Published on Aug 22, 2023 Updated 0 Hours ago

চন্দ্রযান অভিযান ভারত এবং তার মহাকাশ সংস্থার জন্য এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য

চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ দিয়ে ভারতের চন্দ্রাভিযান শুরু হল

গত ১৪ জুলাই ভারত চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে চাঁদে তার তৃতীয় অভিযান শুরু করেছে। এটি দক্ষিণ ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র  থেকে ‘বাহুবলী’ নামে একটি এলভিএম৩ হেভি-লিফট লঞ্চ ভেহিকলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে ভ্রমণ করার পর চন্দ্রযান-৩ অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে। এই অভিযান সফল হলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চিনের পরে ভারতকে চাঁদে সফট ল্যান্ডিং-এ সফল বিশ্বের চতুর্থ দেশ করে তুলবে। উৎক্ষেপণের পরে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) টুইট করে যে, ‘এলভিএম৩ এম৪ উৎক্ষেপণ যান চন্দ্রযান-৩-কে সফল ভাবে কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পেরেছে।’

চাঁদে অবতরণের জন্য এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান-২ হার্ড ল্যান্ডিং করার চার বছর পর চন্দ্রযান-৩ বাস্তবায়িত হয়েছে। পূর্ববর্তী অভিযান সফল ভাবে পৌঁছতে পারলেও চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে চন্দ্রযান এবং গ্রাউন্ড স্টেশনগুলির মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তার আগে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ভারত চন্দ্রযান-১ উৎক্ষেপণ করেছিল, যা মূলত একটি অনুসন্ধানমূলক অভিযান হলেও এটিতে মুন ইমপ্যাক্ট প্রোব অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই অভিযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে জলের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করে। সেই অভিযানেরও যোগাযোগ সংক্রান্ত ত্রুটি দেখা দেয়, যা ৩০০ দিনের সামান্য কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অভিযানের সমাপ্তি ঘটায়। তবুও অরবিটারটি আরও বেশ কয়েক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে মনে করা হয়।

চন্দ্রযান অভিযান ভারত এবং এর মহাকাশ সংস্থার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের প্রতীক। ভারতের মহাকাশ সংক্রান্ত কর্মসূচি মূলত যোগাযোগ এবং পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহের মাধ্যমে তার উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেয়। তা সত্ত্বেও মহাকাশ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের উপরও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। যেমন, ২০১৪ সালে ভারত তার মঙ্গলযান অভিযানের সূচনা করে, যা ভারতকে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে পৌঁছতে সক্ষম প্রথম এশীয় দেশের মর্যাদা দেয়। ভারতই প্রথম দেশ যেটি প্রথম প্রয়াসেই মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছতে সফল হয়েছিল। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতায় চিন এ হেন একটি অভিযানের প্রচেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হয়েছিল। চিন পরবর্তী কালে ২০২১ সালে একটি সফল মঙ্গল গ্রহের অরবিটার এবং ল্যান্ডিং অভিযানের সূচনা করে।

এ সব কিছুই ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জন্য আর একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ দিককেও তুলে ধরে: চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি চিনের তুলনায় অনেকাংশে ছোট এবং কম দক্ষ হলেও ভারত এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। মহাকাশ বৃহৎ শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আর একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এবং ভারত উদীয়মান নতুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ প্রতিযোগিতায় পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রীয় সফরের সময় ভারত আর্টেমিস অ্যাকর্ডে স্বাক্ষর করে, যা আসলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন চন্দ্র সহযোগিতা  এবং পরিচালন ব্যবস্থা। আর্টেমিস অ্যাকর্ডস শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান, স্বচ্ছতা, আন্তঃকার্যকারিতা, বস্তুর নিবন্ধন, মহাকাশের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, ক্ষতিকারক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ এবং মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের নিরাপদ নিষ্পত্তির মতো মূল নীতিগুলি দ্বারা চালিত হয়, যেগুলির সব ক’টিই ১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস ট্রিটিতে (ওএসটি) নিহিত রয়েছে এবং ওএসটি এমন একটি মৌলিক আইনি উপকরণ যা মহাকাশ বা আউটার স্পেসের কার্যকলাপগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

গুরুত্বপূর্ণ ভাবে চিন এবং রাশিয়াকে আর্টেমিস চুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও মহাকাশ কর্মসূচির নিরিখে ভারত বরাবরই জোট থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে। তাই আর্টেমিস অ্যাকর্ডে ভারতের স্বাক্ষর এক মৌলিক অবস্থানগত পরিবর্তনকেই সূচিত করে। মোদীর সফরের সময় ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভারতের তরফে একজন মহাকাশচারী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

চন্দ্রযান-৩-এ একটি করে ল্যান্ডার, প্রপালশন মডিউল এবং রোভার রয়েছে। অভিযানের লক্ষ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ, তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি একগুচ্ছ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো, যা চাঁদ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে উন্নততর করবে। ল্যান্ডারে তাপ পরিবাহিতা এবং তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য চন্দ্র’জ সারফেস থার্মোফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট (সিএইচএএসটিই), অবতরণের স্থানের আশপাশে ভূমিকম্পের পৌনঃপুনিকতা পরিমাপের জন্য ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সিজমিক অ্যাক্টিভিটি (আইএলএসএ) জন্য যন্ত্র এবং প্লাজমা ঘনত্ব এবং তার বৈচিত্র্য অনুমান করার জন্য ল্যাংমুইর প্রোব-এর (এলপি) মতো একগুচ্ছ পেলোড রয়েছে। লুনার লেজার রেঞ্জিং স্টাডি চালানোর জন্য চন্দ্রযান-৩ নাসা থেকে প্রাপ্ত একটি প্যাসিভ লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে বহন করছে। এ ছাড়াও রোভারে ল্যান্ডিং সাইট বা অবতরণের অঞ্চলের আশেপাশে এলিমেন্টাল কম্পোজিশন বা উপাদানমূলক বৈচিত্র্য পরিমাপ করার জন্য আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (এপিএক্সএস) এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ-এর (এলআইবিএস) মতো পেলোড রয়েছে।

চন্দ্রযান-৩ ভারতের হেভি-লিফ্ট রকেট এবং এল্ভিএম৩-এর জন্যও একটি সাফল্য, যাকে পূর্বে জিএসএলভি এমকে৩ বলা হত।

চন্দ্রযান-৩ অভিযানের চূড়ান্ত ফলাফল অগস্ট মাসের শেষের দিকে জানা গেলেও এই প্রচেষ্টা ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দক্ষতার পরিচায়ক। অভিযানটি সফল হলে তা ২০২৪ সালের জন্য নির্ধারিত ভারতের মানব মহাকাশ মিশন অভিযান-সহ অন্যান্য মহাকাশ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে শক্তি জোগাবে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.