Published on Jun 24, 2023 Updated 0 Hours ago

কোকো দ্বীপপুঞ্জে ক্রমবর্ধমান সামরিক কার্যকলাপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে তার নৈকট্য ভারতকে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে প্ররোচিত করেছে

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে কী ঘটছে?

একটি সাম্প্রতিক চ্যাথাম হাউজ রিপোর্ট মায়ানমারের কোকো দ্বীপপুঞ্জকে নজরে এনেছে, এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (‌আইওআর)‌ চিনের বর্ধিত প্রভাব নিয়ে  দীর্ঘস্থায়ী আলোচনায় একেও যুক্ত করেছে। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (এএনআই) থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরত্বে কোকো দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত। প্রতিবেদনে উপগ্রহ চিত্রগুলির উল্লেখ করা হয়েছে যা পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দেখায়, যেমন একটি প্রতিবেশী দ্বীপের সঙ্গে গ্রেট কোকো দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের সংযোগকারী একটি কজওয়ে নির্মাণ, একটি জলে প্রসারিত সেতু, একটি রানওয়ে, এবং একটি রেডার স্টেশন। সেই সঙ্গেই সামরিক ও বিমান সংক্রান্ত সুযোগসুবিধার চিহ্নগুলি  একটি ধারাবাহিক রূপান্তরের কথাই তুলে ধরে। এই নতুন ঘটনাবলির পিছনে চিন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

চিন যে কোকো দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে তার সংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মায়ানমারও চিনের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছ। তবে বেজিংয়ের প্রতি সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য, কারণ এমনটা অসম্ভব যে একটি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের মাঝখানে মায়ানমারের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গতি বা প্রেরণা রয়েছে। বরং অনেক বেশি সম্ভাব্য দৃশ্য হল নেপিইটও ও বেজিং এখানে একত্রে কাজ করছে। চিন বছরের পর বছর ধরে মায়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে, যদিও অভ্যুত্থানের পরে বাকি বিশ্ব নেপিইটওকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বিষয় ও গণবিক্ষোভ নিয়ে পরের পর প্রশাসনের ব্যস্ততার কারণে দ্বীপগুলি তুলনামূলকভাবে অনুন্নত ছিল।

কোকো দ্বীপপুঞ্জ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মায়ানমার ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের  নৌ–ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত কোকো দ্বীপপুঞ্জ দেশটির অংশ হয়ে ওঠে, এবং ১৯৬২ সাল থেকে সামরিক সরকার কর্তৃক একটি শাস্তিমূলক উপনিবেশ হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে সেখানে একটি নৌ–রাডার স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। যাই হোক, অভ্যন্তরীণ বিষয় ও গণ অস্থিরতা নিয়ে পরের পর প্রশাসনের ব্যস্ততার কারণে দ্বীপগুলি তুলনামূলকভাবে অনুন্নত ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাতমাদও দ্বীপটির কৌশলগত তাৎপর্যের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রদর্শন করেছে এবং সামরিক প্রধানেরা ঘন ঘন দ্বীপটি পরিদর্শন করেছেন। উপরন্তু দ্বীপের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপের পাশাপাশি একে একটি অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করা এবং প্রাথমিক সতর্কতা জানানোর উপযোগী করে তোলার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কোকো দ্বীপপুঞ্জকে চিন সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স (সিগইন্ট) বেস হিসাবে ব্যবহার করে বলে তত্ত্ব ও জল্পনা ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিক থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি কখনওই প্রমাণিত না–হওয়া সত্ত্বেও আইওআর জুড়ে চিনের পা রাখার প্রেক্ষাপটে এটি আশঙ্কা তৈরি করেছে। নতুন চিত্রগুলি দেখায় আগে যা একটি প্রাথমিক রেডিও স্টেশন ছিল সেখানে আরও উন্নত সুবিধা তৈরি হয়েছে, একটি রানওয়ে ১,৩০০ থেকে সম্প্রসারিত করে ২,৩০০ মিটার করা হয়েছে, এবং যা দ্বীপগুলিতে সরবরাহ নিয়ে আসে সেই পরিবহণ বিমানের জন্য শেড তৈরি হয়েছে। চিনা কর্মীদেরও প্রায়শই দ্বীপগুলিতে দেখা যায়, যেখানে প্রায় ১৫০ মায়ানমার কর্মীকে ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে।

মায়ানমার হল চিনের এমন একটি প্রতিবেশী দেশ যা রাজনৈতিকভাবে অস্থির, আন্তর্জাতিক নিন্দার পাত্র, এবং এখনও তার আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। কাজেই দেশটি চিনের সামুদ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আদর্শ।

এই নতুন তথ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং উদ্বেগকে নতুন করে বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ দ্বীপগুলি সামুদ্রিক গতিবিধির উপর পর্যবেক্ষণ, নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য বেজিংকে একটি সুবিধাজনক জায়গা দেয়, বিশেষ করে আইওআর–এ ভারতের নৌ–কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে। সেইসঙ্গেই নৌ–মোতায়েনের জন্য জায়গাটিকে লঞ্চপ্যাড হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

