Published on Jan 09, 2024 Updated 0 Hours ago

২০২৪ একটি জটিল এবং অশান্ত বছর হতে চলেছে, যেখানে দেশগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে। কিন্তু তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে সংস্থা, শ্রমিক নাগরিকদের উপর 

 

ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে কী আশা করা যায়

এই প্রবন্ধটি "What to expect in 2024"‌–এর অংশ


ভৌগোলিক পরিধি স্থির থাকলেও অন্তর্নিহিত ভূগোল ক্রমশ বদলাতে থাকে। ২০২৪ সালে এই বদলের গতি বৃদ্ধি পাবে। ইউক্রেনের সাধারণ রাজনৈতিক সীমানার উপর রাশিয়াআক্রমণ থেকে শুরু করে রায়েল-হামাস সংঘাতে ভৌতমনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের গোলকধাঁধায় পড়ে এই বছরটিতে যুদ্ধ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা প্রবল এবং অপ্রতিরোধ্য। বোমাবর্ষণ এবং হত্যালীলার ঊর্ধ্বে উঠে নতুন যুদ্ধগুলি রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করেও আবর্তিত হবে। নাগরিক এবং তাদের নেতাদের স্বার্থও এই দ্বিমেরু বিশ্বে বিভক্ত হয়ে পড়বে। ইউক্রেনে রুশ হামলা থেকে শুরু করে ইরায়েলে সন্ত্রাসের বর্বরতা… আসলে ভূরাজনীতি বিদ্যমান অবস্থানকে আরও মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) অভ্যন্তরে মতাদর্শগত সংঘাতও প্রতিফলিত করবে। তেল, প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং ধর্ম – যেগুলির অস্ত্রায়ন গত পাঁচ বছরে ত্বরান্বিত হয়েছে – ২০২৪ সালে সমাপতিত হবে এবং বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

 

ইউক্রেনের সাধারণ রাজনৈতিক সীমানার উপর রাশিয়াআক্রমণ থেকে শুরু করে রায়েল-হামাস সংঘাতে ভৌতমনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের গোলকধাঁধায় পড়ে এই বছরটিতে যুদ্ধ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা প্রবল এবং অপ্রতিরোধ্য।

 

যা এই বছরটিকে অন্য বছরের চেয়ে আলাদা করে দেবে, তা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষাবলম্বী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী জোটগুলি ভেঙে গেলেও তা গভীরতর বোঝাপড়া অথবা বিবিধ ধারণার সম্পৃক্ততার সুযোগ করে দেবে না। শারীরিক বা বুদ্ধিগত ভাবে হিংসাকে যত বেশি প্রশ্রয় দেওয়া হবে, তার প্রতিক্রিয়াও তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যথাযথ ধর্মীয় ভাবনা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মোড়কে উপস্থাপিত না-হলে আজকের পৃথিবী ব্যক্তির দুর্দশার প্রতি সমবেদনাহীন। মানুষের যন্ত্রণার সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য এই পৃথিবীকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য শুধুমাত্র তাত্ত্বিক ধারণাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে২০২৪ সালে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই। আলাপ-আলোচনা সত্ত্বেও বছরটিতে প্রতিশোধস্পৃহাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মতো বৃহৎ শক্তি ভারতের মতো উদীয়মান শক্তিগুলির গভীর স্বার্থ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের দিকে চালিত হবে এবং মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিবর্তনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপুঞ্জ, জি২১ বা ব্রিকস-এর মতো বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলি শান্তি, দূষণহীনতা ও স্থিতিশীলতাকেন্দ্রিক কূটনৈতিক যৌথ সম্পৃক্ততার আড়ালে সীমান্ত অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ভৌত ও ডিজিটাল দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মঞ্চ হয়ে উঠবেসংকীর্ণ স্বার্থ এই ধরনের আলাপ-আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

 

যথাযথ ধর্মীয় ভাবনা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মোড়কে উপস্থাপিত না-হলে আজকের পৃথিবী ব্যক্তির দুর্দশার প্রতি সমবেদনাহীন। মানুষের যন্ত্রণার সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য এই পৃথিবীকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।

 

