তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন চেন্নাইতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে রাজ্যের অমীমাংসিত দাবিগুলির একটি দীর্ঘ তালিকা পড়ে শোনানোর পর দক্ষিণ তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক আলোচনা চলেছে স্টালিনের ঔচিত্য ও প্রজ্ঞা নিয়ে। স্টালিন এই তালিকায় এমন একটি ইস্যু তুলেছেন যা এ দেশের সতর্কতার সঙ্গে তৈরি ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে দৃষ্টিকটু ভাবে বেমানান। শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ক্ষুদ্র কাচ্চাতিভু দ্বীপটি ‘পুনরুদ্ধার’ করার জন্য কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের কয়েক দশকের পুরনো দাবির পুনরাবৃত্তি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে এই কাজটি করার জন্য ‘এখনই সঠিক সময়’। বাস্তবে এই দাবিটি যতটা অবিবেচনাপ্রসূত, ঠিক ততটাই অ–সময়োচিত।
যে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে অর্থায়নকৃত ৩১,৫৩০ কোটি টাকার প্রকল্পগুলি উন্মোচন করেছিলেন, সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন দাবি করেন যে কাচ্চাতিভু পুনরুদ্ধার করা গেলে জেলেদের সমস্যাগুলির সমাধান হতে পারে, এবং তা তাঁদের মাছ ধরার সনাতন অধিকার বজায় রাখতে সহায়তা করবে। প্রত্যাশিত ভাবেই মোদী, যিনি পরে ভাষণ দেন, মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখিত কাচ্চাতিভু বা অন্য অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির কোনওটি নিয়েই কোনও কথা বলেননি।
মুখ্যমন্ত্রী কাচ্চাতিভু পুনরুদ্ধারের আহ্বানটি এমন এক সময়ে জানালেন যখন কেন্দ্রের ঋণ সুবিধার অতিরিক্ত রাজ্যের তরফে তিনি শ্রীলঙ্কার সমস্ত মানুষের কাছে খাদ্য ও ওষুধ দান করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্টালিনের উদ্যোগটি সমগ্র দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে সমাদৃত হয়েছিল, বিশেষ করে তিনি প্রথম দিককার সীমিত তামিল-কেন্দ্রিক সহায়তা পরে সেখানকার সব মানুষের জন্য প্রসারিত করায়।
তাঁর ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কা-সম্পর্কিত উল্লেখ শুধু সে দেশের এখনকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন, কিন্তু সে সম্পর্কে নিজে কোনও মন্তব্য করেননি। ভারত শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সমর্থন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রতিবেশী হিসেবে ভারত শ্রীলঙ্কাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক সহায়তা, জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।’’ শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন নিয়ে নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক ফোরামেও জোরালো ভাবে কথা বলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভিন্ন নেতা
মুখ্যমন্ত্রী কাচ্চাতিভু পুনরুদ্ধারের আহ্বানটি এমন এক সময়ে জানালেন যখন কেন্দ্রের ঋণ সুবিধার অতিরিক্ত রাজ্যের তরফে তিনি শ্রীলঙ্কার সমস্ত মানুষের কাছে খাদ্য ও ওষুধ দান করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্টালিনের উদ্যোগটি সমগ্র দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে সমাদৃত হয়েছিল, বিশেষ করে তিনি প্রথম দিককার সীমিত তামিল-কেন্দ্রিক সহায়তা পরে সেখানকার সব মানুষের জন্য প্রসারিত করায়। পরপর শ্রীলঙ্কার দুই প্রধানমন্ত্রী, মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও রনিল বিক্রমসিংহে তাঁকে চিঠি লিখেছেন, এবং