চিনের জন্য মায়ানমার গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কয়েক দশক ধরে চিন শক্তি আমদানির জন্য তার সামুদ্রিক সরবরাহ লাইনগুলিকে  সুরক্ষিত করতে এবং মালাক্কার সংকীর্ণ প্রণালীর উপর তার নির্ভরতাকে বৈচিত্র্যময় করতে সামুদ্রিক রুটে তার প্রবেশাধিকারকে বহুমুখী করার চেষ্টা করেছে। এই লক্ষ্যে বেজিং ক্রমাগতভাবে ইরান থেকে আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত আইওআর–এর বন্দরগুলি জুড়ে পা রাখার জায়গা তৈরি করে চলেছে। মায়ানমার হল চিনের এমন একটি প্রতিবেশী দেশ যা রাজনৈতিকভাবে অস্থির, আন্তর্জাতিক নিন্দার পাত্র, এবং এখনও তার আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। কাজেই দেশটি চিনের সামুদ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আদর্শ। এছাড়াও বেজিং হল তার এক প্রধান প্রতিরক্ষা সরবরাহকারী, একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী যে ওই দেশটিতে চিন–মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (সিএমইসি)–এর মতো বিভিন্ন পরিকাঠামোগত প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সিএমইসি প্রকল্পের বেশ  কয়েকটি ওয়ার্কিং কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে, যাতে তাদের দ্রুত সমাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। এই প্রকল্পগুলির বেশিরভাগই চিন–মায়ানমার সীমান্তে রূপায়িত হচ্ছে, যে জায়গাগুলি এমন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রভাবের অধীন যারা চিনা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে

১৯৮০–র দশকের শেষের দিক থেকে মায়ানমারে চিনের প্রধান বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য ছিল তার সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা এবং জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার যাওয়া। চিন–মায়ানমার সীমান্তে সক্রিয় অ–বামার জাতিগত সশস্ত্র সংস্থাগুলি (ইএকিউ) দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী নয়, যার ফলে তাতমাদও–র সঙ্গে তাদের ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষগুলি চিনা ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য বিপদস্বরূপ, কারণ মায়ানমার ও ইউনানের মধ্যে বেশিরভাগ বাণিজ্য মিউজের মতো প্রধান সীমান্ত শহরগুলির মধ্য দিয়ে হয়। চিন–মায়ানমার তেল ও গ্যাস পাইপলাইন, রুইলি–মান্দালয় রেলওয়ে এবং কিয়াউকফিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো প্রধান অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত, যা স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বেশি করে তুলে ধরে। চিন বহুবার জুন্টার সঙ্গে ইএকিউ–গুলিকে আলোচনার টেবিলে আনতে সফল হয়েছে, এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছে। ফলস্বরূপ, চিন মায়ানমারে একটি উল্লেখযোগ্য অংশীদারি তৈরি করেছে, যা এটিকে তার প্রভাব ও বিনিয়োগকে তার নিজের সুবিধার জন্য কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী জায়গা দিয়েছে।

চিন–মায়ানমার সীমান্তে সক্রিয় অ–বামার জাতিগত সশস্ত্র সংস্থাগুলি (ইএকিউ) দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী নয়, যার ফলে তাতমাদও–র সঙ্গে তাদের ঘন ঘন সংঘর্ষ হয়।

কল্পকথা থেকে তথ্য আলাদা করা
কোকো দ্বীপপুঞ্জে চিনের উপস্থিতি সম্পর্কে অনেক জল্পনা–কল্পনার পর এখন দ্বীপগুলিতে একটি চিনা সিগইন্ট স্টেশন থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লেও মায়ানমার ক্রমাগত কোনও চিনা সামরিক তৎপরতায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, এবং এমনকি ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের গ্রেট কোকো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা বলেছে যে সেখানে একটি এয়ারস্ট্রিপ থাকলেও কোনও দৃশ্যমান চিনা সামরিক উপস্থিতি নেই। কিন্তু তা যদি সত্য হয়, তা হলে ধরতে হবে যে তাতমাদও সেখানে তার নিজস্ব ইচ্ছার বিকাশ ঘটাচ্ছে;‌ অথচ মায়ানমারের অস্থিতিশীল অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং কৌশলগত পরিপ্রেক্ষিত থেকে কোকো দ্বীপপুঞ্জকে ব্যবহার করার জন্য কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। অন্যদিকে, দক্ষিণ চিন সাগরের শিলাখণ্ড ও দ্বীপগুলিতে তার বিস্তৃত নির্মাণ কার্যক্রম এবং আইওআর জুড়ে তার তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে চিনের তাতমাদওকে সমর্থন করা এবং এই উন্নয়নে জড়িত থাকার যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে।

তবে কোকো দ্বীপপুঞ্জের উন্নয়নের পিছনে কে আছে তা নির্বিশেষে ভারতকে অবশ্যই এএনআই–তে তার নিজস্ব ক্ষমতা সম্প্রসারিত করতে হবে, কারণ কোকো দ্বীপপুঞ্জগুলি এএনআই–এর কাছাকাছি এবং সেখানে  বিশেষ করে সামরিক সহ যে কোনও উন্নয়নই ভারতের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। কাজেই কোকো দ্বীপপুঞ্জে যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে তারপরেই সেখান থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ও বিমান নজরদারি শুরু হবে বলে ধরে নিয়ে নয়াদিল্লি ট্রাই–সার্ভিস এএন কমান্ডের পূর্ব–প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার উপর জোর দিয়েছে।


প্রত্নশ্রী বসু সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোমেসি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো।

শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জুনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Pratnashree Basu

Pratnashree Basu

Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...

Read More +
Sreeparna Banerjee

Sreeparna Banerjee

Sreeparna Banerjee is a Junior Fellow at the Observer Research Foundation Kolkata with the Strategic Studies Programme.

Read More +