Expert Speak Urban Futures
Published on Feb 09, 2022 Updated 11 Days ago

আমাদের নগর প্রশাসনের ক্ষমতায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়, ব্যবস্থাগত ও আর্থিক শাসনের সামগ্রিক পুনর্গঠন প্রয়োজন।

২০২২:‌ নাগরিক শাসনের প্রথম স্তর হিসেবে শহরগুলিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার বছর
২০২২:‌ নাগরিক শাসনের প্রথম স্তর হিসেবে শহরগুলিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার বছর

এই লেখাটি একটি সিরিজের অংশ যার নাম ‘গভর্ন্যান্স প্রপোজিশনস অফ ২০২২’‌।


অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিমারির প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশগুলি বিতর্ক করে, তবে দেশের এলিটরা যে উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি তৈরি করে থাকেন তা কার্যকর করার কঠিন কাজটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহরগুলিকেই করতে হয়। নিম্নলিখিত কারণে এই সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে শহরগুলি দেখতে পায় তাদের উপর কতটা বোঝা রয়েছে এবং তারা কতটা পঙ্গুত্বের শিকার। প্রথমত, একটি শহর চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত কর্তৃত্বের অভাব। দ্বিতীয়ত, শহরগুলির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তাদের যে দায়িত্ব পালন করতে হয় তার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং তৃতীয়ত, পরিকল্পনা, নিরীক্ষণ ও প্রাপ্ত কাজগুলিকে উপযুক্ত ভাবে সম্পাদন করার ক্ষমতার অভাব।

সংকটের মোকাবিলায় প্রথম এগিয়ে আসতে হয় আমাদের শহরগুলিকে। এখন সময় এসেছে তাদের নিছক কলের মাধ্যমে জলের প্রবাহ নিশ্চিত করার, আবর্জনা তোলার ব্যবস্থা করার আর রাস্তায় পিচ দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিক স্থানীয় সংস্থা হিসেবে বিবেচনা না–করে পরিবর্তে নগর শাসনের অভিভাবক হিসেবে দেখার।

শহরগুলিকে এই ভূমিকা পালন করতে সক্ষম ও শক্তিশালী করার জন্য ২০২২ সালে আমাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ও ব্যবস্থাগত সংশোধন করতে হবে;‌ শুধু আমাদের বৃহৎ প্রয়োজনগুলিতে সাড়া দিতে ব্যর্থ হলে এই মলিন শহুরে কাঠামোর সমালোচনা করে দায় সারলে চলবে না। গ্লাসগো চুক্তি যে ভাবে স্থানীয় পর্যায়ে ‘বহুস্তরীয় ও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের জরুরি প্রয়োজন’ তুলে ধরেছে, তার মধ্যে দিয়ে প্রথম বারের মতো কপ শীর্ষ সম্মেলনে শহরগুলির ভূমিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রশংসিত ও স্বীকৃত হয়েছে। নতুন চুক্তিতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজনের প্রয়োজনের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভাবে শহরগুলিকে দেখা হত সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বজুড়ে পরিবর্তন হচ্ছে৷ বিকেন্দ্রীকরণ ও ক্ষমতার হস্তান্তরই হওয়া উচিত সেই কেন্দ্রবিন্দু যাকে ঘিরে শহরের জন্য যুক্তরাষ্টীয় সংস্কারগুলির বাস্তবায়ন করা উচিত, এবং শহরগুলি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। আমরা ক্রমাগত ভারতীয় সংবিধানের ৭৪তম সংশোধনীর দোহাই পাড়ি যা হস্তান্তরের ধারণাটি তৈরি করেছিল। কিন্তু এতে সরকারের তিন স্তরের মধ্যে শহরের স্থানীয় সংস্থাগুলিকে সর্বনিম্ন স্তরে রাখা হয়েছিল। ২৫ বছর পরে এখন সেই ধারণা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা আবশ্যক। কেন অধিকাংশ শহর সংস্কারের অনেকটাই বাস্তবায়িত করতে পারেনি, তার কারণগুলোও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।

