Author : Heribert Dieter

Published on Mar 31, 2023 Updated 0 Hours ago

ওইসিডি ও উন্নয়নশীল, এই উভয় ধরনের দেশের নীতিনির্ধারকদেরই ঋণ পুনর্গঠন এবং সঙ্কট ব্যবস্থাপনার বর্তমান কাঠামোর উন্নতির জন্য এই সুযোগটি ব্যবহার করা উচিত।

বিশ্বজুড়ে ঘনিয়ে আসা ঋণ সংকট নিয়ে কী করা যায়?

এই নিবন্ধটি ‘‌রাইসিনা এডিট ২০২৩’‌ সিরিজের অংশ।


২০২৩ সালে অনেক অর্থনীতি একাধিক সঙ্কট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কোভিড–১৯ অতিমারির উত্তরাধিকার, ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভূ–রাজনৈতিক সংঘাতের প্রভাব একক অর্থনীতিগুলির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থের উপরেও পড়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হারের প্রত্যাবর্তন। অত্যন্ত ঋণগ্রস্ত দেশ এবং ব্যক্তি, সকলের জন্যই সুদের হারের দ্রুত বৃদ্ধি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এটি কি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, না এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখা হচ্ছে?

আর্থিক বাজারে অস্থিরতা

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)–এর দেশগুলিতে সুদের হার অত্যন্ত কম, কখনও কখনও এমনকি ঋণাত্মকও, ছিল। মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের কারণ ছিল না। তবে পরিস্থিতিটি ২০২২ সালে পরিবর্তিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ফিরে এসেছে, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি আক্রমণাত্মকভাবে আর্থিক নীতি কঠোর করেছে। ঘটনাটি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রভাব ফেলেছে: নিম্ন–আয়ের দেশগুলির ১৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই ঋণ সঙ্কটে রয়েছে, এবং আরও ৪৫ শতাংশ নিম্ন–আয়ের দেশ ঋণ সঙ্কটের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উদীয়মান বাজারের তুলনায়–ধনী গোষ্ঠীতে ২৫ শতাংশ দেশ ব্যতিক্রমীভাবে উচ্চ সুদের হারের মুখোমুখি। ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া ইতিমধ্যেই ঋণখেলাপি হয়েছে। কিছু পর্যবেক্ষক, যেমন ইরানি–মার্কিন অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনি, সতর্ক করেছেন যে বিশ্বব্যাপী ঋণসঙ্কট অনিবার্য। ফিনান্সিয়াল টাইমসের মার্টিন উলফ সতর্ক করেছেন যে ‘‌খুব দেরি হয়ে গেছে’‌ পর্যায়ে পৌঁছনোর আগেই এই সমস্যাটির সমাধান করা উচিত। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ঋণ কি সত্যিই এমন একটি সমস্যা?

অত্যন্ত ঋণগ্রস্ত দেশ এবং ব্যক্তি, সকলের জন্যই সুদের হারের দ্রুত বৃদ্ধি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এটি কি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, না এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখা হচ্ছে?

গত দুই দশকে মোট আভ্যন্তর উৎপাদনের শতাংশ হিসাবে মোট সরকারি–বেসরকারি ক্ষেত্রের ঋণ ২০০ থেকে ৩৫০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্কটি ৪২০ শতাংশ, যা মহামন্দার সময়ের থেকে বেশি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সব থেকে বেশি। নুরিয়েল রুবিনি এতটাই হতাশাবাদী যে তাঁর সেরা পরিস্থিতিটি হল ভরাডুবি স্থগিত করা। কিন্তু রুবিনিকে, যাঁর ডাক নাম ডাঃ ডুম, খুব বেশি সংশয়বাদী বলে গণ্য করা যেতে পারে। অন্তত চারটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রথমটি হল প্রকৃত সুদের হার। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি গত মাসগুলিতে ঋণখেলাপিদের জন্য খুবই উপকারী হয়েছে। ব্যক্তিগত হোক বা সরকারি, অপ্রত্যাশিত মুল্যস্ফীতি হল সর্বোত্তম ঘটনা যা ঋণখেলাপিদের জন্য ঘটতে পারে। পাওনাদারেরা, যাঁদের অনেকেই আপাতত সুদের হার কম হওয়ার আশা করেছিলেন, তাঁরা অর্থ হারিয়েছেন। ঋণখেলাপিরা একটি অপ্রত্যাশিত লাভের সম্মুখীন হয়েছেন, কারণ মূল্যস্ফীতিমূলক পরিবেশে ঋণের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পায়। উপরন্তু, প্রকৃত সুদের হার ঋণাত্মক হতে থাকে। যদি আর্থিক কঠোরতা অব্যাহত থাকে, তা হলে (উচ্চ) প্রকৃত সুদের হারে ফিরে আসার কথা কল্পনা করা বর্তমানে কঠিন। ঋণ গ্রহণ সস্তা হতে থাকবে, অন্তত ওইসিডি দেশগুলিতে।

