Expert Speak India Matters
Published on Feb 07, 2022 Updated 11 Days ago

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট বৃহৎ ঘোষণার ক্ষেত্রে অনাড়ম্বর, বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গির এবং প্রকাশে জাঁকজমকহীন — ঠিক যে রকম একটি কেন্দ্রীয় বাজেট হওয়া উচিত।

শিকড় ভারতে, বাজেট ২০২২ আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে, বৃদ্ধিকে শক্তি জোগায়

Image Source: U.S. Secretary of Defense — Flickr/CC BY 2.0

শিকড় ভারতে, বাজেট ২০২২ আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে, বৃদ্ধিকে শক্তি জোগায়

এই প্রতিবেদনটি বাজেট ২০২২: পরিসংখ্যান এবং তদুপরি সিরিজের অংশ।


প্রাচীন ভারতের এক সর্বাত্মক ধারণা যেখানে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ব্যক্তিগত দর্শনের মূল ভিত্তি, ২০২২ সালের বাজেটের ঘোষণায় আধুনিক ভারতের দু’টি প্রধান উদ্বেগই পরিস্ফুটিত হয়েছে — বৃদ্ধি এবং তার সংযুক্ত দোসর জনকল্যাণ। সীতারামন মহাভারতের শান্তিপর্ব থেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘রাজাকে যে কোনও ধরনের শিথিলতা পরিত্যাগ করে এবং ধর্মের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে কর আদায়ের মাধ্যমে জনগণের যোগক্ষেমের (কল্যাণ) ব্যবস্থা করতে হবে। একুশ শতকে ভারতের নীতিনির্ধারণকারী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশা ৫,০০০ বছর আগে যেখানে ছিল, আজও সেখানেই রয়ে গেছে এবং এই প্রক্রিয়ায় সম্পদের পুনর্বণ্টন ব্যতীত সম্পদ সৃষ্টির অনুমতি দেওয়া হয় না। তাঁর পূর্বসূরিদের মতো সীতারামনের বাজেটও এই দু’টি সমান্তরাল ধারার উপরে ভিত্তি করে এগিয়েছে। তিনি একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, সরকারের লক্ষ্য ‘সর্বাত্মক জনকল্যাণকে কেন্দ্রে রেখে একটি ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক স্তরে বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়ার পাশাপাশি মাইক্রো-অর্থনৈতিক স্তরের সর্বাঙ্গীণ জনকল্যাণে ব্রতী হওয়া।’

একুশ শতকে ভারতের নীতিনির্ধারণকারী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশা ৫,০০০ বছর আগে যেখানে ছিল, আজও সেখানেই রয়ে গেছে এবং এই প্রক্রিয়ায় সম্পদের পুনর্বণ্টন ব্যতীত সম্পদ সৃষ্টির অনুমতি দেওয়া হয় না।

এবং তা সত্ত্বেও এই বাজেট বৃদ্ধির পথকে আরও সক্ষম করে তুলবে। বিরোধীরা এটা একেবারেই পছন্দ করবেন না। বড় বা ছোট স্তরের ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলি অবশ্য এই বাজেট খুবই পছন্দ করবে। কিছু অস্থায়ী ওঠানামার পরে বাজারগুলি থিতু হবে এবং মেনে নেবে যে, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা থাকলেও ভারতের অন্তর্নিহিত অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আই এম এফ অনুসারে, ভারত ২০২২ সালের মধ্যেনয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে; ইকনমিক সার্ভে আশা করছে যে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ চলাকালীন ভারতের বৃদ্ধি হবে ৮.০-৮.৫ শতাংশ।

অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সর্ব বৃহৎ চালিকা শক্তি হবে সরকারি পুঁজি বিনিয়োগ (পাবলিক ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট)। ভারত বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অতিমারি-পরবর্তী অর্থনীতি হয়ে উঠে এলেও, বিদ্যমান ক্ষমতার ব্যবহার এবং ক্ষমতা বর্ধনকারী বিনিয়োগ চক্রগুলির মধ্যে ব্যবধান থেকেই যাবে। এটা স্পষ্ট যে অন্তর্বর্তী সময়ে করদাতাদের কাঁধে বাড়তি বোঝার চাপ থাকবে। এই পথে হেঁটে বাজেটে ২০২২-২৩ সালে মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ৩৫.৪ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকা (১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যা ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২.২ গুণ। সীতারামন বলেছেন, এই বিনিয়োগ ব্যক্তিগত বিনিয়োগে জোয়ার আনতে প্রয়োজন: ‘সরকারি বিনিয়োগকে নেতৃত্ব দিয়ে চলতে হবে এবং ২০২২-২৩ সালে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ও চাহিদাকে পাখির চোখ করে তুলতে হবে।’

