Author : Soumya Bhowmick

Published on Apr 15, 2024 Updated 0 Hours ago

ব্রিকস ক্রমশ অভিযোজিত হতে থাকা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিসরে পথ খুঁজে নেওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আর্থিক অগ্রগতি নিরিখে একটি রূপান্তরকারী শক্তি হিসাবে নিজের তাত্পর্য দর্শিয়েছে।

একটি প্রাসঙ্গিক ব্রিকস: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংস্কারের পুনর্নির্মাণ

বর্তমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিসরে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির গতিপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ব্রিকস জোটটি এই রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিব্রিকস-এর মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আর্থিক ক্ষেত্রে নজর রাখার সময় চিরবিকশিত ভূ-অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টান্তের জটিলতাগুলি প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।

ব্রিকস উদ্যোগের উৎপত্তি ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে হয়, যখন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চিব্রিক নামে পরিচিত একটি শিথিল কনসোর্টিয়াম বা জোট গঠন করেছিল। যাই হোক, ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি জোটকে দৃঢ়তর করে। এই সহযোগিতার নেপথ্যে প্রাথমিক অনুপ্রেরণা ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিসরের পরিবর্তনশীল গতিশীলতার প্রতিক্রিয়া। এ মূল চালিকাশক্তি ছিল আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির মধ্যে একটি আরও গণতান্ত্রিক স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার আহ্বান এবং প্রধানত উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিকে আরও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর প্রদান করা।

 

এই সহযোগিতার নেপথ্যে প্রাথমিক অনুপ্রেরণা ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিসরের পরিবর্তনশীল গতিশীলতার প্রতিক্রিয়া।

 

ব্রিকস একটি ঐক্যবদ্ধ এবং উদ্দেশ্যমূলক সত্তায় বিকশিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রশাসনের গণতন্ত্রীকরণের সুস্পষ্ট অভিপ্রায়ে প্রধান বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের কারণগুলিকে সমর্থন জুগিয়েছে। এই গতিপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল ২০১৩ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এনডিবি) প্রতিষ্ঠা ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রাথমিক মূলধন-সহ এনডিবিকে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসাবে মনে করা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিসরকে চ্যালেঞ্জ ও তা সংস্কার করার উদ্যোগকে দর্শায়। এনডিবি-র সদর দফতর সাংহাইতে অবস্থিত এবং এটি চারটি মহাদেশে তার বণ্টন বৃদ্ধি করেছে, পরিকাঠামো এবং স্থিতিশীল উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে। ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে বিনিয়োগকৃত মূলধনের সুষম বণ্টন সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।

 

বাণিজ্যিক সমীকরণ

ব্রিকস-এর মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিসরের উপরে নজর রাখলে দেখা যাবে, তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে এবং তার মূল মনোযোগ থেকে বিস্তৃত ব্রিকস-এর আওতায় ভারত ও চিনের মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীল গতিশীলতাভারত ও চিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২২ সালে ১৩৫.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছয়। নয়াদিল্লি বেজিংয়ের সঙ্গে এক বাণিজ্যিক ঘাটতির সাক্ষী হয় এবং প্রথম বারের মতো এই পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করে। অন্যান্য ব্রিকস দেশের সম্মিলিত জিডিপি-র দ্বিগুণেরও বেশি জিডিপি-সহ চিন জোটটিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক শক্তিকে মোকাবিলা করতে এবং আন্তর্জাতিক প্রশাসনে বহুপাক্ষিক পদ্ধতির প্রচারের জন্য ব্রিকস-এর সুবিধা গ্রহণ করতে তৎপর।

যাই হোক, ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে বৈচিত্র্য ঐকমত্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে এবং সেই জটিলতা গোষ্ঠীটির সম্প্রসারণের ফলে বৃদ্ধি পায়। ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ব্রিকস গোষ্ঠীটিতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগ করে এবং এর সামষ্টিক আর্থিক শক্তি সম্ভাবনাকে বহু গুণ বাড়িয়ে তোলে। ব্রিকস দেশগুলি সম্মিলিত ভাবে বিশ্বব্যাপী ভূখণ্ডের প্রায় ২৬ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিকস দেশগুলি সম্মিলিত ভাবে বিশ্ব রফতানির ১৮ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বিশ্বব্যাপী রফতানিতে ব্রিকস দেশগুলির অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছেব্রিকস সদস্য দেশগুলির মধ্যে রফতানির বৃদ্ধির হার বিশ্ব গড়কে ছাপিয়ে গিয়েছে। আন্তঃ-ব্রিকস রফতানিতে এই বৃদ্ধি দর্শায় যে, ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করে তোলা আসলে সুনির্দিষ্ট সুবিধা প্রদান করে এবং ব্লকের মধ্যে বর্ধিত বিনিয়োগকে উত্সাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

