বিজয়ী হওয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশে প্রকাশ্য ভাষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধের স্পষ্ট উল্লেখ না করেও বলেছিলেন, ‘আমি যুদ্ধ বন্ধ করব।’ তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, ২০১৭-২০২০-তে তাঁর মেয়াদ চলাকালীন কোনও বড় গৃহযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত থাকেনি, যা বিশ্ব শান্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায়ের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে। তিনি জোর দিয়ে এ কথাও বলেন যে, ‘এটি সত্যিই আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে’ এবং বারংবার এই প্রতিশ্রুতিই দেন যে, রিপাবলিকানরা তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফের মহান করে তুলবে। এই নিবন্ধটিতে বিশ্ব শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির উপর তার প্রভাব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী জমানায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর বিজয়ের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে।
দায়েশ সঙ্কট এবং ওবামা বনাম ট্রাম্প বিতর্ক
ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রাপ্ত ২৩২ আসনের বিপরীতে ৩০৬ আসন পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে ইরাকে আল-কায়েদার প্রাক্তন সহযোগী দল দায়েশের (যা আইএসআইএস/আইএসআইএল বা ইসলামিক স্টেট নামেও পরিচিত) জঙ্গিরা যখন ইরাকের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও সিরিয়ার বিদ্যমান গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ার সুবিশাল অংশ দখল করে নেয়, তখন তা বিশ্বব্যাপী সকলের নজর কেড়েছিল। ওই একই বছরে ওবামা প্রশাসন ‘ইনহেরেন্ট রিজলভ’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে এবং মার্কিন ও মিত্র দেশের সৈন্যদের ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য স্থল অভিযানে সম্পৃক্ত না হয়েও দায়েশের মোকাবিলা করার জন্য অন্যান্য অ-নির্দিষ্ট জোট প্রচেষ্টাকে সহায়তা করেছিল।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ইরাক দায়েশের বিরুদ্ধে তার বিজয় ঘোষণা করে এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসডিএফ তার শেষ আঞ্চলিক ছিটমহল বাঘৌজ গ্রামে দায়েশকে ঘেরাও করে নেয়। এ ভাবে ইরাক ও সিরিয়া উভয় ক্ষেত্রেই আইএসআইএস-এর খেলাফতের অবসান ঘটায়।
ট্রাম্প প্রশাসন ওবামার কৌশল বাস্তবায়নই অব্যাহত রেখেছিল। যদিও এ ক্ষেত্রে তিনি নতুন ‘সম্পৃক্ততার নিয়ম’ যোগ করেছিলেন, যার মধ্যে ‘দ্রুত, আরও সিদ্ধান্তমূলক অভিযানের দরুন আরও বেশি ঝুঁকি’ও জড়িত ছিল। এর ফলস্বরূপ, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান শক্তির সাহায্যে ইরাকি বাহিনী ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মসুল এবং সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) মাসব্যাপী যুদ্ধের পর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে রাক্কা পুনরুদ্ধার করে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ইরাক দায়েশের বিরুদ্ধে তার বিজয় ঘোষণা করে এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসডিএফ তার শেষ আঞ্চলিক ছিটমহল বাঘৌজ গ্রামে দায়েশকে ঘেরাও করে নেয়। এ ভাবে ইরাক ও সিরিয়া উভয় ক্ষেত্রেই আইএসআইএস-এর খেলাফতের অবসান ঘটে। এ কথা লক্ষ্যণীয় যে, ওবামার সামরিক অভিযানের আড়াই বছরের মধ্যে দায়েশ তুর্কিয়ের কাছে তার একমাত্র আন্তর্জাতিক সীমান্ত হারিয়েছে এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দায়েশ দ্বারা অধিকৃত প্রায় অর্ধেক অঞ্চলই মুক্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের সামরিক অভিযানের কঠোরতা প্রদর্শনের মাধ্যমে পরবর্তী ন’মাসের মধ্যে বাকি অধিকৃত অঞ্চলও পুনরুদ্ধার করা হয়।
ট্রাম্পের আমলে ওবামার সামরিক কৌশলে উল্লেখযোগ্য কৌশলগত পরিবর্তন আনা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প ‘শত্রুর দুর্বলতার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সঠিক স্তরে কর্তৃত্ব অর্পণ করেছেন।’ অন্য কথায় বলতে গেলে, এক দিকে যখন দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণ অনুমোদন প্রক্রিয়ার দরুন লড়াইয়ের ময়দানে থাকা মানুষজন বিমান হামলার অনুরোধ করেছিল, তখন কম সাইন-অফের প্রয়োজন ছিল। ট্রাম্প নিজে যেমন দাবি করেছিলেন, ‘আমরা আমাদের জোটের অংশীদারদের পাশাপাশি, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত কয়েক মাসে আরও অগ্রগতি লাভ করেছি।’ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে দায়েশকে পরাজিত করার জন্য ট্রাম্পের বৃহত্তর উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন হতাহতের ঘটনা রোধ করা, যা তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকেই দর্শায়। আর ঠিক সেই রেশ ধরেই ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে দায়েশ প্রায় পরাজিত হয়েছিল, যা অবশেষে ইরাক ও সিরিয়ার পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলিতে পুনর্গঠন ও শান্তিনির্মাণের উদ্যোগের পথ প্রশস্ত করেছিল।
