Author : Khalid Shah

Published on Oct 23, 2021 Updated 0 Hours ago

সীমান্তে উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন শান্তি বজায় রাখার জন্য বিশেষ কিছুই হাতে নেই।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধবিরতি কি বজায় থাকবে?

২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আবার মেনে চলার অঙ্গীকার করার কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণরেখায় (‌এলওসি)‌ শান্তি আবার ভঙ্গুর হয়ে এসেছে। স্থানীয় মানুষজন যদিও ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এই সমঝোতাকে বিরাট ভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন, দুপারের কামানগুলো কিন্তু এখনও শান্ত শুধু দু’‌পক্ষ ধৈর্য ধরে ‘‌অপেক্ষা কর ও নজর রাখ’‌ নীতি অনুসরণ করছে বলেই। প্রশ্ন হল, আর কতদিন এই সহিষ্ণুতা বজায় থাকবে?‌

শ্রীনগরের পঞ্চদশ কোরের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‌‘‌২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফের মেনে চলার অঙ্গীকারের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুপারের কামানগুলো শান্ত রয়েছে।” সেটা ২০২১–এর ২০ সেপ্টেম্বর। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়েনি। এবছর (‌যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা)‌ একটাও ঘটেনি। অন্তত কাশ্মীর উপত্যকায় সংখ্যাটা শূন্য…” জেনারেল একথাও বলেছিলেন যে ‘‌সীমান্তের ওপার থেকে একবারও প্ররোচনা দেওয়া হয়নি’‌।

শ্রীনগরের পঞ্চদশ কোরের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‌‘‌২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফের মেনে চলার অঙ্গীকারের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুপারের কামানগুলো শান্ত রয়েছে।”

জেনারেলের বিবৃতি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই নিয়ন্ত্রণরেখায় উরি সীমান্ত এলাকা বরাবর ঘটনার ঘনঘটা দেখা গেল। একটা অনুপ্রবেশের প্রয়াস ঘটেছিল বলে ইন্টারনেট ও মোবাইল সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হল। তিন থেকে চারদিন ধরে সার্চ অপারেশন চলল, এবং তিনজন অনুপ্রবেশকারী নিহত হল। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হল ৫টা একে ৪৭ রাইফেল, আর সেই সঙ্গেই ৮টা পিস্তল এবং ৭০টা হ্যান্ড গ্রেনেড। এটা ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে উরি সেক্টরে দ্বিতীয় অনুপ্রবেশের প্রয়াস। ১৯ সেপ্টেম্বর সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকা আরও ছয় অনুপ্রবেশকারীর মোকাবিলা করতে একটা অপারেশন শুরু হল।

সেনাবাহিনীর শীর্ষ স্তরের অফিসারেরা এই অনুপ্রবেশের প্রয়াসগুলিকে পাকিস্তানের ব্যবহারিক পরিবর্তনের নজির হিসেবেই দেখছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জেনারেল পান্ডে তার আগের মূল্যায়নকে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজলেন। তিনি বললেন , ‘‌‘‌এত বেশি তৎপরতা স্থানীয় পাক বাহিনীর কমান্ডারদের সহায়তা ও সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।’‌’‌ তিনি আরও স্পষ্ট ভাবে বললেন, ‘‌‘এখন যে ধরনের শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রয়েছে, যত টুরিস্ট আসছেন, সত্যি বলতে উপত্যকায় অনেক মন্ত্রীর আসা–যাওয়া… অনেকের মনের মধ্যে খচখচ করছে… পিস্তল ও গ্রেনেডের মতো ছোট অস্ত্র পাঠানোর লক্ষ্য একটাই। তা হল তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যাদের হাইব্রিড টেররিস্ট বলা হয়, কমবয়সী যারা দিনের বেলায় পড়াশোনা করে আর যাদের সন্ধ্যেবেলায় কোথাও হানা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।’‌’‌

নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর তিটওয়াল সেক্টরে ফেব্রুয়ারির সমঝোতার পর প্রথম বার বন্দুকের গর্জন শোনা গেল ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য এই গোলা বিনিময় হয়েছিল। সাত মাসের নীরবতা বিচূর্ণ করে মিনিট দশেক ধরে আরপিজি, ৬০ এমএম মর্টার শেল, পাইকা ও এইচএমজি ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২১–এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ১৪,০০০ বার গোলাগুলি ছোঁড়া ও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এই বছর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপক ভাবে কমে গিয়েছিল। গত বছর যেখানে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪,৬৪৫, সেখানে এবছর সেই সংখ্যা ছিল ৫৯২। এর ফলে দু’ধারের সেনারা ও সীমান্তে থাকা মানুষজন বিরাট স্বস্তি পেয়েছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী২০১০ থেকে ২০২১এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত  পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা  আন্তর্জাতিক সীমান্তে ১৪,০০০ বার গোলাগুলি ছোঁড়া  যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল।

দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যবেক্ষকের চোখে ২০২১ ফেব্রুয়ারির সমঝোতা ছিল সেই সব বিভিন্ন সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রথমটি যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতার অবসান ঘটাতে পারে। খবর আসছিল কূটনৈতিক স্তরে কিছু উন্নতি হতে পারে, যেমন হাইকমিশনারদের আবার ফিরিয়ে আনা হতে পারে, পাকিস্তানে একটা সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে, এবং দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হতে পারে। দেশের ভেতরকার চাপে পাকিস্তানের সরকার ও সামরিক বাহিনী শর্ত দিয়েছিল দু’পক্ষের সম্পর্কের উন্নতির জন্য ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের কিছু সিদ্ধান্ত খারিজ করতে হবে। তা ছাড়া সে দেশের সরকার দুদেশের বাণিজ্য ফের চালু করার প্রশ্নে একই অবস্থান নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল না। পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা ভারত থেকে তুলো ও চিনি আমদানির প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। এই প্রস্তাবটা নেওয়া হয়েছিল বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের সম্মতিতে, কিন্তু পরে তা মন্ত্রিসভার অন্যদের বাধায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

