Author : Debosmita Sarkar

Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

আক্ষরিক অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর সুনিশ্চিত করার জন্য জল কর্মসূচি প্রকল্পকে লিঙ্গ সংবেদনশীল করা অত্যন্ত জরুরি

জল-দরিদ্র ও সময়-দরিদ্র সমতুল্য: জল কর্মসূচি প্রকল্পে লিঙ্গের ভূমিকা

ব্যক্তিস্বাস্থ্য এবং কল্যাণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদগুলির মধ্যে অন্যতম জল সর্বজনীন নির্বাহে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সকলের জন্য বিশুদ্ধ ও পরিস্রুত জলের লভ্যতা একটি মৌলিক অধিকার এবং সকলের জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সালের কর্মসূচির আওতায় এসডিজি ৬-এর (ক্লিন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন) লক্ষ্য হল ‘সকলের জন্য জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার লভ্যতা এবং স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনাকে সুনিশ্চিত করা।’ এই লক্ষ্যের অধীনে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের জন্য পরিস্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিষয়ে এখনও পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করা পরিবর্তনের গতিতে চার গুণ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

২০২৩ সালের বিশ্ব জল দিবস (২২ মার্চ) প্রধানত ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) জল সঙ্কট প্রশমনকে ত্বরান্বিত করার জন্য সমাধানগুলি খোঁজার উদ্দেশ্যে মূল অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার উপর নজর দিচ্ছে। সহযোগিতা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, উন্নয়ন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য জলের লভ্যতা সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০২৩ সালের জল সম্মেলনে জল কর্মসূচি প্রকল্প চালু করা হবে। আক্ষরিক অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর সুনিশ্চিত করার জন্য জল কর্মসূচি প্রকল্পকে লিঙ্গ সংবেদনশীল করা অত্যন্ত জরুরি। এসডিজি ৬-এর অধীনে ৬.২-এর লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে ‘সকলের জন্য পর্যাপ্ত এবং ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধির সুযোগ অর্জন করা এবং উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অবসান ঘটানো, নারী, মেয়ে এবং অরক্ষিতদের চাহিদার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া।’ তবে সর্বাঙ্গীন উদ্দেশ্যে জলের সুবিধে ভোগ করার ব্যাপারে কোনও লিঙ্গনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই৷ জলের সীমিত লভ্যতার দরুন নারীরা যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হন, সেগুলির উপর এবং তা মোকাবিলা করতে সক্ষম এমন কৌশলগুলির উপর এই নিবন্ধটি ‘লিঙ্গ-জলের লভ্যতা-সময়ের দারিদ্র’ বিষয়টির প্রতি মনোনিবেশ করবে।

সহযোগিতা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, উন্নয়ন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য জলের লভ্যতা সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০২৩ সালের জল সম্মেলনে জল কর্মসূচি প্রকল্প চালু করা হবে।

জলের লভ্যতা এবং সময় দারিদ্র্য: একটি লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিকোণ

বিশেষ করে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলিতে বসবাসকারী বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়গুলি জলের লভ্যতা, গুণমান এবং ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন, যা অসমানুপাতিকভাবে মহিলা এবং মেয়েদের প্রভাবিত করে। জল এবং স্বাস্থ্যবিধির সীমিত লভ্যতা সরাসরি পুষ্টির নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণকে প্রভাবিত করে এবং বিশেষ করে জনপরিসরে নারী ও মেয়েদের হিংসাত্মক হয়রানির ঝুঁকিতে ফেলে। এর সামাজিক প্রভাব ছাড়াও নারীদের অর্থনৈতিক স্থান সীমিত করার ক্ষেত্রে জলের লভ্যতার সীমাবদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলের সীমিত লভ্যতা নারীদের জন্য সময়ের সুযোগ সংক্রান্ত ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে। এর কারণ হল, যখন নারীরা জল সংগ্রহের জন্য উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করেন, তখন তাঁদের কাছে শিক্ষা বা বেতনভুক্ত কাজের মতো অন্যান্য কাজের জন্য কম সময় থাকে। এর ফলস্বরূপ, নারীদের প্রায়শই এমন সুযোগগুলি হাতছাড়া করতে হয় যা তাঁদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে পারত।

ইউএন উইমেনের মতে, জল-দরিদ্র পরিবারের ৮০ শতাংশ জুড়ে নারী ও মেয়েরা জল সংগ্রহের কাজ করেন। এটি শুধুমাত্র তাঁদের শারীরিক সক্ষমতার কাজই নয়, বরং এটি সময়সাপেক্ষ এবং তাঁদের শিক্ষা বা অন্য জীবিকার সুযোগগুলি অনুসরণ করতে বাধা দেয়। সামাজিক নিয়ম এবং চিরাচরিত লিঙ্গ ভূমিকা এখানে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। দায়িত্বটি প্রায়শই নারী এবং মেয়েদের উপর বর্তায়। কারণ পরিবারের রুজি-রুটি উপার্জনকারী হিসাবে পুরুষদের ভূমিকাকে নারীদের জীবিকা নির্বাহের কার্যক্রম এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য দায়িত্বের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলস্বরূপ, নারী এবং মেয়েদের প্রায়শই জল সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয় এবং সম্ভবত দিনে একাধিক বার। শারীরিক বোঝা হওয়ার পাশাপাশি জল সংগ্রহের কাজটি নারীদের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সুযোগকে সরাসরি প্রভাবিত করে এবং তাঁদের সময়-দরিদ্র করে তোলে।

