Author : Kabir Taneja

Published on Jan 09, 2025 Updated 0 Hours ago
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় তালিবান ওয়াশিংটনে চেনা মুখ পেয়েছে

Image Source: Getty

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনে এক গুরুত্বপূর্ণ জয় অর্জন করেছেন, যা জানুয়ারি মাসের মধ্যে তাঁকে ক্ষমতায় আসীন করার জনমত প্রদান করেছে। এই জয় নিশ্চিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাবুলের তালিবান নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অনলাইনে এক সাবধানী বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেটিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি বৈধ করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতিকে কাবুলের ক্ষমতা ও প্রশাসনের প্রধান উৎস হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলে মনে করা যেতে পারে। এই মুহূর্তে তালিবানের সর্বোত্তম লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈধতা অর্জন করা এবং কিছুটা হলেও তারা তেমনটা করতে সফল হয়েছে। যখন মার্কিন নির্বাচনের নাটকীয় মোড় প্রকাশ্যে আসছিল, তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা কাবুলে উপস্থিত ছিলেন এবং তালিবানের সঙ্গে একটি বিতর্কিত, কঠিন অথচ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এই সফরের মধ্যে রয়েছে ইসলামিক আমিরাতের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুবের সঙ্গে প্রথম বৈঠক, যিনি তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের বড় ছেলেও বটেআফগানিস্তানে ভারতের মানুষে মানুষে সংযোগের এক শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে এবং ২০২১ সালের পরে আফগানদের প্রবেশাধিকার ও ভিসা বরাদ্দ করা সংক্রান্ত প্রাথমিক চাপানউতোর সত্ত্বেও এই ধারা বজায় রাখা এখনও ভারতের জন্য এক শীর্ষ অগ্রাধিকার।

একটি জটিল বিবৃতি

তালিবানের বিবৃতিতে ট্রাম্পকে তাঁর জয়ের বিষয়ে অভিবাদন না জানানো হলেও (আদর্শগত ভাবে, শরিয়ার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, গোষ্ঠীটি গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয় না) তালিবানরা আশা প্রকাশ করেছে যে, আফগানিস্তানের প্রতি এক বাস্তববাদী মনোভাব গ্রহণ করা হবে। তারা বিশ্বকে আবারও তালিবান ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে হওয়া দোহা চুক্তির সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যেটির মাধ্যমে দু’দশক ব্যাপী ঘটে চলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এ কথা লক্ষ করার মত যে, বিবৃতির শেষ দিকে তালিবানরা এই আশা প্রকাশ করেছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজা ও লেবাননে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তৎপর হবে। অঞ্চলে অনেকের মতোই তালিবানও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং প্যালেস্তাইনিদের দর্শনের পক্ষাবলম্বন করেছে। এমনটা তালিবান করেছে, হামাস বা হিজবুল্লাহ-র প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন না দর্শিয়েই। হামাস ও হিজবুল্লাহ আসলে এমন দুই গোষ্ঠী, যাদের ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে একাধিক দেশের তরফে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়া হয়েছে।

তালিবানরা এই আশা প্রকাশ করেছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজা ও লেবাননে  যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তৎপর হবে।

তালিবানের জন্য রাজনৈতিক ভাবে তার টিকে থাকা আজকের দিনে অসীম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তার ভঙ্গুরতা স্পষ্ট। তালিবানি ক্ষমতার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের যোগাযোগ রয়েছে, বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদের সঙ্গে। ট্রাম্প ইতিপূর্বে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল বাগরাম এয়ারফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, যেটি কাবুলের ৬০ কিলোমিটার বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে তৈরি সবচেয়ে বড় সক্রিয় সামরিক পরিকাঠামো। তিনি সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতার উপর ভিত্তি করে অথবা তালিবানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপনের ইঙ্গিত দিয়ে তাঁর যুক্তি দর্শাননি। বরং ট্রাম্প গুরুত্ব দিয়েছেন আফগানিস্তানের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা এবং সে দেশে মজুত অব্যবহৃত অপার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। এ কথা সত্যি যে, ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে তিনি বাগরাম ফিরে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এ কথা এখনও পর্যন্ত অবাস্তব বলেই মনে হচ্ছে যে, তাঁর অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক ভাবে সে দেশে ফের ফিরে যাবে বলে। এমনটাও দেখার মতো হবে যে, ট্রাম্পের অধীনে রিপাবলিকানরা তালিবান-বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে কী ভাবে দেখেন এবং তাদের প্রতি সমর্থন দলের অভ্যন্তরে নতুন আগ্রহের সঞ্চার ঘটাবে কি না।

তালিবানের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা

স্বাভাবিক ভাবেই, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর তালিবানকে আমেরিকার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে সম্পৃক্ত থাকার জন্য গভীর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তালিবান ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এটি নিজেকে এমন এক গ্রহণযোগ্য চরমপন্থী গোষ্ঠী হিসাবে তুলে ধরেছে, যারা আরও ঘৃণ্য, সহিংস ও আন্তর্জাতিক ভাবে সম্প্রসারণবাদী গোষ্ঠী, যেমন ইসলামিক স্টেট খোরাসানের (আইএসকেপি) বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) এবং ওমানে তালিবানের কার্যকরী দূতাবাস থাকার পাশাপাশি তারা কাতারে রাজনৈতিক নোঙর ফেলেছে। তালিবানের প্রধান মতাদর্শী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে ভ্রমণে ছাড় পেয়েছেন এবং হজ যাত্রার জন্য সৌদি আরবে গিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরেও যান, যাদের সঙ্গে তালিবানের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।

