Published on May 10, 2024 Updated 0 Hours ago

অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্প বনাম বাইডেনের পুনর্প্রতিদ্বন্দ্বিতা না চাইলেও বাস্তবে তেমনটাই ঘটতে চলেছে।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন?

প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ।


খুব বেশি দিন আগের ঘটনাও নয়, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে চার জন প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন: ডোনাল্ড ট্রাম্প, নিকি হ্যালি, রন ডিসান্টিস এবং বিবেক রামস্বামী। তার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিযোগিতা ধীরে ধীরে আরও নির্ণায়ক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

ডেমোক্র্যাটিক বা রিপাবলিকান শিবির কেউই তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও আইওয়া ককাস, নিউ হ্যাম্পশায়ার রিপাবলিকান প্রাইমারি এবং নেভাদা ককাস এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে। তিনটি ক্ষেত্রেই জয়ের নেপথ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে হ্যালির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের জয় অনেকের মতেই হ্যালির জন্য শেষের সূচনা করবে, যা নিউ হ্যাম্পশায়ারের রাজনৈতিক প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৬৮ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে একটি খারাপ ফলাফল প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে তার প্রেসিডেন্ট পদের প্রচার শেষ করতে বাধ্য করে।

 

নিউ হ্যাম্পশায়ারে হ্যালির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের জয় অনেকের মতেই হ্যালির জন্য শেষের সূচনা করবে, যা নিউ হ্যাম্পশায়ারের রাজনৈতিক প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

২০০১ সাল থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ার রিপাবলিকান প্রাইমারি প্রতি বছর প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীর সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করে এসেছে২৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ ক্যারোলিনা প্রাইমারি হ্যালির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সেখানে তিনি ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ডেমোক্র্যাটিক শিবিরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেতাঁর গণতান্ত্রিক সমবয়সীদের কাছ থেকে সামান্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারেন তবে বিচার বিভাগের একটি সাম্প্রতিকতম ৩৪৫ পৃষ্ঠার বিশেষ পরামর্শমূলক প্রতিবেদনে কেবলমাত্র বাইডেনে‘দুর্বল স্মৃতিশক্তিনিয়েই নয়, বরং তাঁর শ্রেণিবদ্ধ নথিগুলি পরিচালনা করার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র এবং কর্নেল ওয়েস্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং গ্রিন পার্টি থেকে জিল স্টেইন এখনও কোন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হননি।

বাইডেন-ট্রাম্প পুনর্প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এই বছরের নভেম্বরে হতে চলা জাতীয় নির্বাচনের দৌড়ে হওয়া প্রাথমিক প্রতিযোগিতা এবং ককাসের সবচেয়ে সম্ভাব্য বাস্তব হতে চলেছে।

ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ১২১৫ জন প্রতিনিধির প্রয়োজন এবং তিনি ৬২ জন প্রতিনিধি নিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার দরুন বিশেষ অসুবিধা ছাড়াই নিজের পথ সুরক্ষিত করার বিষয়ে এগিয়ে রয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে সমর্থনের বিষয়টি এই প্রথম বারের মতো নয় এবং ট্রাম্প বর্তমানে তাঁর অনুগত ভোটারদের সমর্থনের পাশাপাশি কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সমর্থন পেয়েছেন। সম্ভবত, তাঁর আইনি প্রতিবন্ধকতাই ট্রাম্পের মনোনয়ন বা বিজয় রোধে একমাত্র বাধা হতে পারে।

যাই হোক, নানাবিধ সমীক্ষা দর্শিয়েছে যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর প্রতি সমর্থন বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে, হ্যালির উপর তাঁর নিজ স্টেট সাউথ ক্যারোলিনায় প্রাথমিক নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে।

 

রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে সমর্থনের বিষয়টি এই প্রথম বারের মতো নয় এবং ট্রাম্প বর্তমানে তাঁর অনুগত ভোটারদের সমর্থনের পাশাপাশি কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সমর্থন পেয়েছেন। সম্ভবত, তাঁর আইনি প্রতিবন্ধকতাই ট্রাম্পের মনোনয়ন বা বিজয় রোধে একমাত্র বাধা হতে পারে।

 

নিউ হ্যাম্পশায়ার ভোটদানের বিন্যাস অবশ্য দর্শিয়েছে যে, স্বাধীন ভোটার, কলেজ-শিক্ষিত ভোটার এবং রিপাবলিকানদের একটি অংশ - যাঁরা জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গাকে ট্রাম্পের উস্কানি বা বিদ্রোহের ফলাফল বলে মনে করেন এবং বিশ্বাস করে যে, তার জন্য ট্রাম্পের আইনত জবাবদিহি করা উচিত - হ্যালিকে ভোট দিয়েছে। ট্রাম্প তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করলে ভোটারদের এই অংশটি ভোট স্থানান্তরিত হবে অথবা আদৌ তাঁরা ভোট দেবেন কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

রিপাবলিকানরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, তাদের দলের বেশির ভাগ ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

