Expert Speak Raisina Debates
Published on Oct 12, 2022 Updated 6 Days ago

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজন বিবেচনা করেই এই কাজটি করা উচিত।

নির্বাসনে ৫ বছর: বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ কী?
নির্বাসনে ৫ বছর: বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ কী?

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান হিংসার কারণে বাংলাদেশে  প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার অভিবাসনের পঞ্চম বছর পূর্ণ হল। ২০১৭ সালে  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক বিশ্ব জাতিগত শুদ্ধিকরণ এবং এমনকি গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করেছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্মকর্তারা বলেছেন যে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সামরিক কর্তাদের দায়ী করা উচিত। যাই হোক, প্রান্তিক অবস্থায় বসবাসকারী এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের পরিস্থিতি এতদিনে আরও খারাপ হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্যাম্পে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বলা হয় ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ (এফ ডি এম এন)। এফ ডি এম এন–রা রাষ্ট্রবিহীন ব্যক্তি, তাঁরা মিয়ানমারে নাগরিক হিসাবে গণ্য নন এবং তাঁদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, যেহেতু দেশটি ১৯৫১-র শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী নয়। অভ্যুত্থানবিধ্বস্ত মিয়ানমার এবং নির্বাচনের প্রতীক্ষায় থাকা বাংলাদেশ, উভয় দেশেই এফডিএমএন–দের প্রত্যাবাসনের জন্য ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের চেহারাটা হতাশাজনক।

এফ ডি এম এন–রা রাষ্ট্রবিহীন ব্যক্তি, তাঁরা মিয়ানমারে নাগরিক হিসাবে গণ্য নন এবং তাঁদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, যেহেতু দেশটি ১৯৫১-র শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী নয়।

একটি নিরাপদ আশ্রয়

একটি নিম্নমধ্যবিত্ত দেশ এবং বর্তমানে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় ও ভাসানচর দ্বীপে প্রায় ৯১৮,৮১৪ জন শরণার্থীকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করেছে। ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজার বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী উপনিবেশে পরিণত হয়েছে৷ নতুন অভিবাসীদের প্লাবন ইতিমধ্যে সীমিত সুযোগসুবিধার অস্থায়ী বসতিগুলির উপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে, যা কোভিড–১৯ অতিমারি এবং নিরন্তর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ শুষ্ক মরসুমে দাবানলের বিপদ ও ভূমিধস এবং বর্ষায় প্লাবন বেড়েছে। ২০২২ সালের মার্চে ছয়টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। ২০২২–এর বর্ষার শুরু থেকে মুষলধারে বৃষ্টি এবং ভূমিধস প্রভাবিত করেছে শিক্ষাকেন্দ্র ও ওয়াশ (‌ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন)‌ পয়েন্ট সহ ১৩,০০০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্রকে। বাংলাদেশ সরকার এবং ইউ এন এইচ সি আর, আই ও এম, ইউনিসেফ, হু এবং ডবলিউ এফ পি–সহ মানবিক অংশীদারেরা এই ঘটনাগুলির সঙ্গে লড়াই করছে অভাবগ্রস্ত মানুষদের তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে। তারা প্রতিক্রিয়া ও সমন্বয় দলকে শক্তিশালী করছে এবং ফায়ার ব্রেক, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মক ড্রিল পরিচালনার জন্য দোতলা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছে। বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা থেকেও বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে অ্যাকশন পয়েন্ট ও রিড্রেসাল মেকানিজমকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে।

স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কোভিড–১৯ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অন্যান্য সংক্রমণ, যেমন কলেরা, এ ডবলিউ ডি, ডিপথেরিয়া, স্ক্যাবিস এবং  ডেঙ্গি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ১,৪০০–রও বেশি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ১৩০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সীমিত সম্পদের কারণে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা তৈরির চ্যালেঞ্জ প্রভাবিত হয়। সুতরাং, অর্থ একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।

নতুন অভিবাসীদের প্লাবন ইতিমধ্যে সীমিত সুযোগসুবিধার অস্থায়ী বসতিগুলির উপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে, যা কোভিড–১৯ অতিমারি এবং নিরন্তর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে৷

এর পাশাপাশি নিরাপত্তার অবস্থাও শূন্যগর্ভ। ক্যাম্প এলাকার ভেতরে সুযোগ কম থাকায় খুন, অপহরণ, মাদক ও মানুষ পাচারের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

ফিরে যাওয়ার সময়?

শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তাঁরা বাংলাদেশকে তাঁদের আদি দেশ বলে মনে করেন না এবং ফিরে যেতে চান। শীঘ্রই তাঁদের প্রত্যাবাসন হবে ধরে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত স্বল্পমেয়াদি নীতির ফলে শিবির এলাকায় রোহিঙ্গাদের জীবিকা, শিক্ষা ও চলাচলের সুযোগ সীমিত। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান শিবির এলাকায় বসবাসকারীদের ভবিষ্যতকে ত্রিশঙ্কু করে দিয়েছে।I