তালিবানের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সংক্রান্ত বৃহত্তম দুশ্চিন্তাটি হল ট্রাম্পের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ কথা এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, আল-কায়েদা-সহ একাধিক ইসলামপন্থী দল দশকব্যাপী তালিবানি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এমনটা মনে করা হয় যে, গোষ্ঠীটির উপর তালিবানের চাপের দরুন কাবুলে আইমান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার পর আল-কায়েদা কোনও প্রধানের নাম ঘোষণা করেনি।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর তালিবানকে আমেরিকার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে সম্পৃক্ত থাকার জন্য গভীর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

ট্রাম্প আগামী বছরগুলিতেও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এটি শুধু অনুমানভিত্তিকই নয়, এর নেপথ্যে বাস্তব তথ্যও রয়েছে। তাঁর প্রশাসন ২০১৫ সালে একতরফা ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বাইরে বের করে আনে। এমনকি উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের তরফে একটি কঠোর অবস্থান স্বাগত হবে। ট্রাম্পের বিজয়ের পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী আবদুল খালেক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘তেহরান তার প্রক্সিদের জন্য খারাপ খবর। নেতানিয়াহু সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। এ বার সময় এসেছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোগুলির উপর আঘাত হানার।’

ইরান প্রশ্ন

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাটিকে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইরান নিজের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক ঘটনা বলে মনে করেছে। তেহরান প্রতিবেশী হিসেবে তালিবানের সঙ্গে সহমত না হলেও অথবা তাদের উপস্থিতিতে খুশি না হলেও তারা মনে করে যে, সীমান্তের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় প্রান্তেই মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বদলে তালিবানের সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক রাখা লাভজনক। তার আগ্রাসী প্রতিরক্ষা কৌশলের আওতায় রয়েছে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে প্রক্সি গোষ্ঠীগুলি এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত শান্ত সীমান্ত পরিস্থিতি বজায় রাখা। তেহরান চায়, অঞ্চলটিতে তাদের ও মার্কিন বাহিনীর মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে। তালিবান পছন্দ করুক বা না করুক, তারা এই বিন্যাসের অংশ হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে তালিবানের উদ্বেগ বৃদ্ধি করে আফগানিস্তানে ইরানের বিশেষ দূত হাসান কাজেমি কোম আফগানিস্তানকে ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’র অংশ বলে ইঙ্গিত করেছিলেন। বর্তমানে নিহত কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানির অধীনে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি) এমনকি সিরিয়া ইরাক জুড়ে ফাতেমিউন ব্রিগেডের লড়াইয়ের জন্য আফগানিস্তান থেকে শিয়া যোদ্ধাদের নিয়োগ করেছিল।

তেহরান প্রতিবেশী হিসেবে তালিবানের সঙ্গে সহমত না হলেও অথবা তাদের উপস্থিতিতে খুশি না হলেও তারা মনে করে যে, সীমান্তের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় প্রান্তেই মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বদলে তালিবানের সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক রাখা লাভজনক।

তালিবানের বিকল্প সীমিত। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের ক্ষেত্রে দেশটির কাছে তেহরানের পক্ষাবলম্বন করা ছাড়া বিশেষ বিকল্প থাকবে না। গোষ্ঠীটির আদর্শগত ভিত্তি সেটির যুক্তিবাদী বা কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণের পথ কঠিন করে তুলবে। আফগানিস্তানে স্থিত গোষ্ঠীগুলি নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী সক্রিয় হতে পারে অথবা সে দেশের ভূখণ্ডকে এক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যেমনটা আগেও ঘটেছে। এ সব কিছুই রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দর্শানোর ক্ষেত্রে তালিবানের প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

অনিশ্চয়তার পর্ব

ভারতের মতো একগুচ্ছ দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে সমর্থ হলেও আফগানিস্তান এক দোলাচলে রয়েছে। গোষ্ঠীটি কাবুল ও কান্দাহার উভয় ক্ষমতাকেন্দ্রের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আদর্শগত যুদ্ধে জর্জরিত। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রাক্তন পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ ও অর্থনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে সমর্থ হওয়া এবং ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা সাফল্য অবশ্যই। এই সাফল্যের আখ্যানকে আল-কায়েদা থেকে হামাস পর্যন্ত ব্যাপক ভাবে উদ্‌যাপন করেছে।

বাগরাম-সহ ভূ-গোলকের এই অংশে ট্রাম্পের নজর আপাতত না পড়লেও তাঁর রাষ্ট্রপতিত্ব তালিবানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তাকে পরীক্ষার মুখে ফেলবে, ঠিক যেমনটা হবে অবশিষ্ট বিশ্বের জন্যও।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.