-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বেশিরভাগ তরুণ ভারতীয়ই মলদ্বীপের উপর আস্থা রেখেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্প্রতি সমাপ্ত সফর প্রেসিডেন্ট ডঃ মোহাম্মদ মুইজ্জুর ভারত সফরের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মুইজ্জুর ঘনিষ্ঠ কিছু সরকারি কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করলে বিতর্ক শুরু হয়। এর ফলে ভারতীয় পর্যটকরা মলদ্বীপ বয়কট করতে শুরু করেন, যার দরুন দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশটির পর্যটন উৎস শীর্ষ থেকে ষষ্ঠ স্থানে নেমে আসে। সরকার, পর্যটন সংস্থা ও সমিতিগুলি ভারত থেকে পর্যটন বৃদ্ধির চেষ্টা করলেও তেমন প্রভাব পড়েনি। তাই তরুণ ভারত মলদ্বীপ সম্পর্কে কী ভাবে, তা মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওআরএফ-এর বৈদেশিক নীতি সমীক্ষা
গত তিনটি ক্ষেত্রে সমীক্ষাটি জোর দিয়ে বলেছে যে, বেশির ভাগ ভারতীয় তরুণ মলদ্বীপ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। এই সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৫৮ শতাংশেরও বেশি তরুণ ভারতীয় মলদ্বীপের উপর আস্থা রাখেন। প্রেসিডেন্ট ইবু সোলিহের ২০২২ সালের (৬০ শতাংশ) এবং ২০২৩ সালের (৬২ শতাংশ) তুলনায় এ বছর মলদ্বীপের প্রতি আস্থা কিছুটা কমেছে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক - অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন - একটি বার্ষিক বৈদেশিক নীতি সমীক্ষা পরিচালনা করে, যা ভারতীয় তরুণদের (১৮-৩৫ বছর বয়সী) জনমত প্রতিফলিত করে, যাঁরা দেশের জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ। এই সমীক্ষাটি একটি বার্ষিক উদ্যোগ, যা ১৯টি শহর এবং ১১টি ভারতীয় ভাষা থেকে ৫,০০০ জনের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে। সমীক্ষার পাইলট সংস্করণটি ২০২১ সালের অগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ২,০৩৭ জনেরও বেশি জনের প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করেছিল।
সমীক্ষার দ্বিতীয় সংস্করণটি ২০২২ সালের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল এবং তৃতীয়টি ২০২৩ সালের অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। ২০২৫ সালের ৮ জুলাই প্রকাশিত ‘ইয়ং ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য চায়না চ্যালেঞ্জ’ অর্থাৎ সর্বশেষ পুনরাবৃত্তিটি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। সমীক্ষাটি মলদ্বীপ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি নির্দেশ করে।
আশাবাদ হ্রাস পাচ্ছে
গত তিনটি ক্ষেত্রে সমীক্ষাটি জোর দিয়ে বলেছে যে, বেশির ভাগ ভারতীয় তরুণ মলদ্বীপ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। এই সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৫৮ শতাংশেরও বেশি তরুণ ভারতীয় মলদ্বীপের উপর আস্থা রাখেন। প্রেসিডেন্ট ইবু সোলিহের ২০২২ সালের (৬০ শতাংশ) এবং ২০২৩ সালের (৬২ শতাংশ) তুলনায় এ বছর মলদ্বীপের প্রতি আস্থা কিছুটা কমেছে।
একই ভাবে, ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে, মলদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হয় ভাল অথবা অত্যন্ত ভাল। এটি আবার আগের সমীক্ষাগুলির (৫৬ শতাংশ (২০২২ সালে) এবং ৫৮ শতাংশ (২০২৩ সালে) তুলনায় কম। প্রায় ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গত দশ বছরে মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
মলদ্বীপ এই প্রতিক্রিয়াগুলির জন্য শীর্ষ তিনটি পছন্দের তালিকায় স্থান না পেলেও বেশিরভাগ ভারতীয় তরুণ দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, বৈদেশিক নীতি ও ভূ-রাজনীতি ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং সংস্কৃতি তাঁদের ধারণাকে গঠন করেছে। তরুণরা এখনও মলদ্বীপকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখেন। তবে সোলিহ-র বছরের তুলনায় এই আশাবাদ কম, সম্ভবত মুইজ্জুর নীতির কারণে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।
যুবসমাজের হিসেব-নিকেশে মলদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
যুবকরা ভারত মহাসাগরকে ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করেন (৩৩ শতাংশ), তার পরে দক্ষিণ এশিয়া (২৩ শতাংশ), যা তাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে, তা তুলে ধরে। এটি মলদ্বীপের প্রতি তাঁদের উদ্বেগ এবং সমর্থনকেও ব্যাখ্যা করে।
এই অঞ্চলের অ-বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার সঙ্গে সহমত পোষণ করে ৭৫ শতাংশ বলেছেন যে, এই কৌশলটি ভারতের ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির একটি সফল উপাদান। অতএব, এটি মুইজ্জুর অধীনে মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সহনশীল নীতির প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রদর্শন করে। একই সংখ্যক উত্তরদাতা ভারতের উন্নয়ন সহায়তা ও এইচএডিআর (মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ) প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করেছেন। কারণ মলদ্বীপ তার বহিরাগত ঋণ পরিশোধ ও উন্নয়ন সহায়তা পেতে লড়াই করছে।
