Published on Mar 09, 2024 Updated 0 Hours ago

এইউ-এর জি২০ সদস্যপদ মহাদেশটির জন্য অনেক সুযোগের দরজা খুলে দিলেও সে সব আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মহাদেশটির অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষমতার উপর

শুভ সূচনার অর্থ অর্ধেক সাফল্য— এইউ-এর জি২০ যাত্রার পরবর্তী পর্যায় কী ?

জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসাবে আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) অন্তর্ভুক্তি ছিল ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। চিরাচরিত আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক আলোচনায় প্রান্তিক হয়ে থাকা এক মহাদেশের জন্য জি২০-তে পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া অবশ্যই একটি স্বাগত উন্নয়ন। অন্য দিকে, এইউ-এর প্রবেশ জি২০-কে একটি অভিজাত মঞ্চ থেকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক মঞ্চে রূপান্তরিত করেছে এবং গোষ্ঠীটির বৈধতাকে উন্নত করেছে, যা এখন বহুপাক্ষিকতার আরও কার্যকর উপকরণ হয়ে উঠতে পারে। এইউ কমিশনের চেয়ারপার্সন মুসা ফাকি মাহামতের মতো বেশির ভাগ আফ্রিকান নেতা মনে করেন যে, জি২০-তে এইউ-এর অন্তর্ভুক্তি আসলে আফ্রিকার হয়ে ওকালতি করার কাজটিকে সহজ করবে এবং আফ্রিকাকে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে সাহায্য করবে।

 

জি২০-তে এইউ-এর অন্তর্ভুক্তি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসাবেই রয়ে যাবে, যদি না তা আফ্রিকার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে, নিজস্ব আখ্যান উপস্থাপন করতে পারে এবং মহাদেশের উন্নয়নের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান, অ্যাজেন্ডা ২০৬৩ উপলব্ধি করতে মঞ্চটি ব্যবহার করতে পারে।

 

যাই হোক, শীর্ষ আলোচনায় একটি আসন প্রাপ্তি কি স্বয়ংক্রিয় ভাবে একটি পরোক্ষ প্রাপক দেশকে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তকে আকার দেওয়ার নিরিখে আফ্রিকার অবস্থার পরিবর্তনকেও সুনিশ্চিত করবে? জি২০ মঞ্চটি ডেট সার্ভিসেস সাসপেনশন ইনিশিয়েটিভ (ডিএসএসআই) এবং কমন ফ্রেমওয়ার্কের (এমন একটি উদ্যোগ যা আফ্রিকার দেশগুলির মূল্যে ঋণদাতা দেশগুলিকে সমর্থন করে) মতো বিষয়ে আফ্রিকা দেশগুলির তরফে কোনও ইনপুট ছাড়াই এখনও পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা হলে আফ্রিকাকেও কি অবিলম্বে জি২০-অন্যান্য শক্তিশালী দেশ সমান অংশীদার বলে মনে করবে? এর উত্তর হল, না। অতএব, উত্তেজনা দ্‌যাপনের প্রাথমিক পর্যায়টি অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখন জি২০-তে এইউ-এর কার্যকর সদস্যপদের মাধ্যমে আফ্রিকা কী ভাবে আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজের প্রান্তিক অবস্থান থেকে মূল কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে, তা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। জি২০-তে এইউ-এর অন্তর্ভুক্তি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসাবেই রয়ে যাবে, যদি না তা আফ্রিকার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে, নিজস্ব আখ্যান উপস্থাপন করতে পারে এবং মহাদেশের উন্নয়নের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা বা মাস্টারপ্ল্যান, অ্যাজেন্ডা ২০৬৩ উপলব্ধি করতে মঞ্চটি ব্যবহার করতে পারে। যাই হোক এ কথা স্পষ্ট যে, এইউ-এর সামনে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

এইউ-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর (ইইউ) মতো একই মর্যাদা দেওয়া হলেও দুটি প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যা বিষয়গুলিকে আরও জটিল করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইইউ-র বিপরীতে দাঁড়িয়ে এইউ একটি অতি-জাতীয় সংস্থা নয় এবং আর্থিক স্তরে আফ্রিকা আঞ্চলিক সহযোগিতা বেশ দুর্বল। অতএব, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির বিপরীতে এইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলি এইউ-এর কাছে কম ক্ষমতা প্রদান করে এবং টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপগুলিতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকগুলি যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতাময় হবে। প্রথম চ্যালেঞ্জটি হল প্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত উদ্বেগ এইউ-এর সামনে যে দুটি তাত্ক্ষণিক প্রশ্ন উঠে আসে, তা হল অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের বৈঠকে এইউ-এর প্রতিনিধিত্ব কার করা উচিত এবং কী ভাবে শেরপা ট্র্যাকে যথাযথ সম্পৃক্ততা সুনিশ্চিত করা সম্ভব। নীতি বিশ্লেষক আইভরি কাইরোর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের বৈঠকে এইউ কমিশনের বাণিজ্য ও শিল্প কমিশনার এবং এইউ সভাপতিত্ব থেকে অর্থমন্ত্রীর এইউ-এর প্রতিনিধিত্ব করা উচিত। এর পাশাপাশি এইউ সভাপতি বা আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাঙ্কের প্রধান অথবা আফ্রেক্সিম ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিত্ব করা উচিত। অন্য দিকে, খাদ্য ব্যবস্থার জন্য আফ্রিকান ইউনিয়নের বিশেষ দূত ইব্রাহিম মায়াকি এবং আফ্রিক্যাটালিস্ট-এর ব্যবস্থাপ অংশীদার বা ম্যানেজিং পার্টনার দাউদা সেমেবেনের মতো বিশেষজ্ঞ একজন বিশেষ দূত নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি এইউ চেয়ার অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরের সঙ্গে কাজ করবেন।