সময়োপযোগী প্রয়াসের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সিংহলি রাজনীতির কট্টর ভারতবিরোধী শক্তিগুলিও এখন পিছিয়ে গিয়েছে, কারণ তারাও দেখতে পাচ্ছে যে ভারত ব্যতীত চিন–সহ কোনও দেশ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণকাজ বুঝিয়ে দিয়েছে যে সিংহলি–বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী কট্টরপন্থীরা জাতিগত ইস্যু ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাঁদের ছকে বাঁধা ধারণা থেকে ভিন্ন এক দ্রাবিড় রাজনৈতিক নেতাকে দেখছেন।
উল্টো ফলদায়ক
এই প্রেক্ষাপটেই নয়াদিল্লির কাছে কাচ্চাতিভুকে ‘পুনরুদ্ধার’ করার জন্য তাঁর দাবি সম্পূর্ণ অসময়োচিত, কারণ এটি ‘পুনরুদ্ধার’ করা অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান শ্রীলঙ্কার তামিল জেলেরা মোটেই ভাল ভাবে দেখেননি, এবং তাঁরা কাচ্চাতিভুকে দ্বিপাক্ষিক বিরোধের সঙ্গে যুক্ত বিষয় বলেই মনে করেছেন। উভয় দেশের জেলেরাই জানেন যে এটি আর আগের দশকগুলোর মতো সমৃদ্ধ মাছ ধরার জায়গা নয়। ইতিমধ্যে, সেলভাম আদাইকালনাথনের মতো জাফনাভিত্তিক শ্রীলঙ্কার তামিল পার্লামেন্ট সদস্যেরা ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা কাচ্চাতিভু ছাড়বেন না।
‘সিংহলি-বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী’ কট্টরপন্থীরা মুখ্যমন্ত্রীর কাচ্চাতিভু পুনরুদ্ধারের জন্য ‘এটাই সঠিক সময়’ উক্তিটি ঠিকই খেয়াল করেছেন। যে ভাবে চিন্তা করতে তাঁরা অভ্যস্ত, সেই অনুযায়ী তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। সিদ্ধান্তটি হল স্টালিন তাঁদের দেশের অর্থনৈতিক অসহায়তার কথাই উল্লেখ করছিলেন, এবং দেওয়া–নেওয়ার ভিত্তিতে একটি চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এক জনবসতিহীন দ্বীপকে কেন্দ্র করে, যেখানে উভয় দেশের জেলেরা শুধু বছরে একবার জড়ো হয় দুই দিনের সেন্ট অ্যান্টনি গির্জা উৎসবের জন্য। এই ভাবনা শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সত্য, যার স্মৃতিশক্তি কম নয়।
কাচ্চাতিভু সমস্যাটি মূলত ১৯৭৪ সালের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকে তৈরি হয়েছিল, যখন দুটি দেশ একটি ‘বিচ্যুত মধ্যমা’ (ডেভিয়ে্টিং মিডিয়ান) গ্রহণ করেছিল। সেই সময় ‘আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমারেখা’ (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম বর্ডার লাইন বা আইএমবিএল) অঙ্কনের সময় এই ১৬৩ একরের ক্ষুদ্র অনুর্বর দ্বীপটিকে প্রথম বারের মতো শ্রীলঙ্কার দিকে দেখানো হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সদস্যেরা–সহ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের সমালোচকেরা দাবি করেছেন যে ভারত তার নির্ধারিত শর্তে স্বাক্ষর করানোর জন্য দেশটিকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছে। পরে বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমদাস সহ সমালোচকরা দাবি করেছিলেন যে ভারত শুধু ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর শিল্পপতি বন্ধুদের স্বার্থ’রক্ষার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষেদের বাঁচাতে সহায়তা করছে। অবশ্য যেন এই বক্তব্য সংশোধন করার জন্যই পরে প্রেমদাস জুনিয়র শ্রীলঙ্কাকে ‘সর্বোচ্চ পরিমাণে’ সাহায্য করার জন্য মোদীর কাছে প্রকাশ্যে আবেদন জানিয়েছিলেন।
বিচ্যুত মধ্যমা
