Published on Sep 25, 2021 Updated 0 Hours ago

যাঁরা ভবিষ্যতের অতি–গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, সেই ভারতীয় যুবসমাজের ধারণা সরকারের পুবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা বা বিমস্টেক–এর মতো প্রতিষ্ঠান জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ভারতীয় যুব সমাজের চোখে প্রতিবেশী দেশগুলির গুরুত্ব

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি ভারতের জন্য একই সঙ্গে উদ্বেগের কারণ ও বন্ধুত্বের দিশারী হয়ে উঠেছে। সামগ্রিক ভাবে দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র সংক্রান্ত নীতিও তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পরস্পরবিরোধিতায় ভরা, যার মধ্যে এক দিকে যেমন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক আছে, তেমনই অন্য দিকে আছে পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও আঞ্চলিক মঞ্চগুলিকে জোরদার করার মতো বিষয়গুলি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবেশীদের, অর্থাৎ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নীতিপ্রণেতা মহলে ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে চর্চার বিষয়। এর ফলে চ্যালেঞ্জগুলির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের থেকে সুচিন্তিত পরামর্শ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা সাধারণ মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না, যে মনোভাব তৈরি করছে সংবাদমাধ্যম, শোনা কথা ও স্মৃতি। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের কিন্তু নিজের দেশের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে মানুষ কী ভাবছেন তা জানা দরকার।

প্রতিবেশীদের, অর্থাৎ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নীতিপ্রণেতা মহলে ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে চর্চার বিষয়।

ওআরএফ–এর ‘‌‌বিদেশনীতি সমীক্ষা’‌য় একটা পুরো অধ্যায় রাখা হয়েছে ‘‌ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলি’‌ সম্পর্কে ভারতের শহুরে যুবসমাজের মনোভাব কী তা বোঝার জন্য। তা থেকে অত্যন্ত সহজে অনুমেয় এবং অনুমান করা যায় না এমন অনেক বিভাজনরেখা ধরা পড়েছে, যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন। মতদাতাদের ধারণা সম্যক বোঝার জন্য তাঁদের বলা হয়েছিল দায়িত্বশীল ব্যবহারের নিরিখে উপরে উল্লিখিত দেশগুলির উপর তাঁদের ভরসা কতটা, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন, এবং পারস্পরিক যোগাযোগ গত পাঁচ বছরে বেড়েছে কি না তা জানাতে। তাঁরা কোন দেশ সম্পর্কে কতটা আশাবাদী তার ভিত্তিতে দেশগুলির তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় কোন দেশ মানুষের চোখে ভাল জায়গায় আছে এবং কোন দেশ নেই।

কৌশলগত সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা চিনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ও হামবানটোটা বন্দর চিনকে লিজ দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও দেখা যাচ্ছে শ্রীলঙ্কাই উঠে এসেছে সবচেয়ে অনুকূল মনোভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে। এই সদর্থক মনোভাবের কারণ পূর্ব–পশ্চিম বাণিজ্যপথে পণ্যসামগ্রীর জাহাজ–বদলের কেন্দ্র হিসেবে ও একটি বিকাশশীল বাজার অর্থনীতি হিসেবে দেশটির গুরুত্ব, এবং তার সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প। অবশ্য এই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতিও আছে। যেমন তামিলনাড়ুর মতদাতারা এই বিষয়ে সন্দিহান। তার কারণ শ্রীলঙ্কার লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (‌এলটিটিই)‌‌–এর সঙ্গে জাতিগত বিবাদ এবং বঙ্গোপসাগরে ও পক প্রণালীতে সীমালঙ্ঘন নিয়ে জেলেদের সমস্যা

একই ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গত বছরটি সবচেয়ে অস্থিরতার বছর হওয়া সত্ত্বেও সমীক্ষায় নেপাল সার্বিক ভাবে সন্তোষজনক জায়গায় উঠে এসেছে। ২০২০–র সীমান্ত বিবাদ ও রাজনৈতিক মানচিত্র নিয়ে গোলযোগ ২০১৫ সালে নেপালে অর্থনৈতিক অবরোধের স্মৃতি উস্কে দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য ও যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা সত্ত্বেও সেই সময় যা মানবিক সঙ্কট হিসেবে বর্ণিত হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে নেপালে ভিতরে ভিতরে ভারতবিরোধী মনোভাব এখনও রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে সেই সব খবর ভাল ভাবে এলেও ভারতের যুবসমাজ মনে হয় সেগুলো উপেক্ষা করার পক্ষপাতী। হয়তো এর কারণ দু’‌দেশের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে মানুষের অবাধ চলাচল, এবং পর্যটনের জন্য নেপালের আকর্ষণ, যা দেশটির মুখচ্ছবি সদর্থক করে তুলেছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গত বছরটি সবচেয়ে অস্থিরতার বছর হওয়া সত্ত্বেও সমীক্ষায় নেপাল সার্বিক ভাবে সন্তোষজনক জায়গায় উঠে এসেছে।