গ্লাসগো চুক্তি যে ভাবে স্থানীয় পর্যায়ে ‘বহুস্তরীয় ও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের জরুরি প্রয়োজন’ তুলে ধরেছে, তার মধ্যে দিয়ে প্রথম বারের মতো কপ শীর্ষ সম্মেলনে শহরগুলির ভূমিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রশংসিত ও স্বীকৃত হয়েছে।

অতিমারি চলাকালীন যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি তেমন এলাকায়, এমনকি এক একটি শহরের মধ্যেও, একটি শক্তিশালী ও সফল মডেল হিসেবে উঠে এসেছিল ওয়ার্ড-স্তরের ব্যবস্থাপনা। ওয়ার্ড কমিটি গঠন , নাগরিকদের কথা শোনা ও একেবারে পাড়া পর্যায়ে স্থানীয়দের বক্তব্য উঠে আসাটা ছিল ৭৪তম সংশোধনীর একটি অংশ। কিন্তু তা বহু নগর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরণিত হয়নি। এমনকি নগর সরকারের ভেতরেও সর্বনিম্ন স্তরে ক্ষমতা হস্তান্তর করা বা নাগরিকদের ও তাদের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নে অনীহা ছিল।

দ্বিতীয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস কমিশন, ২০০৮ সুপারিশ করেছে যে শহরগুলি অধীনস্থ পরিপূরক নীতির ভিত্তিতে কাজ করার জন্য নীচ থেকে উপরে উঠবে এমন ব্যবস্থা অবলম্বন করুক, কারণ তা হলে মানুষ যে স্তরের সবচেয়ে নিকটস্থ সেই ওয়ার্ডগুলি শাসনের প্রথম স্তর হিসেবে থাকবে। স্থানীয় ইউনিটগুলি যে সব কাজ করতে সক্ষম হবে না, সেই কাজগুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাবে। কাজের ভাগাভাগি করা হবে নীচ থেকে উপরে। নাগরিকদের জড়িত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে মুম্বইয়ে অ্যাডভান্সড লোকালিটি ম্যানেজমেন্ট (এএলএম) গ্রুপের মাধ্যমে এবং দিল্লিতে ভাগিদারি প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে স্থানীয় নাগরিক সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলির অংশগ্রহণ অর্থবহ করে তুলতে প্রয়োজনীয় তহবিল বা কাজ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিশাখাপত্তনমের মতো শহরগুলি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে যে হস্তান্তর শুধু ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না–রেখে প্রসারিত করা হোক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, যাতে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সেই অঞ্চলের সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ করতে সক্ষম হয় এবং পরিকাঠামো ভাল করার জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে বরাদ্দকৃত তহবিলের উপর নির্ভরশীল না–হয়।

কাজের ভাগাভাগি করা হবে নীচ থেকে উপরে। নাগরিকদের জড়িত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে মুম্বইয়ে অ্যাডভান্সড লোকালিটি ম্যানেজমেন্ট (এএলএম) গ্রুপের মাধ্যমে এবং দিল্লিতে ভাগিদারি প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে স্থানীয় নাগরিক সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।

