রক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কারণ সদস্য দেশগুলি অঞ্চলটিতে রুশ প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

দ্বিতীয় বিষয়টি হল, চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। বেজিং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং ফোর্টিন প্লাস ওয়ান (১৪+১) উদ্যোগের মাধ্যমে পশ্চিম বলকান দেশগুলির সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ অঞ্চলটি চিনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে এবং শক্তিক্ষেত্র থেকে শুরু করে পরিকাঠামোর উন্নয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বেজিং অঞ্চলটিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক লাভবান হয়েছে সার্বিয়া। দেশটি এখনও পর্যন্ত পরিকাঠামো ও শক্তি প্রকল্পগুলির জন্য অর্থায়নের প্রেক্ষিতে প্রধানত ঋণের আকারে ৭ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ পেতে সমর্থ হয়েছে। অন্য দিকে ইউনিয়ন বিআরআই দ্বারা পরিবেশ, মজুর বা শ্রমিক মানদণ্ড, ঋণ সঙ্কট, আর্থিক নিয়ন্ত্রণের অস্বচ্ছতা ইত্যাদি সংক্রান্ত নীতি ও প্রবিধান মেনে না চলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগগুলি প্রকাশ্যে আসে যখন মন্টেনেগ্রো দ্বারা গৃহীত ঋণের পরিমাণ দেশটির গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি-র ১০০% মূল্যের সীমা অতিক্রম করে যায় এবং দেশের হাইওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য ২০১৪ সালে গৃহীত চিনা ঋণ পরিশোধ করতে দেশটি সমস্যার মুখে পড়ে বলকান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক অনুযায়ী, মোট ১২২টি প্রকল্পের সঙ্গে চিনা বিনিয়োগ জড়িত, যেগুলির মোট মূল্য ২৮ বিলিয়ন ইউরো।

ইইউ কি প্রস্তুত?

সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমান গতিশীলতার নেপথ্যে দু’টি প্রধান কারণ হল – ইউক্রেন সঙ্কট পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ভয় এবং অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চিনা প্রভাব। এখন প্রশ্ন হল, এই গতিশীলতা কি আদৌ বজায় রাখা সম্ভব হবে? এই উদ্বেগের মুখ্য কারণটি হল, অঞ্চলটি ইইউ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হলেও ইউনিয়ন অন্যান্য নীতি অগ্রাধিকার নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ইউক্রেন সঙ্কট মোকাবিলা, জ্বালানি সঙ্কট, কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, পরিযান, জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তি রূপান্তর এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। সর্বোপরি যোগদান প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং প্রার্থী দেশগুলিকে তার জন্য বিষয়ভিত্তিক ভাবে একত্রিত অধ্যায়গুলিতে সংজ্ঞায়িত একগুচ্ছ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শর্ত পূরণ করতে হবে।

ইউনিয়ন বিআরআই দ্বারা পরিবেশ, মজুর বা শ্রমিক মানদণ্ড, ঋণ সঙ্কট, আর্থিক নিয়ন্ত্রণের অস্বচ্ছতা ইত্যাদি সংক্রান্ত নীতি ও প্রবিধান মেনে না চলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।

ইইউ-এর জনমত সম্প্রসারণের পক্ষে হলেও ২০২১ সালের উইনটার পোল বা শীতকালীন নির্বাচনের ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে যেটি ২০২২ সালের ইইউ ব্যারোমিটার সামার পোল বা গ্রীষ্মকালীন নির্বাচনে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই সমন্বয়ের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর গতির। এমনটা হওয়ার কারণ হল, এক দিকে  সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে দর্শানো হয়েছে যে, ইউনিয়নের অংশ হয়ে ওঠার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে অর্থবহ সংস্কার সাধন করতে হবে এবং অন্য দিকে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ইত্যাদি সদস্য দেশগুলির প্রক্রিয়াটির প্রতি অনীহা। সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াটি পরিযান, বিদেশনীতির সমন্বয় সাধন, জাতীয় বাজেট এবং অর্থনৈতিক বাজারের সমন্বয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দেয় এবং এগুলি প্রক্রিয়াটিকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম। সর্বোপরি ২০২২ সালের জুন মাসে কাউন্সিলের উপসংহারে এ কথা বলা হয়েছে যে, প্রক্রিয়াটি ‘ইইউ-এর নতুন সদস্য গ্রহণ করার ক্ষমতা’র উপরেও নির্ভর করবে। ইউক্রেন সঙ্কট এবং অঞ্চলটিতে চিনা আগ্রহ ইইউ সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াটিকে গতিশীলতা প্রদান করলেও আগামিদিনে সেই গতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।


(১) মন্টেনেগ্রো, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া ও হের্জেগোভিনা এবং কসোভো।

(২) ম্যাসিডোনিয়ার নাম ব্যবহারের দরুন গ্রিস সংযোজন সংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ করে দেয়। গ্রিস ও উত্তর ম্যাসিডোনিয়া উভয়েই সমস্যাটির সমাধানের জন্য এবং ভবিষ্যতে পুনরায় সংযোজন সংক্রান্ত আলোচনা চালানোর উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে প্রেসপা এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.