এর অর্থ হল এই যে, সীতারামন শুধু মাত্র সরকারের ইচ্ছানুযায়ী অর্থ বিনিয়োগ করছেন না, বরং পাশাপাশি তিনি সেই সব অর্থনীতির প্রধানদের কথাও শুনছেন যাঁরা বাস্তবের মাটিতে থেকে কাজ করছেন। এবং এ ভাবেই সীতারামন বাজেটের মাধ্যমে সরকারি নীতি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন মাসেরও কম সময় আগে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সভাপতি কুমার মঙ্গলম বিড়লা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আগামী দশকে বেসরকারি খাত থেকে বড় পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগ করা হবে। তিনি এটিকে ‘ক্যাপেক্স মহোৎসব’ বলে অভিহিত করেছেন। সীতারামন সম্ভবত এ সম্পর্কে অবগত ছিলেন, আর্থিক ভাবে তিনি এই সম্ভাব্য মহোৎসবের প্রদীপ জ্বালাতে সাহায্য করেছেন। এ রকমটা কেউ বলতেই পারেন যে, ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার যথেষ্ট নয় এবং তা হয়তো ঠিকও। কিন্তু জনকল্যাণমূলক রাজনীতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও সীতারামন যথেষ্ট ভাল করেছেন।

কার্যকর পরিবহণ ও লজিস্টিক ব্যবস্থা ছাড়া কোনও অর্থনীতির বৃদ্ধি হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বাজেটটি গতি শক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মাল্টি-মোডাল সংযোগের জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের সাতটি মূল চালিকাশক্তির উপর নির্ভরশীল এবং সেগুলির পরিপূরকও। এগুলির মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেলপথ, মাল্টি-মোডাল পরিবহণ, মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক পার্ক, নাগরিক পরিবহণ এবং সংযোগ ব্যবস্থা, রোপওয়ে এবং পরিকাঠামোর জন্য দক্ষতাবৃদ্ধি — যার প্রতিটিই এক একটি বৃদ্ধির অনুঘটক।

তিন মাসেরও কম সময় আগে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সভাপতি কুমার মঙ্গলম বিড়লা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আগামী দশকে বেসরকারি খাত থেকে বড় পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগ করা হবে।

বৃহত্তর আঙ্গিকে ২০২২ সালের বাজেট ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৬.৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছে। এটি ২০২১-২২-এর বাজেট অনুমানের চেয়ে ৪০ বেসিস পয়েন্ট কম এবং সংশোধিত সংখ্যার চেয়ে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কম। চিনে সৃষ্ট অতিমারি অব্যাহত থাকায় ২০২২-২৩ সালে ১০ থেকে ২০ বেসিস পয়েন্ট লঙ্ঘনের সম্ভাবনা দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাজেটের বাইরে যা ঘটছে, তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের জি এস টি সংগ্রহের পরিমাণ ১.৪ লক্ষ কোটির টাকার চেয়েও বেশি, যা একটি সর্বকালীন রেকর্ড। অন্য ভাবে বলতে গেলে, বৃদ্ধি পুনর্বহাল হয়েছে এবং তা উঠতির দিকে। যদি ব্যয় ব্যবস্থাপনাকে সুদক্ষ করে তোলা হয়, তা হলে চূড়ান্ত রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধির বদলে হ্রাসও পেতে পারে। যেমনটা আমরা সবাই জানি, জি২০ দ্বারা পরিচালিত প্রধান অর্থনীতিগুলি রাজস্ব ঘাটতির পবিত্রতাকে নৈতিক বিদায় জানিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব ক’টি দেশই এই সমস্যার সঙ্গে যুঝছে এবং ভারত একা এই বোঝা বহন করবে না।

