Author : Soumya Bhowmick

Published on Nov 30, 2023 Updated 0 Hours ago
জি২০ উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপদেশগুলির জন্য কী করতে সক্ষম?

কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে রীতিমতো জোরালো ধাক্কা দিয়েছে। এই সমসাময়িক পটভূমিতে গ্রুপ অফ টোয়েন্টি-কে (জি২০) অবশ্যই উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারের স্থবিরতা মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উত্সাহিত করতে হবে। জি২০-র চক্রাকার সভাপতিত্বের ধারা অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ভারত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি অনন্য মঞ্চ অর্জন করেছে।

জি২০-র মনোযোগের প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু হল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং মঞ্চটিতে বাণিজ্য, অর্থায়ন ও স্থিতিশীলতা অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে বহুমুখী অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি অপরিহার্য ক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতি প্রশমনের মতো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালানোর জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছে, যা উন্নয়নশীল বিশ্বের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশ যখন কোভিড-১৯ অতিমারির পরবর্তী সময়ে আর্থিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, তখন স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেট বা উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলির (এসআইডিএস) পরিস্থিতি বিশেষ ভাবে গুরুতর হয়ে উঠেছেযেহেতু এই দেশগুলির অধিকাংশেরই জিডিপি-র প্রায় ৫০ শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানের ৩০ শতাংশ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল, তাই কোভিড-১৯ অতিমারির প্রতিকূল অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি এই দেশগুলির জন্য মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল। এই ধরনের রাজস্ব হ্রাসের ফলে বাহ্যিক ঋণের বোঝা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেশেলস ও বাহামার ক্ষেত্রে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের গড় জিডিপি-প্রায় ২০০ শতাংশে পৌঁছেছে।

 

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতি প্রশমনের মতো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালানোর জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছে, যা উন্নয়নশীল বিশ্বের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ পরিবহও পর্যটন অবকাঠামোর ক্ষতি, বিলম্ব ও ব্যাঘাত সংক্রান্ত ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আদতে বিমানবন্দর, বন্দর এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে, যা স্থানীয় জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি পর্যটন পরিষেবা ও কার্যকলাপের উপর প্রভাব ফেলেছে। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতাগুলি ক্যারিবিয়ান এসআইডিএস-এ ঋণের মাত্রা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে, যা তাদের সম্পদকে আরও সঙ্কুচিত করে এবং স্থিতিশীল পর্যটন অনুশীলনে বিনিয়োগকে বাধা দান করেঋণ পরিচালনা ও জলবায়ু অর্থায়নের উপর জোর দিয়ে এসআইডিএস-এর প্রতি জি২০-র মনোযোগ দ্বিমুখী হওয়া দরকার।

 

জি২০-এর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সার্বভৌম ঋণ সঙ্কটের প্রবাহ রোধ করা, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এখনও পর্যন্ত জি২০-র ঋণ ত্রাণ উদ্যোগগুলি তেমন সাফল্য অর্জন করেনি। ডেট সার্ভিস সাসপেনশন ইনিশিয়েটিভ-এর (ডিএসএসআই) অধীনে যোগ্য নিম্ন উপার্জনকারী দেশগুলি (এলআইসি) সরকারি পাওনাদারদের প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিষেবার অর্থপ্রদান স্থগিত করেছে।

ডিএসএসআই-এর ঊর্ধ্বে উঠে ডেট ট্রিটমেন্টস বা ঋণ পরিশোধের জন্য কমন ফ্রেমওয়ার্ক বা অভিন্ন সাধারণ পরিকাঠামোও প্যারিস ক্লাবের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গড়ে তোলা হত, যার লক্ষ্য ছিল ঘটনাবিশেষে পৃথক ভাবে সরকারি ঋণের পুনর্গঠন। তবে শুধুমাত্র চাদ, ইথিওপিয়া, ঘানা এবং জাম্বিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ফ্রেমওয়ার্ক থেকে সহায়তা চেয়েছে। জি২০ আনুষ্ঠানিক কমন ফ্রেমওয়ার্কের ঊর্ধ্বে উঠে শ্রীলঙ্কায় ঋণ সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছে।

