Published on Jul 27, 2023 Updated 0 Hours ago
এক পরিবর্তনশীল বিশ্বক্রমে ব্রিকস-এর ভবিষ্যৎ
এক পরিবর্তনশীল বিশ্বক্রমে ব্রিকস-এর ভবিষ্যৎ

২০১২ সালে সদস্য দেশগুলির মধ্য থেকে এক কূটনীতিবিদ এক বার ব্রিকসকে ‘আলোচনার মঞ্চ নয়, একটি সমন্বিত হওয়ার মঞ্চ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।(১) যাই হোক, তার পর থেকে বিশ্বজুড়ে এবং দেশগুলির মধ্যে নানা ঘটনা ঘটেছে। ২০১০-এর দশকের গতিশীল অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হওয়া; বিশ্বব্যাপী অতিমারি এবং তার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়; এবং সর্বোপরি দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যার মধ্যে বেশ কিছু ব্রিকস সদস্য দেশও অন্তর্ভুক্ত, এই সব কিছুর নিরিখে ব্রিকসের মধ্যে স্বার্থের সমন্বয়ের কি আদৌ কোনও অবকাশ রয়েছে?

পর্যালোচনা

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে যখন গোষ্ঠীটি শুধুমাত্র ‘ব্রিক’ ছিল – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চিনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য যে শব্দবন্ধ তৈরি করা হয়েছিল – সেই নতুন গোষ্ঠীটি কতটা পরস্পরের সঙ্গে সমন্বিত হতে সক্ষম হয়, তা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছিল৷ কেউ কেউ এমন কথাও বলেছিলেন যে, ব্রিক স্বল্পমেয়াদে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বক্রমের প্রতি একটি বিরোধপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করবে। এবং ২০১১ সাল থেকে ব্রিক ব্রিকস-এ রূপান্তরিত হওয়ার পরে যে সত্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলি তার উত্থানের সাক্ষী থেকেছে, তাদের সঙ্গে থেকে এবং প্রতিষ্ঠিত নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করতে পছন্দ করেছে। যদিও তারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করার প্রয়োজনীয়তার উপরও ব্যাপক জোর দিয়েছে।

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে যখন গোষ্ঠীটি শুধুমাত্র ‘ব্রিক’ ছিল – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চিনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য যে শব্দবন্ধ তৈরি করা হয়েছিল – সেই নতুন গোষ্ঠীটি কতটা পরস্পরের সঙ্গে সমন্বিত হতে সক্ষম হয়, তা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছিল৷

যে সূচকের নিক্তিতেই মাপা হোক না কেন, একটি গোষ্ঠী হিসাবে ব্রিকস এক চিত্তাকর্ষক উদ্যোগ হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। এটির অংশীদার দেশগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রভাব নজর কাড়ার মতো।

তবে, অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র চিনই ‘অবিচ্ছিন্ন দ্রুত বৃদ্ধির’ উত্তরাধিকার মেনে চলে বলে মনে হয়: এর অর্থনীতি কৃষিক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, দেশটির জিডিপি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি সর্বাধিক বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকেও (এফডিআই,বাস্তবিক ভিত্তিতে) আকর্ষণ করেছে। এ কথার উপর জোর দেওয়া উচিত যে, কোভিড-১৯ অতিমারি এবং চিনা রিয়েল এস্টেট বাজারের অশান্তির ফলে সৃষ্ট সাম্প্রতিকতম অর্থনৈতিক ধাক্কার পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে চিনে মন্দার চিহ্ন লক্ষ করা গিয়েছে। বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদই দেশের ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যা, নিম্ন উদ্ভাবন-হার এবং অস্পষ্ট সরকারি বাজার-নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপের মতো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অন্য দিকে, গোষ্ঠীটির অন্য একটি সদস্য দেশের উত্থানও লক্ষ্য করা উচিত: গত দশকে ভারত তার মাথাপিছু জিডিপি-র হার প্রায় দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে দেশটির এফডিআই সূচকটি ব্রাজিলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করে এবং তাকে ছাপিয়েও যায় – শুধুমাত্র ২০২০ সালেই এটি দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতকে গোষ্ঠীটির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত করেছে। বাকি তিন সদস্য দেশের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতাকে একই সময়কালের জন্য ‘স্থিতিশীল বৃদ্ধি’র সঙ্গে তুলনা করা কঠিন।