 

এইউ-এর সামনে যে দুটি তাত্ক্ষণিক প্রশ্ন উঠে আসে, তা হল অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের বৈঠকে এইউ-এর প্রতিনিধিত্ব কার করা উচিত এবং কী ভাবে শেরপা ট্র্যাকে যথাযথ সম্পৃক্ততা সুনিশ্চিত করা সম্ভব

 

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, ব্রিটেন (ইউকে), জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু শক্তিশালী জি২০ সদস্য রাষ্ট্র আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বৃহত্তম অংশীদার হওয়ার দরুন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নয়আফ্রেক্সিম ব্যাঙ্কের প্রধান সম্ভবত জি২০-তে এইউ-এর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আরও উপযুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়াও, ইইউ সভাপতির বিপরীতে এইউ চেয়ারকে তাঁর নিজের দেশ পরিচালনা করতে হবে। তাই মায়াকি এবং সেমেবেনের বিশেষ দূত নিয়োগের পরামর্শ উপযুক্ত বলে মনে হয়।

শেরপা নিয়োগের বিষয়ে এইউ কমিশনের বাণিজ্য ও শিল্প কমিশনার এবং এইউ চেয়ারের বিদেশমন্ত্রী/কূটনৈতিক উপদেষ্টা বা এইউ কমিশনের চেয়ারপার্সন দ্বারা নিযুক্ত এক জন বিশেষ দূতের প্রেক্ষিতে কায়রোর পরামর্শ যথাযথ। শেরপা ট্র্যাকে কার্যকর অংশীদারিত্বের জন্য কৃষি, গ্রামীণ উন্নয়ন, নীল অর্থনীতি ও স্থিতিশীল পরিবেশ (এআরবিই) অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পর্যটন, বাণিজ্য, শিল্প, খনির (ইটিটিআইএম) অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন-এর (ইএসটিআই) মতো এইউ-এর বিদ্যমান বিভাগগুলিকে পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগানো উচিত।

দ্বিতীয়ত, এইউ সম্ভবত প্রধান বিষয়গুলিতে সাধারণ অবস্থানগুলি বিকাশের জন্য সংগ্রাম করবে কারণ এখন পর্যন্ত এইউ-এর মধ্যে সাধারণ অবস্থানগুলি বিকাশ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। পামলা গোপলের মতো বিশেষজ্ঞদের মতে, আফ্রিকা দেশগুলির বৈচিত্র্যময় ঔপনিবেশিক ও ঐতিহাসিক জোট পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে। এ ভাবে, এইউ-কে প্রধান সমস্যা সম্পর্কে অভিন্ন সাধারণ অবস্থান গড়ে তোলার জন্য যত্নসহ কৌশল নির্মাণ করতে হবে, যাতে আফ্রিকা উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় আসন পাওয়ার সম্ভাব্য সুবিধার সম্পূর্ণ লাভ তুলতে পারে।

তৃতীয়ত, আলোচনার অবস্থানে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও এইউ-এর জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে প্রমাণিত হবে কারণ এইউ চেয়ার প্রতি বছর বদলাতে থাকে। কিন্তু ইউ কাউন্সিলের সভাপতির মেয়াদ থাকে আড়াই বছর। সর্বোপরি, আগেও যেমনটা বলা হয়েছে, এইউ চেয়ারকে অবশ্যই তাঁর নিজের দেশকে শাসন করতে হবে। আফ্রিকা অনেক ছোট দেশগুলির জন্য, যাদের দ্বৈত চাপ সামলানোর জন্য কার্যকর আমলাতন্ত্র নেই, তাদের জন্য এই কাজ যথেষ্ট কঠিন হবে।

 

গ্লোবাল সাউথের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি আফ্রিকার সঙ্গে তাসময়োচিত অংশীদারিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত এবং এইউ-এর উচিত আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামোর সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং শিক্ষা ও দক্ষতার মতো অভিন্ন সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

 

পরিশেষে, বর্তমানে এইউ চেয়ারের পূর্ণ সদস্য হিসেবে কার্যকর ভাবে অবদান রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব রয়েছে। এখানেই অন্যান্য জি২০ দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গঠনে এইউ-এর কার্যকারিতা, বিশেষ করে ভারতের মতো গ্লোবাল সাউথ থেকে, কার্যকর হবে জি২০-এর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে এবং জি২০ সদস্যপদ সবচেয়ে বেশি করে কাজে লাগানোর জন্য এইউ-এর উচিত গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করা। গ্লোবাল সাউথের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি আফ্রিকার সঙ্গে তাসময়োচিত অংশীদারিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত এবং এইউ-এর উচিত আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামোর সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং শিক্ষা ও দক্ষতার মতো অভিন্ন সাধারণ স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

সংক্ষেপে বললে, এইউ-এর সদস্যপদ মহাদেশকে অনেক কিছু প্রদান করলেও তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা এবং ভারত-সহ গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষমতার উপর। এইউ কি এই কাজের জন্য প্রস্তুত? তার উত্তর সময় দেবে

 


মালঞ্চ চক্রবর্তী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর (গবেষণা) এবং সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Malancha Chakrabarty

Malancha Chakrabarty

Dr Malancha Chakrabarty is Senior Fellow and Deputy Director (Research) at the Observer Research Foundation where she coordinates the research centre Centre for New Economic ...

Read More +