৬ এপ্রিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি ভারতের মহাকাশ নীতি অনুমোদন করেছে। এই ইন্ডিয়ান স্পেস পলিসি ২০২৩ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো), নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনএসআইএল), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টার (ইন–স্পেস) এবং ভারতীয় মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারদের ভূমিকা ও দায়িত্বগুলিকে স্পষ্ট করে। সরকার এখনও নীতির বয়ান প্রকাশ করেনি, তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং আর্থ সায়েন্সেস প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংয়ের মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকথন–সহ বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট এই নীতির বিভিন্ন ধারার বিশদ বিবরণ দেয়।
নতুন মহাকাশ নীতি ভারতীয় মহাকাশ ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করেছে, এবং ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে বেসরকারি ক্ষেত্রকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য একটি জায়গা দিয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রের বর্ধিত ভূমিকা নেওয়ার পথ সুগম করা হলে তা ইসরোকে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং অন্যান্য অ–বাণিজ্যিক মিশনের মতো দিকগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেবে।
ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ভূমিকা ও দায়িত্বের স্পষ্ট রূপরেখা নতুন নীতির অন্যতম প্রধান দিক বলে মনে হচ্ছে। ইসরো, এনএসআইএল, ও ইন–স্পেস–এর ভূমিকা ও দায়িত্বের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা বেসরকারি ক্ষেত্রকে সেই স্পষ্টতা প্রদান করতে পারে যা তারা দীর্ঘদিন ধরে চাইছে।
সিং মিডিয়াকে বলেছিলেন যে নতুন মহাকাশ নীতি ‘(সাম্প্রতিক অতীতে) স্থাপন করা উপাদানগুলির ভূমিকা স্পষ্ট করবে’। তিনি আরও যোগ করেছেন যে এটি রকেট, স্যাটেলাইট ও উৎক্ষেপণ যান নির্মাণের পাশাপাশি ডেটা সংগ্রহ ও শিল্প সহ শুরু–থেকে–শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত মহাকাশ কার্যক্রমে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণকে সহজতর করবে।
বেসরকারি ক্ষেত্রের বর্ধিত ভূমিকা নেওয়ার পথ সুগম করা হলে তা ইসরোকে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং অন্যান্য অ–বাণিজ্যিক মিশনের মতো দিকগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেবে।
নতুন নীতিটি অ্যাকাডেমিয়া ও গবেষক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি স্টার্টআপ ও শিল্প–সহ বেসরকারি সংস্থাগুলির বৃহত্তর অংশগ্রহণের সঙ্গে সামগ্রিক ইসরো মিশনগুলিকে আরও উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মন্ত্রীর মতে, মহাকাশ ক্ষেত্রের কৌশলগত ক্রিয়াকলাপগুলি এনএসআইএল দ্বারা পরিচালিত হবে, যা স্পেস ডিপার্ট্মেন্ট-এর মধ্যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপনা হিসাবে ‘চাহিদা–চালিত পদ্ধতি’তে এই কার্যক্রমগুলি এগিয়ে নিয়ে যাবে। অন্য সাম্প্রতিক প্রাতিষ্ঠানিক সেট আপ, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা হল ইন–স্পেস।
বেসরকারি ক্ষেত্র ও ইসরোর মধ্যে সাম্প্রতিক সফল সহযোগিতার পর, ইসরোর চেয়ারম্যান ডঃ এস সোমনাথকে মহাকাশে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণের বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহী বলে মনে হচ্ছে৷ মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় সোমনাথ বলেছিলেন যে নতুন নীতিটি ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। ইসরো চেয়ারম্যান আরও বলেছিলেন যে নতুন নীতি এমন একটি কাঠামোর রূপরেখা দেয় যার অধীনে বেসরকারি ক্ষেত্র অল্প পারিশ্রমিকে ইসরোর সুবিধাগুলি ব্যবহার করতে পারে। নীতিটি বেসরকারি শিল্প যাতে মহাকাশ ক্ষেত্রে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করে, সেদিকেও নজর দিয়েছে ।
একটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে যে বিষয়টিকে দেখা যেতে পারে তা হল সোমনাথ মিডিয়াকে বলেছিলেন যে ‘ইসরো মহাকাশ ক্ষেত্রের জন্য কোনও অপারেশনাল বা উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ করবে না, বরং নতুন প্রযুক্তি, নতুন ব্যবস্থা, এবং গবেষণা ও উন্নয়নে তার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করবে।’’ এর অর্থ হল রুটিন উৎপাদন ও উৎক্ষেপণ, যা এতদিন ধরে ইসরোকে ব্যস্ত রেখেছিল, তা সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি ক্ষেত্র দ্বারা পরিচালিত হবে। এগুলি এমন পরিবর্তন যার পক্ষে ভারতীয় মহাকাশ নীতি বিশ্লেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে, ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে ভাট (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন , ‘‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, এবং আজকের ঘোষণাটি একটি আনন্দদায়ক বিস্ময় হিসাবে এসেছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি এবং নীতির বিস্তারিত বিবরণের দিকে তাকিয়ে আছি।” তিনি যোগ করেছেন যে এটি ‘ভারতে বেসরকারি পরিসরের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত’, যা ভারতীয় মহাকাশ বাস্তুতন্ত্রকে মুক্ত করবে।
প্রায় এক দশক আগে এমন একটি উন্মুক্ত মহাকাশ নীতি যা বাণিজ্যিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনকে ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে একীভূত করে, এবং সেইসঙ্গে ভারতের জন্য একটি সামরিক মহাকাশ নীতির প্রয়োজনের পক্ষে আমি যুক্তি দিয়েছিলাম (এখানে এবং অন্যত্র)। ভারত যেমন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে দায়বদ্ধ, এমনকি ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পরেও, তেমনই ভারত মহাকাশের সম্পদের উপর বৃহত্তর সামরিক নির্ভরতার নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও দূর মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার প্রসারের কর্মসূচিতে আবদ্ধ থাকতে পারে। এটি এই অঞ্চল এবং তার বাইরে মহাকাশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তনের পাশাপাশি দ্রুত বিকশিত ভূ-রাজনীতির ফলাফল।
একটি উন্মুক্ত মহাকাশ নীতিকে কার্যকরভাবে ভয় ও উদ্বেগ সীমিত করতে, আত্মবিশ্বাস পুনর্নির্মাণ করতে, এবং ভারতীয় মহাকাশ পরিসরে প্রয়োজনীয় আরও স্পষ্টতা আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এক দশক আগে আরেকটি লেখায় আমি বন্ধু ও সম্ভাব্য শত্রু উভয়ের জন্যই একটি মেসেজিং টুল–সহ একটি মুক্ত মহাকাশ নীতির সুবিধার রূপরেখা দিয়েছিলাম। উপরন্তু, একটি উন্মুক্ত মহাকাশ নীতিকে কার্যকরভাবে ভয় ও উদ্বেগ সীমিত করতে, আত্মবিশ্বাস পুনর্নির্মাণ করতে, এবং ভারতীয় মহাকাশ পরিসরে প্রয়োজনীয় আরও স্পষ্টতা আনতে ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা ও দায়িত্বের পাশাপাশি আরও ভাল সম্পদ বরাদ্দের প্রেক্ষাপটে।
মহাকাশ পরিসরে ভারতের উদ্দেশ্যগুলির রূপরেখার জন্য খোলামেলা নীতির রূপরেখাও গুরুত্বপূর্ণ; এবং এক্ষেত্রে মূল বিষয় হল স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য। আদর্শভাবে, এই লক্ষ্যগুলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে আসবে, যাঁদের আগামী ২৫ বছরে ভারত কোথায় পৌঁছতে চায় এবং সেই অনুযায়ী মহাকাশ অগ্রাধিকারগুলি কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে এক দশক আগের তুলনায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব আজ আরও ভাল করে মহাকাশ ক্ষেত্রের দায়িত্ব নিয়েছে, যা এই ক্ষেত্রের এগিয়ে চলার জন্য একটি ইতিবাচক ঘটনা।
এই ভাষ্যটি প্রথম ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.