Author : Kabir Taneja

Published on Aug 21, 2021 Updated 0 Hours ago

আফগানিস্তানের যে সমস্ত ছবিতে এখন ইন্টারনেট ছেয়ে গেছে, সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে, একদিকে যথেষ্ট অস্ত্রসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনী বিন্দুমাত্র প্রতিরোধের চেষ্টা না করে আমেরিকান হামভি এবং এটিএফ-এর মতো গাড়িতে সওয়ার হয়ে একের পর এক শহর ছেড়ে পালাচ্ছে।

আফগান সেনার দুর্বলতার ব্যাখ্যা দিতে হবে আমেরিকাকেই

৯/১১-এর আত্মঘাতী হানার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ শুরু করে, তার পিছনে ছিল বৃহত্তম এবং সর্বাত্মক আন্তর্জাতিক সমর্থন। সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়া কোনও রাষ্ট্রের পিছনে এমন সমর্থন অভূতপূর্ব। নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডি. সি. শহরের ভয়াবহ ছবি ২০০১ সালে আমেরিকার ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার পক্ষে এই নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক সমর্থন এনে দিয়েছিল। এমনকি ইরানের মতো দেশও সে সময়ে আমেরিকার এই সিদ্ধান্তকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থন জানায়। সে সময় ন্যাটো থেকে চিন পর্যন্ত যে সমর্থনের ভিত আমেরিকা তৈরি করেছিল, আজ তালিবানদের আফগান রাজধানী কাবুল দখলের সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে।

জুলাই মাসের ৮ তারিখ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেছিলেন যে, তালিবানদের আফগানিস্তান দখল অবশ্যম্ভাবী নয়। ‘আনুমানিক ৭৫,০০০ তালিবানের বিরুদ্ধে আফগান বাহিনীতে আছে ৩,০০,০০০ সেনা, সমরসজ্জায় তারা পৃথিবীর যে কোনও সেনাবাহিনীর সমতুল্য, সঙ্গে আছে বিমানবহর। তাই একে অবশ্যম্ভাবী বলা যায় না।’ বাইডেন এ-ও বলেছেন যে, তিনি কখনওই তালিবানদের বিশ্বাস করেননি। কিন্তু তাঁর আস্থা ছিল তুলনায় অনেক ভাল প্রশিক্ষিত, উপযুক্ত অস্ত্রে সজ্জিত, রণদক্ষ আফগান সেনাবাহিনীর উপর। বাইডেনের এই মন্তব্যের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অগস্টের প্রথমার্ধে তালিবানদের আক্রমণের মুখে অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে আফগান সেনাবাহিনীর বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ বা নিজেদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল।

বাইডেনের এই মন্তব্যের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অগস্টের প্রথমার্ধে তালিবানদের আক্রমণের মুখে অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে আফগান সেনাবাহিনীর বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ বা নিজেদের অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানের যে সমস্ত ছবিতে এখন ইন্টারনেট ছেয়ে গেছে, সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে, একদিকে যথেষ্ট অস্ত্রসজ্জিত আফগান সেনাবাহিনী বিন্দুমাত্র প্রতিরোধের চেষ্টা না করে আমেরিকান হামভি এবং এটিএফ-এর মতো গাড়িতে সওয়ার হয়ে একের পর এক শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। অন্য দিকে, শুধু কালাশনিকভ ও পরিত্যক্ত সেনাঘাঁটি থেকে জোগাড় করা অস্ত্র নিয়ে পায়ে হেঁটে শহরে ঢুকে পুরুষ, নারী, শিশু নির্বিশেষে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তালিবান বিদ্রোহীরা। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগান সেনা তালিবানদের রটানো গুজবেরও শিকার হয়েছে। গুজবটি হল, আফগান সরকার এবং আফগানিস্তান ন্যাশনাল সিকিওরিটি ফোর্সের (এএনএসএফ) কর্তারা তালিবানদের সঙ্গে চুক্তি করে দেশের বেশ কিছু অংশের ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়েছে। কুন্দুজে নাকি এক আফগান সৈনিককে তার কমান্ডারকে বলতে শোনা গেছে, “ভাই, যদি আর কেউ না লড়ে, তা হলে আমি একাই বা লড়তে যাব কেন?”