প্রত্যাবাসনের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের পূর্ণ অধিকার বা সুরক্ষা না–পেলে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর মূলে রয়েছে ভয় যে হিংসা শেষ হয়নি এবং তাঁরা আবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন। গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে এই আশঙ্কা আরও বেড়েছে। যদিও অভ্যুত্থানের পরে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু তার মধ্যে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সমগ্র জনসংখ্যাকে ধরা হয়নি, বরং হাজার হাজার মুসলমানের মধ্যে মুষ্টিমেয় হিন্দুদের কথা বলা হয়েছিল

এর পাশাপাশি পুনর্বাসনের প্রশ্ন আসে। এটা সুপরিচিত যে বাস্তুচ্যুত লোকেরা একসময় যে গ্রামে বাস করত সেগুলি জুন্টা ধ্বংস করেছিল। সুতরাং, একমাত্র কার্যকর বিকল্প হল রাখাইন রাজ্যে কাঁটাতারে ঘেরা এবং সামরিক বাহিনীর দ্বারা সুরক্ষিত ‘‌পুনর্বাসন শিবিরে’‌ ফিরে যাওয়া। ইতিমধ্যেই ১৩৫,০০০ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা কোনও অধিকার বা সুযোগ ছাড়াই এই ধরনের উন্মুক্ত বসতিতে গত এক দশক ধরে বেঁচে আছেন।

শীঘ্রই তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা হবে ধরে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত স্বল্পমেয়াদি নীতির ফলে শিবির এলাকায় রোহিঙ্গাদের জীবিকা, শিক্ষা ও চলাচলের সুযোগ সীমিত। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান শিবির এলাকায় বসবাসকারীদের ভবিষ্যতকে ত্রিশঙ্কু করে দিয়েছে।

প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নোলিন হেইজারের মতে, প্রত্যাবাসনের দায়ভার বেশিরভাগটাই মিয়ানমারের ওপর বর্তায়। তিনি দাবি করেন যে এই মানুষদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা সে দেশের দায়িত্ব, এবং রাখাইন রাজ্যের উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মিয়ানমার সরকার প্রণীত অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত প্রস্তাব আসবে। পুরো প্রক্রিয়ার সাফল্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের, অর্থবহ অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তবে বর্তমান বাস্তবতা এ থেকে অনেক দূরে।

আকর্ষণীয় বিষয় হল, মিয়ানমারের ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এন ইউ জি) রোহিঙ্গাদের বিষয়টি সমর্থন করছে। ২০২১ সালের জুনে এন ইউ জি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় এলে তারা এই রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের অধিকার দেবে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাসের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এন ইউ জি রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায়কে সমর্থন করার তিনটি উপায়ের কথা বলেছে। প্রথমত, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে এমন উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে; দ্বিতীয়ত, তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এবং তৃতীয়ত, আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে। কিন্তু এই কথাগুলো কার্যক্ষেত্রে অর্থবহ হয় না, কারণ এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োগ তখনই সম্ভব হবে যখন জুন্টার প্রভাবমুক্ত একটি নিয়ন্ত্রণমুক্ত গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। এইভাবে, উল্লিখিত সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান একটি দূরের স্বপ্ন থেকে যায়।

একটি ইতিবাচক ঘটনা হল ২০২২ সালের জুলাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস–এর রুলিং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক পরিষদের (এস এ সি) এই মর্মে প্রাথমিক বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল না। এই নির্দেশ পরবর্তী শুনানিতে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের লঙ্ঘন প্রমাণ করে এমন প্রমাণ উপস্থাপনের মঞ্চ তৈরি করেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করেছিল যে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার উপর মিয়ানমারের বছরের পর বছর ধরে কঠোর দমন প্রকৃতপক্ষে একটি ‘‌গণহত্যা’‌। যদিও উল্লিখিত নির্দেশাবলি জুন্টার বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের নির্দেশ করে না, এটি সরকারের উপর প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। আসিয়ান বা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মতো অন্যান্য মঞ্চ এখনও এই বিষয়ে কোনও উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারেনি।

মানবিক অর্থায়নের প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন ব্যক্তিদের চাহিদা মেটানোর জন্য আয়তনগতভাবে অপ্রতুল।

আপাতত, বাংলাদেশ সরকারকেই তাদের দেশের মধ্যে এই মানুষদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। সফলভাবে এবং সার্বিকভাবে তা করার জন্য সঠিক প্রক্রিয়া তৈরি করা এবং সেগুলির অব্যাহত বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন অপরিহার্য। বৈশ্বিক স্তরে মানবিক অর্থায়নের প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন ব্যক্তিদের চাহিদা মেটানোর জন্য আয়তনগতভাবে অপ্রতুল। এর লক্ষ্য উদ্বাস্তু ও আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদের চাহিদা মেটানো নয়। অর্থায়নের সবচেয়ে বড় ঘাটতি প্রায়শই জীবিকা ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দেখা যায়।

সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে সহায়তার মাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। ২০২২ সালের জে আর পি রিপোর্ট অনুসারে স্বাস্থ্য, ওয়াশ,  সুরক্ষা, শিক্ষা এবং পুষ্টির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪৯ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় এই সমর্থন ছাড়া অধিকাংশ কার্যক্রম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধারাবাহিক সমর্থন প্রয়োজন, যাতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা থমকে না–যায়।


গবেষণা ইনপুট প্রদান করেছেন ওআরএফ রিসার্চ ইন্টার্ন আশরাফ নেহাল

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.