Published on Aug 08, 2024 Updated 1 Days ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার তিন মিত্রের এই নতুন ক্ষুদ্রপাক্ষিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কোয়াডের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে

ইন্দো-প্যাসিফিকের উদীয়মান গোষ্ঠী স্কোয়াড ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করে?

মে মাসের শুরুর দিকে ইউএস সেক্রেটারি অব ডিফেন্স লয়েড অস্টিন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি নতুন চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসাবে স্কোয়াড’-এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং তার সূচনা করার জন্য তার অস্ট্রেলীয়, ফিলিপিনো এবং জাপানি সমকক্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘ক্ষুদ্রপাক্ষিক’ গোষ্ঠী হিসেবে কোয়াড, অউকাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপিন্স-জাপান ত্রিপাক্ষিক জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ত্রিপাক্ষিক জোটের মতো স্কোয়াড একটি অপরিহার্য সংযোজন হয়ে উঠেছে

ফিলিপিন্স, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া চুক্তিগত মিত্র না হলেও এই দেশগুলির প্রত্যেকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি জোট রয়েছে। যখন চিইন্দো-প্যাসিফিকের নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিকীকরণ করছে, তখন হাব-অ্যান্ড-স্পোক বিন্যাসের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের সমন্বিতকরণের স্তরকে আরও গভীর করার জন্য স্কোয়াডের নেপথ্যের ধারণাটি চারটি গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার উপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

 

ম্যানিলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার মৈত্রী প্রসারিত করেছে এবং বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে সেনা মোতায়েন বাড়ানোর জন্য জাপানের সঙ্গে একটি রেসিপ্রোকাল অ্যাকসেস এগ্রিমেন্ট বা পারস্পরিক প্রবেশাধিকার চুক্তি (আরএএ) নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।

 

দক্ষিণ চিন সাগরে তাদের কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য চারটি দেশের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২৩ সালে স্কোয়াড তৈরির বীজ রোপণ করা হয়েছিল। ম্যানিলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার মৈত্রী প্রসারিত করেছে এবং বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে সেনা মোতায়েন বাড়ানোর জন্য জাপানের সঙ্গে একটি রেসিপ্রোকাল অ্যাকসেস এগ্রিমেন্ট বা পারস্পরিক প্রবেশাধিকার চুক্তি (আরএএ) নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপিন্সের বিদ্যমান ভিজিটিং ফোর্সেস অফ এগ্রিমেন্ট (ভিএফএ) এবং ম্যানিলা ক্যানবেরার মধ্যে স্টেটাস অ ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট-এর (এসওএফএ) পরিপূরক। ২০২৩ সালের জুন মাসে চারটি দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানরা সিঙ্গাপুরে শাংরি লা সিকিউরিটি ডায়লগের সময়ে প্রথম বারের মতো দেখা করেছিলেন। সর্বোপরি, এই বছরের এপ্রিল মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফিলিপিন্স এবং অস্ট্রেলিয়া ফিলিপিন্সের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) তাদের প্রথম বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়া পরিচালনা করে।

স্কোয়াডের সৃষ্টিকে অনেকটা স্বাভাবিক বলে মনে হলেও ক্ষুদ্রপাক্ষিক গোষ্ঠীর ঢিলেঢালা এবং অনানুষ্ঠানিক প্রকৃতির কারণে তাদের বিকাশ রাজনৈতিক ইচ্ছার সমন্বয় এবং এর সম্ভাব্য সদস্যদের মধ্যে অভিন্ন সাধারণ স্বার্থ হুমকির উপলব্ধির সমাপতনের উপর নির্ভর করে। ফলস্বরূপ, চারটি গণতন্ত্রের মধ্যে সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাত্রা শুধুমাত্র ২০২৩ সাল থেকেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

এই অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিন্স, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি সম্মিলিত সমজাতীয় কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ছিল। ওবামা প্রশাসনের শেষের বছরগুলিতে ওয়াশিংটন প্রাথমিক ভাবে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিল; ট্রাম্পের সময়কালে একটি বৃহত্তর স্তরের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে জোটের প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অন্য দিকে, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ চিন সাগরে চিনেসৃষ্টি করা চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দিলেও ভৌগোলিক পরিসরটিতে আরও সামরিক এবং প্রতিরক্ষাচালিত পদ্ধতি তুলে ধরার বিষয়ে তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ছিল। সর্বোপরি, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পরিসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি এবং তার দুই চুক্তির মিত্রদের দক্ষিণ চিন সাগরকে সম্মিলিত ভাবে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করেছে।

 

জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ চিন সাগরে চিনেসৃষ্টি করা চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকৃতি দিলেও ভৌগোলিক পরিসরটিতে আরও সামরিক এবং প্রতিরক্ষাচালিত পদ্ধতি তুলে ধরার বিষয়ে তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ছিল।

 

ফিলিপিন্সকে তখন সবচেয়ে ব্যবহারিক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অংশীদার বলে মনে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার চুক্তি জোট, জাপানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্ক এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কারণে রদ্রিগো দুতার্তের প্রাক্তন প্রশাসন ফিলিপিন্সের বিদেশনীতি ও নিরাপত্তা নীতিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পুনর্নির্মাণ করেছিল। তুষ্ট করার মাধ্যমে বেজিংয়ের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ছাড় পাওয়ার আশায় ম্যানিলা মার্কিন জোট শৃঙ্খলের সাহায্যে চিনের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত ছিল। এই নীতির পরিবর্তন দক্ষিণ চিন সাগরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফিলিপিন্সের অংশগ্রহণকে সীমিত করেছে।

যাই হোক, এই কৌশলগত সমীকরণ ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে এখনও প্রবল ভাবে জড়িত থাকার পাশাপাশিই ওয়াশিংটন আরও স্পষ্ট ভাবে স্বীকার করেছে যে, চিনই একমাত্র বড় শক্তি যার বৈষয়িক ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতিষ্ঠিত নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একই ভাবে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিন তার সম্প্রসারণবাদী মনোভাব ও যুদ্ধাভিযান নিয়ন্ত্রণের কোন লক্ষণ না দর্শানোয় জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। এই পুনর্বিন্যাসের মূল রয়েছে টোকিয়োর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এনএসএস), যা ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে জাপানের সামরিক আধুনিকীকরণকে ত্বরান্বিত করা এবং এই অঞ্চলের তীব্র চিরাচরিত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের উপর ভিত্তি করে তার সামরিক বাহিনীকে উন্নত করা-সহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছেউল্লেখযোগ্য ভাবে, এনএসএস সত্যিকারের মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অর্জনের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক দেশগুলির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে টোকিয়োর প্রয়োজনীয়তাকেও দর্শায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আরও বিশিষ্ট ভূমিকা পালনে অস্ট্রেলিয়া বেশি আগ্রহ প্রদর্শন করছে।

ফিলিপিন্সেপ্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ২০২২ সালের জুন মাসে কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে ম্যানিলা তার সামুদ্রিক নিরাপত্তা সক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করার ক্ষমতা উন্নত করতে অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে চিনা সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে তার ইইজেড রক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। এই পরিবর্তন ফিলিপিন্সের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিকের সমমনস্ক গণতন্ত্রের উদীয়মান শৃঙ্খলে আরও সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নোঙরের ভূমিকা পালন করে ফিলিপিন্স নিজে স্কোয়াডের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

 

স্কোয়াডের চারটি সদস্যকেই ধারাবাহিক ভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে এবং যৌথ সক্ষমতা তৈরির নতুন উপায়গুলি অন্বেষণ করতে হবে।

 

অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত ব্যবস্থার বিস্তার দর্শায় যে, ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা চিরাচরিত এবং অনমনীয় জোটের পরিবর্তে নমনীয়, অঞ্চলনির্দিষ্ট এবং সহযোগিতার ব্যবহারিক উপাদানগুলি দ্বারা প্রভাবিত হবে। এই ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রস্থলে প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য চিনের দ্বারা উত্থাপিত একটি সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের উদ্বেগ রয়েছে। স্কোয়াডের চারটি সদস্যকেই ধারাবাহিক ভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে এবং যৌথ সক্ষমতা তৈরির নতুন উপায়গুলি অন্বেষণ করতে হবে। সর্বোপরি, ইন্দো-প্যাসিফিকের সমমনস্ক দেশগুলির আরও শক্তিশালী শৃঙ্খলভিত্তিক সহযোগিতামূলক কাঠামো অর্জনের জন্য স্কোয়াডকে অন্যান্য বিদ্যমান ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটের (কোয়াডের মতো) সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রকৃতিই এমন, যেখানে ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটগুলি ক্রমশ প্রসারিত হবে এবং এই অঞ্চলে নিরাপত্তা হুমকির প্রকৃতি দেশগুলির কার্যকলাপগুলির মধ্যে নিবিড় সমন্বয়ের দাবি রাখে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Don McLain Gill

Don McLain Gill

Don McLain Gill is a Philippines-based geopolitical analyst author and lecturer at the Department of International Studies De La Salle University (DLSU). ...

Read More +