Published on Jul 28, 2023 Updated 0 Hours ago

ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থাকে কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের কাছে একটি উপযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য কাঠামো নির্মাণের সুযোগ রয়েছে

জি২০ কি অতিমারিকালীন ভুল সংশোধন করতে পারবে?

গ্লোবাল সাউথ সম্ভবত কোভিড-১৯-এর স্মারকের উপর লিখে রাখবে- ‘বিজ্ঞান এগিয়ে এলেও মানবতা সাড়া দেয়নি’। নেতিবাচক মনে হলেও বেশির ভাগ নিম্ন-উপার্জনক্ষম দেশগুলির মানুষের জন্য অতিমারি চলাকালীন উদ্ভাবনের সাপেক্ষে যাপিত অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ এই যে, সেখানে কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর হার সংশ্লিষ্ট বয়সের ধনী দেশগুলির মানুষের তুলনায় ছিল দ্বিগুণ। অন্য দিকে খুব কম সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলির ভাণ্ডারে টিকা মজুতের কাজ চলতে থাকে এবং নেতারা অব্যবহৃত টিকা / ওষুধ নষ্ট করে ফেলার বিষয়ে আলোচনা চালাতে থাকেন। অধিকাংশ কম-উপার্জনক্ষম দেশগুলির জন্য কোভিড টিকার আবিষ্কার সাধারণ মানুষের টিকাকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেনি; জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনগুলি জীবন বাঁচাতে সমর্থ হয়নি। মানবসৃষ্ট এই বিপর্যয় এড়ানোর জন্য বেশ কিছু নিয়ম ভাঙার পাশাপাশি কিছু নতুন নিয়ম গড়ে তোলা জরুরি ছিল। এই সময় থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল যে, প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন, অর্থাৎ ডায়াগনস্টিকস বা রোগ নির্ণয়, টিকা এবং থেরাপিউটিক ক্ষেত্রগুলি আপৎকালীন স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও পর্যাপ্ত ছিল না।

ভারতের প্রেসিডেন্সির অধীনে জি২০-তে হেলথ ট্র্যাকের আওতায় এই সব ক’টি না হলেও একাধিক সংশ্লিষ্ট বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেহেতু এটি অতিমারির প্রস্তুতির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দেয়। অন্যান্য দেশও কি এতে সহমত হবে?

বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় উদ্ভাবনকে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এটির নেপথ্যে রয়েছে প্রাথমিক ভাবে দু’টি কারণ- প্রথমত, ক্রমবর্ধমান উদ্ভাবনগুলিকে বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং জরুরি পরিস্থিতির বিভিন্ন প্রসঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার জন্য; দ্বিতীয়ত, জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবন যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তি  আইনের পুনর্বিবেচনা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড এবং ওষুধ, টিকা ও ডায়াগনস্টিকস বা রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে আমাদের আন্তর্জাতিক মডেলে পরিবর্তন ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভারতের প্রেসিডেন্সির অধীনে জি২০-তে হেলথ ট্র্যাকের আওতায় এই সব ক’টি না হলেও একাধিক সংশ্লিষ্ট বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যেহেতু এটি অতিমারির প্রস্তুতির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দেয়। অন্যান্য দেশও কি এতে সহমত হবে?

স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময়ে উদ্ভাবন

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তির অধিকার এবং স্বত্ব, বিশেষ করে তাদের প্রকৃতিগত ভাবে একচেটিয়া অধিকার প্রদান করে উদ্ভাবনের প্রচার চালায় এবং নতুন ভাবনা ও সম্পদকে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সীমাবদ্ধ করে। ফলে সে সকল পুরস্কার অন্যদের উদ্ভাবনের জন্য একটি উদ্দীপক হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সহজাত যৌক্তিকতা স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় উদ্ভাবনের লক্ষ্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এটি স্বাভাবিক সময়ে কাজ করতে পারলেও কোভিড-১৯-এর মতো একটি সংকট অবস্থায় দুর্বল হয়ে পড়ে, যেখানে জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনের উদ্দেশ্য হল যত সম্ভব দ্রুত মানুষের কছে পৌঁছনো।