২০১৭ থেকে ২০২০: মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিদেশনীতি
ক্ষমতায় থাকাকালীন - যদিও ট্রাম্পের ক্রমাগত ‘সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে পড়া ও তা থেকে বেরিয়ে যাওয়া’র নীতি এই অঞ্চলে আরও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছিল - ট্রাম্প ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবিরাম যুদ্ধ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিলেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্প ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক উন্নয়নে গুরুতর বিধিনিষেধের চুক্তির বিনিময়ে ইরানের উপর থেকে পি৫+১ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের বিষয়টি এক নতুন সঙ্কটের জন্ম দেয়। প্রায় একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার প্রচার চালিয়েছিল, যার ফলে ইরানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে পারস্য উপসাগরে ইরানের উস্কানিতে ট্রাম্প সাড়া না দেওয়ার দরুন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় ছিল।
প্রায় একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার প্রচার চালিয়েছিল, যার ফলে ইরানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদ জুড়ে ইজরায়েলের নিরাপত্তার অধিকার রক্ষা করেছেন এবং একই সঙ্গে প্যালেস্তাইনিদের স্বাধীনতার অধিকারকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই একই মনোভাব ২০১৮ সালে ট্রাম্পের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, এই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত শান্তির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হবে। তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমার দৃষ্টিভঙ্গি উভয় পক্ষের জন্য ‘লাভ’-এর সুযোগ উপস্থাপন করে। এই বাস্তবসম্মত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আসলে ইজরায়েলের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের ঝুঁকিরও নিষ্পত্তি ঘটায়।’ ট্রাম্প কয়েক মাসের মধ্যে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, ‘আমার প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই চুক্তি সম্পন্ন করতে সক্ষম হওয়া আমার অন্যতম স্বপ্ন।’ যাই হোক, প্যালেস্তাইনিরা ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দিহান ছিল, বিশেষ করে ২০১৭ সালে তেল আভিভ থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরে তাঁর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তো অবশ্যই।
গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধ ও শান্তির জন্য ট্রাম্পের নতুন করে অঙ্গীকার
২০২৪ সালের দিকে নজর ফেরানো যাক। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত সর্বশেষ বক্তৃতায় হ্যারিস গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং ইজরায়েলের প্রতি তাঁর দলের নিরলস সামরিক সমর্থন সম্পর্কিত আখ্যানটি পরিবর্তন করার দুর্বল প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর অর্থ ছিল, তিনি বিদ্যমান যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন, যাতে প্রায় ৪৫০০০ মানুষ মারা গিয়েছেন, অঞ্চলটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং যা লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিকেও যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছে। বিদেশনীতির বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলেও প্রচারের সময় করা প্রতিশ্রুতি পূরণে ট্রাম্পের সুনাম রয়েছে।
গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য ও তার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তির জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। তাই ইজরায়েলের প্রতি তাঁর সমর্থন এবং বিশ্ব শান্তির প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে ট্রাম্প যে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা অবশ্যম্ভাবী। তাঁর প্রচারণার সময় মাসের পর মাস ধরে ট্রাম্প গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে জোর দিয়েছিলেন, এমনকি ইজরায়েলের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতায় আসার আগেই হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলকে অভিযান শেষ করতে বলেছেন। এ হেন প্রতিবেদন যদি