কাচ্চাতিভু সমস্যাটি মূলত ১৯৭৪ সালের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকে তৈরি হয়েছিল, যখন দুটি দেশ একটি ‘বিচ্যুত মধ্যমা (ডেভিয়েটিং মিডিয়ান) গ্রহণ করেছিল। সেই সময় ‘আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমারেখা’ (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম বর্ডার লাইন বা আইএমবিএল) অঙ্কনের সময় এই ১৬৩ একরের ক্ষুদ্র অনুর্বর দ্বীপটিকে প্রথম বারের মতো শ্রীলঙ্কার দিকে দেখানো হয়েছিল। তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ও সরকারি চাপ অস্বীকার করে কেন্দ্রের পরের পর সরকার এই সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে, এবং তা ‘ইউ এন কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি’ (ইউ এন সি এল ও এস)–এর প্রথম সংস্করণের অধীনে বিজ্ঞাপিত হয়ে চুক্তিটিকে আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রদান করেছে। ফলে এখন এর একতরফা প্রত্যাহার প্রায়-অসম্ভব।
এই সংক্রান্ত কেন প্রশ্নটির উত্তর অস্পষ্ট, কিন্তু এই বিচ্যুতি নিশ্চিত করেছে যে ৫৩ কিমি-এর পক প্রণালী এই দুটি দেশের একচেটিয়া ব্যবহারের জন্য একটি হ্রদ হিসেবে থেকে যাবে, যেখানে তৃতীয় দেশের প্রবেশাধিকার নেই। ইউ এন সি এল ও এস-এর অধীনে এর কোনও দ্বিতীয় উদাহরণ নেই। তৃতীয় দেশগুলি আগ্রহ দেখাতে শুরু করে যখন ভারত সেতু সমুদ্রম ক্যানাল প্রকল্পে কাজ শুরু করে। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই প্রকল্প স্থগিত করে দেয়। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল যে যদি যেমন চাওয়া হচ্ছে সে ভাবে জল নাব্য হয়, তবে তারা প্রবেশাধিকার চাইবে।
নয়াদিল্লি অবশ্য ধারাবাহিক ভাবে দাবি করে আসছে যে ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া বা জাতীয় সীমান্ত পরিবর্তন সংক্রান্ত এমন কোনও বিষয় ছিল না, যার জন্য সংসদীয় অনুমোদন লাগে। এটি আইএমবিএল নির্ধারণে অগ্রণী কাজ ছিল।
যাই হোক, বিরোধের কারণ ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার বারংবার ভারতীয় জেলেদের বিশ্রাম ও জাল শুকনোর জন্য প্রবেশের অধিকার প্রত্যাখ্যান করা। প্রথমত তারা কয়েক দশকের পুরনো এলটিটিই যুদ্ধকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছিল, এবং তারপর তারা যুক্তি দিয়েছিল যে ভারতীয় জেলেরা এখন যা ব্যবহার করে সেই নাইলনের জাল শুকনোর প্রয়োজন পড়ে না। কেউ কেউ ১৯৭৬ সালের পরবর্তী চুক্তিতে উল্লিখিত ধারাটি বাদ যাওয়ার কথাও বলেছেন। কলম্বো সর্বদাই কাচ্চাতিভুর মালিকানা দাবি করার জন্য উত্তর জাফনা জেলার রাজস্ব রেকর্ডগুলিকে উদ্ধৃত করেছিল, ঠিক যেমন তামিলনাড়ুর পরের পর সরকার সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে রামনাড়ের রাজা ও শিবগঙ্গা জমিনের বহু নথি তুলে ধরেছে।
ক্ষমতায় থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার সময় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং এম করুণানিধিরা এই যুক্তিও দিয়েছিলেন যে ১৯৭৪ সালের চুক্তি সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে, কারণ ওই ধারা অনুযায়ী কোনও অঞ্চলের উপর থেকে দাবি তুলে নিতে হলে কেন্দ্রকে সংসদের অনুমোদন নিতে হয়। নয়াদিল্লি অবশ্য ধারাবাহিক ভাবে দাবি করে আসছে যে ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া বা জাতীয় সীমান্ত পরিবর্তন সংক্রান্ত এমন কোনও বিষয় ছিল না, যার জন্য সংসদীয় অনুমোদন লাগে। এটি আইএমবিএল নির্ধারণে অগ্রণী কাজ ছিল।
