প্রাথমিক ভাবে হজকে কেন্দ্র করে আফ্রিকায় সৌদি আরবের উপস্থিতি গত ৬০ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বিস্তৃত হয়েছে, যাতে স্থিতিশীল উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
ক্রীড়া, সংস্কৃতি, খনি, তেল ও গ্যাস-সহ বিভিন্ন পারস্পরিক লাভজনক ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইজরায়েলের সঙ্গে ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তি ও ইরানের সঙ্গে পুনরায় সম্পৃক্ত হওয়ার পর সৌদি সম্প্রতি আফ্রিকায় তার কূটনৈতিক প্রচারকে জোরদার করেছে। সৌদি তার সীমিত অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে আফ্রিকায় অর্থনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
আফ্রিকার সঙ্গে তার সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৌদি ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম সৌদি-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছিল। উদ্বোধনী ভাষণে সৌদি অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান বলেছিলেন যে, সৌদি আরব ও আফ্রিকার মধ্যে ‘অভিন্ন সাধারণ ইতিহাস ও লক্ষ্য’ রয়েছে। এক দিনের সম্মেলনটি অবশ্যই কৌশলগত জোটকে শক্তিশালী করতে এবং সৌদি ও আফ্রিকান দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।
সৌদি তার সীমিত অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে আফ্রিকায় অর্থনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
সৌদি-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে কী হয়েছিল?
প্রথম সৌদি-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে ১০জনেরও বেশি রাষ্ট্রপ্রধান-সহ ৫০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপার্সন আজালি আসুমানি এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপার্সন মুসা ফাকি মাহামত এই সম্মেলনে যোগ দেন। শীর্ষ সম্মেলনের সময় সৌদি আরব ২০৩০ সাল পর্যন্ত সৌদি রফতানিতে বিমা হিসাবে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আফ্রিকান দেশগুলির উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেয়। আফ্রিকান রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৫০টিরও বেশি চুক্তি এবং ১২টি মউ স্বাক্ষর করেছে। এর পাশাপাশি আফ্রিকার জন্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কিং সলমন ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ চালু করা হয় এবং ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তা চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরব মহাদেশটিতে তার কূটনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর অভিপ্রায়ও ঘোষণা করেছে এবং নতুন দূতাবাসের সংখ্যা ২৭ থেকে ৪০টির উপরে করবে বলে ঘোষণা করেছে। সংস্কৃতি, মানবসম্পদ, সামাজিক উন্নয়ন এবং খেলাধূলার মতো সামাজিক ক্ষেত্রেও বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি সৌদি আরব ও নাইজেরিয়া কিছু বিনিয়োগমূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এ রকম একটি চুক্তিতে নাইজেরিয়ায় চারটি ক্ষতিগ্রস্ত তেল শোধনাগার সংস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কর্পোরেশন আরামকো দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে চারটি শোধনাগার পুনর্গঠন করবে। সৌদি আরব নাইজেরিয়ার দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত ভাণ্ডার পূরণ করতে এবং সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার সংস্কারকে টিকিয়ে রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত নাইজেরিয়া-সৌদি আরব বিজনেস কাউন্সিলের পুনরুজ্জীবন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা যায়।
আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা
আফ্রিকা ক্রমশ একাধিক বিশ্বশক্তির মধ্যে তীব্র সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চিন, ভারত, রাশিয়া এবং সৌদি আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), কাতার, তুর্কিয়ে-সহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পথ প্রশস্ত করতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে, কুয়েতই প্রথম আরব দেশ, যারা ২০১৩ সালের আরব-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ছিল। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইরান ২০২৪ সালে ব্রিকস-এর নতুন সদস্য হতে চলেছে এবং আফ্রিকান মানচিত্রের একটি বৃহত্তর অংশের জন্য প্রতিযোগিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।
আফ্রিকা ক্রমশ একাধিক বিশ্বশক্তির মধ্যে তীব্র সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চিন, ভারত, রাশিয়া এবং সৌদি আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), কাতার, তুর্কিয়ে-সহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পথ প্রশস্ত করতে চাইছে।
