যুদ্ধের লিঙ্গগত মূল্য: ইউক্রেনের নারীদের কাহিনি
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অক্টোবরের শেষের দিকে অষ্টম মাসে পড়লেও এই লড়াই শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ইউক্রেনের উপর এই যুদ্ধের পরিণতি ভয়ঙ্কর হয়েছে, এবং নারী ও মেয়েরা এর অসামঞ্জস্যপূর্ণ বোঝা বহন করছেন। সংঘর্ষটি লিঙ্গবৈষম্য, যা ইতিমধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনে আট বছরের সশস্ত্র সংঘাত ও ২০২০ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া কোভিড–১৯ অতিমারির কারণে জটিল হয়েছিল, তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই প্রতিবেদনটি ইউক্রেনের নারীদের উপর সংঘাতের ব্যাপক পরিণতি নিয়ে লেখালিখির ফাঁক পূরণ করতে চায়।
আরোপণ: আকাঙ্ক্ষা খুল্লার, ‘ওয়র’স জেন্ডারড কস্টস: দ্য স্টোরি অফ ইউক্রেন’স উইমেন,’ ওআরএফ বিশেষ প্রতিবেদন নং ১৯৯, নভেম্বর ২০২২, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
ভূমিকা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২–এ রাশিয়া ইউক্রেনে একটি পূর্ণমাত্রার সামরিক আক্রমণ শুরু করে। তারপর থেকে ৬,১১৪ জন অসামরিক মানুষ নিহত এবং ৯,১৩২ জন আহত হয়েছেন,[১] এবং হাসপাতাল, স্কুল ও আবাসিক বাড়ি সহ পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, আর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি রুশ সৈন্যদের যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন করে নির্বিচার আক্রমণের জন্য অভিযুক্ত করেছে।[২] যুদ্ধের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিদেশ সহ অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০২২ সালের মার্চ মাসে নারীদের ধর্ষণ, অসামরিক ব্যক্তিদের মৃত্যু এবং সমগ্র শহর ধ্বংসের রিপোর্টের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে [৩]। কিন্তু যেহেতু আইসিসি ক্রিমিয়া সংযুক্তিকে ‘দখলদারি’ বলে অভিহিত করার পর রাশিয়া ২০১৬ সালে[৪] তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল[৪], এবং আইসিসি–র সদস্য না হওয়ায় ইউক্রেন নিজে থেকে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের উল্লেখ করতে অক্ষম, তাই এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।[৫]
যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে নারী ও মেয়েদের উপর। রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের এই লিঙ্গগত দৃষ্টিভঙ্গিটি এখনও প্রাপ্য মনোযোগ পায়নি। এই বিশেষ প্রতিবেদনটি তাই রুশ আক্রমণের প্রথম আট মাস ইউক্রেনের নারী ও মেয়েদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা বোঝার একটি প্রয়াস। এতে ইউক্রেন সরকার, যারা মাটিতে কাজ করছে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সহায়তা সংস্থা, মিডিয়া কভারেজ এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদন সহ পরোক্ষ (সেকেন্ডারি) সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। লেখক লিঙ্গবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের, এবং সেই সঙ্গে যাঁরা অতীতে রাশিয়ার নৃশংসতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং এখন অন্যান্য দেশে বসবাস করছেন এমন ইউক্রেনীয়দের সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন।
ইউক্রেনে নারীর অধিকার: একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ইউক্রেন গত এক দশকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৩ সালের[৬] ময়দান বিপ্লবের পর থেকে, যা ‘মর্যাদার বিপ্লব’ নামেও পরিচিত, ইউক্রেনের নারীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্রমশ বেশি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
২০১৭ সালে ইউক্রেনীয় মহিলারা বিশ্বব্যাপী #মিটু আন্দোলনের প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন, যাকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন ‘আমি বলতে ভয় পাচ্ছি না’।[৭] এটি ছিল একটি প্রচারাভিযান যা ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও গার্হস্থ্য হিংসার বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল৷ প্রচারণা নারীদের একটি স্বর দিয়েছিল, এবং তাঁদের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। এটি একটি নতুন আইনের পথও প্রশস্ত করেছিল, যা পূর্বে দেওয়ানি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত গার্হস্থ্য হিংসাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করে, এবং সেই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, অপরাধীদের জন্য রেজিস্ট্রি ও হটলাইনের জন্য সংস্থান সরবরাহ করে। [৮]
এ ছাড়াও নানা তথ্য মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ধীর কিন্তু অবিচলিত বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে, যেমন ১৯৯০ সালে পার্লামেন্টের আসনের ৩ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ২০ শতাংশের বেশি হওয়া।[৯] ২০২০ সালের অক্টোবরে স্থানীয় নির্বাচনের পর গ্রাম পরিষদের ৪২ শতাংশে এবং আঞ্চলিক পরিষদের ২৮ শতাংশে নারীদের নেতৃত্ব রয়েছে,[১০] যার পিছনে আংশিকভাবে লিঙ্গভিত সংরক্ষণ এবং দেশের নির্বাচনী বিধিতে ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। স্থানীয় রাজনীতিতেও একই ধরন দেখা যায়: রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী হিসেবে মনোনীত নারীদের অনুপাত ১৩ শতাংশ এবং কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত মহিলাদের অনুপাত ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।[১১]