নিম্ন–আয়ের দেশগুলির ১৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই ঋণ সঙ্কটে রয়েছে এবং আরও ৪৫ শতাংশ নিম্ন–আয়ের দেশ ঋণ সঙ্কটের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয় হল এখন মুদ্রানীতির উন্নত স্থায়িত্ব। একটি সুদমুক্ত পরিবেশের কারণে, বিশেষ করে ওইসিডি দেশগুলিতে, বিপজ্জনক ঘটনা ঘটেছে। ঋণ গ্রহণের নেতিবাচক খরচের ফলে অভূতপূর্ব সম্পদ–মূল্যের স্ফীতি হয়েছে। শেয়ার, রিয়েল এস্টেট এবং অন্য সম্পদ যেগুলির সরবরাহ সীমিত, যেমন ভিনটেজ গাড়ি, সেগুলির দাম বেড়েছে। প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক নীতি দ্বারা চালিত এই প্রবণতা সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। যাঁদের সম্পদ নেই তাঁরা নেতিবাচক পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, বিশেষ করে আবাসনের জন্য উচ্চ খরচ, কম সুদের হার থেকে লাভবান না হওয়ার মতো কারণগুলির জন্য। এখন সুদ–সহ একটি মুদ্রানীতিতে প্রত্যাবর্তন, যদি প্রকৃত অর্থে তা নেতিবাচকও হয়, তাহলেও তা একটি স্বাগত উন্নয়ন। পরিমাণগত সহজীকরণ (‌কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং)‌ একটি ভুলভাবে পরিকল্পিত নীতি ছিল, যা শুধু জনসংখ্যার সম্পদ–মালিক অংশের জন্য ভাল ছিল, সাধারণ ভাষায় যাঁদের বলা হয় ধনী।

তৃতীয় দিকটি হল, বর্তমানে ব্যাঙ্কগুলি ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের তুলনায় ঝড়ের মোকাবিলা করতে অনেক ভালভাবে তৈরি৷ ব্যাঙ্কগুলির মূল পুঁজির উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চ স্তর রয়েছে, যা অপরিশোধযোগ্য ঋণের ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা বাড়াবে৷ বেশিরভাগ উন্নত অর্থনীতির ব্যাঙ্কিং নিয়ামকেরা ২০০৭–এর পতন শুরু হওয়ার আগে প্রাক্তন ব্রিটিশ চ্যান্সেলর অফ এক্সচেকার গর্ডন ব্রাউন দ্বারা প্রশংসিত ‘‌হালকা–স্পর্শ নিয়ন্ত্রণ’‌ পদ্ধতি পরিত্যাগ করেছে।

চতুর্থত, ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে সম্ভবত রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। যদিও কেউ জানে না যে কত শীঘ্র লড়াই শেষ হবে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কিন্তু তারপর একটি মূল্যহ্রাসমূলক ধাক্কা আসবে। বিদ্যুতের দাম বর্তমান স্তরের থেকে সম্ভবত আরও নিচে নামবে। দরিদ্র দেশগুলির লড়াই সম্ভবত সহজতর হবে, অন্তত তাদের শক্তির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে।