এই স্বার্থগুলি যুদ্ধরত দেশগুলি থেকে জ্বালানি আমদানির মতো সরল অথবা বাজারের ক্ষমতা, বিদেশি বিনিয়োগ এবং চিনের প্রযুক্তিগত অনুপ্রবেশের মতো জটিল হতে পারে। মূল্যবোধভিত্তিক ধারাবাহিকতা ২০২২ সালে অবসান ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, রুশ গ্যাস আমদানিকে কেন্দ্র করে ইউরোপ দ্বারা ভারতকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টার মতো আদর্শের ফাঁপা প্রচারের কথা উল্লেখ করা যায়। এমনকি সরকার বা বাক্‌স্বাধীনতার হাতিয়ার হিসেবে গণতন্ত্রকেও অগভীর রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য ব্যবহার করা হবে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, ২০২৩ সালে বাক্‌স্বাধীনতার আড়ালে নিজের ভূখণ্ডে ভারতের বিরুদ্ধে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করার জন্য কানাডার পাকিস্তানের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। এবং এই সব কিছুই ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিপক্ষ চি তার স্বৈরাচারী মিত্রদেশগুলি এক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অপর গণতন্ত্রকে অস্ত্রায়িত করেছে।

এক দিকে তেল, গ্যাস এবং বিরল খনিজ পদার্থের নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা এবং অন্য দিকে তথ্য, প্রযুক্তি ও প্রতিপক্ষের সম্পর্কে আখ্যানের মতো অভৌত সম্পদ ২০২৪ সালে আরও তীব্রতর হয়ে উঠবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে সমগ্র ২০২৪ সালে সকলের নজর থাকবে ভেনেজুয়েলার উপর, যার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এর ফলে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ সামগ্রিক ভাবে বৃদ্ধি পেলেও তা বাজারে কত দ্রুত পৌঁছবে, সেটাই হয়ে উঠবে মুখ্য বিষয়। এটি এমন এক বছর হতে চলেছে, যখন ভেনেজুয়েলা জ্বালানি সরবরাহকারী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে ভূ-রাজনৈতিক চুক্তি সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ভারত হয়ে উঠবে ভেনেজুয়েলার প্রধান বাজার। শুভবুদ্ধির উদয় হলে  দেশটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং তেল ও গ্যাসের মতো সম্পদগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের প্রসার ঘটাতে পারে, যেমনটা বর্তমানে সৌদি আরব করছে

২০২৪ সালে ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস - ২০১৯ সালে করোনাভাইরাসের সময় থেকে যেটির সূচনা ঘটে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা চালিত হবে এবং চিনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে, যারা ভৌত এবং অর্থনৈতিক ভাবে বিধ্বংসী এই মারণরোগ সৃষ্টি করেছে এবং ছড়িয়ে দিয়েছে। নিজের অর্থনৈতিক, সামরিক কৌশলগত প্রভাব ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫জি বণ্টনের বিষয়ে চিনা সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা এবং চিনে সেমিকন্ডাক্টর উন্নত চিপ বিক্রির ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করা নিয়ে মিত্রদেশগুলির উপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। ই মনোভাব বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চল জুড়ে অনুরণিত হয়েছে। যেমন হুয়াইকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ভারত হুয়াইকে ৫জি বণ্টনে বাধা দেয় এবং জার্মানি ফ্রান্স ব্যতীত ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই এই পথ অনুসরণ করেছে। চিন আবার সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় গ্যালিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ফতানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ২০২৪ সালে বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক সংযোগহীনতার যন্ত্রণা অনুভব করবে।

 

নিজের অর্থনৈতিক, সামরিক কৌশলগত প্রভাব ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫জি বণ্টনের বিষয়ে চিনা সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা এবং চিনে সেমিকন্ডাক্টর ও উন্নত চিপ বিক্রির ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করা নিয়ে মিত্রদেশগুলির উপর চাপ বৃদ্ধি করেছে।

 

