Published on Feb 13, 2024 Updated 0 Hours ago
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শিয়া চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন

গত বছরের ১৮ অক্টোবর হিজবুল্লা ব্রিগেডের মুখপাত্র জাফর আল-হুসেন  টেলিগ্রামে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমেরিকানরা গাজার বাসিন্দাদের হত্যার অপরিহার্য অংশীদার এবং তাই তাদেরও এই পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই বিবৃতিটি শুধু মাত্র সুনির্দিষ্ট ভাবে ইরাক এবং সিরিয়ার শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীর ড্রোন, রকেট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিপ্রায়কে তুলে ধরে। নভেম্বর মাসে মার্কিন কেন্দ্রীয় কম্যান্ড পশ্চিম ইরাকের আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী তিন ইরান-সমর্থিত প্রক্সিকে হত্যা করেছিল। ইরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই ছিল প্রথম ঘটনা, যখন মার্কিন ঘাঁটিতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫০ বারের বেশি ইরান-সমর্থিত প্রক্সি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে ব্যবহৃত রকেট এবং ড্রোনের সংখ্যা ছিল ৬০।

 

মার্কিন কেন্দ্রীয় কম্যান্ড পশ্চিম ইরাকের আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী তিন ইরান-সমর্থিত প্রক্সিকে হত্যা করেছিল।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে দেখলে, মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান রায়েল-হামাস যুদ্ধের অন্যতম মারাত্মক ফল হল শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠী্র পুনরুত্থান, যারা একত্র হয়ে কাজ করছে এবং এমনকি প্রকাশ্য বিরোধিতা করতেও পিছপা হয়নি। গাজায় হামাসের শাসন অবসানের জন্য ইজরায়েলের সংকল্প প্রতিরোধের অক্ষ’র তরফে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, যা কেবল ইরায়েলকেই লক্ষ্যবস্তু করেনি, বরং এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর জন্যও বিপজ্জনক। এই অঞ্চল জুড়ে শিয়া গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয় অঞ্চলটিতে মার্কিন উপস্থিতির জন্য নতুন করে নিরাপত্তা হুমকির জন্ম দিয়েছে, তবে তার কট্টর মিত্র ইরায়েলের জন্য তা এখনই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিরায়েলের ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালিয়ে তার জাতীয় নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তারা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গোলান হাইটস এবং ২০২৩ সালের শেষের দিকে ইলাতে সফল ভাবে হামলা চালায়। হেন আক্রমণ সত্ত্বেও ইজরায়েল আয়রন ডোমের মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি রকেট কার্যকর ভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে। উপরন্তু, জরায়েল জর্ডনের সেনাবাহিনীর এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্কতা সত্ত্বেও সিরিয়া এবং জর্ডন থেকে শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টার প্রতি সজাগ রয়েছে।

২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে ইরায়েল প্রতিরোধের অক্ষকে লক্ষ্য করে বহুমুখী যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে। ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হল আসলে এমন একটি জোট, যা গাজা ও পশ্চিম তীরে হামাস ইসলামিক জিহাদ, কাতাইব হিজবুল্লা, ইয়েমেনের হুতি এবং লেবাননের হিজবুল্লা-সহ সিরিয়া ও ইরাকের শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীর মতো ইরানপন্থী চরমপন্থী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। রায়েলের নিরাপত্তার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের সম্ভাবনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভূমধ্যসাগরে আক্রমণাত্মক নৌবাহিনীর ব্যবস্থা-সহ ইরায়েলকে যথেষ্ট সাহায্য সামরিক সহায়তা প্রদানে প্ররোচিত করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রসারিত কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভাবে ইরায়েলের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্ত করেছে এবং গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে সক্ষম করেছে। এই সমর্থন ইরায়েলের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে এবং দেশটিকে তার বিদ্যমান সামরিক কার্যকলাপ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিসর প্রদান করেছে। রায়েল ও হামাসের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের পরিসরকে অত্যন্ত গতিশীল করে তুলেছে এবং প্রতিরোধের অক্ষ দ্বারা ইরায়েল বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য উত্থাপিত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলির উপর ক্রমাগত নজরদারি প্রয়োজন, যখন মার্কিন সমর্থন অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার নিরিখে হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রসারিত কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভাবে ইরায়েলের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্ত করেছে এবং গাজায় তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে সক্ষম করেছে।

 

রায়েল-হামাস যুদ্ধ মার্কিন-ইরান জেসিপিওএ চুক্তির ক্ষেত্রে কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার কাজটি করেছে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক ভাবে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, তাই যে কোনও প্রকারের প্রশ্রয় বা ছাড় বাইডেন প্রশাসনের জন্য নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এ ভাবে, এই অঞ্চলে শুধু মাত্র ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরান ততটাই তার সামর্থ্য প্রদর্শন করতে পারে, যতটা তারা এই অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন আকারে ছড়িয়ে পড়া পশ্চিমের সঙ্গে সুন্নি সংহতির সীমা পরীক্ষা করতে সক্ষম। ইরানের দ্বারা এই অঞ্চলে শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্রমাগত সমর্থন মার্কিন সামরিক বাহিনীকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিতাড়িত করা এবং যে কোনও কৌশলগত সংযোগ অংশীদারিত্বকে বিচ্ছিন্ন করে একটি বৃহত্তর স্তরে মার্কিন ও আরব দেশগুলির মধ্যে বিভাজন তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে এক দ্বন্দ্বে জর্জরিত। এক দিকে, আরব দেশগুলির সমন্বিত আঞ্চলিক আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরায়েলকে আশ্বস্ত ও রক্ষা করার জন্য এই অঞ্চলে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে, দেশটি এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রতিরোধের খেলায় আটকা পড়েছে। এমনকি ইরায়েলের বিরুদ্ধে কোন রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আরব সমন্বয়ের অনুপস্থিতিতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং লেবাননের ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলির মধ্যে অভূতপূর্ব সমন্বয়ের সম্মুখীন হয়েছে এবং এই গোষ্ঠীগুলির জন্য ইরানের প্রভাব সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। ইয়েমেনি হুতিরা এই সমীকরণকে সামুদ্রিক পরিসরে টেনে আনার সঙ্গে সঙ্গে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে বহু-জাতীয় নৌ জোটের সূচনা করার পাশাপাশি কথা প্রতীয়মান যে, শক্তিশালী ক্ষমতা ব্যবহার করে এই অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য সাধন না-ও হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধে ঠিক এমনটাই হয়ে থাকে। পরাক্রমশালী শক্তিদের তরফে অপরিকল্পিত প্রতিক্রিয়াই যুদ্ধের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ডেকান হেরাল্ড-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research interests include America in the Indian Ocean and Indo-Pacific and Asia-Pacific regions, particularly ...

Read More +
Michael Barak

Michael Barak

Dr. Michael Barak is a senior researcher at the International Institute for Counterterrorism (ICT), where he serves as the head of the Global Jihad & ...

Read More +