ঘরের চৌকাঠে ড্রাগন
চিন তরুণদের ধারণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। আজকের তরুণরা চিনকে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন (৮৯ শতাংশ)। প্রায় ৮৭ শতাংশ চিনের একটি প্রধান শক্তি হিসেবে উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং চিনকে তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি হিসেবে দেখেন। ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরে বন্দরের উপর চিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন বা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
উত্তরদাতারা বিশ্বাস করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের উপস্থিতি ও প্রভাব একটি চ্যালেঞ্জ এবং মলদ্বীপে চিনের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি সমর্থন করেন। প্রায় ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা প্রতিবেশ অঞ্চলে চিনের উপস্থিতি ও অনুপ্রবেশকে প্রতিহত করার জন্য ভারতের নীতিকে সমর্থন করেছেন এবং চিনের বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
চিনের সঙ্গে মুইজ্জুর নীতি ভারতীয় তরুণদেরও সমান ভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ৭১ শতাংশেরও বেশি তরুণ মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় চিনা গুপ্তচর জাহাজ ও ডূবোজাহাজ নোঙর করা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রায় ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতা ২০২৪ সালের মার্চ মাসে মলদ্বীপ ও চিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সর্বোপরি, ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা এই অঞ্চলে ঋণের ফাঁদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বহিরাগত ঋণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং মলদ্বীপ তাদের ঋণ প্রদানের জন্য লড়াই করার সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণাগুলি আবার প্রকট হয়েছে।
ভারতীয়রা নিজেদের প্রতিবেশ অঞ্চলে চিনের কার্যকলাপকেও অবিশ্বাস করেন (৭৩ শতাংশ), মাত্র ৪২ শতাংশ এই অঞ্চলে তুর্কিয়েকে বিশ্বাস করে্ন। সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় উভয় দেশই ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার কারণে এই সন্দেহ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উভয় দেশের সঙ্গে মুইজ্জু সরকারের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারতে সন্দেহের চোখে দেখা হবে।
চিন তরুণদের ধারণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। আজকের তরুণরা চিনকে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন (৮৯ শতাংশ)। প্রায় ৮৭ শতাংশ চিনের একটি প্রধান শক্তি হিসেবে উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং চিনকে তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি হিসেবে দেখেন। ৮১ শতাংশ উত্তরদাতা আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগরে বন্দরের উপর চিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন বা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
ভারতীয় তরুণরা ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জনে মলদ্বীপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখেন। ৭৯ শতাংশেরও বেশি বিশ্বাস করেন যে, মহড়া ও যৌথ টহল এবং ৭৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে প্রতিবেশী দেশগুলির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন ভারতের কৌশলগত ও নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলিকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। একই ভাবে, ৬৯ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে, কলম্বো নিরাপত্তা সম্মেলনের মতো উদ্যোগগুলি ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
যখন ভারতীয় তরুণরা মলদ্বীপকে একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য আস্থা রাখেন এবং চিন এবং অন্যদের অবিশ্বাস করেন, তখন মুইজ্জুর ভারত থেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা হ্রাস/বৈচিত্র্যকরণ এবং অ-আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার প্রচেষ্টা এই ধারণাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সমীক্ষাগুলি দর্শিয়েছে যে, তরুণ ভারতীয়রা মলদ্বীপে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন, এমনকি তাঁদের বেশির ভাগই মলদ্বীপের উপর আস্থা রাখেন। মোদী ও মুইজ্জু ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় লেখার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ ভারত মুইজ্জুর নীতিগুলির উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখবে। সর্বোপরি, তাঁদের ইতিবাচক ধারণাই ভবিষ্যতে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং বিদেশনীতিকে পরিচালিত করবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মলদ্বীপ ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative. He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...
Read More +