বর্তমানে, সৌদি আরব ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট শুধু মাত্র ২০১৮ সালে আফ্রিকার ২৮টি দেশে ৬৬টি প্রকল্পের জন্য ১৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল প্রদান করেছে। বন্দর সম্প্রসারণ ও সামুদ্রিক সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা দুবাই পোর্টস ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড) ইতিমধ্যেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি ১০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশে প্রকল্প পরিচালনা করছে। বিগত ১০ বছরে ডিপি ওয়ার্ল্ড আফ্রিকায় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং আরও ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইরান সত্যিকার অর্থেই আফ্রিকায় সম্প্রসারণে আগ্রহী। তেহরানের নীতিগত উদ্দেশ্য হল – যেমনটা ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রকাশ করেছিলেন - আফ্রিকার সঙ্গে তার সংযোগ উন্নত করা। রাইসি গত বছরের শুরুতে তিন দেশে সফর করেছিলেন এবং এগারো বছরে মহাদেশে ভ্রমণকারী প্রথম ইরানি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনিই। আফ্রিকা ইরানের নেতৃত্বের জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ তেহরান আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তার দুর্বল অর্থনীতির উপর মার্কিন এবং ইইউ নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব কমাতে আগ্রহী।
২০০৫ সাল থেকে তুর্কিয়ে আফ্রিকার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করে আফ্রিকার একটি উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের মতোই তুর্কিয়ে ইতিমধ্যে তিনটি আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের মতো সফট পাওয়ারের পাশাপাশি তুর্কিয়ের লক্ষ্য হল বিভিন্ন কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে মহাদেশটিতে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা। গত পনেরো বছরে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান তিরিশটিরও বেশি আফ্রিকান দেশে সফর করেছেন এবং তুর্কিয়ের জন্য আফ্রিকার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি আফ্রো-ইউরেশিয়ার অংশ হিসাবে তুর্কিয়ের কথা উল্লেখ করেন।
আফ্রিকায় সৌদির বর্তমান উপস্থিতি
আফ্রিকায় বিনিয়োগ অবশ্যই রিয়াধের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে এ বার মনে করা হচ্ছে যে, সৌদিরা আফ্রিকার প্রতি নিজেদের আক্রমণাত্মক নরম কূটনীতির মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশে জমি খুঁজে পেতে বদ্ধপরিকর। তাই এই শীর্ষ সম্মেলন পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় আরও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনে সৌদি আরবের আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরে।
বর্তমানে সৌদি প্রাথমিক ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে (হর্ন অফ আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা এবং মাগরেবে) সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে। আফ্রিকায় সৌদির দুই প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হল দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিশর। সৌদি আফ্রিকায় রাবার, রাসায়নিক, ভোগ্যপণ্য, খনিজ, ধাতু এবং খাদ্য পণ্য রফতানি করে আর অন্য দিকে আফ্রিকা থেকে প্রধানত ধাতু, কাঁচামাল, শাকসবজি, পাথর ও কাচের পণ্য আমদানি করে। ২০২২ সালে সৌদি ও আফ্রিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৫.৯৬ শতাংশ থেকেছে এবং আফ্রিকায় সৌদির তেল ব্যতীত অন্য দ্রব্য রফতানির পরিমাণ বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর পাশাপাশি, সৌদি আরব আফ্রিকান দেশগুলির সঙ্গে ঋণ হ্রাস এবং বিরোধ নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে ২০২০ সালে তার জি২০ সভাপতিত্বের সময় সৌদি আরব আফ্রিকার জন্য ঋণ পরিষেবার বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার পক্ষে কথা বলেছিল। আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, সৌদি ঘানা এবং অন্য কিছু বন্ধুত্বপূর্ণ আফ্রিকান দেশকে নিজেদের ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন অর্থায়নের ব্যবস্থা বিবেচনা করছে।
আফ্রিকার জন্য সৌদি পরিকল্পনা