আপাতদৃষ্টিতে কোভিড-১৯-এর সময়ে টিকার উদ্ভাবনগুলিকে আক্ষরিক অর্থে ত্বরান্বিত করার কারণগুলি কী কী? ভিত্তিগত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াও শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা যা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির জন্য ইতিবাচক নীতি সমর্থন জুগিয়েছে; গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য সরকার চালিত অনুদান যা বেসরকারি ক্ষেত্রকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তুলেছে যে, সরকারগুলিও এই পদ্ধতির একটি সক্রিয় অংশ; এবং সংগ্রহের জন্য সরকারের আগাম গ্যারান্টি প্রদান, যার অর্থ হল ব্যবসাকে তাদের দ্বারা নির্মিত পণ্য সম্পর্কে আশ্বাস জোগানো… এ হেন পদক্ষেপ সংস্থাগুলির মধ্যে শুধু মাত্র স্বত্বের মালিক হওয়া এবং অর্থায়নকারী সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হয়েই সেটির বাণিজ্যিকীকরণের তুলনায় শক্তিশালী প্রেরণা প্রদান করে। এই প্রসঙ্গত যে মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে, সেগুলি হল- অগ্রিম গ্যারান্টি এবং অন্যান্য নীতি সহায়তা না থাকলে সংস্থাগুলি কি এত অল্প সময়ের মধ্যে এই উদ্ভাবনগুলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারত? এ ছাড়াও যখন সরকারগুলি অনুদানের পাশাপাশি টিকা মজুতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল, তখন কি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের এ হেন অন্তর্নিহিত আইন জারি করা উচিত ছিল না, যাতে জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সুনিশ্চিত করা যায়?

এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রয়োজন আরও সাহসী উদ্ভাবনী বিষয় সম্পর্কে সহমত হওয়া, যাতে সরকারগুলি ভবিষ্যতের জরুরি পরিস্থিতির সময়ে উদ্ভাবনকে ভিন্ন ভাবে প্রণোদিত করার জন্য একত্র হয়ে এমন ব্যবস্থা স্থাপন করে, যা জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনগুলির বণ্টনকে সীমাবদ্ধকারী স্বত্ব ব্যবস্থার পরিবর্তে উদ্ভাবনের ব্যাপক বিস্তারকে পুরস্কৃত করে।

কোভিড-১৯-এর মতো স্বাস্থ্য সঙ্কট দাবি করে যে, বিশ্বব্যাপী নেতারা উদ্ভাবনগুলিকে ভিন্ন ভাবে পুরস্কৃত করবেন এবং আইপি সংক্রান্ত জড়তায় আটকে থাকবেন না, যেটি একটি উদ্ভাবন গুণকের পরিবর্তে বরং ফাঁদে পরিণত হয়। বিশ্ব কোন পথে চালিত হতে পারে, সে বিষয়ে আন্দাজ করে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বত্ব মকুব করার প্রচেষ্টা চালালেও বিশ্বব্যাপী সংস্থাটি বিলম্বিত ও যৎসামান্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ২০২২ সালের জুন মাসে ডব্লিউটিও থেকে সময় সীমাবদ্ধ স্বত্ব শিথিলতার একটি লঘুতর সংস্করণ প্রদান করলেও, ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদক্ষেপ মূলত অকার্যকরই নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার জন্য একটি উদাহরণমূলক অগ্রাধিকার তৈরি করার সুযোগও হারিয়েছে।

মেডিসিনস পেটেন্ট পুলের মতো সংস্থাগুলি – যেগুলি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে স্বেচ্ছায় তাদের উদ্ভাবনগুলি ভাগ করে নিতে বাধ্য করে – বাস্তবে বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উপর সীমিত প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের উপর অত্যন্ত বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রয়োজন আরও সাহসী উদ্ভাবনী বিষয় সম্পর্কে সহমত হওয়া, যাতে সরকারগুলি ভবিষ্যতের জরুরি পরিস্থিতির সময়ে উদ্ভাবনকে ভিন্ন ভাবে প্রণোদিত করার জন্য একত্র হয়ে এমন ব্যবস্থা স্থাপন করে, যা জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনগুলির বণ্টনকে সীমাবদ্ধকারী স্বত্ব ব্যবস্থার পরিবর্তে উদ্ভাবনের ব্যাপক বিস্তারকে পুরস্কৃত করে।

গ্লোবাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি নথিভুক্তকরণ এবং গুণমানের মানদণ্ডে সামঞ্জস্য আনা

অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ওষুধগুলিকে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে কি না বা নতুন ওষুধগুলি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বা চিকিত্সা করতে সহায়তা করে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ঝড় বয়ে  গিয়েছিল। তাদের অনেকগুলিকেই ‘প্রি-প্রিন্ট’ হিসাবে প্রকাশ করা হয়, যা গবেষণার নিয়ম পরিবর্তন করেছিল। এটি গবেষণা ফলাফলের এক অভূতপূর্ব গতি এবং পরিমাণের দিকে ইঙ্গিত করলেও বাস্তবে দেখা গিয়েছে যে, এই গবেষণার অধিকাংশেরই গুণমান সন্দেহজনক এবং পদক্ষেপ হিসাবে গৃহীত হলে তাতে হিতে বিপরীত হত। কোভিড-১৯ ট্রায়াল আর্মের মাত্র ৫ শতাংশ বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত এবং যথাযথ ক্ষমতাসম্পন্ন। (যার অর্থ হল পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষকে ট্রায়ালের আওতায় আনা হয়নি)।

এই ধরনের ক্ষেত্রে পরীক্ষিত ওষুধটি সত্যিই নিরাপদ এবং কার্যকর কি না, তা সিদ্ধান্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ট্রায়ালগুলিতেও ব্যাপক পরিমাণে ডুপ্লিকেশন বা প্রতিলিপিকরণ ধরা পড়ে। এর অর্থ হল একই ওষুধ বিভিন্ন জায়গায় একই অবস্থার জন্য পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রচুর সময় এবং সংস্থান ব্যয় করা হয়েছে, যা সকল ট্রায়াল বিশ্বব্যাপী একক রেজিস্ট্রির অধীনে নিবন্ধিত হলে প্রতিরোধ করা যেত।

এমনকি টিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও অনেক উন্নত দেশে কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে উদ্ভাবিত টিকার প্রতি ব্যাপক অবিশ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে, যা সেই পণ্যগুলির প্রতি মানুষের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করেছে এবং উদ্ভাবনী শক্তিগুলিকে কম কার্যকর ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করেছে।

ন্যায্য ভাবে বলতে গেলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং অন্য সংস্থাগুলি এই ধরনের নিবন্ধীকরণ চালালেও গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অন্যান্য সমস্যা সংক্রান্ত লড়াই তাদের অগ্রগতি স্তব্ধ করেছে। একটি অতিমারির জন্য প্রস্তুত ভবিষ্যতের অর্থ হল, যখন কোনও প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি একটি স্ট্যান্ডার্ড মাস্টার প্রোটোকল অনুসরণ করে চলবে এবং প্রতিটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল একটি ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডারে উপলব্ধ থাকবে যাতে প্রতিটি দেশ একে অপরের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এটি মানবতাকে দ্রুত উদ্ভাবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছতে সাহায্য করবে, যার জন্য মানুষের উপর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে।

এমনকি টিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও অনেক উন্নত দেশে কয়েকটি উন্নয়নশীল  দেশে উদ্ভাবিত টিকার প্রতি ব্যাপক অবিশ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে, যা সেই পণ্যগুলির প্রতি মানুষের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করেছে এবং উদ্ভাবনী শক্তিগুলিকে কম কার্যকর ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করেছে। যদি বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক গুণমানগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়, তা হলে স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় গুণমান, নিয়ন্ত্রক এবং বিশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যাগুলির উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস ঘটানো সম্ভব।

গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বৈচিত্র্যকরণ

কোভিড-১৯ অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে যে, কোভ্যাক্স-এর পরিকল্পিত দাতব্য বা নৈতিক অপরিহার্যতার উপর নির্ভর করা – যা টিকার সমতা প্রচারের প্রবিধান-সহ অতিমারির সময়ে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রবর্তিত হয়েছিল – একটি সঙ্কটের সময়ে গ্লোবাল সাউথের অরক্ষিত জনগণের কাছে উদ্ভাবন পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

