Author : Vivek Mishra

Published on Feb 04, 2023 Updated 0 Hours ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেলেনস্কির উচ্চ পর্যায়ের সফর একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধকে প্রশমিত করার কাজে বিশেষ সফল হবে না

জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফর: মোড় ঘোরানোর প্রয়াস

কোনও বাহ্যিক ভড়ংকে দূরে সরিয়ে রেখে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওয়াশিংটন যাত্রাকে যুদ্ধের জন্য মার্কিন সমর্থন আদায় করার প্রচেষ্টার এক প্রতীকী সফর হিসাবে দেখা হচ্ছে। অন্য দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কমান্ডারদের কাছ থেকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কৌশল সংক্রান্ত প্রস্তাবের মাধ্যমে ত্রুটিগুলির মূল্যায়ন করতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর  শীর্ষস্থানীয়দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চালাচ্ছেন। বস্তুত উভয়পক্ষের জন্যই আসন্ন শীত প্রস্তুতি গ্রহণ এবং পুনরায় সংগঠিত হওয়ার আদর্শ সময় বলে মনে করা হলেও ইউক্রেন এই শীতে রুশ স্থলসেনার তরফে তীব্র হামলার আশঙ্কা করছে। যুযুধান দুই পক্ষের অনড় মনোভাব ইউক্রেনের জন্য ‘যত দিন লাগে, তত দিন পর্যন্ত’ বাইডেনের সমর্থনের মধ্য দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট যুদ্ধে পুতিনের তরফে কোনও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন না হওয়ার দাবির মাধ্যমে স্পষ্ট। এবং পুতিনের সরকার তাঁর সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সব কিছু জোগান দেওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতের অন্ধকারময় ও বিতর্কিত সময়ের ইঙ্গিতই দেয়।

যুযুধান দুই পক্ষের অনড় মনোভাব ইউক্রেনের জন্য ‘যত দিন লাগে, তত দিন পর্যন্ত’ বাইডেনের সমর্থনের মধ্য দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট যুদ্ধে পুতিনের তরফে কোনও অর্থনৈতিক বাধার সম্মুখীন না হওয়ার দাবির মাধ্যমে স্পষ্ট।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফর বেশ কয়েকটি দিক থেকে অত্যন্ত প্রতীকী ছিল। এক বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের বাইরে এটি ছিল তাঁর প্রথম ভ্রমণ; এই সফরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমে কিয়েভের জন্য রাজনৈতিক সমর্থন উঠে এসেছে; তাঁর আবেগপ্রবণ ব্যক্তিগত আবেদন কৌশলগত সামরিক সহায়তার আশ্বাস এনেছিল যা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ; দীর্ঘদিন ধরে টানা যুদ্ধে ইউক্রেনের জন্য এই সফর একটি উপলব্ধিমূলক জমি তৈরি করেছিল এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মার্কিন সহায়তাকে নিছক ‘দাতব্য’ রূপে চিহ্নিত না করার জেলেনস্কির ইতিবাচক সুর এবং বিদ্যমান যুদ্ধে ‘শুধুমাত্র শান্তি’ অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের লক্ষ্য থেকে সরে এসে তাঁর সুনির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করার ঘটনা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পরিবর্তে যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী এক শক্তিশালী নেতা হিসেবে তাঁকে তুলে ধরে। তাঁর অবস্থান এবং রাজনৈতিক অভিপ্রায় যতটাই জাঁকালো বলে প্রতিপন্ন হোক না কেন, পদ্ধতিগত অসুবিধা, অন্যান্য দেশের উপর আর্থিক এবং অস্ত্র নির্ভরতা, বিপর্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো এবং ক্রমাগত রুশ আক্রমণ… সবই ইউক্রেনে একটি অনতিক্রম্য ভাঙা-গড়ার ব্যবধান তৈরি করতে পারে।

প্রাপ্তি

জেলেনস্কির সফরে প্রত্যক্ষ লাভের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় সাহায্য প্যাকেজগুলির একটি অনুমোদন করেছে, যাতে কিয়েভ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্রদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি। এই অনুমোদনের ফলে ইউক্রেনে মোট মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