২০২১ ফেব্রুয়ারির যুদ্ধবিরতির থেকে দুই দেশ আরও এগোতে ব্যর্থ হল। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশ্নে যে দেশ এখন অনেক ভাল জায়গায় রয়েছে, সেই ভারতের কোনও তাগিদ ছিল না পাকিস্তানের দাবি মেনে নেওয়ার। এক কথায় বললে, পাকিস্তানকে ভারত কোনও রকমের ছাড় দিতে চাইছিল না, কারণ এই সমীকরণে ভারত কর্তৃত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও চাপ ছিল, বিশেষ করে অসামরিক নাগরিকদের থেকে। তাঁরা নয়া দিল্লি থেকে সরাসরি কিছু না পেলে বেসরকারি ভাবে আলোচনা (ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোমেসি) চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনও লাভ দেখতে পাচ্ছিলেন না।

যদিও সীমান্ত শান্ত রাখার প্রশ্নে দু’দেশেরই আগ্রহ ছিল, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেই তাগিদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ভারতকে যখন চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (‌এলএসি)‌ একটা সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, সেই সময় পশ্চিম সীমান্তে ঝঞ্ঝাট কমানোর আগ্রহটাই যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সমঝোতায় পৌঁছনোর তাগিদ হিসেবে কাজ করেছিল। অন্যদিকে আফগান পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি বজায় রাখা লাভদায়ক ছিল।

আফগান পরিস্থিতি পাকিস্তানের পক্ষে গিয়েছে, এবং আমেরিকা সেনা–প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কাবুলে নৈরাজ্য তৈরি হবে বলে যে আশঙ্কা ছিল তা-ও এখন কমে গিয়েছে। কাজেই পাকিস্তানের এখন আফগানিস্তানের সঙ্গে তার পশ্চিম সীমান্তে শুধু তেহরিক-এ-তালিবান পাকিস্তান সম্পর্কিত বিপদের মোকাবিলা করা ছাড়া আর বিশেষ চাপ নেই। ভারতের উদ্বেগ ছিল বিশেষ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে। সেই উদ্বেগ এখনও রয়েছে। তার উপর আফগানিস্তান পরিস্থিতির ধাক্কা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমীকরণগুলোকে আরও জটিল করে দিয়েছে, এবং সীমান্ত পারের জঙ্গিপনার বিপদ বাড়িয়েছে।

কিন্তু সীমান্তে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার স্বার্থে ভারত অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক পাচার কখনওই বরদাস্ত করবে না। গোলাগুলি ছিল অনুপ্রবেশের চেষ্টা আটকানর প্রয়াস, কারণ তাতে করে বাস্তবিক সীমান্তে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিগুলোর বিপদ বেড়ে যায়।

যদিও সীমান্ত শান্ত রাখার প্রশ্ন দুদেশেরই আগ্রহ ছিলনিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেই তাগিদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ভারতকে যখন চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (‌এলএসি)‌ একটা সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হচ্ছেসেই সময় পশ্চিম সীমান্তে ঝঞ্ঝাট কমানোর আগ্রহটাই যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সমঝোতায় পৌঁছানোর তাগিদ হিসেব কাজ করেছিল।

সব মিলিয়ে ২০২১ সেপ্টেম্বর–এর ঘটনাগুলো যুদ্ধবিরতি বজায় রেখে চলার সম্ভাবনাকে খাদের কিনারে এনে দাঁড় করাল। যদি ধরে নেওয়া যায় যে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের প্রয়াস চলতেই থাকবে, তা হলে ভারতীয় বাহিনীর ধৈর্য ক্রমশ কমতে থাকবে। তখন প্রতিষ্ঠিত কৌশল অনুযায়ী তারা যে সব জায়গা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হচ্ছে সেখানকার পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর গোলাগুলি চালাবে।

সম্প্রতি ইমরান খান রাষ্ট্রপুঞ্জে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা এই ইঙ্গিত দেয় যে তিনি পশ্চিমী দুনিয়াকে বার বার একথাই বোঝাতে চাইছেন যে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও উন্নতির সম্ভাবনা পাকিস্তান দেখতে পাচ্ছে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইমরান খান বলেন, ‘‌‘‌গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ২০০৩–এর যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সমঝোতা মেনে চলার অঙ্গীকার করি। আশা করা যাচ্ছিল এর ফলে নয়াদিল্লিতে কৌশলগত বিষয়গুলি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করা হবে। দুঃখের কথা হল, বিজেপি সরকার কাশ্মীরে আরও বেশি দমনপীড়ন চালাচ্ছে, এবং এই ধরনের বর্বর কাজের মধ্যে দিয়ে পরিবেশ বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে একটা অর্থপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ কথাবার্তার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু ভারতেরই।’‌’‌

কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন তার পাশাপাশি চলছে সাম্প্রতিক একাধিক অনুপ্রবেশের প্রয়াস এবং সীমান্তে গোলাগুলি বিনিময়। কাজেই এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা যখন নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কামানগুলো আবার গর্জে উঠতে শুরু করবে, আর স্থানীয় মানুষের আশার আর একটি মুহূর্ত ফের ভেঙে চুরচুর হয়ে যাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.