একই সময়ে ইউক্রেন লিঙ্গ সমতা সংক্রান্ত বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করেছে বা তাতে যোগ দিয়েছে।[ক] অধিকন্তু, নারীর নিরাপত্তা প্রচেষ্টাকে নির্দেশিত করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে ইউক্রেন একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা ২০১৬ সালের প্রথম দিকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ডব্লিউপিএস অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সমর্থন দিয়েছিল, এবং পরে এর উত্তরসূরিটিকে ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। [১২]
অগ্রগতি সত্ত্বেও লিঙ্গবৈষম্য থেকে গিয়েছে, এবং তা উদ্ভুত হচ্ছে নারী ও মেয়েদের প্রতি বৈষম্য ও পদ্ধতিগত পক্ষপাতের পালক পুরুষতান্ত্রিক প্রথাসিদ্ধ আচরণ থেকে। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনীয় নারীরা অর্থনৈতিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণে গুরুতর বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, এবং তা অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, দুর্বল স্বাস্থ্য এবং হিংস্রতার মুখে পড়ার ঝুঁকির কারণে আরও ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)–এর ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৭৫ শতাংশ ইউক্রেনীয় নারী ১৫ বছর বয়স থেকে কোনও–না–কোনও ধরনের হিংসার শিকার হয়েছেন, এবং প্রতি তিনজনের একজন যৌন হিংসার শিকার হয়েছেন।[১৩] মানসিকতার পরিবর্তন সত্ত্বেও নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হারও পুরুষের তুলনায় কম।[১৪] যাঁরা শ্রমশক্তির অংশ, তাঁরাও পুরুষ সমকক্ষদের তুলনায় ২২ শতাংশ বেতনের ব্যবধানের ভুক্তভোগী, আর পেনশনের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ ব্যবধানের।[১৫] অধিকন্তু, সমস্ত সামাজিক সহায়তা প্রাপকদের ৭২ শতাংশেরও বেশি নারী, এবং তাঁরা পরিবারে অবৈতনিক গার্হস্থ্য ও যত্নের কাজের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করেন।[১৬]
এই বৈষম্যগুলি ইউক্রেনের সামাজিক কাঠামোতে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল, এবং ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ইউক্রেনে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে তা আরও জটিল হয়েছে৷ দেশের পূর্ব অংশে বিগত আট বছরের সংঘাত শুধু যে পূর্ববিদ্যমান বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে তা নয়, সেই সঙ্গে নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করেছে এবং নারীদের ক্রমবর্ধমান যুদ্ধাপরাধের শিকারে পরিণত করেছে, বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক হিংস্রতা, নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ ও পাচারের। ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ, যাঁদের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু, ইতিমধ্যেই সংঘাতের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ও কর্মসংস্থানের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন৷[১৭]
কোভিড–১৯ অতিমারি ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে ইউক্রেনে পৌঁছেছিল,[১৮] এবং যে সামান্য লাভ আগে তোলা গিয়েছিল, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের ক্ষেত্রে, তা সেগুলিকে বিপদাপন্ন করেছিল। এই অভিজ্ঞতা অবশ্য ইউক্রেনের জন্য অনন্য নয়। বিশ্বের অন্য অনেক দেশে তাঁদের সমকক্ষদের মতোই ইউক্রেনীয় নারীরা এখন তুলনামূলক দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ স্তরে স্থান পেয়েছেন, কর্মসংস্থানের হার কমেছে, চিকিৎসা পরিষেবাগুলির সুযোগ অপ্রতুল হয়েছে এবং চলাফেরার উপর দীর্ঘায়িত সীমাবদ্ধতার কারণে শারীরিক ও মানসিক গার্হস্থ্য নির্যাতন বেড়েছে।[১৯]
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি (আইডিপি), রোমা মহিলা, [বি] ও প্রতিবন্ধী মহিলাসহ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য এই নেতিবাচক পরিণতিগুলি আরও তীব্র। এই প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিকে আবাসিক নিবন্ধন, কাজ ও জীবিকার অভাব এবং চিকিৎসা ও সামাজিক পরিষেবাগুলিতে সীমিত সুযোগ সম্পর্কিত অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।[২০]
সুতরাং, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ইউক্রেনে লিঙ্গবৈষম্য থেকেই গিয়েছে, অংশত পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর কারণে, এবং সেই সঙ্গে গত আট বছরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোভিড–১৯ অতিমারির ফলস্বরূপ। এই জটিল চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যেই রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ সামাজিক সংহতি ও স্থানীয় জনসম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে, এবং লিঙ্গবৈষম্যকে আরও খারাপ করেছে।
যুদ্ধের লিঙ্গগত প্রভাব
দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে ইউক্রেনের নারীরা নিছক দর্শক হয়ে থাকেননি। যখন প্রথম সংঘাত শুরু হয়েছিল, তখন থেকে ইউক্রেনীয় মহিলারা সামরিক ও আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীতে লড়াই করেছেন এবং কূটনৈতিক ও তথ্যগত ফ্রন্টলাইনে কাজ করেছেন। তাঁরা ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে জীবন বাঁচিয়েছেন। যাঁরা বিদেশে বসবাস করেন, তাঁরা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গণবিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন।
তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান ও তাঁদের অতিরিক্ত বোঝা উভয়কেই উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত–গ্রহণকারীরা নারীদের মূলত প্রান্তিক করে রেখেছেন, তা সে মানবিক প্রচেষ্টা বা শান্তি প্রতিষ্ঠাই হোক, বা অন্যান্য এমন ক্ষেত্রে যা সরাসরি তাঁদের জীবনকে প্রভাবিত করে। আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও সামরিক বাহিনীর বর্ধিত ভূমিকা নারীদের জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা আরও কঠিন করে তুলেছে। মহিলাদের অংশগ্রহণের অভাব এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে যে তাঁদের, যার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ও প্রান্তিক ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত, চাহিদা ও অগ্রাধিকারগুলির প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হবে এবং সমস্যাগুলি প্রশমিত করা হবে।
অতিরিক্ত যত্নপ্রদান বোঝা
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ পারিবারিক ভূমিকা ও কার্যাবলির পুনর্বণ্টন ঘটাচ্ছে, যার ফলে নারীদের দুর্দশা বাড়ছে। ইউক্রেনের নারীদের প্রথাগতভাবে তাঁদের পরিবারের, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের লালন–পালনের দায়িত্বনির্বাহী প্রাথমিক পরিচর্যাকারী এবং গৃহকর্মী হিসেবে দেখা হয়। সম্পদ বা উৎপাদনশীল সংস্থানের উপর তাঁদের সীমিত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এবং তাঁদের বেশিরভাগ কাজ করতে হয় বাস্তুচ্যুত মানুষ, স্থানীয় ও পারিবারিক মানবিক চাহিদা মেটানোর জন্য। প্রকৃতপক্ষে, একক পিতামাতার পরিবারের ৯৫ শতাংশ একক মা পরিচালিত।[২১],[২২]
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার ফলে শত শত স্কুল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, বয়স্ক পরিচর্যা কেন্দ্র ও হাসপাতাল ধ্বংস বা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নারীদের যত্নসংক্রান্ত বোঝা বহুগুণ বেড়েছে। এই দায়িত্ব তাঁদের হাতে নিজেদের যত্ন নেওয়ার জন্য সামান্যই অতিরিক্ত সময় রেখেছে। পরিচর্যার দায়িত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে যুদ্ধের অন্যান্য পরিণতি, যেমন জনসম্প্রদায়গত সম্পদের উপর চাপ, স্বেচ্ছাসেবক কাজের জন্য উচ্চ চাহিদা এবং পুরুষদের অনুপস্থিতির কারণে। রাশিয়ার আক্রমণের শুরুতে হাজার হাজার অসামরিক মানুষের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইউক্রেন স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিস–এর জারি করা মার্শাল অর্ডার ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের ফিরে আসতে এবং যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছিল।[২৩] ফলে মহিলারা আর শুধু বর্ধিত তত্ত্বাবধায়ক বা অবৈতনিক কাজের চাহিদার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন না, বরং হারানো পারিবারিক আয়ের বোঝাও বহন করছেন। ইউএন উইমেন অ্যান্ড কেয়ারের মে ২০২২–এর র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালিসিস রিপোর্ট অনুসারে, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনের বিভিন্ন পটভূমির আরও বেশি সংখ্যক মহিলা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে ও সহায়তা প্রদানের কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিতে তাঁরা মানবিক প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”[২৪] এই অর্থে, চলতি যুদ্ধ লিঙ্গগত ভূমিকায় একটি পরিবর্তন এনেছে, যেখানে স্বামীর অনুপস্থিতিতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা তাঁদের পরিবারের প্রধান হিসাবে কাজ করছেন।
স্থানান্তর এবং স্থানচ্যুতি
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচআরসি) এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ৫৮.৫৬ শতাংশ মহিলা এবং ৪১.৪৪ শতাংশ পুরুষ।[২৫] যেখানে বাস্তুচ্যুতদের অগ্রগণ্য হলেন নারী ও শিশুরা, অতীতের সংঘাতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ অভিবাসন সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে বা বিদ্যমান সঙ্কটকে আরও প্রসারিত করতে পারে। যাঁরা ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাঁদের জন্য এটি দ্বিগুণ বা তিনগুণ স্থানচ্যুতির ঝুঁকি নিয়ে আসে।
রাশিয়ার গোলাবর্ষণ ও বোমা হামলার মধ্যে ইউক্রেন একটি অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে: প্রচুর সংখ্যক নারী ও শিশু একটি উন্নত জীবনের সন্ধানে বা শুধু বেঁচে থাকার জন্য বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ মিলিয়ন মানুষ তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।[২৬] এর মধ্যে ৫.২ মিলিয়নেরও বেশি প্রতিবেশী দেশগুলিতে চলে গিয়েছেন এবং ইউরোপ জুড়ে শরণার্থী হিসাবে নথিভুক্ত হচ্ছেন; আর তাঁদের মধ্যে ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি বিদেশে অস্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করেছেন।[২৭] ইউক্রেনের মধ্যে আরও প্রায় সাত মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।[২৮]
রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অনুমান করে যে যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাঁদের অর্ধেকের বেশি নারী।[২৯] আইওএম–এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২২ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ শতাংশ মহিলা এখনও ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে নিরাপত্তা খোঁজার চেষ্টা করছেন।[৩০] আক্রমণ অব্যাহত থাকায় এই সব সংখ্যা আগামী মাসগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