শিক্ষা বা অর্থনৈতিক জীবনে সীমিত অংশগ্রহণ পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যকে স্থায়ী করতে পারে, যা উল্লেখযোগ্য ভাবে সামগ্রিক সামাজিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে। হিসেব দর্শিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী নারী ও মেয়েরা প্রতি দিনে গড়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘণ্টা জল সংগ্রহের জন্য ব্যয় করেন, যা তাঁদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে সীমাবদ্ধ করে তাঁদের চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করার সম্ভাবনাকে আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে তোলে।

দায়িত্বটি প্রায়শই নারী এবং মেয়েদের উপর বর্তায়। কারণ পরিবারের রুজি-রুটি উপার্জনকারী হিসাবে পুরুষদের ভূমিকাকে নারীদের জীবিকা নির্বাহের কার্যক্রম এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য দায়িত্বের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

পরিচর্যা কার্যক্রম এবং অবৈতনিক গৃহকর্ম-সহ বিভিন্ন কারণে নারীরা সময়-দরিদ্র থাকেন। এ ক্ষেত্রে সীমিত জলের লভ্যতা একটি প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। জল কর্মসূচি প্রকল্পে লিঙ্গ বিবেচনাকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করলে তা নারীদের সময়ের দারিদ্র্য মোকাবিলা এবং তাঁদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থানকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হতে পারে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবার, সম্প্রদায় এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজের উপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুদের পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় নারীদের বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা বেশি। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন নারীরাও সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নাগরিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি, যাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত সামাজিক ফলাফল সুনিশ্চিত করা যায়।

লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি

লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল নীতি ও কর্মসূচির মাধ্যমে জল, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার লভ্যতা সম্পর্কিত নারী এবং মেয়েদের সম্মুখীন নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় রাষ্ট্রপুঞ্জের জল কর্মসূচি প্রকল্পের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতাকে উন্নীত করতে সহায়তা করতে পারে। ইথিওপিয়ায় ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ফর হেলথ (ওয়াশ) কর্মসূচি, নেপালে নারী নেতৃত্বাধীন জল সরবরাহ স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কর্মসূচি, মালাউইতে কমিউনিটি চালিত টোটাল স্যানিটেশন কর্মসূচি, ভারতে ওয়াশ ইউনাইটেড ইনিশিয়েটিভ, পশ্চিম আফ্রিকায় জিআইজেড আঞ্চলিক ওয়াশ প্রোগ্রামের মতো বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি এবং প্রশান্ত মহাসাগরে ওয়াটার ফর উইমেন ফান্ড গৃহীত হয়েছে দেশ এবং অঞ্চল জুড়ে নারীদের ওয়াশ পরিষেবাগুলিতে লভ্যতা নিশ্চিত করতে এবং জলনীতি প্রণয়নে তাঁদের অংশগ্রহণকে সক্ষম করে তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতায় অবদান রাখতে।

অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নাগরিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি, যাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত সামাজিক ফলাফল সুনিশ্চিত করা যায়।

এই কর্মসূচিগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০২৩ সালের সম্মেলনের গৃহীত জল কর্মসূচি প্রকল্পে একাধিক কৌশলের সূচনা করা যেতে পারে, যেটি লিঙ্গ, জলের লভ্যতা এবং সময় দারিদ্র্যের অভিন্ন সাধারণ সমস্যাগুলির মোকাবিলা করবে। প্রথমত, লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল ওয়াশ পরিকাঠামোয় বিনিয়োগগুলিকে একত্র করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, যা পরিবারের কাছাকাছি অবস্থিত মহিলাদের নির্দিষ্ট চাহিদাগুলিকে পূরণ করে৷ দ্বিতীয়ত, পারিবারিক বা সম্প্রদায় পর্যায়ে দক্ষ জল ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ সরাসরি দূরবর্তী উৎস থেকে জল সংগ্রহের পরিমাণ কমাতে পারে এবং সময়ের দারিদ্র্য হ্রাস করে। তৃতীয়ত, জলের লভ্যতা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে নারীদের ভূমিকাকে তাঁদের সামাজিক সংস্থা নিশ্চিত করতে এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলির সমাধানে উপযুক্ত কৌশল প্রণয়নের জন্য প্রচার করতে হবে। চতুর্থত, সম্প্রদায়ভিত্তিক শিক্ষা এবং সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতি ও চিরাচরিত লিঙ্গ মনোভাব মোকাবিলা করা সমস্ত পরিবারের সদস্যদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততা এবং নারীদের সময়ের দারিদ্র্য মোকাবিলায় দায়িত্ব ভাগ করতে সাহায্য করতে পারে। পঞ্চমত, লিঙ্গ-বিচ্ছিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ জলের লভ্যতা ও নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নির্দেশিকা সম্পর্কিত নারীদের প্রয়োজনীয়তা ও অগ্রাধিকারগুলি শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। সর্বোপরি, সরকার, নাগরিক সমাজ সংস্থা ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে ব্যাপক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, জ্ঞান ও দক্ষতা ভাগ করে নেওয়া এবং রূপান্তরমূলক ফলাফলের জন্য দক্ষ সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে ওয়াটার প্রকল্প কর্মসূচির মধ্যে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তি জোরদার করতে সাহায্য করতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.