এই প্রবন্ধটি "What to expect in 2024"–এর অংশ
অস্থির ভূ–রাজনীতি ও অস্থিতিশীল অর্থনীতিগুলির জন্য ২০২৪ সালে বিশ্ব বাজারগুলি অস্থির থাকবে৷ এটি এমন ব্যবসায়ীদের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে যারা অস্থিরতায় উন্নতি করে, এবং উল্টোদিকে যাদের নজর থাকে দীর্ঘ বিনিয়োগের উপর, তাদের জন্য এটি হবে অনিশ্চিত ১২টি মাস৷ যারা সম্পদ তৈরি করে তারা তাদের পোর্টফোলিওতে ভয় ও লোভ অনুভব করবে – ভয় হল ধসের , আর লোভ হল এই ধরনের দুর্ঘটনার সুযোগে ফয়দা তোলার। যারা তাদের সম্পদ থেকে বেঁচে থাকে তাদের সারাক্ষণ বিনিয়োগ–বরাদ্দ নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে, যা হবে উচ্চ–রিটার্ন ইক্যুইটিতে স্থানান্তর এবং কম–রিটার্ন বন্ডের নিরাপত্তার মধ্যে যুদ্ধ। ২০২৪ সালে মূলধন সংরক্ষণ মূলধন বৃদ্ধির সঙ্গে সমানভাবে ম্যাচ করবে।
স্থানীয় রাজনীতি ভূ–রাজনীতিতে নীতিগত অনিশ্চয়তা যোগ করবে। ২০২৪ সালে অর্থ ও বাজারকে প্রভাবিত করবে সাতটি জি ২১ দেশের নির্বাচন: ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া, মার্চে ভারত ও রাশিয়া, মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা, জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও মেক্সিকো, এবং নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আর্থিক দুনিয়া সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পর্যবেক্ষণ করবে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, কারণ এটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সৃষ্টি থেকে নোট ছাপানো পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বিশ্বের জন্য মূলধনী অ্যাজেন্ডা নির্ধারণ করে; এবং ভারতকে, কারণ এটি উল্লম্ফনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভরবেগ সংগ্রহকারী বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে আইনের শাসনের নিরাপদ চৌহদ্দি প্রদান করবে।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা প্রাইভেট ইক্যুইটির মতো বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও স্বচ্ছ হবে — গণতন্ত্রের দিকে উড়ান। কিন্তু এক ভূগোল থেকে অন্য ভূগোলে বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা সহজ নাও হতে পারে।
পরিপক্ব বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী, যাদের মূলধন স্থাপনের পরিধি বিস্তৃত, তারা দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের পথ ধরে চলবে। সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা প্রাইভেট ইক্যুইটির মতো বিনিয়োগকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও স্বচ্ছ হবে — গণতন্ত্রের দিকে উড়ান। কিন্তু এক ভূগোল থেকে অন্য ভূগোলে বিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা সহজ নাও হতে পারে। চিনে আর্থিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি বিশেষভাবে কঠিন হবে, যেখানে প্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রবেশের ক্ষেত্রে কার্যপরিচালনগত বাধার মতোই পুঁজির প্রস্থানের ক্ষেত্রেও বাধা খেয়ালখুশিমতো নিয়ে আসা হতে পারে। আর্থিক পরিবর্তনের তৃতীয় ধাপ হবে এমন কোম্পানির মূলধন যা বিক্রয় ও লাভের জন্য চিনের উপর উচ্চ–নির্ভরশীল, কিন্তু মুক্ত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত।