কেন্দ্রের পরের পর সরকারগুলি শ্রীলঙ্কার নৌ–আক্রমণ এবং গ্রেফতার থেকে ভারতীয় জেলেদের রক্ষা করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু, ২০১৭ সালের সংসদীয় আইন দ্বীপের কারাগার থেকে তাদের মুক্তি আরও কঠিন করে তুলেছিল, কারণ তা সমস্ত সামুদ্রিক অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কঠোর শাস্তি এবং মোটা টাকা জামিনের পরিমাণ নির্ধারণ করেছিল।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে স্টালিন চলতে থাকা মৎস্যজীবী বিরোধের বিষয়ে তাঁর উদ্বেগগুলি অসময়ে এবং ভুল ভাবে প্রকাশ করেছেন, তবে তিনিই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি ‘পুনরুদ্ধার’ বাক্যাংশটি ব্যবহার করলেন। তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেওয়ার সময় প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী এ আই এ ডি এম কে-র জয়ললিতা ১৫ আগস্ট ১৯৯১–এ একই কথা বলেছিলেন। তিনি রাজ্য বিধানসভার অভ্যন্তরে এবং বাইরে অনেক বার একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন, এবং তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষমতায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনের প্রয়াত পিতা, ডিএমকে-র এম করুণানিধি, সমস্ত ফ্রন্টে একই পথ অনুসরণ করেছিলেন।
রাজনীতি এবং রাজনৈতিক চাহিদা ছাড়াও, ভারতের কিছু কৌশলগত বিশ্লেষক বেজিং ও কলম্বোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মূল ভূখণ্ডের এত কাছাকাছি অবস্থিত এই দ্বীপটির প্রতিপক্ষ চিনের নাগালের মধ্যে চলে আসার তাত্ত্বিক সম্ভাবনায় অস্বস্তি বোধ করেছেন।
যাই হোক, যে কারণে স্টালিনের মাথায় বিষয়টি এসেছে বলে মনে হচ্ছে তা হল কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ক্ষমতাসীন বিজেপি–র কিছু রাজ্য–নেতার সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টির পুনরাবৃত্তি। এই কথা বলে তাঁরা প্রায়শই দাবি করেছেন যে মোদী সরকার হয় কাচ্চাতিভুকে ‘পুনরুদ্ধার’ করবে, নয়তো তা তামিলনাড়ুর জেলেদের ব্যবহারের জন্য শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদে লিজে নেবে। এই ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেওয়া বিবৃতির, বিশেষ করে কেন্দ্রের সর্বশক্তিমান ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের, শ্রীলঙ্কার দৃষ্টিকোণ থেকে নানা ধরনের ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে।
রাজনীতি এবং রাজনৈতিক চাহিদা ছাড়াও, ভারতের কিছু কৌশলগত বিশ্লেষক বেজিং ও কলম্বোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মূল ভূখণ্ডের এত কাছাকাছি অবস্থিত এই দ্বীপটির প্রতিপক্ষ চিনের নাগালের মধ্যে চলে আসার তাত্ত্বিক সম্ভাবনায় অস্বস্তি বোধ করেছেন। কাচ্চাতিভু দ্বীপটিকে ভারতের ইজারা নেওয়ার প্রস্তাবে শ্রীলঙ্কায় কেউই সাড়া দেবে না, কিন্তু উভয় দেশ মিলে একটি যৌথ টহলের ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করতে পারে। কলম্বো একবার সেই প্রস্তাব করেছিল। উভয়ের অংশীদারি রয়েছে এমন জলে তৃতীয় দেশের বেআইনি মাছ ধরা এবং ক্রমবর্ধমান মাদক চোরাচালান রোধ করতে যৌথ নজরদারির ব্যবস্থা করা যায়।
এই সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে দুটি দেশ সম্প্রতি গঠিত ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ’ (সিএসসি)–এর সমস্ত সদস্য দেশের নৌবাহিনীর দ্বারা একটি স্থায়ী যৌথ নৌ–টহলের ব্যবস্থা করার জন্য বিষয়টিকে একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার কথাও ভাবতে পারে। এই কনক্লেভে মলদ্বীপ ও বাংলাদেশও আছে। এই ধরনের ব্যবস্থা যখন অন্য সদস্য দেশগুলির জলসীমাতেও প্রসারিত হবে, তখন তা তাদের সাধারণ নিরাপত্তা উদ্বেগগুলি সম্মিলিত ভাবে মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.