সৌদি আরব একটি উদীয়মান আন্তর্জাতিক শক্তিকেন্দ্র, যা ব্রিকস জোটে তার অন্তর্ভুক্তিতেই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালে সৌদি আরব তার ভিশন ২০৩০ প্রকাশ্যে এনেছে, যেটিতে তেল সম্পদের উপর নির্ভরতা কমাতে একটি ভূ-অর্থনৈতিক কৌশল এবং দেশটির অর্থনীতিকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, খেলাধূলা, পর্যটন, লজিস্টিকস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তোলার কথা বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে, এই নীলনকশার বাস্তবায়নের জন্য দেশটিতে প্রচুর অংশীদারের প্রয়োজন। সুতরাং স্থিতিশীল অংশীদারিত্ব, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য সৌদি আরও বেশি করে আফ্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রদর্শন করেছে।
সৌদি আরব একটি উদীয়মান আন্তর্জাতিক শক্তিকেন্দ্র, যা ব্রিকস জোটে তার অন্তর্ভুক্তিতেই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বহুমেরুকরণের মধ্যেই সৌদি আরব আফ্রিকাকে একটি অপরিহার্য মিত্র বলে মনে করে। সৌদিরা সাব-সাহারান আফ্রিকায় তার কূটনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করছে। কিং সলমন এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সলমন ক্ষমতায় আসার পর আফ্রিকা থেকে অসংখ্য রাষ্ট্রপ্রধান সৌদিতে সফর করেন, যা সৌদি আরব এবং আফ্রিকান দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতারই ইঙ্গিত দেয়। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে একাধিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগও পরিচালিত হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই রেয়াতি অর্থায়ন ৪৪টিরও বেশি আফ্রিকান দেশে নানাবিধ প্রকল্প বিকাশে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও সৌদি আরব ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রধান দাতা।
কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব তার অভ্যন্তরীণ শিল্পের সমৃদ্ধি সক্ষম করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বিশ্বকে নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা ও দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির কৌশল তৈরি করেছে। আফ্রিকার অর্থনীতি এবং সংস্থানের ভিত্তিগুলিতে এ হেন অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করা উভয়ের সামনেই একটি দারুণ সুযোগ উপস্থাপন করে। মহাদেশটিতে সৌদি বিনিয়োগ অর্থাৎ বিনিয়োগের উপর পারস্পরিক লাভ অর্জনের অপার সম্ভাবনা-সহ আসলে সৌদির চিরাচরিত শিল্প থেকে রাজপাট দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বিশেষ দক্ষতার এক নতুন বৃহত্তর আঙ্গিকের দিকে চালিত হওয়ার স্পষ্ট সূচক।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কট সৌদি আরবকে তার প্রভাব শক্তিশালী করার এবং ওয়াশিংটনের উপর কম নির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এর আগে রিয়াধ সুদানের যুদ্ধরত জেনারেলদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য সৌদি আরবের অন্বেষণ বিদ্রোহের দরুন আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) থেকে বহিষ্কৃত গ্যাবন, নাইজার এবং সুদানের মতো দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াস থেকেও স্পষ্ট। তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সৌদি আরব পশ্চিমের কাছে এই স্পষ্ট বার্তাই পাঠিয়েছে যে, তারা পশ্চিমীদের অভ্যুত্থানবিরোধী নীতিগুলিকে উপেক্ষা করছে।
সামনের পথ
সৌদি আরবের মহান পরিকল্পনায় আফ্রিকার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা উপস্থাপিত হয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আফ্রিকায় হলেও অনাবিষ্কৃত শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। সৌদি আরব তার বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সংযোগে একটি বিস্তৃত সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি আফ্রিকায় তার সফট পাওয়ারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য রাখে। প্রকৃতপক্ষে কিংডমস ভিশন ২০৩০ এবং আফ্রিকান অ্যাজেন্ডা ২০৬৩-কে সমন্বিত করার জন্য সুযোগের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র খতিয়ে দেখা যেতে পারে। সেই অর্থে এই শীর্ষ সম্মেলনটি আফ্রিকার প্রতি সৌদির বিদেশনীতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে। অন্য দিকে, এই সম্পর্ক আফ্রিকার উন্নয়ন ও সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দিতে পারে। সৌদি-আফ্রিকা সম্পর্ক কতটা সম্প্রসারিত হবে তা সময় বললেও আপাতত এ কথা স্পষ্ট যে, রিয়াধ এমন একটি সম্পর্কের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যে সম্পর্কটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব আগামী বছরগুলিতে বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে।
সমীর ভট্টাচার্য বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.