বিশ্বাস করা হয়, তা হলে ট্রাম্প সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি এবং ইজরায়েলের বন্দিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার সময় হামাসকে মূল বিষয়গুলিতে সমর্থন করার জন্য চাপ দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, হামাস এখন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা উপত্যকায় অবস্থানরত ইজরায়েলি বাহিনীর মাধ্যমে অস্থায়ী হস্তক্ষেপে রাজি হয়েছে এবং সেই সঙ্গে মার্কিন-সহ সকল বন্দির একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রদান করতে সম্মত হয়েছে, যে সমস্ত মানুষকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হবে। তাঁর ক্ষমতায় আসার আগে একটি চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে সাম্প্রতিক ছাড়গুলির নিরিখে ‘একটি বড় কারণ’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ট্রাম্প যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন এবং এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে যে, ইজরায়েলের প্রতি তাঁর সমর্থন বিদ্যমান যুদ্ধের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হবে।
আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের খ্যাতি রয়েছে, যাঁরা বন্দিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য হামাসকে আরও প্রভাবিত করতে পারে।
ট্রাম্প তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন) প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাধিকার দেবেন। এর ফলস্বরূপ, তাঁর বৈদেশিক নীতিতে ইজরায়েল-সহ বৈদেশিক শক্তির যুদ্ধ তহবিল কমানোর উপর জোর দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মার্কিন সামরিক সহায়তারও সঙ্কোচন করা হবে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছেন। ইজরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর জটিল সম্পর্ক থাকলেও এ কথা মনে করা হয় যে, ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার জন্য নেতানিয়াহুর উপর চাপ দিতে পারেন, যা ইজরায়েলে নেতানিয়াহুর উপর চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তবে ট্রাম্প ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন অক্ষুণ্ণ রেখে প্রয়োজনে নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরে আসার জন্যও চাপ দিতে পারেন। আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের খ্যাতি রয়েছে, যাঁরা বন্দিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য হামাসকে আরও প্রভাবিত করতে পারেন। যাই হোক, এ কথা এখনও স্পষ্ট নয় যে, ট্রাম্প কী ভাবে ইজরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখানোর বিষয়ে তাঁর সদিচ্ছাকে বাস্তবায়িত করেন এবং একই সঙ্গে প্যালেস্তাইনিদের মানবতা, মর্যাদা এবং স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটান।
উপসংহার
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অবস্থান বজায় রেখে দায়েশকে পরাজিত করার জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্ট ফলাফলের অগ্রাধিকার দিয়ে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মেয়াদ কৌশলগত সামরিক উদ্যোগ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। ইজরায়েল/প্যালেস্তাইন প্রসঙ্গে তাঁর অবস্থান এবং ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে তাঁর আকস্মিক প্রত্যাহার আসলে ট্রাম্পের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং এমন এক নেতার ভাবমূর্তিই তুলে ধরে, যিনি দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক সমাধানে পটু নন। যাই হোক, ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয় মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি মার্কিন বিদেশনীতিতে একটি নতুন পর্যায়ের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অগ্রগতি ও বিপত্তি উভয়েরই সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মনোভাবের পুনর্নবীকরণের ফলে এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আরও সংযত হতে পারে। তাই গাজা যুদ্ধের অবসান এবং শান্তির দূত হওয়ার প্রশ্নে তাঁর প্রতিশ্রুতি জটিলতায় জর্জরিত। শেষ পর্যন্ত, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ পরস্পরবিরোধী স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির সূক্ষ্ম সমীকরণের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের পথ খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলবে।
সাবিনে আমীর ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগোর পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস-এর গবেষক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.