অবশ্য শুধু বাস্তুচ্যুতিই ইউক্রেনীয় নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায়নি। যেহেতু হাজার হাজার উদ্বাস্তু আশ্রয় ও নিরাপত্তা খুঁজছেন, তাই নারীরা যখন নিজেদের ও তাঁদের সন্তানদের জন্য সাহায্যের খোঁজ করছেন, সেই সময় তাঁদের পাচারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাঁদের পরিস্থিতি ও দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা পরিবহণ, কাজ বা বাসস্থানের প্রস্তাব দেয়, এবং এইভাবে মহিলাদের তাঁদের সঙ্গে যেতে প্রলুব্ধ করে।[৩১]
এই পরিস্থিতিগুলি যৌন শোষণের দিকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে মহিলাদের আশ্রয়, পরিবহণ বা নিরাপত্তার জন্য যৌন ব্যবসা করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও যে নারীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা প্রায়শই তাড়াহুড়ো–করে–খোলা ও অপরীক্ষিত আশ্রয়ের উপর নির্ভর করেন, যার মধ্যে অনেকগুলিই ভিড়াক্রান্ত হয় এবং সংস্থানও কম থাকে। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলির অনেকগুলিতেই স্বাস্থ্যবিধির দুর্বল প্রয়োগ, মৌলিক সরবরাহের অপ্রতুলতা, ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, যা একসঙ্গে মহিলাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য সরাসরি বিপদস্বরূপ।[৩২]
উদ্বাস্তুদের কিছু দল প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তায় পৌঁছতে অতিরিক্ত বাধার সম্মুখীন হয়েছে, কারণ আশ্রয়ের অস্তিত্ব তাঁদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেনি। এ কথা প্রতিবেদিত হয়েছে যে রোমা নারী ও শিশুদের অর্থনৈতিক সম্পদ ও মৌলিক আইনি নথির অভাবের কারণে সীমান্ত অতিক্রম করার প্রচেষ্টায় প্রচুর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, এবং সমস্ত জাতিগত ইউক্রেনীয়দের প্রক্রিয়াকরণ না–হওয়া পর্যন্ত তাঁরা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।[৩৩] অসহায় পরিস্থিতিতে এই আবাসন বৈষম্য ও বিভাজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের সমস্যাই শুধু বাড়িয়েছে, এবং তাঁদের আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় বাধাপ্রাপ্ত সুযোগ
রাশিয়ার আগ্রাসনের আগেই ইউক্রেনের মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভাল ছিল না।[৩৪] যেহেতু রাশিয়ার সামরিক আক্রমণের ফলে সুরক্ষা কাঠামো ও সহায়তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে, তাই রুটিন স্বাস্থ্য পরিষেবা বা বিধিনিষেধগুলির ব্যাপক সংকোচন হয়েছে, এবং তার ফলে মহিলাদের যৌন ও প্রজনন যত্নের মতো মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাধা তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসা সুবিধার ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংস, সেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের ঘাটতির ফলে আনুমানিক ২৬৫,০০০ মহিলার মাতৃত্বের পরিচর্যার মতো স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এঁরা সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সময় গর্ভবতী ছিলেন।[৩৫] একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে সেই বিশেষ পরিষেবাগুলি, যেগুলি লিঙ্গভিত্তিক হিংস্রতা থেকে বেঁচে ফিরে আসা মানুষদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (ডব্লিউএইচও) বলেছে যে ২৪ মার্চের মধ্যে অন্তত ৬৪টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বোমা ও গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।[৩৬] একটি ঘটনায়, ৯ মার্চ, মারিউপোলের একটি প্রসূতি হাসপাতালে বোমা বর্ষণ হয়, যার ফলে কমপক্ষে একজন গর্ভবতী মহিলা তাঁর অনাগত সন্তানসহ মারা যান।[৩৭]
স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব এইভাবে ইউক্রেনে অবশিষ্টদের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠেছে, এবং সংঘাত অব্যাহত থাকায় চিকিৎসা সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে। যুদ্ধের সময় মে থেকে অক্টোবর, এই ছয় মাসে রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে নিজেদের এবং তাঁদের বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য ইউক্রেনের গর্ভবতী মহিলাদের পাতালরেল স্টেশন, ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র, বেসমেন্ট ও বাঙ্কারে জন্ম দেওয়ার ঘটনা প্রতিবেদিত হয়েছে।[৩৮] হিসাব অনুযায়ী তার পরবর্তী তিন মাসে ইউক্রেনে প্রায় ৮০,০০০ মহিলার শিশুর জন্ম দেওয়ার কথা।[৩৯] যদি গর্ভবতী মায়েরা গুরুতর মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন তবে তাঁরা কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁদের নিজেদের এবং সন্তানদের জীবন বিপন্ন করে সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হবেন। ঘটনাটি শুধু তাঁদের শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক সুস্থতার উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, একইসঙ্গে যুদ্ধের চাপ ও স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগের মোকাবিলা মহিলাদের সহনক্ষমতার প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারে, যার ফলে গর্ভাবস্থার জটিলতা, অকাল প্রসব ও মৃতপ্রসবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