বিদ্যমান জি২০ আলোচনায় হেলথ ট্র্যাকের নেতৃত্ব প্রদানকারী ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া সম্প্রতি প্রস্তাব দিয়েছেন যে, অ্যাক্সেস টু কোভিড-১৯ টুলস (এসিটি) অ্যাকসেলারেটরকে – রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা, সরকার, ব্যবসা, শিল্প এবং অলাভজনক সংস্থার একটি আন্তর্জাতিক জোট যেটির লক্ষ্য হল কোভিড-১৯ পরীক্ষা, চিকিত্সা এবং টিকার উদ্ভাবন, উত্পাদন এবং বণ্টন – অধিক আইনি সক্রিয়তা এবং স্পষ্টতর দায়বদ্ধ কাঠামোর আওতায় কোভিড-১৯-এর পরিসরের বাইরেও অন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলার জন্য প্রসারিত করতে হবে। এ ছাড়াও তিনি জি২০ নেতৃবৃন্দকে ভ্যাকসিন-থেরাপিউটিকস-ডায়াগনস্টিকস শৃঙ্খলগুলির বৈচিত্র্যকরণকে সমর্থন করার জন্যও আহ্বান জানান, যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যাগুলি সঙ্কটের সময় চিকিত্সার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের লভ্যতার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

স্পষ্টতই, গ্লোবাল সাউথকে একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাঠামোর অংশ হিসাবে নিজস্ব গবেষণা এবং উত্পাদন কেন্দ্র তৈরি করতে হবে, যাতে কোভিড-১৯-এর সময় উদ্ভাবনের ফল থেকে বঞ্চিত দেশগুলি পরবর্তী সঙ্কটের সময় কার্যকর সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে উদ্ভাবনের সুফল পেতে সমর্থ  হয়। কোভিড-১৯ টিকা নির্মাতাদের ৬৯ শতাংশ উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে অবস্থিত হওয়ার দরুন এ কথা সহজেই অনুমেয়। কখনও কখনও এই বিক্ষিপ্ত উদ্ভাবনী ভূখণ্ডের অর্থ হল, এম-আরএনএ টিকার মতো উদ্ভাবন – যা শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রার নীচে বণ্টন করা প্রয়োজন – যা গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অনুপযুক্ত।

গ্লোবাল সাউথকে একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাঠামোর অংশ হিসাবে নিজস্ব গবেষণা এবং উত্পাদন কেন্দ্র তৈরি করতে হবে, যাতে কোভিড-১৯-এর সময় উদ্ভাবনের ফল থেকে বঞ্চিত দেশগুলি পরবর্তী সঙ্কটের সময় কার্যকর সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে উদ্ভাবনের সুফল পেতে সমর্থ হয়।

কোভিড-১৯ টিকা তৈরিকে কেন্দ্র করে বিগ ফার্মাগুলি যে রকম গোপনীয়তা বজায় রেখেছে এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে যে কোনও উদ্যোগের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে তাদের উদাসীনতা ব্যাপারটিকে আরও প্রতিবন্ধকতাময় করে তুলবে। ভারত অবশ্য এই আন্তর্জাতিক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনন্য অবস্থানে রয়েছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম কমানোর রেকর্ড এবং কোভিড-১৯ টিকার একটি প্রধান উত্পাদন কেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারীর অন্যতম হওয়ার দরুন দেশটি যখন জি২০-র মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বাস্থ্যসেবা বাস্তুতন্ত্রের দৃষ্টান্তমূলক বদল আনার পক্ষে সওয়াল তোলে, তাতে সকলে কর্ণপাত করতে বাধ্য হয়।

বিগ ফার্মাগুলি যেমন তাদের অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য, ঠিক তেমনই আন্তর্জাতিক নেতাদের তাদের বহুপাক্ষিক দায়িত্বের অংশ হিসাবে উদ্ভাবনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্যের মূল্যায়ন করার জন্য স্পষ্ট মেট্রিক্স বা সূচকেরও প্রয়োজন রয়েছে। সম্মিলিত সাফল্যের এই সূচকগুলিকে পরিমাপ করা উচিত যে, কত জন মানুষ জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবন থেকে উপকৃত হতে পারেন বনাম কত জন সত্যিই লাভবান হয়েছেন, তার দ্বারা। এটি নেতাদের দায়বদ্ধ করবে। কারণ তাঁরাই মানবতার পক্ষে বিশ্বকে রূপদানকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর অর্থ সম্ভবত এটিও হতে পারে যে, মানবতা যখন পরবর্তী অতিমারির সম্মুখীন হওয়ার জন্য তার রিলে-রেসের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, তখন গ্লোবাল সাউথের এগিয়ে দেওয়া হাত শূন্য ও অপেক্ষমান থাকবে না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.