Published on Jan 18, 2024 Updated 0 Hours ago

হাসিনার বিজয় সম্ভবত দিল্লি–ঢাকা সম্পর্ককে আরও নজরদারির মধ্যে ফেলবে — পশ্চিম আশা করছে যে ভারত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে সোচ্চার হবে

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আসন্ন নির্বাচনগুলির অর্থ কী হবে

বাংলাদেশ ৭ জানুয়ারি ভোট হয়ে গেল এবং পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত পাঁচ বছরে উভয় দেশই গুরুতর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে মূলত কোভিড–১৯ অতিমারি এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে স্থিতাবস্থা বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু পাকিস্তানে, যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সামরিক বাহিনী চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে।
 
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়েই জ্বালানি মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাব দেখেছে, যার ফলে গত পাঁচ বছরে মাঝেমাঝেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি, বিক্ষোভ ও অস্থিরতা একত্র হয়ে উভয় দেশকে একাধিক দিক থেকে আতঙ্কিত করেছে। সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন, বিপুল জ্বালানি আমদানি, সীমিত রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, এবং ব্যাপক ঋণ গ্রহণসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যাপক পতন ঘটেছে। উভয় দেশ ২০২২ সালে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।


সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন, বিপুল জ্বালানি আমদানি, সীমিত রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ব্যাপক ঋণ গ্রহণসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যাপক পতন ঘটেছে। 



বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শেখ হাসিনা এবং তাঁর আওয়ামি লিগের (এএল) বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবহার করতে সক্রিয় ছিল। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোর পর বিএনপি শেষে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য প্রতিযোগীদের ক্ষমতা কম হওয়ায় আওয়ামি লিগকে চ্যালেঞ্জ করার রাজনৈতিক জায়গা ছিল না। ফলে স্পষ্টই ছিল শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন। কিন্তু নির্বাচনী কারচুপি ও ঘরোয়া দমন–পীড়নের অভিযোগ করে বিরোধীরা ফলাফল ঘোষণার পরেও সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে পারে।

পরিস্থিতিটি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থানকে জটিল করে তুলবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার ‘‌সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়’‌ নীতি অনুসরণ করে ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এটি ঢাকাকে চিন থেকে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে, ভারতের সাথে আরও ভালভাবে সংযোগ স্থাপন  করতে, এবং জাপান ও পশ্চিমের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উন্নত করতে যথেষ্ট সুবিধা দিয়েছে। তবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে হাসিনার ট্র্যাক রেকর্ড একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমীদের সমালোচনা আকর্ষণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনকি ‘‌অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’‌ নির্বাচন যাঁরা ব্যাহত করবেন এমন ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে চিন ও ভারত উভয় দেশই শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করা পছন্দ করেছে, এবং সে দেশকে প্রভাবিত করার অনিবার্য প্রতিযোগিতার উপর জোর দিয়েছে।

যাই হোক, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের উপর পশ্চিমীদের লক্ষ্যযুক্ত জবরদস্তি বা বিধিনিষেধ বাংলাদেশের বিদেশনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এবং দেশটিকে চিনের কাছাকাছি যেতে বাধ্য করতে পারে। দিল্লি এই কারণে পশ্চিমীদেরও অনুরোধ করেছে বাংলাদেশকে এতটা কোণঠাসা না-করতে যা বেজিংয়ের জন্য সুবিধাজনক হবে। হাসিনার বিজয় সম্ভবত ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ককে আরও নজরদারির মধ্যে ফেলবে — পশ্চিমীরা আশা করে যে ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে সোচ্চার হবে, এবং বাংলাদেশ আশা করছে যে ভারত পশ্চিমের চাপ এড়াতে পারবে। এই ক্ষেত্রে ভারতকে তার সুবিধা বজায় রাখতে, বাহ্যিক চাপ প্রতিহত করতে, পশ্চিমের উদ্বেগগুলির মীমাংসা করতে, এবং চিনের সুযোগ সীমিত করতে একটি কঠিন পথ হাঁটতে হবে।

হাসিনার বিজয় সম্ভবত ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ককে আরও নজরদারির মধ্যে ফেলবে — পশ্চিমীরা আশা করে যে ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে সোচ্চার হবে, এবং বাংলাদেশ আশা করছে যে ভারত পশ্চিমের চাপ এড়াতে পারবে।

পাকিস্তানে ইমরান খান এবং তাঁর পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)–এর  পতনের পরে সামরিক বাহিনী আরও ক্ষমতা ও প্রভাব একত্র করতে শুরু করেছে। এর পর পরবর্তী মহাজোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে আরও রাজনৈতিক ও আইনি ক্ষমতা প্রদান করেছে। এটি সেনাবাহিনীকে পিটিআই–এর উপর দমন–পীড়ন এবং দেশের বেসামরিক–সামরিক ভারসাম্যে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে, বিশেষ করে স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন কাউন্সিল (এসআইএফসি) তৈরির মাধ্যমে, সামরিক বাহিনী নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে ঢুকে পড়েছে। সামরিক বাহিনী এইভাবে আগামী সরকারের নীতিগুলিকে প্রভাবিত করবে, বিশেষ করে যদি তাদের পছন্দের প্রার্থী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হন।

যাই হোক, নাগরিক বিষয়ে সামরিক বাহিনীর আধিপত্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর খুব কমই প্রভাব ফেলবে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, তালিবানের সঙ্গে উত্তেজনা, এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী হামলা বৃদ্ধি পাকিস্তানকে তার পূর্ব সীমান্ত কিছুটা শান্ত রাখতে বাধ্য করেছে, বিশেষ করে পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরেও। এই নিষ্ক্রিয় শান্তি ভারতকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিপদটির দিকে মনোনিবেশ করার অনুমতি দিয়েছে:‌ চিন। ইদানীং ইসলামাবাদ থেকে ভারতের অনুকূল কিছু আওয়াজ আসা সত্ত্বেও, কাশ্মীর নিয়ে নতুন সরকার অতীতের থেকে একটি নিষ্পত্তিমূলক ইতি টানার ক্ষেত্রে কোনও সুবিধা পাবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। নয়াদিল্লি হয়তো নিজের পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির সমস্যা তৈরি করার ক্ষমতা এখনও রয়ে গেছে।


চিন পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ধরনের ব্যবহার দেশটিকে বৃহত্তর ঋণের ফাঁদে পড়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টিও ভারত দেখবে। কৌশলগতভাবে বলতে গেলে, চিন ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সীমিত করতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে থাকবে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালে চিন পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ধরনের ব্যবহার দেশটিকে বৃহত্তর ঋণের ফাঁদে পড়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। তবে সামরিক নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধনেও গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে, এবং এইভাবে বেসামরিক সরকার যাতে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও উন্নত করতে পারে তার ভিত্তি স্থাপন করেছে। আমেরিকার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক চিনকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

তবে এই সহযোগিতা ভারতে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বে জটিলতা বাড়াবে।



এই ভাষ্যটি প্রথমে
হিন্দুস্তান টাইমস
–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with ORFs Strategic Studies Programme. He focuses on broader strategic and security related-developments throughout the South Asian region ...

Read More +