যাঁরা ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গিয়েছেন তাঁদের জন্যও জীবন সহজ হয়নি। একটি বিদেশি রাষ্ট্রে আসার পর অভিবাসীরা, যাঁদের বেশিরভাগই মহিলা, প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন নথির অভাবে বা স্বাস্থ্যব্যবস্থাগুলি ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ভারাক্রান্ত হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলির সুযোগ পেতে শুরুতেই প্রচুর অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, এবং তা আরও গুরুতর হয়েছে শরণার্থীদের পরের পর দল খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসে পড়ায়।[৪০]
যৌন হিংস্রতা ও ধর্ষণ
লিঙ্গভিত্তিক হিংসা ইউক্রেনে সব সময়েই রয়েছে, এবং ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে হিংসার শিকার নারীরা।[৪১] ২০১৯ সালে ইউএনএফপিএ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ইউক্রেনীয় প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ৭৫ শতাংশ ১৫ বছর বয়স থেকে কোনও–না–কোনও ধরনের হিংস্রতার সম্মুখীন হয়েছেন, এবং প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শারীরিক যৌন হিংসার সম্মুখীন হয়েছেন।[৪২] প্রমাণের কোনও ঘাটতি নেই যে সংঘাতের প্রাদুর্ভাব প্রায়শই অসাম্যকে গভীর করে এবং নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করে, এবং সেইসঙ্গে ধর্ষণ, হিংস্রতা, নির্যাতন, শোষণসহ বিভিন্ন ধরনের অমানবিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে নারী ও মেয়েদের পরিচয় আরও বাড়িয়ে দেয়।[৪৩]
রুশ আগ্রাসনের সময় থেকে স্বামীকে মেরে ফেলার পর নারীদের ধর্ষণের খবর পাওয়া গিয়েছে, এবং নারীদের তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে, যা ইউক্রেনীয় পরিবারের বন্ধনকে ছিঁড়ে ফেলার, নারীদের মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়ার এবং নৈরাশ্য ও হতাশার অনুভূতি জাগিয়ে তোলার একটি ইচ্ছাকৃত কৌশল।[৪৪] গার্হস্থ্য হিংসা, মানব পাচার ও লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ঘটনাগুলির উপর নজর রাখার জন্য তৈরি করা জাতীয় হটলাইনে যৌন হিংস্রতার একাধিক রিপোর্ট এসেছে।[৪৫] রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার হাইকমিশনার বলেছেন যে ৩ জুন ২০২২ পর্যন্ত মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ দল ইউক্রেন জুড়ে সংঘাত সম্পর্কিত যৌন হিংসার ১২৪টি অভিযোগের রিপোর্ট পেয়েছে।[৪৬]
২০২২ সালের জুনে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি)–এর বৈঠকে মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন সশস্ত্র সংঘাতে যৌন হিংস্রতার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনে যৌন হিংসা প্রতিরোধ ও অপরাধীদের বিচারের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিষদকে বলেছিলেন যে সংঘাতের সময় ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রস্তাব এবং ইউক্রেনের সবচেয়ে অরক্ষিত নারী ও শিশুদের জন্য বাস্তবতার মধ্যে একটি ব্যবধান রয়েছে।[৪৭] তিনি ইউক্রেন সরকার এবং যৌন হিংসা সংক্রান্ত মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির অফিসের দ্বারা স্বীকৃত ফ্রেমওয়র্ক অফ কোঅপারেশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড রেসপন্স টু কনফ্লিক্ট–রিলেটেড সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স[৪৮]–এর উপাদানগুলির উপর জোর দিয়েছিলেন। ৩ মে তারিখে স্বাক্ষরিত এই ফ্রেমওয়র্কের উদ্দেশ্য ইউক্রেনে রুশ অভিযানের সামরিক প্রেক্ষাপটে সংঘাত সম্পর্কিত যৌন হিংসা থেকে সুরক্ষা ও তার প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া উন্নত করা। এখনও পর্যন্ত রাশিয়া অবশ্য যৌন হিংসার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে রুশ সৈন্যরা অসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে হিংসা নিষিদ্ধ করে এমন কঠোর নিয়মের অধীন। তিনি ইউক্রেন ও কাউন্সিলের পশ্চিমী সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়াই দায় চাপানোর অভিযোগ করেছেন।[৪৯]
ইউক্রেনে থাকা বা বিদেশে আশ্রয় নেওয়া ধর্ষণের শিকার মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য। তাঁরা এইচআইভি–র মতো যৌন সংক্রামিত রোগের, এবং সেইসঙ্গে গর্ভাবস্থা ও অভ্যন্তরীণ শারীরিক আঘাতের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসবের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহায়তা প্রয়োজন যা চলতি সংঘর্ষের মধ্যে উপলব্ধ নাও হতে পারে।
শিক্ষা
ইউক্রেনের শিক্ষামন্ত্রকের মতে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ১,৮০০টিরও বেশি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।[৫০] অন্য স্কুলগুলিকে তথ্যকেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, সরবরাহ হাব হিসাবে বা যুদ্ধরত উভয় পক্ষের দ্বারা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অল্পবয়সী মেয়েরা স্কুলে পড়া ও সামাজিক উন্নয়নের বছর হারানোর বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে। ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ দেখেছে যে ইউক্রেনের মতো সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের স্কুলের বাইরে থাকার সম্ভাবনা ২.৫ গুণ বেশি।[৫১] কোভিড–১৯ অতিমারি ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে যে কীভাবে একবার শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটলে সংকট কেটে যাওয়ার পরেও মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়।[৫২]
কিছু শিশু শিক্ষামন্ত্রকের উদ্যোগে অনলাইনে পড়াশুনার দিকে ঝুঁকেছে। মেয়েদের জন্য কিন্তু বাড়িতে যত্ন নেওয়ার বোঝা বৃদ্ধি, পিতামাতাদের অনুমতি দিতে অনাগ্রহ বা ডিজিটাল সুযোগের অভাবের কারণে এই অনলাইন সেশনগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়া কঠিন হচ্ছে।
