পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম পরিণত অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বেশ কিছু কৌশলগত পরিবর্তনশীলতা এই সম্পর্ককে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে বলে মনে হয়। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সমকেন্দ্রিকতাগুলি বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ইন্দো-প্যাসিফিকে একটি নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একীভূত হয়েছে।
যদিও নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় দুই শক্তির মধ্যেকার বর্তমান অবস্থা প্রশংসিত হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিন্নতা এখনও দুই শক্তির মধ্যে সম্পর্ককে চিহ্নিত করে চলেছে। ঐতিহাসিকভাবে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে 'পরস্পরবিচ্ছিন্ন গণতন্ত্র ' হিসাবে দেখা হতো, বিশেষ করে ঠান্ডাযুদ্ধের সময়কালে। ১৯৯৮ সালে পোখরানে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এই পরীক্ষাগুলির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যাই হোক, এক দশকেরও কম সময় পরে, ২০০৫ সালে, দুই শক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত মার্কিন-ভারত বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি সম্পর্কের স্বাভাবিককরণকে চিহ্নিত করেছিল। তর্কাতীতভাবে, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তখন থেকেই প্রসারিত হয়েছে। এমনকি এই ঘটনাটি ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতিকে 'বিচ্ছিন্ন' থেকে 'নিয়োজিত' হিসেবে চিহ্নিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
যদিও নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় দুই শক্তির মধ্যেকার বর্তমান অবস্থা প্রশংসিত হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিন্নতা এখনও দুই শক্তির মধ্যে সম্পর্ককে চিহ্নিত করে চলেছে।
যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিন্নতার সাধারণ ভিত্তিকে প্রশস্ত ও গভীর করেছে, সেই সময় ইন্দো-প্যাসিফিক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে যা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অভিন্নতা বহুমুখী বলে মনে হচ্ছে। প্রথমত, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই একটি ভাগ করা, মূল্যভিত্তিক, অবাধ, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য আদর্শগতভাবে দায়বদ্ধ। দ্বিতীয়ত, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই চিনের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উগ্র মনোভাবের কারণে সতর্ক হয়েছে। তৃতীয়ত, নিরাপত্তার বাধ্যবাধকতার বাইরে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকের বিকাশশীল বাণিজ্য, সরবরাহ শৃঙ্খল, ও পরিকাঠামো-নেতৃত্বাধীন সংযোগের পাশাপাশি প্রযুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্বের উপর জোর দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিন্নতার সাধারণ ভিত্তিকে প্রশস্ত ও গভীর করেছে, সেই সময় ইন্দো-প্যাসিফিক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে যা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের ভিত্তি সুসংহত হলেও বিচ্যুতির বেশ কয়েকটি মূল ক্ষেত্র রয়ে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, কখনও কখনও, এই পার্থক্যগুলি ভিন্নতা থেকে নয়, বরং ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা, স্বার্থ বা এমনকি বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত হয়। ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে তাকানোর আগে, সমসাময়িক বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে দুই দেশের মধ্যে এই ধরনের সূক্ষ্ম পার্থক্যের হিসাব নেওয়া সহায়ক হবে। যুক্তিযুক্তভাবে দুটি যুদ্ধ — একটি ইউরোপে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এবং অন্যটি মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে — গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছে। এই দুটি বিষয়ে বিশ্ব বিভক্ত বলে মনে হচ্ছে। ওয়াশিংটন বিভিন্ন উপায়ে ইউক্রেন ও ইজরায়েলকে সমর্থন করে এই দুটি যুদ্ধের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে, এমনকি ব্যাপক অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার মূল্যেও। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিক্রিয়া সংক্ষিপ্ত এবং তা ভারতের বিদেশ নীতির অন্তর্নিহিত নীতি-কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারত দীর্ঘ যুদ্ধের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকেনি, এবং নিরপরাধ মানুষের জন্য তা যে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে চলেছে তা তুলে ধরেছে। পশ্চিমীদের সমালোচনার মুখেও উভয় পক্ষের সঙ্গে অব্যাহত সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ভারত একটি কৌশলগত ভারসাম্যও বজায় রেখেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিকে পশ্চিম ভারত মহাসাগরের অবস্থা