রেটিং ডাউনগ্রেড বা ক্রমাঙ্কের অবনমন এবং আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে প্রবেশাধিকার হারানোর ভয়ে বেশির ভাগ এলআইসি ও এসআইডিএস কমন ফ্রেমওয়ার্ককে এড়িয়ে গিয়েছে। বাহ্যিক ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্ব একটি হৃতদশকের দিকেই চেয়ে রয়েছে। জি২০-র ব্রাজিলিয়ান এবং দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্সির জন্য স্থিতিশীল ঋণ ব্যবস্থাপনা শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রশমন কার্যক্রমের পক্ষে ৮০ শতাংশের বেশি অন্তর্নিহিত অর্থায়ন সংক্রান্ত পক্ষপাতিত্ব দেখা গিয়েছেকিন্তু এসআইডিএস এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অতিরিক্ত অভিযোজন তহবিলের প্রয়োজন তীব্রঅধিকাংশ তহবিল সংস্থার দ্বারা অভিযোজন প্রকল্পে অর্থায়নের বিরুদ্ধে এই ধরনের পক্ষপাতিত্ব অভিযোজন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে নিম্ন উপার্জনকারী উন্নয়নশীল দেশ এবং এসআইডিএস থেকে। প্রকৃতপক্ষে, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের মতো তহবিল সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলিতে তহবিল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ এ ক্ষেত্রে প্রবিধানটিকে একটি ব্যাঙ্ক’-এর অনুরূপ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেটি তার বিনিয়োগেভিত্তিতে মুনাফা অর্জনের আশা রাখে।

 

জি২০ উন্নত দেশগুলির পরিবেশগত সম্মতির আরও ভাল স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ্যে গ্লোবাল সাউথের সক্রিয়তাকে অর্থায়নের জন্য একটি নিয়ম-নির্ধারকভূমিকা থেকে সরে যেতে হবে।

 

এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক উল্লেখ করেছে যে, উন্নয়নশীল বিশ্বের নিরিখে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য অব্যবহিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন, বিশেষ করে শক্তির চাহিদার পরিবর্তনশীল প্রকৃতির পরিবর্ত। তহবিলের প্রবাহ কী ভাবে হওয়া উচিত তা বিবেচনা করা জরুরি। জি২০ উন্নত দেশগুলির পরিবেশগত সম্মতির আরও ভাল স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ্যে গ্লোবাল সাউথের সক্রিয়তাকে অর্থায়নের জন্য একটি নিয়ম-নির্ধারকভূমিকা থেকে সরে যেতে হবে। গ্রিন ফিন্যান্স সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকেও এই ধরনের সম্পৃক্ততার তদারকি করতে এবং যন্ত্র ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য আরও সক্রিয় ভূমিকার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।

নিজের মেয়াদকালে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এসআইডিএস এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য আরও অভিযোজনমূলক তহবিল সংগ্রহ করার পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথের জন্য সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলিকে জোরদার করার চেষ্টা করেছে। ভারতের সভাপতিত্ব বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক অনির্দেশ্যতার সঙ্গে সমাপতিত হয়, যা দেশটিকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত জরুরি আলাপ-আলোচনায় অবদান রাখতে বাধ্য করে।

 

ভারতীয় প্রেসিডেন্সির শীর্ষ মুহূর্তটি নয়াদিল্লিতে ২০২৩ সালের ৯-১০ সেপ্টেম্বর শীর্ষ সম্মেলনের সময় উদ্ভাসিত হয়েছেপ্রেসিডেন্সি শুধুমাত্র বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে তুলে ধরে না, বরং আন্তর্জাতিক কর্মসূচি নির্মাণে এবং বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতির মধ্যে সহযোগিতা লালন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমষ্টিগত প্রতিবন্ধকতার প্রতিকার খোঁজার সাধনায় এই সবই হল ন্যায়সঙ্গত টিকার লভ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রশমন এবং প্রযুক্তির ন্যায়সঙ্গত প্রচার।

জি২০-র মধ্যে ভারতের অবস্থান অর্থনৈতিক দক্ষতা ও উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতি চিরাচরিত প্রতিশ্রুতির কারণে এটিকে গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এসআইডিএস-এর সম্মুখীন আর্থিক চাপ দূর করার জন্য ভারত ঋণ ত্রাণ, উন্নয়নমূলক সহায়তা বৃদ্ধি এবং জি২০-র মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নের প্রচার করতে পারে।

এটি দক্ষতা নির্মাণ কর্মসূচি, সহায়ক বাণিজ্যিক সুবিধা এবং সর্বোপরি প্রযুক্তি স্থানান্তরেও সুযোগ করে দেয়। ভারত বহুপাক্ষিক উদ্যোগকে সমর্থন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এসআইডিএস-এর অনন্য চাহিদা ও কণ্ঠস্বরকে শ্রুত হওয়ার এবং সম্বোধন করার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক সংস্কারের পক্ষে সমর্থন জোগাতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইস্ট এশিয়া ফোরাম-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.