চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং ২১–২৩ এপ্রিল ফিলিপিন্স সফর করেছেন। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হয়েছে যখন ম্যানিলা ও বেজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। চিন উদ্বিগ্ন ফিলিপিন্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মৈত্রী আরও দৃঢ় হওয়া এবং তাইওয়ানের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মার্কিন সামরিক উপস্থিতির প্রভাব নিয়ে। ফিলিপিন্স ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর মধ্যে বার্ষিক বালিকাতান মহড়া শুরু হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পরে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে চিনা বিদেশমন্ত্রীর সফর কিন্তু ম্যানিলার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমানো এবং সম্ভাব্যভাবে তা উপশমের জন্য বেজিংয়ের ইচ্ছার ইঙ্গিতবাহী। তবে চিন যতক্ষণ না তার অহঙ্কারী ও আগ্রাসী আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে রাজি হয়, ততক্ষণ এই ধরনের সফরের ফলে তার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীর সঙ্গে চিনের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নতির সম্ভাবনা কম।
এ কথা অবশ্যই জোর দিয়ে বলা উচিত যে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র যখন গোড়ায় ফিলিপিন্সের জন্য বৈদেশিক নীতির দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি চিন সম্পর্কে সংশয়পূর্ণ মনোভাব না–নিয়ে সক্রিয় ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে তাঁর নিকটতম বৃহত্তম প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছিলেন। এভাবে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অভিপ্রায় তুলে ধরে মার্কোস প্রশাসন কার্যকরভাবে বলটি বেজিংয়ের কোর্টে রেখেছিল। সমস্যা হল যে বর্তমান চিনা সরকার আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি অনুসরণের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি উস্কে দিয়ে জাতীয় স্তরে তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দৃঢ় করতে চায়। এটি বেজিংয়ের শান্তিপূর্ণ বা ব্যবহারিক কূটনীতির পরিসরকে সীমিত করে, কারণ তাদের ভয় আছে যে অন্যথায় দেশের অভ্যন্তরে শাসকদের দুর্বল বলে ভাবা হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে এই রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখিয়ে দেয় যে চিনের রাজনৈতিক বিবৃতি আর বাস্তবের মাটিতে তার কার্যকলাপ কুখ্যাতভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সংঘাতের সময়ে তাইওয়ানে প্রায় ২০০,০০০ ফিলিপিনো শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ফিলিপিন্সে চিনা রাষ্ট্রদূতের উস্কানিমূলক বক্তব্য ছিল এই দুর্ভাগ্যজনক প্রকরণটি অনুসরণের আরেকটি উদাহরণ।
দক্ষিণ চিন সাগরে উত্তেজনা কমানোর জন্য জানুয়ারিতে মার্কোস ও শি দ্বারা গৃহীত উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকারের ঠিক কয়েক সপ্তাহ পরেই চিন ফিলিপিন্সের সার্বিক সার্বভৌমত্ব ও দেশটির একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) মধ্যে দেশটির সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে তার আগ্রাসী কৌশল প্রয়োগ করতে ফিরে আসে। অতি সম্প্রতি সংঘাতের সময়ে তাইওয়ানে প্রায় ২০০,০০০ ফিলিপিনো শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ফিলিপিন্সের চিনা রাষ্ট্রদূতের উস্কানিমূলক বক্তব্য ছিল এই দুর্ভাগ্যজনক ধরনটি অনুসরণের আরেকটি উদাহরণ। ম্যানিলা তাই উদীয়মান ও আগ্রাসী চিনের সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান বিপদের মধ্যে আরও কার্যকরভাবে তার ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষা করার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যৌক্তিক পদক্ষেপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার মৈত্রী কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল।