পুরো বিষয়টা নিয়েই এখনও পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন চূড়ান্ত উদাসীনতা এবং দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। তারা সেনা পাঠিয়েছে শুধু মাত্র মার্কিন নাগরিক ও কূটনীতিবিদদের আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসতে সাহায্য করার জন্য। ইতিমধ্যেই এই গোলমালের পাণ্ডারা, যেমন মুখ্য মধ্যস্থতাকারী, রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ, যিনি আগেও বহু বার শুধরে যাওয়া তালিবানের পক্ষে কথা বলেছেন, তাঁরা নাকি তালিবানদের আরও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন শুধু এইটুকু অনুরোধ রেখে যাতে মার্কিন দূতাবাসকে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়

কৌশলগত ব্যর্থতার পাশাপাশি বাইডেনের কাছে পাঠানো তথ্য ও পরবর্তী কালে যে তথ্যের ভিত্তিতে আফগান সেনার দক্ষতা নিয়ে বাইডেন মন্তব্য করেছেন, তাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মাত্র ১২০ ঘণ্টার সামান্য বেশি কিছু সময়ের মধ্যে তালিবানদের কান্দাহার ও হিরাট-সহ (যা কাবুলের পরে যথাক্রমে দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর) আফগানিস্তানের সতেরোটি ছোট বড় প্রাদেশিক শহর দখলের বাস্তবতা জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের করা প্রকাশ্য মন্তব্যের একেবারে বিপরীত। ওয়াশিংটন ডি. সি.-তে ঠিক কী ধরনের চক্রান্ত চলছিল যাতে আফগান সেনাবাহিনীকে খুব দক্ষ দেখিয়ে তালিবানদের হাত থেকে দেশের জনসাধারণকে বাঁচানোর ভার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল, যা কয়েক দিনেই ভেঙ্গে পড়ল? কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগান সেনার প্রশিক্ষণ ও সমরোপকরণ খাতে বরাদ্দ ৮৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, যা কিনা ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেটের চেয়েও বেশি, তারই বা কী হল? সর্বোপরি, ঠিক কোন গুপ্ত খবরের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অপ্রত্যাশিত ভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিলেন এবং প্রায় ৩ কোটি ৩০ লক্ষ আফগানিস্তানবাসীকে তালিবানদের মুখে ঠেলে দিলেন?

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক ব্যাখ্যা ও অজুহাত উঠে আসছে। আফগানিস্তান ন্যাশনাল সিকিওরিটি ফোর্সের (এএনএসএফ) প্রশাসনিক স্তরে নেতৃত্বের অক্ষমতা — সপ্তাহখানেক আগে আফগান সেনাপ্রধানের আকস্মিক অপসারণের ঘটনাই হোক বা কয়েক মাস যাবত আফগানিস্তান ন্যাশনাল সিকিওরিটি ফোর্সের (এএনএসএফ) তরফে পর্যাপ্ত রসদের অভাবের কথা জানানো সত্ত্বেও অবস্থার কোনও সুরাহা না করে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া — প্রশ্ন উঠছে এই সব কিছু নিয়েই। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, এই এএনএসএফ কোনও শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি কখনওই ছিল না। এবং আগেও বহু বার তালিবানপন্থী ব্যক্তিরা এএনএসএফের একাধিক উচ্চ পদ দখল করে ভেতরে ভেতরে ঘুণ ধরিয়েছেন সেনাব্যবস্থার। এর ফলে এএনএসএফের সৈনিকদের দ্বারা ন্যাটো কর্মীদের উপর হামলাও হয়েছে। ‘গোস্ট সোলজার’ বা ‘ভুয়ো সৈনিক’দের উপস্থিতির মতো উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এর জেরে ২০১৯ সালেএএনএসএফথেকে ৪২ হাজার ভুয়ো কর্মী কে বহিষ্কার করা হয়। শুধু সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলেও, আফগান বাহিনীর ৩ লক্ষ সেনাই যথেষ্ট বলে ওয়াশিংটনে প্রচার করা হয়েছে। অথচ জোনাথন স্ক্রোডেনের মতো গবেষকরা অনেক আগেই বলেছিলেন যে, প্রায় তিন দশক ধরে আফগানিস্তানে বিদ্রোহ চালানোয় অভিজ্ঞ তালিবানদের প্রতিহত করার জন্য এএনএসএফ যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এ বছরের শুরুতে স্ক্রোডেন বলেছিলেন, “যদি আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে তার অবশিষ্ট সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তা হলে তালিবানরা সামরিক ভাবে কিছুটা উপকৃত হবে এবং দ্রুত আফগানিস্তানে তাদের ক্ষমতা বাড়াতে সমর্থ হবে।” গত এক মাসে প্রায় বিদ্যুতের গতিতে ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখা গেছে।