সামগ্রিকভাবে, ব্রিকসের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলা যেতে পারে। চিন ও রাশিয়ার মতো দু’টি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে বিশ্ব আগ্রহী এবং দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর নজরও রেখেছে। তাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক কার্যকলাপ নির্বিশেষে ব্রিকসের সহযোগিতার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এই দুই রাষ্ট্রের নীতি নির্দেশনা এবং কার্যকারিতার অন্তত এক দশকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। অন্য তিন সদস্যের মধ্যে উন্নয়নগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থানান্তরিত হয়নি, কারণ তারা তাদের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।

বাকি তিন সদস্য দেশের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতাকে একই সময়কালের জন্য ‘স্থিতিশীল বৃদ্ধি’র সঙ্গে তুলনা করা কঠিন।

২০০৬ সাল থেকে সদস্য দেশগুলি একটি নিবিড় ও প্রত্যক্ষ আলাপ-আলোচনা শুরু করে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস-কে বিবেচনা করা অনুচিত হবে। ওয়ার্কিং গ্রুপের অধিবেশনের কর্মসূচিতে একবার চোখ বোলালেই সকল প্রাসঙ্গিক পরিসরে, যেমন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, বাণিজ্য, আর্থিক ও মুদ্রাসংক্রান্ত, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও শিক্ষা এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতা নজরে পড়ে। ব্রিকস-এর কার্যসূচিও অংশীদারদের চাহিদা ও বাহ্যিক পরিস্থিতি অনুযায়ী বিকশিত ও প্রসারিত হয়েছে। এটি এখনও পর্যন্ত সদস্য দেশগুলির অভিন্ন স্বার্থকেই দর্শায়। যদিও তা পরিবর্তিত হতে পারে, যেহেতু গোষ্ঠীটির জন্য ‘শান্তিপূর্ণ সময়’ বা ‘স্বাভাবিক ভাবে বাণিজ্য’ করার সূক্ষ্ম ভারসাম্য শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণগুলি নিম্নলিখিত:

  • চিনের প্রভাবশালী অবস্থান

কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছেন যে, ব্রিকস একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অস্তিত্ব লাভ করেছে। কোনও একক রাষ্ট্র বা কোনও জোট বা রাষ্ট্রের গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রভাবশালী অবস্থান গ্রহণ করতে দেওয়া উচিত নয়… এই প্রত্যয়ই নতুন ক্রমের ভিত্তি হওয়ার কথা ছিল। এটি স্পষ্টতই আর সত্যি নয়। কারণ চিনের উত্থান এবং গোষ্ঠীর মধ্যে তার উচ্চতর অবস্থান… উভয়ই তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের প্রতি তার বিরোধী অবস্থান সাধারণ ভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং তদুপরি ব্রিকস-এর স্বতন্ত্র লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

  • কোভিড-১৯ অতিমারি

২০২০ সালের গোড়া থেকেই বিশ্বব্যাপী সার্স কোভিড-২-এর প্রভাব স্পষ্ট ছিল। কোভিড-১৯ অতিমারির তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও এর সম্পূর্ণ ফলাফল এখনও অজানা। এটি বিশ্বায়নের বছরগুলিকে থামাতে বা উলটোপথে নিয়ে যেতে সক্ষম না হলেও সরবরাহ শৃঙ্খলের বৈচিত্র্যকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বহুমুখীকরণ এবং দক্ষিণী রাষ্ট্রগুলির স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে আন্দোলনের উপর জোর দেওয়ার বিষয়টি কত দূর যাবে এবং তার প্রভাব কী হবে, তা লক্ষ্যণীয়।