ই পরিস্থিতি হয় একটি একক-বিশ্ব ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করবে, যা ভারত তার প্রাচীন ঐক্যের ধারণা, বসুধৈব কুটুম্বকম (বিশ্ব এক পরিবার) এবং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত নানাবিধ উপায়ের মাধ্যমে যথার্থ ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে; অথবা এমন অবস্থানের দিকে অগ্রসর হবে, যা আরও কঠোর হবে, গভীর চ্যুতির সৃষ্টি করবে এবং এমন একটি অচল ঐক্যের দিকে ধাবিত হবে, যা ২০২৪ সালেও অধরাই থাকবে। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, রাষ্ট্রপুঞ্জ এখন নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে মহার্ঘ এবং অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রমাণ করেছে, যেটি তার সৃষ্টির প্রাথমিক উদ্দেশ্য অর্থাৎ শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব এই উপসংহারেই উপনীত হবে যে, রাষ্ট্রপুঞ্জ ক্ষমতার দিক থেকে বড় হলেও, ব্যর্থ হতে না-পারার মতো যথেষ্ট বড় নয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক বিতর্ক এই সত্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চারটি প্রকাশ্যে এবং চিন গোপনে যুদ্ধে লিপ্ত, শান্তিতে নয়।

 

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি কোনও একটি দেশের একার সমস্যা নয়। তার ফলে সব দেশই প্রভাবিত। বর্তমান বিশ্বে এমন কোনও কর্পোরেট বোর্ডরুম নেই যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভূ-রাজনীতি তার আর্থিক প্রক্রিয়া, নিষেধাজ্ঞাগুলি আলোচ্য কর্মসূচির অংশ হয়ে ওঠে না। এখানে প্রান্তিকীকরণের ক্রমাগত বিঘ্নিত ভৌগোলিক পরিসরই একটি প্রাথমিক ভিত্তি হয়ে উঠবে এবং সেটিই নিউ নর্মাল বা নতুন স্বাভাবি। কিন্তু এই বিন্যাসগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। কৌশলগত বিশ্লেষকদের জন্য চিনের সঙ্গ ত্যাগ করার দাবি সহজ। কিন্তু কোনও ভূগোল থেকে প্রস্থান করা – ব্যাপক বিনিয়োগ, নির্দিষ্ট কাজ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে বহু বছর অতিবাহিত করা কর্মীবাহিনী, নলেজ ইনপুট সংক্রান্ত একটি বাস্তুতন্ত্র, এমন এক বাজার যা পণ্য গ্রহণ করে লাভ মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি করে সহজ কাজ নয় এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণ, যা বর্তমান ও আগামীতেও অংশীদার এবং কর্মচারীদের স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখে

 

সীমান্তে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চিন এখনও ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সীমান্ত রক্ষা ব্রতী ভারতীয় সৈন্যদের বাস্তবতা সস্তার পণ্য কিনতে আগ্রহী ভারতীয় ভোক্তাদের উপর এক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

 

অ্যাপলের মতো সংস্থাগুলির চিন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে ভারত ও ভিয়েতনামেসা গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। ২০২৪ সালে এই চ্যুতিরেখাগুলি প্রশস্ত, গভীরতর এবং প্রকট হয়ে উঠবে। অন্য দিকে, চিনের পণ্য বাজার ছেয়ে ফেলবে। সীমান্তে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চিন এখনও ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সীমান্ত রক্ষা ব্রতী ভারতীয় সৈন্যদের বাস্তবতা সস্তার পণ্য কিনতে আগ্রহী ভারতীয় ভোক্তাদের উপর এক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

এই বছর বড় সংস্থাগুলিতে ভূ-রাজনৈতিক বিভাগের সৃষ্টি হবে, যাদের প্রধান কাজই হবে নতুন দক্ষতার চাহিদা বোঝা। ‘ঝুঁকিশব্দটি শুধু মানুষ, পণ্য বা নীতির উপরই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ফেলবে না; বরং আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং তাদের শাখাগুলিকে প্রভাবিত করবে। থিতু হওয়ার আগেই পরিস্থিতি জটিলতর এবং আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। কার্যকর ভাবে, ২০২৪ একটি জটিল এবং অশান্ত বছর হতে চলেছে, যেখানে দেশগুলির পারস্পরিক সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়বে। কিন্তু তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে সংস্থা, শ্রমিক ও নাগরিকদের উপর।

 


গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.