Published on Oct 31, 2024 Updated 0 Hours ago

নির্বাচন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, উভয় প্রার্থীই ভোটারদের সম্পৃক্ততার সাক্ষী থেকেছেন।

মার্কিন সমীক্ষায় বৃহত্তর বিভাজনই প্রতিফলিত

এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ।

 


নভেম্বর হতে চলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের প্রচার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাঁদের প্রথম বিতর্কের পরবর্তী সময়ে প্রধান নীতিগত বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে প্রত্যাশা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যাই হোক, উচ্চতর মনোযোগ সত্ত্বেও উভয় প্রার্থীই অন্য শিবিরের ভোটারদের নিজের শিবিরে টানার পাহাড়প্রমাণ চাপের সম্মুখীন। প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় তরফেই প্রচারের কেন্দ্রীয় কৌশল স্পষ্ট এবং তা হল সুইং স্টেটগুলির উপর মনোনিবেশ করা এবং যে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, তাঁদের প্রভাবিত করা। সমীক্ষাগুলিতে হ্যারিসকে সামান্য এগিয়ে রাখা হলেও উভয় প্রার্থীর মধ্যেই এমন এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, যা সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে বিরল। সর্বোপরি, একজন প্রার্থী অন্য প্রার্থীর তুলনায় সমস্যা এবং সংশ্লিষ্ট স্টেটগুলিকে কেন্দ্র করে এগিয়ে বা পিছিয়ে রয়েছেন।

সমীক্ষাগুলিতে হ্যারিসকে সামান্য এগিয়ে রাখা হলেও উভয় প্রার্থীর মধ্যেই এমন এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, যা সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে বিরল।

সমগ্র প্রচারাভিযান জুড়ে ট্রাম্প হ্যারিসের তুলনায় সামান্য এগিয়ে ছিলেন এবং এর নেপথ্যে প্রধান কারণ ছিল তাঁর অটল এমএজিএ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন) সংক্রান্ত জনভিত্তি এবং তাঁর স্পষ্টতর অর্থনৈতিক পরিকল্পনাউচ্চ শুল্ক এবং সুরক্ষাবাদী নীতির ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি তাঁর সমর্থকদের কাছে অনুরণিত হয়েছে। এর বিপরীতে বিশদ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অভাবের জন্য বিতর্কের সময় হ্যারিস প্রাথমিক ভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। পরের দিনগুলিতে তাঁর প্রচার গতি পেয়েছে। হ্যারিসের আর্থিক নীতি এবং সেগুলির তহবিল সংগ্রহের সাফল্যকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচেষ্টা - রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি (পিএসি) এবং সুপার পিএসি থেকে অভূতপূর্ব সমর্থন অর্জন-সহ - তাদেরকে নাটকীয় ভাবে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

তা সত্ত্বেও ট্রাম্প এই দৌড়ে এক কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন এবং তিনি এখনও সম্ভাব্য বিজয়ের থেকে সামান্যই দূরে রয়েছেন। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া এবং উত্তর ক্যারোলিনা-সহ সান বেল্ট স্টেটে তাঁপ্রতি সমর্থন ট্রাম্পকে কৌশলগত সুবিধা দেয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, এই স্টেটগুলির প্রায় ৬৩% মতদাতা বিশ্বাস করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুল পথে এগিয়ে চলেছে – এটি এমন এক আবেগ, যা ট্রাম্পের মার্কিন মহত্ত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য ট্রাম্পের আখ্যানের পক্ষে লাভজনক। অন্য দিকে, হ্যারিস পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে এগিয়ে রয়েছেনতাঁসম্মুখে উপস্থিত প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম হল বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের ত্রুটিগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষত অর্থনীতি, অভিবাসন এবং সামাজিক ভাবে উদার নীতির মতো বিষয়গুলির ক্ষেত্রে, যে বিষয়গুলিকে বেশ কিছু ভোটার নির্ণায়ক বলে মনে করেন। একজন নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং যুব প্রার্থী হিসাবে হ্যারিস পার্টিতে যে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছেন, তা সম্ভবত পূর্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর নীতিগত ব্যর্থতাগুলিকে ঢেকে দিতে সমর্থ হয়েছে, বিশেষ করে অভিবাসন এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো ক্ষেত্রে। অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের কাছে এমন কোনও কৌশল নেই, যা বর্তমান প্রশাসনের অংশ হিসেবে হ্যারিসের আপাত-দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে পারে।

লিঙ্গের পরিবর্তন ট্রাম্পের জন্য জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ সাধারণত মহিলাদের প্রতি ট্রাম্পের বক্তৃতা এবং আচরণ প্রায়শই মানুষের চক্ষুশূল হয়েছে।