যদি আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে তার অবশিষ্ট সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তা হলে তালিবানরা সামরিক ভাবে কিছুটা উপকৃত হবে এবং দ্রুত আফগানিস্তানে তাদের ক্ষমতা বাড়াতে সমর্থ হবে।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমেরিকার প্রাক্তন কূটনীতিবিদ ও সামরিক কর্তাদের মধ্যে বিভাজন সুস্পষ্ট। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনকালে ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইএসএএফ বা ইন্টারন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে আফগানিস্তানে কর্মরত অভিজ্ঞ সামরিক নেতা জন আর অ্যালেন আরও এক বার তালিবানদের কাবুল দখলের সম্ভাবনার ছবিটা বুঝতে পেরে শিউরে উঠেছেন। বাইডেন তাঁর সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে কী হবে, আফগানিস্তানের সেই সম্ভাব্য সংকটের ছবি খুব নিপুণ এবং স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরলেও অ্যালেনের বক্তব্য মূলত তাত্ত্বিক

কুড়ি বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধের অংশ হওয়া সত্ত্বেও ঠিক কোথায় আফগান সেনার নির্মাণে গাফিলতি রয়ে গিয়েছে, সে বিষয়ে মূল্যায়নে এবং আত্মবীক্ষণে অ্যালেনের মতো অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যদি নিতান্তই রাজনৈতিক হয়ে থাকে, তা হলে এ কথা প্রমাণিত যে, আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী নির্মাণের পরিকল্পনায় পেন্টাগনের ব্যর্থতা সর্বাধিক। যদি সেই পরিকল্পনা সফল হত, তা হলে আফগানিস্তান এমন এক সেনাবাহিনী পেত, আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পরে যারা শুধু কাগজে-কলমে নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেও বাস্তবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হত।

এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সমস্ত যুক্তির প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্ন তোলার আগে প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। অন্য দেশগুলির মতো ৯/১১ হামলার পরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার ঘোষিত যুদ্ধে ভারতও নিজস্ব কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে সামিল হয়েছিল। আমেরিকায় হামলার মাত্র তিন মাসের মধ্যে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে সন্ত্রাসবাদীরা রাজধানী নয়াদিল্লির কেন্দ্রে ভারতীয় সংসদ ভবনে হামলা চালায় এবং এর ফলে একাধিক মানুষের মৃত্যুও হয়। সেই হামলার জন্য দায়ী লস্কর-ই-তইবা (এলইটি) এবং জইশ-এ-মহম্মদ (জেইএম) — দু টি সংগঠনেরই ঘাঁটি ছিল পাকিস্তান। তবুও পৃথিবীর অন্য দেশগুলি তখন পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি নির্মূল করার অভিযানে ভারতের পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি আজও তালিবানের সুরাগুলি (জঙ্গি সংগঠন) পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে সক্রিয় এবং পাকিস্তান তাদের উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আফগানিস্তান ও আমেরিকা দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখেছে

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.