আয়তন ও আকার, এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আর্থিক প্রযুক্তি সক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারত ২০২৪ থেকে পরবর্তী গন্তব্য হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ইইউ ও জাপানের পরে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে ২০২৩ সালে ভারতের স্বল্পমেয়াদি রিটার্ন হল ১৬.৮ শতাংশ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাসডাক (৪৩.৫ শতাংশ) ও জাপানের (২৯.২ শতাংশ) থেকে কম হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাও (১২.৬ শতাংশ) ও চিনের (৬.৪ শতাংশ) থেকে বেশি। কিন্তু যেহেতু ইক্যুইটিগুলির একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন, তাই ভারতের পাঁচ বছরের রিটার্ন হল ৮৩.১ শতাংশ, যা কিনা ন্যাসডাক–এর পরেই দ্বিতীয়৷ এর সঙ্গে যোগ করতে হবে আগামী দুই বছরে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সম্ভাবনাগুলি, বিশ্বব্যাপী কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণ পৌঁছনোর ক্ষেত্রে একটি বোধগম্য পরিবর্তন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গভীর ও শক্তিশালী ভূ–রাজনৈতিক সম্পর্ক; এরপর ভারতকে আর গন্তব্য হিসাবে উপেক্ষা করা যাবে না।
অন্যান্য বাজারের তুলনায় ভারতীয় বাজারের উচ্চ ২২.৫ মূল্য–থেকে–আয় গুণিতক, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ২০.৫, তাইওয়ানের ১৫.৫, ফ্রান্সের ১৪.৫, অস্ট্রেলিয়ার ১৪.২, জাপানের ১৩.৭ বা জার্মানির ১১.৯, এই বৃদ্ধিকে এর উচ্চতর মূল্যের মধ্যে তুলে ধরে। তবে এর মানে এই নয় যে এটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য মসৃণ যাত্রা হতে চলেছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বিপরীতে, যাঁদের আয়ের মহাবিশ্ব রুপিতে, আন্তর্জাতিক পুঁজিকে তার ভৌ্গোলিক ক্যালকুলাসে মুদ্রার ওঠানামার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। ইউরো বা অস্ট্রেলিয়ান ডলারের পতনের সঙ্গে মিল রেখে গত ১২ মাসে একটি শক্তিশালী ডলারের প্রেক্ষিতে ভারতীয় রুপি ৩.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত পাঁচ বছরে ভারতীয় রুপির মূল্য ১৫ শতাংশ কমেছে।
মুদ্রার এই অবমূল্যায়ন স্টক মার্কেটের থেকে লাভকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানি ইয়েনের মূল্যের পতন — গত ১১ মাসে ১৫ শতাংশ এবং গত পাঁচ বছরে ২৬ শতাংশ — ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে স্টক মার্কেটের লাভ ২৬ শতাংশ এবং গত পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। তারপরেও জাপান হঠাৎ করেই আজ আরও বেশি বিনিয়োগযোগ্য স্থান হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র মূল্যের ক্ষেত্রটি ধরা হলে, একই কোম্পানিগুলি বিদেশি পুঁজির জন্য এখন সস্তা হারে উপলব্ধ। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের ২০২৩ সালের জুনে পাঁচটি জাপানি ট্রেডিং কোম্পানিতে — ইতোচু, মারুবেনি, মিতসুবিশি, মিতসুই ও সুমিতোমো — ৮.৫ শতাংশ স্টক বৃদ্ধি করা একটি সংকেত যে জাপান একটি মূল্যবান ক্ষেত্র।