২০২২ সালের বাজেট একটি দু’দফার নীতিগত উদ্যোগের মাধ্যমে ক্রিপ্টো-কারেন্সি কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার ঘাটতিগুলিকে পূরণ করে। একাধিক বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টো-কারেন্সির আকারে তাঁদের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন যা ব্যক্তিগত সংস্থাগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে দেশ নিজেদের অর্থ ব্যক্তিগত উদ্যোগপতিদের কাছে বিনিয়োগ করে, তার খুশির কোনও কারণ নেই। এক দিকে, সীতারামন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে বর্তমান অর্থবর্ষ চলাকালীন ডিজিটাল টাকা চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন। এর ফলে ভারত তার অর্থনীতিতে অর্থের গতিময়তা বৃদ্ধি করবে, দেশের বিদ্যমান মুদ্রা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং বৃদ্ধির পথে হাঁটবে। পাশাপাশি ২০২২ সালের বাজেটে ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পদের উপর ৩০ শতাংশের বিশাল পরিমাণ কর বসানো হয়েছে। সব ছাড় খারিজ করেছে, অন্য যে কোনও আয়ের সাহায্যে ডিজিটাল সম্পদে ক্ষতি পূরণের সম্ভাবনাকে নির্মূল করেছে এবং আয়ের উৎসেই অতিরিক্ত ১ শতাংশ কর যোগ করেছে। এই প্রকার বিনিয়োগকে বৈধতা দেওয়ার এটি একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা যেতে পারে। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে, এর সংশ্লিষ্ট কর এতটাই বেশি যে, এটা সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ে।

২০২২ সালের বাজেটে ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পদের উপর ৩০ শতাংশের বিশাল পরিমাণ কর বসানো হয়েছে। সব ছাড় খারিজ করেছে, অন্য যে কোনও আয়ের সাহায্যে ডিজিটাল সম্পদে ক্ষতি পূরণের সম্ভাবনাকে নির্মূল করেছে এবং আয়ের উৎসেই অতিরিক্ত ১ শতাংশ কর যোগ করেছে।

অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাজেটের একটি অংশ অনালোচিতও থেকে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সীতারামন বলেছেন, ‘২৫,০০০-এরও বেশি অনুমোদন হ্রাস করা হয়েছে এবং ১৪৮৬টি কেন্দ্রীয় আইন বাতিল করা হয়েছে।’ রদ হওয়া আইনগুলি প্রকাশ্যে চলে এসেছে কিন্তু ২৫,০০০ অনুমোদন এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি এবং আমরা বিজ্ঞপ্তি তালিকার অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু আমরা যদি এই হ্রাসের পরিসংখ্যান মেনেও নিই, তবে এটি ব্যবসার পথ সুগম করার ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ যা আগামিদিনে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে আরও শক্তিশালী করবে। আমাদের সংশয়ের প্রধান কারণ হল, বেশিরভাগ ব্যবসায়িক সম্মতিগুলি রাজ্য সরকারের স্তরে অনুমোদিত হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নয়। যদিও উভয় সরকারই আইনি ভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এই নিয়ন্ত্রণ সমস্যা দূর করা রাজ্য সরকারের পক্ষে দুরূহ হবে। কেন্দ্র সরকার বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মাধ্যমে এমনটা শুরু করতে পারে।

বহু দিন আগে কেন্দ্রীয় বাজেট ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান বার্ষিক নীতি সংক্রান্ত নথি। ১৯৯১-৯২ সালে অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাজেট ঘোষণায় সম্মিলিত নীতি গ্রহণের পথ চলা শুরু হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে ভারতীয় বাজেট গণমাধ্যমের একটি বিরাট ঘটনা হয়ে ওঠে। ২০১৪ সাল থেকে বাজেট ঘোষণা অনেক পেশাদার হয়ে উঠেছে। একুশ শতকের অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী, নীতিনির্ধারণের বিষয়টি নথিতে সীমাবদ্ধ কর্মসূচির বদলে বার্ষিক চিন্তনের প্রবাহ হয়ে উঠেছে। সেই প্রবাহের সূত্র ধরে সীতারামনের ২০২২ অর্থবর্ষের বাজেট বৃদ্ধির এক নতুন আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার ঘটিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট বৃহৎ ঘোষণার ক্ষেত্রে অনাড়ম্বর, বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গির এবং প্রকাশে জাঁকজমকহীন — ঠিক যে রকম একটি কেন্দ্রীয় বাজেট হওয়া উচিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.