মেয়েদের শিক্ষাকে অবহেলা করা মেয়েদের নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে: তারা বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এটি তাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ক্ষমতায়নের অন্য পরিসরগুলিকেও বিপদের মুখে ঠেলে দেয়, এবং তার নিজের পরিবার, তার জনসম্প্রদায় ও বৃহত্তর অর্থনীতির কল্যাণের ক্ষেত্রে বৃহত্তর প্রভাব ফেলে।
খাদ্য ও শক্তি সংকট
ইউক্রেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জন্য গমের একটি প্রধান উৎস, যা সারা বিশ্বে ১২০টিরও বেশি দেশে ১১৫.৫ মিলিয়ন মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে।[৫৩] এদিকে রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ তিনটি অপরিশোধিত তেল উৎপাদকদের মধ্যে একটি, এবং সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক ও বৃহত্তম রপ্তানিকারক।[৫৪] ঐতিহাসিকভাবে, যুদ্ধের আগেও ইউক্রেনীয় নারীদের খাদ্য ও শক্তির প্রাপ্যতা নিয়ে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি অনিশ্চয়তা ছিল; নারীপ্রধান পরিবারগুলির খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি ছিল।[৫৫] চলতি যুদ্ধ সংকটে আর একটি চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে, কারণ এটি ব্যাপকভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছে, এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য করে তুলেছে। এই ঘাটতির কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের শুরু থেকে ইউক্রেনে খাদ্যের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, আর অপরিশোধিত তেলের দাম অক্টোবরের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে এবং বছর শেষের মধ্যে তা ৫০ শতাংশে পৌঁছতে পারে।[৫৬]
যখন পর্যাপ্ত খাবার থাকে না, তখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীদের পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য খাদ্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে তাঁদের নিজেদের খাওয়া কমাতে হয়। এই প্রবণতা ইউক্রেনে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, এবং নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে অপুষ্টি ও রক্তাল্পতা বাড়ছে।[৫৭]
এখন যেহেতু ভূমি বা আর্থিক ঋণের মতো সংস্থানগুলিতে তাঁদের সুযোগ বা আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান আগের চেয়ে আরও সীমিত হয়ে পড়েছে, এবং বেতন ও পেনশনে লিঙ্গ ব্যবধান বাড়ছে, তাই ইউক্রেনের মহিলারা শুধু ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও শক্তির সংকটের মোকাবিলাই করছেন না, পরবর্তী সময়ে দুর্দিনে কাজে লাগানোর মতো কোনও ভরসাযোগ্য সম্পদও আর তাঁদের কাছে থাকছে না।
উপসংহার
ইউক্রেনের মহিলারা রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের একটি অসম ভার বহন করছেন: তাঁদের কাছে পরিষেবার সুযোগ নেই; আছে অতিরিক্ত অবৈতনিক কাজের বোঝা; এবং যৌন হিংসার ক্ষেত্রে তাঁরা আরও বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। নারীদের উদ্বেগ শোনার বিষয়টি নিশ্চিত করবে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। একইভাবে রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতার কোনও ছবিও দেখা যায়নি।
ইউক্রেনের প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য, মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা। এই প্রতিবেদনটি ইউক্রেনে মহিলাদের অধিকারের আরও সংকোচন রোধ করতে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি করে৷
১। ইউক্রেনীয় নারীদের সংঘাতের উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ, প্রশমন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
২। জীবন রক্ষাকারী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সরবরাহ বাড়ানোর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে চেষ্টা করতে হবে, এবং তার পাশাপাশি সুশীল সমাজ সংস্থাগুলির, যারা সংঘাতের কারণে যে মহিলাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে তাঁদের সহায়তা করতে পারে, সেগুলির নেটওয়ার্ক ও সংস্থান শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হতে হবে।
৩। জবাবদিহিতা ইউক্রেনীয় নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং শান্তির সময় যৌন হিংসা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। এইভাবে, ইউক্রেনে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ উভয় স্তরেই৷
৪। আন্তর্জাতিক বিচারের সময় সমস্ত যুদ্ধাপরাধের লিঙ্গগত উপাদানের উপর বিশেষভাবে জোর দিতে হবে এবং আদালতগুলিকে তাদের সিদ্ধান্ত ও সাজা প্রদান করার সময় অবশ্যই এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
৫। সরাসরি ইউক্রেনীয় নারী ও মেয়েদের লক্ষ্য করে শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে তহবিল বাড়াতে হবে এবং বিনিয়োগ করতে হবে।
৬। নারী ও মেয়েদের নির্দিষ্ট পুষ্টির চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্যের অধিকার রক্ষা করতে হবে ও উন্নত করতে হবে।
৭। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতীয় বাহিনীকে অবশ্যই সক্রিয়ভাবে নারী কর্মী, আইডিপি, ডাক্তার, নার্স এবং যাঁরা ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করছেন তাঁদের কথা শুনতে হবে এবং তাঁদের চাহিদা ও উদ্বেগকে মূলধারাভুক্ত করতে হবে।
এন্ডনোট