ট্রাম্পের সুবিধার মধ্যে একটি হল এই যে, তিনি মার্কিন ভোটারদের কাছে এক পরিচিত সত্তা এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তাঁরা কী পেতে চলেছেন, সে সম্পর্কে তাঁরা অবগত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চল থেকে বড় অংশের ভোট ট্রাম্পের সমর্থনে গিয়েছে, যেখানে তাঁর প্রার্থিতাকে অভিবাসনের বিরুদ্ধে একটি বিষয় হিসাবে দেখা হচ্ছে এবং এর ফলে গ্রামীণ ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এই প্রবণতাটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও সম্ভবত আইওয়াতে এই রূপান্তরটি চোখে পড়ার মতো। আইওয়া একটি সুইং স্টেট থেকে রিপাবলিকানদের জন্য শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।

এ দিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে তাঁর কারণ দর্শিয়ে বলেছেন যে, ‘আমরা ওঁকে (ট্রাম্পকে) জিততে দিতে পারি না।’ একটি সাম্প্রতিক বক্তৃতায় বাইডেন জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, গণতন্ত্র তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের একটি কেন্দ্রীয় কারণতাঁর গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র বিষয়ক প্রচার একটি প্রাথমিক কেন্দ্র হয়ে রয়ে গিয়েছে এবং এই প্রচারই তাঁকে ট্রাম্পের চেয়ে পৃথক করেছে। দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য একটি অস্তিত্বগত সঙ্কট… এ হেন প্রচার ভোটারদের ততটা মনোগ্রাহী হয়নি, যতটা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আশা করেছিল।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চল থেকে বড় অংশের ভোট ট্রাম্পের সমর্থনে গিয়েছে, যেখানে তাঁর প্রার্থিতাকে অভিবাসনের বিরুদ্ধে একটি বিষয় হিসাবে দেখা হচ্ছে এবং এর ফলে গ্রামীণ ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

 

বাইডেনের রাজনৈতিক প্রচারাভিযান কাঙ্ক্ষিত গতি ও মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন কারণের দরুন বাইডেনের প্রচারাভিযানের ধার কমেছে। পরবর্তী মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ, তাঁর বয়স এবং আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ অভিবাসন কৌশল বাইডেনের বিপক্ষে গিয়েছে২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন মানুষের অভিবাসনের ঘটনা ঘটেছে। আইওয়া এবং নিউ হ্যাম্পশায়ার উভয় ক্ষেত্রেই ভোটাররা নির্বাচনী প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন বা অভিবাসনকেও অর্থনীতির মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মূল্যায়ন করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অভূতপূর্ব প্রবাহের জন্য দায়ী আসলে বাইডেনই… এ হেন ভাবমূর্তি প্রচার করতে ট্রাম্প কোনও কসরতই বাকি রাখেননিনিজের প্রচারে ট্রাম্প মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে তাঁ২০১৬ সালের আখ্যানকে অন্য স্তরে নিয়ে গিয়ে বলেছেন যে, অভিবাসীরা আমাদের দেশের রক্তকে বিষাক্তকরছে।

অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্প বনাম বাইডেনের পুনর্প্রতিদ্বন্দ্বিতা না চাইলেও বাস্তবে তেমনটাই ঘটতে চলেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বাইডেন ৬ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছেন এবং এই মুহূর্তে বাইডেন বনাম ট্রাম্পের সমর্থন দাঁড়িয়েছে ৩৪ বনাম ৪০-এ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, বাইডেনের প্রচারাভিযান শুধুই ট্রাম্পকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। বাইডেনের সর্বশেষ পরিকল্পনা হল ট্রাম্প গর্ভপাতের অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর আক্রমণ এবং টেলর সুইফট-সহ সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালী এবং তারকাদের উপর নির্ভর করে নিজের কেন্দ্রীয় প্রচারের ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভোটকে নিজের পক্ষে টানার জন্য আক্রমণাত্মক প্রচার শুরু করা।

দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই উদ্বেগ ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থান। বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব বাইডেন প্রশাসনের অধীনে থাকা মার্কিন বিদেশনীতির গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। কী ভাবে ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান যুদ্ধ, চিন-রাশিয়া-ইরান-উত্তর কোরিয়া অক্ষের সশক্তিকরণ এবং এর ফলে ভেঙে যাওয়া বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করবে, সেটা দেখার মতো হবে। যদি তাঁর প্রচারাভিযানের বক্তৃতা এবং পূর্ববর্তী মেয়াদের রাষ্ট্রপতিত্বের কথা মাথায় রাখা যায়, তা হলে ট্রাম্প ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা হ্রাস করবেন, ট্রান্স-আটলান্টিক জোটকে দুর্বল করে দেবেন এবং তার গ্লোবাল অ্যালায়েন্স নেটওয়ার্ককে (আন্তর্জাতিক জোট শৃঙ্খল) দুর্বল করে দেবেন এবং এই সব কিছুই ট্রাম্প করবেন মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’-এর মোড়কে। এবং খুব সম্ভবত তাঁপূর্ববর্তী মেয়াদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিসরকে কালো মেঘে ঢেকে দেবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.