দেখতে হবে টোকিও কীভাবে দেশটির সামনে তিনটি বিপদের মোকাবিলা করে: চিন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বার্ধক্য, যার প্রতিটিই তার বাজারের অভিব্যক্তিতে অনন্য। ব্যাপকভাবে, জাপান চিনকে সামলাতে সক্ষম হবে এবং এমনকি অবমূল্যায়ন থেকে লাভবান হবে। কিন্তু জাপানি কোম্পানিগুলোকে দক্ষ করে তোলার জন্য দেশটি তার জনগণকে কীভাবে সঙ্গে পাবে, সেটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে জাপান প্রতিভা আমদানির বিরুদ্ধে; এটির একটি সংস্কৃতি রয়েছে যা নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে; এবং এর প্রতিকূল জনবিন্যাস — দেশের বয়স নির্ভরতা অনুপাত ১৯৯২ সালে ৪৩ থেকে ২০২২ সালে ৭১–এ উন্নীত হয়েছে, যা ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৪৭ — এর অর্থনীতিকে তুলনায় অরক্ষিত করে তুলেছে।
অন্যদিকে, মার্কিন স্টক মার্কেটের বিশাল ৪৬.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের (চিনের সাতগুণ, জাপানের আট গুণ এবং ভারতের ১৩ গুণ বেশি) আয়তন সত্ত্বেও এটি লাভকে চালিত করবে। সমস্ত মার্কিন কোম্পানি থেকে নয়, কিন্তু প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে, যেগুলি একটি উদ্ভাবন প্রবৃত্তির অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী বাস্তুতন্ত্র, দক্ষ লোকদের একটি বিশাল প্রতিভা সমন্বয়, এবং ঝুঁকি পুঁজির সঙ্গে একটি গভীর সংযোগের উপর নির্ভরশীল। যদিও জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডাও জোন্সে রিটার্ন ৩.৫ শতাংশ, নাসড্যাকে তালিকাভুক্ত প্রযুক্তি সংস্থাগুলির থেকে ৩২.৮ শতাংশ। দীর্ঘ, পাঁচ বছরের দিগন্তে সংখ্যাগুলি একই রকম, যথাক্রমে ৩৪.৯ শতাংশ ও ৯০.৪ শতাংশ৷ মার্কিন ডলার হল একটি রিজার্ভ কারেন্সি যা ইচ্ছা্মতো মুদ্রণ করা যায়, এবং ইউএস একটি বেঞ্চমার্ক যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী সুদের হার আবর্তিত হয়, এবং আপনার কাছে যা আছে তা হল সিলিকন ভ্যালি ও সিয়াটলে প্রযুক্তিগত সুযোগের গতি এবং অস্টেনে সেগুলির সম্প্রসারণ।
সরকারের বিবেচনার মূল বিষয়গুলি - ভূরাজনীতি এবং কৌশলগত থ্রাস্ট থেকে ভূ-অর্থনীতি, এবং গণতন্ত্রে ফেরার ফ্লাইটে নিরাপত্তা - আগামী ১২ মাসে বিশ্বব্যাপী অর্থায়নের মূল চালক হবে।
তাই ২০২৪ সালে স্মার্ট মানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দ্রুত বর্ধনশীল ভারত, এবং ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও সম্ভবত সৌদি আরবের মতো কয়েকটি ছোট দেশের প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে যাবে৷ ইউরোপে এটি হয় স্থির থাকবে বা সেখান থেকে প্রস্থান করবে। ইউরোপকে প্রথমে রাশিয়া–চিন বিষয়টি ঠিক করতে হবে, এবং তারপরে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা নিরাময় করতে হবে। এটি চিন ও রাশিয়া থেকে প্রস্থান করবে, যেখানে একে এক ধাক্কায় চুল ছেঁটে ফেলতে হতে পারে। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ এবং চিনে সামগ্রিক রিয়েল এস্টেট নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও মেগালোম্যানিয়াক রাজনৈতিক অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের কারণে লাভের প্রত্যাশা একটি নতুন নিম্নস্তরে রয়েছে। ভূ–রাজনীতি ও কৌশলগত ধাক্কা থেকে ভূ–অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রে ফিরতি উড়ানের নিরাপত্তা পর্যন্ত বিস্তৃত সরকারের বিবেচনার নানা দিক আগামী ১২ মাসে বিশ্বব্যাপী অর্থায়নের মূল চালক হবে। নিছকই সামষ্টিক অর্থনীতি নয়, কৌশলগত সামষ্টিক অর্থনীতি স্মার্ট অর্থের দিকনির্দেশ করবে। ২০২৪ সালে সুনির্দিষ্ট সুযোগগুলি এই দিকে এবং এর নিয়ে আসা অস্থিরতার দৃষ্টান্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে।
গৌতম চিকারমানে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.