ব্রিকস দেশগুলি সম্মিলিত ভাবে বিশ্বব্যাপী ভূখণ্ডের প্রায় ২৬ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।

 

নিজেদের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং আরও বেশি পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে ব্রিকস দেশগুলি কৌশলগত ভাবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সমন্বিতকরণের জন্য নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অভিযোজিত করেছে। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে, এই ব্রিকস দেশগুলি একাধিক মাত্রায় তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। তাদের আন্তঃ-ব্রিকস সমন্বিতকরণ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং রফতানিমুখী কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক ছাড়, শুল্ক হ্রাস এবং বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা খাতে বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান। এই সক্রিয় পদ্ধতির ফলে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ এবং অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বৃদ্ধি ঘটেছে, যা ব্রিকস দেশগুলিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসাবে জায়গা করে দিয়েছে।

 

চিত্র ১: ব্রিকস-এফডিআই-এর অন্তর্প্রবাহ, ২০০১-২০২১ এবং চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হার (বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শতাংশে)

সূত্র: ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএনসিটিএডি)

 

বিদেশি বিনিয়োগ

ইউএনসিটিএডি-র তথ্য অনুসারে, ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০১০ সালের ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এই পরিবর্তনটি সম্মিলিত ভাবে তাদের মোট এফডিআই সম্পদের ১.৩ শতাংশ থেকে ৪.৭ শতাংশ অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেই দর্শায়। উল্লেখযোগ্য ভাবে চিন একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং চিন ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে এফডিআই-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী গ্রহীতা দেশ। সর্বোপরি, ব্রাজিল এবং ভারতও ব্রিকস সদস্যদের কাছ থেকে জোরালো বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সাক্ষী থেকেছে। এর বিপরীতে, রাশিয়া তুলনামূলক ভাবে পরিমিত বৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা তার আন্তঃ-ব্রিকস বিনিয়োগে সামান্য হ্রাস প্রত্যক্ষ করেছে।

ব্রিকস দেশগুলি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সরবরাহ শৃঙ্খলের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। তারা নির্মাণ ও পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে। এমনকি কোভিড-১৯ অতিমারি দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের মধ্যেও, বিনিয়োগের গন্তব্য হিসাবে ব্রিকস দেশগুলির আকর্ষণ বাড়ানোর তাত্পর্যকে স্বীকার করে নিয়ে ব্রিকস কনট্যাক্ট গ্রুপ অন ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড ইস্যু (সিজিইটিআই) স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে ক্ষেত্রভিত্তিক বিনিয়োগ করার নিরিখে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেএর মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছতাকে উন্নত করার উদ্যোগ এবং জাতীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া পূর্বশর্তগুলি সরলতর করে তোলা।

 

ব্রিকস দেশগুলি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সরবরাহ শৃঙ্খলের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আন্তঃ-ব্রিকস বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও বিশেষ করে আন্তঃ-আঞ্চলিক বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য পরিমাণের প্রেক্ষিতে জোটের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য আরও সম্ভাবনা থাকা জরুরি। বর্ধিত বিনিয়োগ সহযোগিতা গোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। এই সহযোগিতা মূলধন গঠন বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর সহজতর করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে। উপরন্তু, ব্রিকস, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) এবং ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইইইউ) সদস্য দেশগুলির মধ্যে আন্তঃসংযোগ সক্ষমকারী স্থিতিস্থাপক সুরক্ষিত সাইবার শৃঙ্খল কৌশলগুলি নির্মাণের আশু প্রয়োজন রয়েছে। এই পদক্ষেপটি বর্ধিত সহযোগিতা সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।

উপসংহারে বলা যায়, ব্রিকস ক্রমশ অভিযোজিত হতে থাকা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিসরে পথ খুঁজে নেওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আর্থিক অগ্রগতির নিরিখে একটি রূপান্তরকারী শক্তি হিসাবে নিজের তাত্পর্য দর্শিয়েছে। এনডিবি প্রতিষ্ঠা এবং সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার গভীরতা বিশ্বব্যাপী প্রশাসন ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়। কৌশলগত অংশীদারিত্ব, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সমন্বিতকরণের জন্য একটি সক্রিয় পদ্ধতি থাকার দরুন ব্রিকস শুধু মাত্র একটি জোট নয়, বরং একটি বহুমুখী সত্তা হয়ে উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্য রূপরেখা তৈরি করে। অব্যবহৃত সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশা দর্শিয়ে ব্রিকস-কে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নিরিখে অনুঘটক রূপে কাজ করতে হবে।

 


সৌম্য ভৌমিক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.