ট্রাম্পও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বাইডেনকে প্রতিস্থাপন করে হ্যারিসকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলেছেন। এই পরিবর্তন ট্রাম্পের কৌশলকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যেটিতে এত দিন বাইডেনের বয়স এবং জনপ্রিয়তা হ্রাসের বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছিল। লিঙ্গের পরিবর্তন ট্রাম্পের জন্য জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ সাধারণত মহিলাদের প্রতি ট্রাম্পের বক্তৃতা এবং আচরণ প্রায়শই মানুষের চক্ষুশূল হয়েছে। তাই ট্রাম্প তাঁর বিতর্কের সময়ে সংযম দেখিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের পরিবর্তে প্রতিরক্ষামূলক ভঙ্গি বেছে নিয়েছেন। হ্যারিসের জাতি, লিঙ্গ এবং বয়সের সংমিশ্রণ নির্বাচনে একটি নতুন গতিশীলতা যোগ করেছে এবং স্বাভাবিক নির্বাচনী সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে। এই কারণগুলির পরিপ্রেক্ষিতে হ্যারিসের সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্ক প্রত্যাখ্যান করা ট্রাম্পের পক্ষে কৌশল বলে মনে হতে পারে। অক্টোবর হওয়া রিপাবলিকানদের পক্ষে জেডি ভ্যান্স এবং ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে টিম ওয়ালজের মধ্যে ভাইস-প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক এখন তাই প্রচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে।

নির্বাচন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, উভয় প্রার্থীই ভোটারদের সম্পৃক্ততার সাক্ষী থেকেছেন। গুপ্তহত্যার প্রথম চেষ্টার পর ট্রাম্পের সমর্থন বৃদ্ধি পায় এবং অন্য দিকে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর হ্যারিসের প্রচার গতিশীলতা লাভ করে। যাই হোক, এই প্রতিযোগিতা অস্বাভাবিক রকমের হাড্ডাহাড্ডি থেকেছে। অভিবাসন, চাকরি, প্রজনন অধিকার এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি যখন ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তখন বিদেশনীতি চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের মেয়াদ উল্লেখযোগ্য বিদেশনীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব দ্বারা জর্জরিত। প্রথম দিকে, প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, যে সিদ্ধান্ত এক বিশৃঙ্খল প্রস্থানের দিকে চালিত করেছিল। এখন, প্রশাসন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং বিদ্যমান রায়েল-হামাস সংঘাতের মতো অমীমাংসিত দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুঝছে। মার্কিন জনসংখ্যার পরিবর্তনের কারণে এই বৈদেশিক নীতির চ্যালেঞ্জগুলি এখন গড় ভোটারদের ব্যক্তিগত পরিসরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া থেকে দ্বন্দ্ব-প্ররোচিত দেশত্যাগ দক্ষিণের স্টেটগুলি থেকে অবৈধ অভিবাসন ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অবৈধ আশ্রয়প্রার্থীর সঙ্গে মিলে আমেরিকানদের আন্তর্জাতিক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ক্যাম্পাস বিক্ষোভের সাম্প্রতিক প্রবাহ বৈদেশিক সংঘাতে আমেরিকার ভূমিকা সম্পর্কে জনমতের একটি বৃহত্তর পরিবর্তনকে দর্শায়।

বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া থেকে দ্বন্দ্ব-প্ররোচিত দেশত্যাগ দক্ষিণের স্টেটগুলি থেকে অবৈধ অভিবাসন ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অবৈধ আশ্রয়প্রার্থীর সঙ্গে মিলে আমেরিকানদের আন্তর্জাতিক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প এবং হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বৃহত্তর জাতীয় বিভাজনকেই প্রতিফলিত করে। সিএনএন-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫১% ভোটার বিশ্বাস করেন যে, উভয় প্রার্থীরই এমন নীতিগত অবস্থান রয়েছে, যেমনটা তাঁরা একজন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন। যাই হোক, ট্রাম্পের মঞ্চটি ভোটারদের একটি বৃহত্তর অংশের সঙ্গে আরও জোরালো ভাবে অনুরণিত বলে মনে হচ্ছে এবং ২৯% উত্তরদাতা বলেছেন যে, ট্রাম্পের নীতিগত অবস্থান তাঁদের মনোমত এবং অন্য দিকে হ্যারিসের নীতির পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ১৮%। ই সব কিছুই ট্রাম্পের আমেরিকা-ফার্স্ট মঞ্চের তীব্র আবেদনকেই তুলে ধরে, যা তার ভোটার ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। সম্ভবত ট্রাম্পের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আবেগ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনমানসে বর্তমান প্রশাসন পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, হ্যারিস নিজে যে প্রশাসনের অংশ।

নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে লড়াই জমে উঠেছে এবং উভয় প্রার্থীর প্রচারই গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটের সামান্যতম ব্যবধানে ফলাফল নির্ণয়ের অপেক্ষা করছেন। একদিকে হ্যারিস যখন ডেমোক্র্যাটদের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ব্যয় এবং বর্ধিত যুদ্ধ তহবিল থেকে উপকৃত হতে পারেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে ট্রাম্পের জন্য ধারাবাহিক সমর্থন এবং নিজের ভোটার ভিত্তি কাজে লাগানোর বিষয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা এই ইঙ্গিত দেয় যে, এই নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অন্তিম পর্যায়ের আগে ঠাহর করা সম্ভব নয়। এখন সকলের নজর নিবদ্ধ রয়েছে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের উপর এবং উভয় পক্ষই নিজেদের দিকে জনমত আকৃষ্ট করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.