  • ইউক্রেনে যুদ্ধ

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যবস্থার সংবেদনশীল ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্বের দুর্বল অর্থনীতিতে অতিরিক্ত ধাক্কা ছাড়াও এটি জাতীয় অবস্থানের একটি মেরুকরণ ঘটিয়েছে, যেমনটা শেষবার ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়ে দেখা গিয়েছিল। এটি অবশ্যই ‘যে আমাদের সঙ্গে নেই, সে আমাদের বিরুদ্ধে’-এই উচ্চারণকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে। যদিও কয়েকটি দেশের জন্য এই দুই অবস্থানের মাঝেও একটি প্রশস্ত, ছায়াময় ধূসর পরিসর বর্তমান।

একটি অর্থনৈতিক ও আর্থিক সঙ্কট চলাকালীন এবং এই সঙ্কটের কারণেই ব্রিকসের সূচনা হয়।

২০১৪ সালের পূর্ববর্তী রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষের ক্ষেত্রের মতোই ব্রিকস আরও একবার অস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। রাশিয়া ব্রিকস-এর অন্যতম সদস্য হওয়ার দরুন গোষ্ঠীটির কোনও সদস্য দেশই সরাসরি ইউক্রেনের উপরে হামলার নিন্দা করেনি। এই যুক্তির সপক্ষে বলা যায়, চিনের তীব্র পশ্চিমবিরোধী অবস্থান এবং রাশিয়ার সঙ্গে সীমাহীন অংশীদারিত্বের দাবি; রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক (মূলত নিরাপত্তার বিষয়কেন্দ্রিক, যা পরবর্তী কালে অর্থনীতির একাধিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রসারিত হয়েছে) এবং ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে তাদের ইউরোপীয় অংশীদারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মেনে চলার ঘটনাবলি।

অনেকের মতেই, একটি অর্থনৈতিক ও আর্থিক সঙ্কট চলাকালীন এবং এই সঙ্কটের কারণেই ব্রিকসের সূচনা হয়। এটি তাদের বক্তব্যের প্রচারে এবং সংস্কারের ধারণাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সফল হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ব আরও একটি সঙ্কটে জড়িয়ে পড়েছে এবং এ ক্ষেত্রে চিন এবং রাশিয়ার বক্তব্য ও পদক্ষেপ পাশ্চাত্যের দেশগুলিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

ব্রিকস সংক্রান্ত পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি

শুরুতে যেমনটা বলা হয়েছে, পশ্চিমী দেশগুলি ব্রিকস-এর গঠনকে উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছিল। যদিও প্রাথমিক উৎসাহ কিছু দিন পরেই অবিশ্বাস এবং সংশয়ে পরিণত হয়, যখন তারা গোষ্ঠীটির লক্ষ্য এবং সংহতি নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তির দেশগুলির ব্রিকসের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিসরের উপর মনোনিবেশ করা, পারস্পরিক পার্থক্যের উপর জোর দেওয়া এবং অন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিতকরণে অবহেলার বিষয়গুলিতে মোহভঙ্গ হয়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন পর্যন্ত ব্রিকস-এর প্রকৃতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, যা হল: দেশগুলি একটি ‘ক্লাব’ (বা সমষ্টি) হিসাবে তাদের সদস্যদের অবস্থানকে একত্র করার উদ্দেশ্যে একটি উচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা প্রক্রিয়ার পরিবর্তে তাদের অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করছে।

এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তির দেশগুলির ব্রিকসের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিসরের উপর মনোনিবেশ করা, পারস্পরিক পার্থক্যের উপর জোর দেওয়া এবং অন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিতকরণে অবহেলার বিষয়গুলিতে মোহভঙ্গ হয়।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তিত বাস্তবতার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোটের নিজস্ব পরিকাঠামোকেও (প্রায়শই একাধিক জোটের আওতাভুক্ত সদস্যপদ-সহ) সশক্ত করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যগুলির মধ্যে রয়েছে অউকাস, পুনরুজ্জীবিত কোয়াড— ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মতো সদস্য দেশ-সহ একটি কৌশলগত গোষ্ঠী, ২+২ ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ বা আইটুইউটু গ্রুপ— ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জোট। ব্রিকস-এর সদস্যদের মধ্যে এই আন্তর্জাতিক জোট থেকে ভারতই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বলে করা মনে হয়। অন্য দিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজের সদস্য দেশগুলির সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া আপাতদৃষ্টিতে শিথিল বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক শক্তি জোট ও পরিকাঠামোগুলির প্রতি কোনও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্রিকস দেশগুলিও যার অন্যতম সদস্য। রুশ-ইউক্রেন ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব এবং কঠোর চিনা অবস্থানের প্রেক্ষিতে পশ্চিমী দেশগুলি দ্বারা একটি একক ব্রিকস নীতির বিকাশ এক প্রকার অসম্ভব।

উপসংহার

তা হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীটির দু’টি সদস্য দেশ প্রধান ‘নিপীড়নকারী’ হওয়ার দরুন ব্রিকস-এর অভ্যন্তরে সমন্বয়ের কি কোনও জায়গা আছে? খুব সম্ভবত, হ্যাঁ।

স্বল্পমেয়াদে ব্রিকস একটি ‘সেতু’ হিসাবে কাজ করতে পারে: রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময় এবং পরে বিশ্ব রাজনীতিতে তার বিচ্ছিন্নতাকে প্রশমিত করতে এবং যোগাযোগ ও বাণিজ্য শৃঙ্খলগুলি উন্মুক্ত রাখতে সহায়ক হতে পারে। এটি রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এবং আরও সাধারণ ভাবে তার আগ্রাসী বৈশ্বিক ক্ষমতা উচ্চাকাঙ্ক্ষা আড়াল করার উপায় অন্বেষণ করার সময়ে চিনকেও সাহায্য করতে পারত। কিন্তু চিনে কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে শি জিনপিংয়ের পুনঃনির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে এবং তা ভবিষ্যতে আরও আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করতে চলেছে।

রুশ-ইউক্রেন ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব এবং কঠোর চিনা অবস্থানের প্রেক্ষিতে পশ্চিমী দেশগুলি দ্বারা একটি একক ব্রিকস নীতির বিকাশ এক প্রকার অসম্ভব।

দীর্ঘমেয়াদে গঠনমূলক আলাপ-আলোচনার মঞ্চ হিসাবে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে বহুমুখী পরিবর্তনের প্রচারক হিসাবে ব্রিকসের ভবিষ্যৎ গ্লোবাল সাউথের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও দৃশ্যমান করে তুলতে পারে এবং রাশিয়া এবং চিনের অবস্থানের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে যে, তারা যুক্ত হতে চাইবে, না কি তাদের চাহিদা মতো পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালাবে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমী শক্তিগুলির অন্য দক্ষিণী রাষ্ট্রগুলির অবস্থানের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ তারা পশ্চিম থেকে প্রাপ্ত তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন নীতিগুলির সঙ্গেই থাকবে, না কি ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দ্বারা বিবৃত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রস্তাবিত নতুন যুগের স্বপ্ন দ্বারা প্রলুব্ধ হবে?

এ ছাড়াও ব্রিকসের ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের অবস্থানের উপর এবং গোষ্ঠীটিতে চিনা আধিপত্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পশ্চিমী দেশগুলি তার নিরাপত্তা ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে কি না, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। তার স্বাধীন নীতির পথে হেঁটে এখনও পর্যন্ত ভারত পশ্চিম, রাশিয়া এবং চিন-সহ বিবিধ অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং বিকল্পের পথও খোলা রেখেছে।


১) অলিভার স্টুয়েঙ্কেল, ‘দ্য ব্রিকস অ্যান্ড দ্য ফিউচার অব গ্লোবাল অর্ডার’

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.