[ক] এগুলির মধ্যে রয়েছে বেজিং ডেক্লারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন অব দ্য ফোর্থ ওয়র্ল্ড কনফারেন্স ফর উইমেন; নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (সিইডিএডব্লিউ) এবং এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল; আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন; এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি)–এর রেজলিউশন অন উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস)।
[খ] রোমারা হলেন ঐতিহ্যগতভাবে যাযাবর মানুষের একটি জাতিগত গোষ্ঠী যাঁরা উত্তর ভারতে উদ্ভূত কিন্তু আধুনিক সময়ে বিশ্বব্যাপী, প্রধানত ইউরোপে, বসবাস করেন। ইউক্রেনে প্রায় ৫০,০০০ লোক রয়েছে যারা নিজেদের রোমা বলে পরিচয় দেয়।
[১] “ইউক্রেন: বেসামরিক হতাহতের আপডেট ৩ অক্টোবর ২০২২,” রাষ্ট্রপুঞ্জের হাই কমিশনারের মানবাধিকার অফিস, ৩ অক্টোবর, ২০২২।
[২] “ইউক্রেন আগ্রাসনের সময় রুশ সামরিক বাহিনী নির্বিচারে আক্রমণ করে,” অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২।
[৩] জেইম লোপেজ ও ব্র্যাডি ওয়ার্থিংটন, “আইসিসি ইউক্রেনের পরিস্থিতি তদন্ত করেছে: এক্তিয়ার ও সম্ভাব্য প্রভাব,” লফেয়ার, মার্চ ১০, ২০২২।
[৪] শন ওয়াকার ও ওয়েন বোকোট, “রাশিয়া উইথড্রস সিগনেচার ফ্রম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট স্ট্যাটিউট,” দ্য গার্ডিয়ান, নভেম্বর ১৬, ২০১৬।
[৫] হারুন সিদ্দিক, কুড দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট ব্রিং পুটিন টু জাস্টিস ওভার ইউক্রেন” গার্ডিয়ান, ২ মার্চ, ২০২২।
[৬] ডেভিড আর মার্পলস, “ময়দান রেভলিউশন ইন ইউক্রেন,” ই-ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস, ১ জুলাই, ২০২২।
[৭] নাতালিয়া আন্তোনোভা, “আমি বলতে ভয় পাচ্ছি না যে ইউক্রেনে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে,” ওপন ডেমোক্রেসি, ২৩ আগস্ট, ২০১৭।
[৮] আনিয়া কামেনেটজ, “যুদ্ধ ইউক্রেনের মহিলাদের জন্য বৈষম্যের ছবিকে আরও খারাপ করেছে,” এনপিআর, ১৫ মে, ২০২২।
[৯] কাতেরিনা ওদারচেঙ্কো, “ইউক্রেনীয় নারীরা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু বাধা থেকে যায়,” কেনান ইনস্টিটিউটের একটি ব্লগ, ২৮ এপ্রিল, ২০২১।
[১০] ওদারচেঙ্কো, “ইউক্রেনীয় নারীরা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু বাধা রয়ে যায়”
[১১] মারিয়ান মাখলুজারাইডস, নাদিয়া নোভোসোলোভা, ডঃ ইল্কে দাগলি-হাস্টিংস, অ্যামি স্কিয়ারডার, “ইউক্রেনে লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন”, সেন্টার ফর সাসটেনেবল পিস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক ডেভলপমেন্ট, জুলাই ২০২২।
[১২] “ইউক্রেনে লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন”
[১৩] ওএসসিই – অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইওরোপ, ওএসসিই-এর নেতৃত্বে নারীর উপর হিংস্রতা নিয়ে সমীক্ষা: প্রধান প্রতিবেদন, ইউএনএফপিএ, মার্চ ৭, ২০১৯।
[১৪] “ইতিমধ্যে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা ১ মিলিয়ন নারী ও শিশু সম্পর্কে আমরা যা জানি তা এখানে,” ইউএন উইমেন, ৯ মার্চ, ২০২২।
[১৫] ইতিমধ্যেই ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা ১ মিলিয়ন নারী ও শিশু সম্পর্কে আমরা যা জানি তা এখানে,”
[১৬] “মহিলারা পালিয়ে গিয়ে ধ্বংসে উদ্যত সামরিক আক্রমণের সময় ইউক্রেনের সঙ্গে সংহতি দেখাচ্ছেন,” ইউএন উইমেন, ৩ মার্চ, ২০২২।
[১৭] “ইউক্রেনের ‘অদৃশ্য সংকট’: ১.৫ মিলিয়ন যারা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পালিয়েছেন,” ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫।
[১৮] “ইউক্রেনে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে ইতালি থেকে আসা ব্যক্তির সংক্রমণে,” রয়টার্স, ৩ মার্চ, ২০২০।
[১৯] ইউএন উইমেন, ইউক্রেনে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে নারীদের পরিস্থিতি ও চাহিদার দ্রুত লিঙ্গ মূল্যায়ন, মে ২০২০, ইউএন উইমেন ইউক্রেন, ২০২০।
[২০] “ইউক্রেনে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে নারীদের পরিস্থিতি এবং চাহিদার দ্রুত লিঙ্গ মূল্যায়ন, মে ২০২০”
[২১] ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান পরিষেবা, ২০২১ সালে ইউক্রেনের পরিবারের সামাজিক ও জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য, ২০২১।
[২২] “ইউক্রেনে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে নারীদের পরিস্থিতি এবং চাহিদার দ্রুত লিঙ্গ মূল্যায়ন, মে ২০২০”
[২৩] চার্লি কার্পেন্টার, “অসামরিক পুরুষেরা ইউক্রেনে আটকা পড়েছেন,” ফরেন পলিসি, জুলাই ১৫, ২০২২।
[২৪] ইউএন উইমেন অ্যান্ড কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, “ইউক্রেনের দ্রুত লিঙ্গ বিশ্লেষণ, মে ২০২২,” লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সত্তা (ইউএন উইমেন) ও কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ২০২২।
[২৫] কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, দ্রুত লিঙ্গ বিশ্লেষণ ইউক্রেন, মার্চ ২০২২, কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ২০২২।
[২৬] “হাউ মেনি ইউক্রেনিয়ান রিফিউজিস আর দেয়ার অ্যান্ড হোয়্যার হ্যাভ দে গন?” বিবিসি নিউজ, ৪ জুলাই, ২০২২।
[২৭] “হাউ মেনি ইউক্রেনিয়ান রিফিউজিস আর দেয়ার অ্যান্ড হোয়্যার হ্যাভ দে গন?”
[২৮] “হাউ মেনি ইউক্রেনিয়ান রিফিউজিস আর দেয়ার অ্যান্ড হোয়্যার হ্যাভ দে গন?”
[২৯] “হাউ মেনি ইউক্রেনিয়ান রিফিউজিস আর দেয়ার অ্যান্ড হোয়্যার হ্যাভ দে গন?”