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিন যখন উদ্বেগের একটি সাধারণ কারণ হিসাবে রয়ে গিয়েছে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বেজিংয়ের সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার (অ)সম্পৃক্ততা অনুসরণ করছে। এই পদ্ধতিটি প্রাথমিকভাবে উভয় শক্তির কৌশলগত উদ্দেশ্য ও বাধ্যবাধকতা দ্বারা চালিত। যাই হোক, বিচ্যুতির আরও উল্লেখযোগ্য ও মৌলিক ক্ষেত্রগুলি একটি স্থায়ী ছাপ ফেলেছে, যা গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগের যোগ্য। এটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মানচিত্রায়নের সীমানাগত পরিসর অনুসরণ করে, তার সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ভূগোল আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত সামুদ্রিক বিস্তারকে অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক বিস্তৃতি — যেভাবে তা ইন্দো প্যাসম (INDO PACOM)-এর ভৌগোলিক রূপের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে — প্রযুক্তিগতভাবে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত জড়িত। এ থেকে বোঝা যায় পশ্চিম ভারত মহাসাগর (ডাবলুআইও) ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক ধাঁধার অনুপস্থিত অংশ। যদিও ওয়াশিংটন অতীতে তার ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ডাবলুআইও-র প্রতি গুরুত্ব স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছে, তবুও দেশটি এই অঞ্চলের সক্রিয় খেলোয়াড় বলে মনে হয় না। এই অঞ্চলে জলদস্যুতা ফিরে আসার পর পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে আফ্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনশীলতা হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে। মহাদেশে চিনের প্রবেশের কারণে এটি আরও গতি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ডাবলুআইও আফ্রিকা মহাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিকের সঙ্গে সেতু করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বিস্তৃতি হিসাবে থেকে গিয়েছে।
ভারতের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ভূগোল আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত সামুদ্রিক বিস্তারকে অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক বিস্তৃতি — যেভাবে তা ইন্দো প্যাসম (INDO PACOM)-এর ভৌগোলিক রূপের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে — প্রযুক্তিগতভাবে আমেরিকার পশ্চিম উপকূল থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত জড়িত।
বিদ্যমান কৌশলগত শূন্যতা পূরণ করতে ডাবলুআইও অঞ্চলের উপর সুনির্দিষ্ট ফোকাস রেখে ভারত মহাসাগরে তাদের সম্পর্ক জোরদার করা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য ডাবলুআইও-এর গুরুত্ব বাড়িয়ে বলা সম্ভব নয়, কারণ এই অঞ্চলে এর মূল সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্বার্থ রয়েছে। এটি মার্কিন-ভারত সহযোগিতার জন্য অপরিসীম সুযোগ-সহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূগোল হিসাবে থেকে গিয়েছে, বিশেষ করে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সমুদ্র শাসন, গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে। জলদস্যুতার উত্থান, এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মূল সি লাইন অফ কমিউনিকেশন (স্লক)-এর ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব, এবং আফ্রিকায় চিনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। অতএব, এই উপ-ভূগোলের একটি পুনর্বিন্যাস নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগেরও যোগ্য। তবে, এই অঞ্চলের মানচিত্রায়নের পরিসরগত ভিন্নতা সত্ত্বেও, ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে দুই দেশের মধ্যে অবিরত সমন্বয় নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের পরিপক্বতা প্রদর্শন করে।
ডাবলুআইও ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি সাধারণ কৌশলগত ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এই অঞ্চলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ফোকাসকে পশ্চিম দিকে স্থানান্তরিত করার সম্ভাবনা রাখে। একটি শক্তিশালী ডাবলুআইও-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যতিরেকে ইন্দো-প্যাসিফিকের পূর্ব দিকের প্রভাবগুলি তীব্রতর হতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিভিন্ন পুনরাবৃত্তির দ্বারা কাঙ্খিত লাভগুলিকে বাতিল করে দেয় — যেমন পিভট-টু-এশিয়া, রিব্যালান্স, এবং বর্তমান ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল। অভিন্ন আঞ্চলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডাবলুআইও-তে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে প্রস্তুত। দুই পক্ষের মধ্যে চারটি মৌলিক চুক্তি, আইএফসি-আইওআর-এর মাধ্যমে রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদান, কোয়াডের মতো বহুপাক্ষিক কাঠামো, এবং ফ্রান্সের মতো সমমনস্ক অঞ্চল-বহির্ভূত অংশীদারদের উপস্থিতি ডাবলুআইও-কে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তুলেছে যার সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে এখনও উপলব্ধ নয়।
এর অবস্থান এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থায় গতিশীলতা পরিবর্তনের দৌলতে ডাবলুআইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সঙ্গে ভারত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, যারা আইটিইউটু ও আইএমইইসি-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিককে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছে, ডাবলুআইও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করতে ধাঁধার অনুপস্থিত অংশ হতে পারে।
সায়ন্তন হালদার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী।
বিবেক মিশ্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.