২০২১ সালের বাজেট অধিবেশনে পেশ করা ১৫তম অর্থ কমিশনের রিপোর্টটি ছিল নগর শাসনের ক্ষেত্রে একটি আশার আলো। অকট্রয় ও ভ্যাট-এর মতো স্থানীয় করগুলিকে পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পরে শহরগুলিতে করের হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে প্রচুর শোরগোল উঠেছিল, এবং একটি পৃথক সিটি জিএসটি চালু করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু যদিও এই দাবিটি বিবেচনার পর্যায়ে আসতে এখনও অনেক দেরি বলে মনে হচ্ছে, ১৫তম অর্থ কমিশন স্থানীয় সংস্থাগুলির জন্য বরাদ্দ করেছে বিভাজ্য পুলের ৪.১৫ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা কর থেকে প্রাপ্ত বিভাজ্য পুল থেকে আসা প্রায় ৩,৪৬,৪০০ কোটি। বণ্টিত হওয়ার পরে এই টাকাটাই বেশিরভাগ শহরের মোট পৌর বাজেটের প্রায় ২৫ শতাংশ হয়ে যাবে। কমিশন ৫ কোটি মেট্রোপলিটন অঞ্চলে, যেগুলির জনসংখ্যা ১৫ কোটির বেশি, সেখানে টাকার জোগান বাড়াতে কাজের ফলাফল অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণের ব্যবস্থা চালু করেছে। এখানে জল ‌ও স্যানিটেশন, বায়ুর গুণমান ও অন্যান্য পরিষেবা সম্পর্কিত সূচকগুলির ১০০ শতাংশ অর্থ জোগানের জন্য ৩৮,০০০ কোটি ভারতীয় টাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কিন্তু এটিও আবার দ্বৈত আঘাতের সামিল, কারণ এই অর্থ এখনও উপর থেকে নিচে, অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকারগুলির কাছে আসবে, এবং তারপরে তা পৌঁছবে শহরগুলিতে। একটি শহরের জন্য বরাদ্দকৃত পরিমাণ পুরোটা ব্যবহৃত হয় কিনা তা নিয়েও সব সময়েই একটি প্রশ্নচিহ্ন থাকে, কারণ তা নির্ভর করে শহরগুলির শোষণ ক্ষমতা ও পৌর তহবিল ব্যয় করার ক্ষমতার উপর।

কমিশন আরও পরামর্শ দিয়েছে যে দেশের ছোট শহর ও অঞ্চলগুলির বিকাশের জন্য সিটি ইনকিউবেশন গ্রান্টের মতো অন্যান্য পথ অনুসরণ করা উচিত। শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা স্মার্ট সিটি মিশন সমর্থিত শহরগুলির ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ তা শহরক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করে, পথনির্দেশ করে এবং গ্যারান্টি মেকানিজম তৈরি করে।

নগর সরকারগুলিকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের পরিধির মধ্যে থাকা করগুলি, যেমন সম্পত্তি কর, নাগরিকেরা যেন ঠিকঠাক মতো দেন। এর সংগ্রহ নিশ্চিত করার জন্য অনন্য ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন।

আর্থিক বা অন্যান্য ক্ষমতা হস্তান্তরের পাশাপাশি আসে ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা আনা ও জবাবদিহি করার বিষয়গুলি, যার দায়িত্ব নগর সরকারের উপর বর্তায়। স্বচ্ছতার প্রথম ধাপ হল এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যে শহরের বাজেট যেন সর্বসমক্ষে রাখা হয় এবং তা যেন এমন ফরম্যাটে করা হয় যা বোধগম্য। নগর সরকারগুলিকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের পরিধির মধ্যে থাকা করগুলি, যেমন সম্পত্তি কর, নাগরিকেরা যেন ঠিকঠাক মতো দেন। এর সংগ্রহ নিশ্চিত করার জন্য অনন্য ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। এখন যখন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলি গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন শহরের সরকারগুলিকে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবুজ পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে করছাড় দিতে হবে।

উপসংহারে বলা যায় শক্তিশালী শহর তৈরির যাদুকাঠি হতে পারে একটি সামগ্রিক ত্রিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি:‌ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের বিষয়টি আবার ভেবে দেখা, আর্থিক শাসনের নতুন বিন্যাস তৈরি করা, এবং শহুরে সমষ্টিগুলিতে পদ্ধতিগত শাসনের পুনর্গঠন। আমরা যদি সংকটের বিরুদ্ধে প্রাথমিক যোদ্ধাদের, তথা আমাদের জীবনযাত্রার মানের চালকদের সাফল্য চাই, তা হলে আমাদের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসকদের শহরগুলিকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.