[৩০] কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, “ইউক্রেনে ছয় মাস: নৃশংস মানসিক স্বাস্থ্যের বলির সংখ্যাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়, কেয়ার সতর্ক করেছে,” কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ২২ আগস্ট, ২০২২।
[৩১] লরেঞ্জো টোডো, “ইউক্রেন প্রসিকিউটরস আনকভার সেক্স ট্র্যাফিকিং রিং প্রেইং অন উইমেন ফ্লাইং কান্ট্রি,” দ্য গার্ডিয়ান, ৭ জুলাই, ২০২২।
[৩২] ইরিন স্পেন্সার সাইরাম, “নিউ রিপোর্ট হাইলাইটস ডিভাসটেটিং ইমপ্যাক্ট অফ ওয়র ইন ইউক্রেন অন উইমেন,” ফোর্বস, ৪ মে, ২০২২৷
[৩৩] আন্দ্রেই পোপোভিসিউ, “ইউক্রেনের রোমা শরণার্থীরা নিরাপত্তা পাওয়ার পথে আসার সময় বৈষম্যের কাহিনী শুনিয়েছেন,” আল জাজিরা, মার্চ ৭, ২০২২।
[৩৪] “ইউক্রেনের দ্রুত লিঙ্গ বিশ্লেষণ, মে ২০২২”
[৩৫] “ইউক্রেন: মানবিক প্রয়োজন বাড়তে থাকার সময় সংঘাত নারী ও মেয়েদের দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে,” ইউএনএফপিএ, ২৮ জুন, ২০২২।
[৩৬] “হু বলেছে যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ৬৪টি হাসপাতালে হামলা হয়েছে,” আল জাজিরা, ২৪ মার্চ, ২০২২।
[৩৭] “মারিউপোলের হাসপাতালে হামলার পর গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর মৃত্যু,” দ্য গার্ডিয়ান, ১৪ মার্চ, ২০২২।
[৩৮] ওলেক্সান্ডার কুনিটস্কি, “ইউক্রেন: উইমেন গিভিং বার্থ ইন বেসমেন্ট অ্যান্ড বাঙ্কারস,” লাইভ অয়্যার, ১১ মার্চ, ২০২২।
[৩৯] “ইউক্রেনে যুদ্ধ | ইউএনএফপিএ–র প্রতিক্রিয়া,” ইউএনএফপিএ, ৩ মে, ২০২২।
[৪০] মেলানি ও’ব্রায়েন ও নোয়েল কুইনিভেট, “রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন ও লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংস্রতা,” ইজিআইএল:টক (ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর ব্লগ), ৮ জুন, ২০২২।
[৪১] “ইউক্রেন,” ইউএন উইমেন-ইউরোপ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া।
[৪২] “নারীর বিরুদ্ধে হিংসার উপর ওএসসিই-র নেতৃত্বে সমীক্ষা: প্রধান প্রতিবেদন, মার্চ ২০১৯”
[৪৩] ক্রিস্টিনা ল্যাম্ব, ‘আওয়ার বডিস, দেয়ার ব্যাটলফিল্ড: হোয়াট ওয়ার ডাস টু উইমেন’ (লন্ডন: উইলিয়াম কলিন্স, ২০২০)
[৪৪] লরেল ওয়ামসলে, “ধর্ষণ ইউক্রেনে একটি অস্ত্র হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। বিচার পাওয়া কঠিন হতে পারে,” এনপিআর, ৩০ এপ্রিল, ২০২২।
[৪৫] “ইউক্রেনে যৌন হিংস্রতার রিপোর্ট দ্রুত বাড়ছে, নিরাপত্তা পরিষদ শুনছে,” ইউএন উইমেন, জুন ৬, ২০২২।
[৪৬] “যৌন হিংসা হল ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত ‘সর্বাধিক লুকানো অপরাধ’ , নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বলেছেন নিরাপত্তা পরিষদকে,” রাষ্ট্রপুঞ্জ, জুন ৬, ২০২২।
[৪৭] “যৌন হিংসা হল ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত ‘সর্বাধিক লুকানো অপরাধ’, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বলেছেন নিরাপত্তা পরিষদকে,”
[৪৮] “সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন হিংস্রতা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সহযোগিতার কাঠামো,” মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কার্যালয়, ৪ মে, ২০২২।
[৪৯] “ইউক্রেন ফেসিং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স অ্যান্ড ট্র্যাফিকিং ক্রায়সিস অ্যামিড রাশিয়ান ওয়র: ইউএন,” বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জুন ৭, ২০২২।
[৫০] “ইউক্রেন পয়েন্টস আপ দ্য থ্রেট টু এজুকেশন ডিউরিং ওয়র,” রিলিফওয়েব, জুন ২, ২০২২।
[৫১] সেভ দ্য চিলড্রেন, “লিঙ্গ বৈষম্য অসাম্য তৈরি করে”।
[৫২] বিশ্বব্যাঙ্ক, মিশন: ২০২১–এ শিক্ষার পুনরুদ্ধার, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, গ্রুপ, ২০২১।
[৫৩] “ইউক্রেন এবং খাদ্য ও জ্বালানি সংকট: ৪টি জ্ঞাতব্য বিষয়,” ইউএন উইমেন, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।
[৫৪] “শক্তি তথ্য বিবরণ: কেন রাশিয়ার তেল ও গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ?” আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা, ২১ মার্চ, ২০২২।
[৫৫] “ইউক্রেন এবং খাদ্য ও জ্বালানি সংকট: ৪টি জ্ঞাতব্য বিষয়”
[৫৬] “ইউক্রেন এবং খাদ্য ও জ্বালানি সংকট: ৪টি জ্ঞাতব্য বিষয়”
[৫৭] “ইউক্রেন যুদ্ধ-প্ররোচিত সংকট নারী ও মেয়েদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে: রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদন,” ইউএন নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.