ভুটান ও মালদ্বীপের ক্ষেত্রে সমীক্ষায় প্রাপ্ত জনমতের মধ্যে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। এই দেশগুলির ভৌগোলিক আয়তন ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এদের খবর কম আসে, এবং যা আসে তার বেশিটাই অভিন্ন বিপদ সংক্রান্ত। যেমন ২০১৭ সালে উভয়ের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে হওয়ায় ভারত চিনের সড়ক নির্মাণকারী দলকে আটকে দেওয়ার ফলে যখন তিন দেশের সীমান্তে ডোকলাম সঙ্কট তৈরি হল, তখন ভুটান নিয়ে অনেক খবর বেরোল। তবে অস্পষ্টতার মধ্যে কিছু সদর্থক দিকও আছে, কারণ দুই দেশের মধ্যে সব সময়ই বন্ধুত্বের পরিবেশ থাকায় ভুটান পর্যটনের প্রিয় জায়গা। মালদ্বীপও ভারতীয়দের প্রিয় বেড়াতে যাওয়ার জায়গা, যার জন্য কোভিড–পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নতির গতি ফিরে পেতে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও যোগাযোগ প্রকল্পে ভারত তাদের সহায়তা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমীক্ষার ফল খুবই অপ্রত্যাশিত। নীতি–প্রণেতা মহলে এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার ‘‌মডেল’‌ অংশীদারিত্ব’ হিসেবে গণ্য হলেও সাধারণ মানুষের ধারণা তেমন নয়। উচ্ছ্বাস তো নেইই, বরং মনোভাব নিরপেক্ষ। এর কারণ হতে পারে দু’‌দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নগত সহযোগিতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে তেমন খবর না–আসা। তবে অসম বাদে বাকি দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা আস্থার মনোভাব আছে। বাংলাদেশ সীমান্তের ওই রাজ্যটিতে সে দেশ থেকে মাঝে মাঝেই বেআইনি ভাবে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা ঢোকেন বলেই এই সংশয়ের মনোভাব। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও বাংলাদেশ থেকে এসে বেআইনি ভাবে অসমে বসবাসকারী মানুষদের চিহ্নিত করার জন্য জাতীয় নাগরিকপঞ্জি

বাংলাদেশের মতোই আফগানিস্তান নিয়ে নিরপেক্ষ মনোভাব থাকার কারণ ‌সমীক্ষার সময় বিবাদের পরিবেশ না–থাকা এবং দু’‌দেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্ক ও একটা সহানুভূতির মনোভাব। আফগানিস্তানের সঙ্গে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের বড় রকমের সহায়তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি খবর বেরোলে হয়তো আরও সদর্থক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত। মতদাতাদের অনেকেই বলেছেন তাঁরা এ সম্পর্কে অবহিত নন।

মালদ্বীপও ভারতীয়দের প্রিয় বেড়াতে যাওয়ার জায়গা, যার জন্য কোভিড–পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নতির গতি ফিরে পেতে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও যোগাযোগ প্রকল্পে ভারত তাদের সহায়তা দিচ্ছে।

এই কাহিনিটা পুরোপুরি অন্য রকম পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যদিও তা প্রত্যাশিত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অতীতের শত্রুতার কারণে ক্লিষ্ট;‌ সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও জনমত পরিবর্তনের পক্ষে সহায়ক নয়। ফলে এই দেশটির দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে মানুষের আস্থা নেই, আর সেই নিরিখে মাপকাঠিতে শ্রীলঙ্কার একদম বিপরীত অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের জইশ–এ–মহম্মদের ২০১৬ সালের উরি আক্রমণ এবং ২০১৯–এ পুলওয়ামা আক্রমণের মতো বারংবার সন্ত্রাসবাদী হানা, যার জবাব দিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, সে সব বারবার সংবাদমাধ্যমে হেডলাইন হয়েছে, এমনকী তা নিয়ে চলচ্চিত্রও হয়েছে। কাজেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্কের কথা বিশেষ কারও অজানা নেই, আর অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবসান ঘটানোর পর।

উপরের পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় দেশের শহুরে যুবাদের সদর্থক মনোভাব বেশি করে আছে পুবের প্রতিবেশীদের সম্পর্কে, আর তা এই অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে ভারত সরকারের প্রয়াসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সমীক্ষার পরের আরও কিছু ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই ধারণা আরও জোরদার হয়েছে, বিশেষ করে কোভিড–১৯–এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ভ্যাকসিন কূটনীতির মধ্যে দিয়ে। কাজেই যাঁরা ভবিষ্যতের অতি–গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, সেই ভারতীয় যুবসমাজের ধারণা সরকারের পুবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা বা বিমস্টেক–এর মতো প্রতিষ্ঠান জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে জনমত আরও সমৃদ্ধ করার জন্য সংবাদমাধ্যমে আরও সদর্থক সংবাদ প্রকাশ প্রয়োজন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Sohini Bose

Sohini Bose

Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...

Read More +
Sohini Nayak

Sohini Nayak

Sohini Nayak was a Junior Fellow at Observer Research Foundation. Presently she is working on Nepal-India and Bhutan-India bilateral relations along with sub regionalism and ...

Read More +