একটি সুদমুক্ত পরিবেশের কারণে, বিশেষ করে ওইসিডি দেশগুলিতে, বিপজ্জনক ঘটনা ঘটেছে।

ঋণ সঙ্কটে ইন্ধন জুগিয়েছে পশ্চিম

মুদ্রানীতিতে বর্তমান পরিবর্তনের কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও কিছু ত্রুটিও রয়েছে। সুদের হারের প্রত্যাবর্তনের অর্থ হল মূলধন ওইসিডি দেশগুলিতে প্রবাহিত হচ্ছে, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মূলধনের প্রবাহ শুকিয়ে যাচ্ছে। এটি ওইসিডি–র বিশ্বে আর্থিক নীতির স্বাভাবিকীরণের একটি কঠিন কিন্তু অনিবার্য পরিণতি। লাভ ব্যতীত ঝুঁকির এক দশক পর বিনিয়োগকারীরা উন্নত অর্থনীতির আর্থিক বাজারে ছুটে আসছেন। বিশেষ করে যেসব উন্নয়নশীল দেশ প্রাথমিকভাবে আংশিকভাবে তাদের অনিচ্ছা বা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে অক্ষমতার কারণে স্বল্পকালীন ঋণ নিয়েছে, তারা সমস্যায় পড়েছে।

তার উপর অনেক দেশ একই সঙ্গে উচ্চ সুদের হার ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুদের নিম্ন হারের পরিবেশ চিরস্থায়ী হবে, এমন প্রত্যাশার মধ্যে সব সময়েই আকাশকুসুম চিন্তার একটি উপাদান ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের জ্বালানি সঙ্কট সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল। তেল ও গ্যাসের সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু সঙ্কট কোনও দুর্ঘটনা ছিল না; বরং তা ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওইসিডি দেশগুলোর একটি গোষ্ঠীর নিষেধাজ্ঞার ফল।

এখন সুদ–সহ একটি মুদ্রানীতিতে প্রত্যাবর্তন, যদি প্রকৃত অর্থে তা নেতিবাচকও হয়, তাহলেও তা একটি স্বাগত উন্নয়ন।

পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি রুশ তেল ও গ্যাস উভয়ের আমদানি সীমায়িত করেছে। পশ্চিম ইউরোপ রুশ শক্তি ব্যবহার শেষ করার চেষ্টা করছে, এবং অন্যত্র তেল ও গ্যাস সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভর করে, হঠাৎ করে পণ্যটির জন্য অন্য ক্রেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিল। প্রায়শই, দরিদ্র দেশগুলি প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য রাখে না, বা তাদের বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়। পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জোট, এইভাবে, বর্তমান ঋণসঙ্কটের অন্তত একটি অংশের জন্য দায়ী, এবং এর পরিণতি তাদের বহন করা উচিত।

এ কথা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ লড়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের মূল্যে। এর একটি উপযুক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হল বিশেষত খুব দরিদ্র অর্থনীতির জন্য শক্তির অতিরিক্ত খরচ বহন করতে একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো দেশগুলিকে রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য বা অকল্পনীয় নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী করা যায় না।

পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জোট, এইভাবে, বর্তমান ঋণসঙ্কটের অন্তত একটি অংশের জন্য দায়ী, এবং এর পরিণতি তাদের বহন করা উচিত।

উপসংহার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে একটি সতর্কবার্তা দেন, কিন্তু তাতে হতাশাবাদ ছিল না। তিনি একটি পদ্ধতিগত ঋণ সঙ্কটের ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত ছিলেন। তবে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নিম্ন আয়ের দেশগুলি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনের ফলে ঋণের ওজন হ্রাস পেয়েছে, অন্তত এখনকার মতো। দুটি নীতিগত বিকল্প বিবেচনা করা উচিত: প্রথমত, নিম্ন আয়ের দেশগুলি, যারা জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দামের পাশাপাশি গ্যাস ও তেলের হ্রাসপ্রাপ্ত প্রাপ্যতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জোটের উচিত একটি তহবিল তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে ঋণ সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা সমাধানের ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এখনকার মতো যদি হাজার হাজার বন্ডহোল্ডার ঋণদাতা হন, তবে ঋণ পুনর্গঠন করা কঠিন।

বছরের পর বছর আর্থিক বাজার আপেক্ষিক শান্ত থাকার পর উথাল–পাতাল অবস্থা ফিরে এসেছে। ওইসিডি ও উন্নয়নশীল, এই উভয় ধরনের দেশের নীতিনির্ধারকদেরই ঋণ পুনর্গঠন এবং সঙ্কট ব্যবস্থাপনার বর্তমান কাঠামোর উন্নতির জন্য এই সুযোগটি ব্যবহার করা উচিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.