Published on Dec 02, 2024 Updated 0 Hours ago

ট্রাম্প ২.০ এর প্রতিরক্ষা কৌশল সম্ভবত তাঁর প্রথম মেয়াদের ধারাবাহিকতা বহন করবে, যা সামরিক বিধিগুলিকে লঘু করার পাশাপাশি ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মিত্রদের সামরিক ব্যয় বাড়াতে চাপ দেবে।

ট্রাম্প ২.০-এর অধীনে মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতি

এই প্রতিবেদনটি ‘রি-ইগনাইটেড অ্যাজেন্ডাজ: ট্রাম্প’স রিটার্ন অ্যান্ড ইটস গ্লোবাল রেপারকাশন’ সিরিজের অংশ।



দ্বিতীয় অ-‌ধারাবাহিক প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশ্চর্যজনক কিন্তু নির্ণায়ক জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে কিছু মূল পরিবর্তনের সূচনা করবে, বা বরং প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর প্রথম মেয়াদের নীতিগুলি অক্ষুণ্ণ রাখবে। যে তিনটি মূল ক্ষেত্র যা ট্রাম্প ২.০-‌এর প্রতিরক্ষা নীতির অধীনে যথেষ্ট মনোযোগ পাবে তা হল, মার্কিন জোট, ‘‌আমেরিকা ফার্স্ট’‌, এবং মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধ-‌কৌশলগুলিতে কম বিধিনিষেধ। তবুও, দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সামনের চ্যালেঞ্জগুলি খুব কম হবে না।

মার্কিন জোট

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতি ওয়াশিংটনের জোট সম্পর্কে বহু পুরনো ধারণাগুলি সংশোধন করতে চেয়েছিল। পরিবর্তনের মূল লক্ষ্যগুলির মধ্যে ছিল নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)-‌এর মাধ্যমে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস। জোটের সদস্যপদের শর্ত অনুযায়ী ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষার জন্য তাদের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) বাধ্যতামূলক ২ শতাংশ বরাদ্দ না করার জন্য ট্রাম্পের দ্বারা ভর্ৎসিত হয়েছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও ন্যাটোর সঙ্গে এই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে মার্কিন জোটের সদস্যরাও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট চাপের শিকার হতে পারে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর প্রচারণার সময় মার্কিন সেনাদের আতিথ্য দেওয়ার দাবি করেছিলেন। এটি বাইডেন প্রশাসনের দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যয় ভাগাভাগিতে দক্ষিণ কোরিয়ার
৮.৩ শতাংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার অতিরিক্ত।

জোটের সদস্যপদের শর্ত অনুযায়ী ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষার জন্য তাদের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) বাধ্যতামূলক ২ শতাংশ বরাদ্দ না করার জন্য ট্রাম্পের দ্বারা ভর্ৎসিত হয়েছিল।



সামরিক ব্যয় বাড়ানোর জন্য ইউরোপীয় ও এশীয় মিত্রদের উপর প্রয়োগ করা এই চাপের ফলে দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন আরও মার্কিন অস্ত্র বিক্রির জন্য চাপ দিতে পারে। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, যদি দেশগুলি তাদের সামরিক ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করে, তবে ওয়াশিংটনও জোটের শর্তে আবদ্ধ থাকবে না, বিশেষ করে ন্যাটোর ৫ অনুচ্ছেদের অধীনে। ন্যাটোর প্রতি আমেরিকার সমর্থন হ্রাসের দরুন মূল ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থাকবে ইউক্রেন। যদিও কিয়েভ ন্যাটোর আনুষ্ঠানিক সদস্য নয়, তবে এটি রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে চলতি যুদ্ধে জোটের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার অন্যতম সুবিধাভোগী। জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদের জন্য ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাছাইগুলির মধ্যে রয়েছেন ইউক্রেনে আমেরিকার দরাজ সহায়তার কট্টর সমালোচকেরা। পিট হেগসেথ, যিনি পরবর্তী সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স হতে চলেছেন, তিনি একজন ন্যাটো-সমালোচক এবং একজন চিন-বিরোধী কট্টরপন্থী। সেনেটর মার্কো রুবিও, যিনি পরবর্তী সেক্রেটারি অফ স্টেট হতে চলেছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান৷ রুবিও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সেনেটে একটি বিল স্পনসর করেছিলেন যা ভারতকে ন্যাটো, জাপান, ইজরায়েল ও দক্ষিণ কোরিয়ার সমতুল্য মিত্রে উন্নীত করার চেষ্টা করেছিল।

আমেরিকা প্রথম

ওয়াশিংটনের সামরিক জোটের ভবিষ্যতের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘‌আমেরিকা ফার্স্ট’‌ কৌশলও যুক্ত। ‘‌আমেরিকা ফার্স্ট’‌, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, অনিবার্যভাবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরুজ্জীবিত হবে। এটি প্রতিরক্ষার জন্য তাঁর ‘‌শক্তির মাধ্যমে শান্তি’‌ পদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘‌শক্তির মাধ্যমে শান্তি’‌-‌র কিছু মূল উপাদান রয়েছে। প্রথমত, এটি বৈদেশিক সংঘাতে মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততাকে ন্যূনতম পর্যায়ে সীমিত করার দিকে নিয়ে যাবে। আমেরিকা ফার্স্ট স্ট্র্যাটেজির দ্বিতীয় উপাদান হল পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি)-‌র মতো প্রায় সমকক্ষ রাষ্ট্রগুলির থেকে আমেরিকাকে বেশি শক্তিশালী করা এবং এগিয়ে রাখার জন্য ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি।

দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিতে পিআরসি-র প্রতি তাঁদের কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকতে পারেন।



দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিতে পিআরসি-র প্রতি তাঁদের কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকতে পারেন। সামরিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার জন্য
‘‌পূর্ণ বর্ণালী’‌ শক্তি সক্ষমতা বাড়ানো এবং সামুদ্রিক, সাইবারস্পেস, মহাকাশ, বায়ু ও স্থল পরিসরজুড়ে ‘‌আধিপত্য’‌ বজায় রাখা অগ্রাধিকার পাবে। আমেরিকা ফার্স্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও প্রসারিত হবে, যা দেশীয় সক্ষমতায় আরও বেশি বিনিয়োগ জড়িত করবে। মার্কিন শিল্প প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর বাইরে—প্রচলিত প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সীমান্ত প্রযুক্তি, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সাইবার, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি (কিউটি), রোবোটিক্স ইত্যাদি—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী করতে ভারতের মতো দেশে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিদেশে সামরিক বিক্রি বাড়ানোর জন্য চাপ দেবে। তবুও, তাঁর ‘‌শক্তির মাধ্যমে শান্তি’‌‌র প্রয়াসের লক্ষ্য তাঁর পূর্বসূরিদের মতো যুদ্ধ শুরু করা নয়, বরং মার্কিন কূটনীতির সমর্থনে সামরিক ক্ষমতার শক্তি ব্যবহার করার জন্য।

যুদ্ধক্ষেত্রের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে

ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স (ডিওডি) ও পেন্টাগনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলগুলির উপর
বিধিনিষেধ হ্রাসকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তার আগে বাহিনীকে সংযমের সঙ্গে শক্তি ব্যবহার করতে হত, কিন্তু ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় সেই সীমাবদ্ধতাগুলি সরানো হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের বিধিনিষেধ শিথিলকরণ ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ক্ষেত্রেও প্রসারিত করা হতে পারে, যেমন ইজরায়েল। চলতি ইজরায়েল-হামাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন দায়বদ্ধতা ও সম্পৃক্ততা, যা বাইডেন প্রশাসন থেকে ট্রাম্প উত্তরাধিকার সূত্রে পাবেন, সেখানে আরও সামরিক-ভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

ট্রাম্প ২.০ প্রতিরক্ষা নীতির জন্য চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্প ২.০-র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দগুলির সঙ্গে পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ভূচিত্রের মধ্যে তৈরি ‌হওয়া বিদেশনীতির সংঘাত। বিপদ উপলব্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প ২.০ চিনকে একটি কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখবে, এবং চিন সংক্রান্ত বিপদের প্রতি আরও সামরিক সংস্থান ও কৌশলগত মনোযোগ দেবে। যাই হোক, ইরান ও উত্তর কোরিয়া, এবং চিনের সহযোগিতায় একটি সংশোধনবাদী অভিনেতা হিসাবে রাশিয়ার উত্থান, ট্রাম্পের নিরাপত্তা গণনা এবং মার্কিন স্বার্থ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে বহুমুখী হুমকি প্রশমিত করার জন্য তাঁর প্রতিরক্ষা নীতির অনুসরণকে সমস্যাকীর্ণ করবে।


ইরান ও উত্তর কোরিয়া, এবং চিনের সহযোগিতায় একটি সংশোধনবাদী অভিনেতা হিসাবে রাশিয়ার উত্থান, ট্রাম্পের নিরাপত্তা গণনা এবং মার্কিন স্বার্থ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে বহুমুখী হুমকি প্রশমিত করার জন্য তাঁর প্রতিরক্ষা নীতির অনুসরণকে সমস্যাকীর্ণ করবে।



তাঁর প্রথম মেয়াদের বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অংশীদারেরা যাতে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায় জোটের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তা নিশ্চিত করা ট্রাম্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। প্রথম ট্রাম্প প্রশাসন যেমন মিত্রদের থেকে উল্লেখযোগ্য অবদান ব্যতিরেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা বাড়াতে অনিচ্ছুক ছিল, এবারও তার ধারাবাহিকতা দেখা যাবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট কৌশল এবং দ্বন্দ্ব-সম্পর্কিত ব্যয়ের অর্থায়নে অবদান রাখার জন্য মিত্রদের প্রতি একযোগে চাপ আরেকটি মূল চ্যালেঞ্জ হিসাবে থাকবে।



কার্তিক ব্যোমকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো।

রাহুল রাওয়াত অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti

Kartik Bommakanti is a Senior Fellow with the Strategic Studies Programme. Kartik specialises in space military issues and his research is primarily centred on the ...

Read More +
Rahul Rawat

Rahul Rawat

Rahul Rawat is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme (SSP). He also coordinates the SSP activities. His work focuses on strategic issues in the ...

Read More +