যাই হোক, এ কথা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে ফিলিপিন্সের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট একটি লক্ষ্য নয়, বরং লক্ষ্যে পৌঁছনোর উপায়। আঞ্চলিক ভূ–রাজনৈতিক মানচিত্রে সংঘটিত ওঠানামা ও পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এর অর্থ হল ঐতিহ্যগত নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কোনও বিকল্প নেই। তাই ফিলিপিন্সের স্থল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, সামরিক আধুনিকীকরণ কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা জালিকা গতিশীলতার আরও দক্ষ শক্তিশালীকরণের জন্য জোটের সম্ভাব্যতাকে কাজে লাগানো এবং তা সর্বাধিক করার চেষ্টা করা ম্যানিলার জন্য অনিবার্য। এর অর্থ এমনও দাঁড়ায় যে ম্যানিলা ও ওয়াশিংটন পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে থাকবে, যদিও ম্যানিলা তার বাহ্যিক সম্পর্কের জন্য প্রাথমিক অনুঘটক হিসাবে জোট বা ব্লকের রাজনীতিতে আবদ্ধ হতে চাইবে না।
এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যখন ফিলিপিন্সের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলেছিল যে ম্যানিলা তাইওয়ানের বিষয়ে নাক গলাতে বা হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ম্যানিলা ভালভাবে জানে যে ভূগোল, আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতি, এবং চুক্তি জোটের অধীনে দায়িত্বের ভিত্তিতে তাইওয়ানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ফিলিপিন্সের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত। যাই হোক, এর অর্থ এই নয় যে ম্যানিলা ইতিমধ্যে অস্থির মার্কিন–চিন শক্তি প্রতিযোগিতাকে উস্কে দিয়ে আগুনে আরও জ্বালানি যোগ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চাইবে। ফিলিপিন্সের প্রাথমিক নিরাপত্তা স্বার্থ তার সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের সুরক্ষায় অন্য কোনও কিছুর চেয়ে বেশি নিহিত রয়েছে। এই আলোকে বেজিংকে ফিলিপিন্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও ভালভাবে বুঝতে হবে।
ম্যানিলা ভালভাবে জানে যে ভূগোল, আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতি, এবং চুক্তি জোটের অধীনে দায়িত্বের ভিত্তিতে তাইওয়ানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ফিলিপিন্সের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত।
ম্যানিলার বৈদেশিক নীতি এই অর্থে স্বায়ত্তশাসিত যে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন–চিন শক্তি প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়া সত্ত্বেও ফিলিপিন্স এখনও কূটনৈতিক পথে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বেজিংয়ের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার চেষ্টা করে, যাতে আরও কার্যকরভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করা যায় এবং যে কোনও সম্ভাব্য উত্তেজনা প্রশমিত করা যায়, বিশেষ করে সমুদ্রে। ম্যানিলা এই কথা বার বার জোর দিয়ে বলছে।
কাজেই সমস্যা হিসাবে চিন যা তুলে ধরতে চায় সেগুলি সবই হল তার নিজের কাজ। তারা ফিলিপিন্স–মার্কিন মৈত্রী শক্তিশালী হওয়াকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে ফিলিপিন্সের ইইজেড–এর মধ্যে তার আগ্রাসী ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা দিতে পারে না। এ শুধু অযৌক্তিকই নয়, ম্যানিলার বর্তমান প্রশাসন শুরু থেকেই স্পষ্টভাবে যে সব বার্তা ও সংকেত পাঠাচ্ছে তা বোঝার অক্ষমতাও বটে। বল রয়ে গেছে চিনের কোর্টে। বেজিং যদি আরও অনুকূল আঞ্চলিক পরিবেশ তৈরি করতে চায়, বিশেষ করে ফিলিপিন্সের সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, তবে তাকে অবশ্যই তার অহঙ্কারী উচ্চাকাঙ্ক্ষা দূরে সরিয়ে রাখতে এবং একটি ভাল প্রতিবেশী হিসাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে। এতে কোনও সংশয় নেই যে ম্যানিলা বেজিংয়ের সঙ্গে ভাল ও উৎপাদনশীল সম্পর্ক রাখতে চায়, তবে দেশটি এই অঞ্চলে চিনের সংকীর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত উদ্দেশ্যগুলির কাছে বশ্যতা স্বীকার করবে না, কারণ এই উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করতে হলে ফিলিপিন্সকে মূল্য হিসাবে দিতে হবে নিজের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকার।
ডন ম্যাকলেন গিল ফিলিপিন্স–মিডল ইস্ট স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন (পিএমইএসএ)–এর দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার পরিচালক
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.