জেলেনস্কির সফরের সম্ভবত সবচেয়ে বড় অর্জন হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেমের আশ্বাস। প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন সংস্থা রেথিয়ন দ্বারা নির্মিত এবং এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। প্রতিটি প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির দাম ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে এবং বর্তমানে ১৮টি দেশ দ্বারা এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্রে এর গুরুত্ব সত্ত্বেও ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার সরবরাহ ইউক্রেনের জন্য কয়েকটি বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার আক্রমণের ক্ষমতা বাড়ানোর সময় প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থাগুলি ইউক্রেনীয় শহরগুলির বিরুদ্ধে আরও সুনির্দিষ্ট দীর্ঘ-পাল্লার প্রতিশোধমূলক আক্রমণকে সূচিত করতে পারে, যা খেরসনে সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে রাশিয়াকে ইউক্রেনের শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ওভার-দ্য-হরাইজন অপারেশনের জন্য আরও ড্রোন ব্যবহার করতে বাধ্য করতে পারে। বাইডেনের কাছে জেলেনস্কির ব্যক্তিগত আবেদন সত্ত্বেও ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার সরবরাহ সীমিত, এবং তুলনায় অনেক সস্তা ড্রোনের ব্যবহার প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার ব্যবহারকেকমিয়ে আনতে পারে। ইউক্রেনে যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে পারে এমন প্রত্যক্ষ ও অবাধ সামরিক সহায়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে পারে, যা মার্কিন সরকার, কংগ্রেস বা আমেরিকান জনগণ… কেউই চায় না। তা ছাড়া যুদ্ধে ব্যবহারের আগে প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার সরবরাহে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে, কারণ ইউক্রেনীয়দের এ বিষয়ে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।

ইউক্রেনকে আরও আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চলমান যুদ্ধে মার্কিন অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং রাশিয়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রুদের যুদ্ধে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনও অলসতার জায়গা রাখেনি।

ভূ-রাজনৈতিক স্তরে অন্য প্রভাবও অনুভূত হচ্ছে। ইউক্রেনকে আরও আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চলমান যুদ্ধে মার্কিন অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং রাশিয়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রুদের যুদ্ধে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনও অলসতার জায়গা রাখেনি। এ ক্ষেত্রে দু’টি ঘটনা উল্লেখযোগ্য: চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে রাশিয়ার প্রচেষ্টা এবং ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীরতর করা। এমনকি জেলেনস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গেলেও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রাক্তন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের বৈঠক ‘রুশ-চিন সংলাপ এবং বাস্তব সহযোগিতার অভূতপূর্ব স্তরের’ একটি বার্তা বড় আকার ধারণ করেছিল। ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক কেবলই শক্তিশালী হয়েছে। রাশিয়াকে তার শাহেদ-১৩৬ ড্রোন সরবরাহ করার ব্যাপারে ইরানের স্বীকৃতি এবং তাদের ‘কার্যকারিতা’র বড়াই রাশিয়ার প্রতি একটি নিরবচ্ছিন্ন ইরানি সহযোগিতামূলক কৌশলকে তুলে ধরে, যা একটি দ্বৈত উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প ভূ-রাজনৈতিক অক্ষকে শক্তিশালী করা এবং জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশনের (জেসিপিওএ) মাধ্যমে স্থগিত পারমাণবিক আলোচনার মতো ভবিষ্যতের আলাপ-আলোচনায় দর কষাকষিতে সুবিধা দিতে বাধ্য করা।

ইউক্রেনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন এবং উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়তা প্রদর্শন করেছে। কারণ তারা এই ভয় পেয়েছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী অক্ষে বৈশ্বিক শক্তিসাম্যের শক্তি কেন্দ্রীকরণ শুরু হয়েছে। শক্তিশালী উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া অক্ষ থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে যে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপকে পদাতিক বাহিনীর জন্য রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং মস্কোয় আরও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে। পশ্চিম-বিরোধী  জোটের নিরিখে ক্রমবর্ধমান পরিসরের উপর ভিত্তি করে রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছে। সামরিক অভিযানের জন্য একটি কৌশলগত স্থান হিসাবে বেলারুশকে রাশিয়ার সম্ভাব্য ব্যবহার এই যুদ্ধে একটি অপরীক্ষিত অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষত, বেলারুশে ইস্কান্দার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোতায়েন রাশিয়ান আক্রমণের পাশাপাশি প্রতিরক্ষার জন্য নতুন পদ্ধতিগত এবং কৌশলগত বিকল্প উন্মোচন করেছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেনের হামলার বিরুদ্ধে তার বিমান প্রতিরক্ষা উন্নত করার জন্য দ্রুত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্পষ্টতই স্থবিরতার শীতল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধ ফের শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই একটি অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যতের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষে কেবল মার্কিন সমর্থনের উপর খুব বেশি নির্ভর করা বোকামি হবে। কারণ এমনকি ইউক্রেনকে সমর্থন জোগানোর ব্যাপারে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই জর্জরিত। ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য প্যাকেজের সর্বশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন এ কথাই তুলে ধরে যে, ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত রিপাবলিকান সমর্থনের বিষয়ে খুব বেশি আশাবাদী না-ও হতে পারে। যেহেতু রিপাবলিকানরা জানুয়ারি মাস থেকে হাউসের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে, মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর সংখ্যালঘু রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি ইতিমধ্যেই এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, তিনি ‘কোনও কিছুর জন্যই সাদা চেক দিতে রাজি নন’।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.