Published on Nov 02, 2024 Updated 0 Hours ago

নিরাপত্তা অভিবাসনের মতো আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবিলায় তালিবানের ব্যর্থতা তাদের স্বীকৃতির বিষয়টিকে বাধা দিয়েছে এবং বহুপাক্ষিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

তালিবানের প্রতিবেশ নীতি অনুধাবন

২০২১ সালের গস্ট মাসে তালিবান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন প্রায় কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি যে, তারা আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন ছাড়াই কাবুল জয় করতে সক্ষমতালিবান ক্ষমতায় আসায় প্রাথমিক দিন মাসগুলিতে পাকিস্তানকে তালিবানের নিকটতম প্রতিবেশী বলে মনে হয়েছিল। যাই হোক, পাকিস্তান যে আসলে সদ্য ক্ষমতায় আসা প্রতিবেশী দ্বারা সৃষ্ট অসংখ্য সমস্যার দ্বারা নিজে জর্জরিত, তা প্রকাশ্যে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। জাতিগত উত্তেজনা সীমান্ত অঞ্চল থেকে বড় শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্বাস্তুদের ক্রমাগত আগমন আসলে পাকিস্তানের তালিবানদের প্রতিবেশী হওয়ার অসুবিধাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

শুরু থেকেই ইরান বেশ বিভ্রান্তিতে ভুগছিলইরানের সরকার তালিবানের বিজয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় এবং বিদেশি বাহিনীর বিতাড়ন হিসাবে চিত্রিত করতে চাইলেও, কান্দাহারকে তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষর মধ্যে অবস্থান করানোর চেষ্টা করেছিল। এর পাশাপাশি ইরানের নাগরিক সমাজ, বিশেষ করে এর শিক্ষাবিদরা তালিবানকে শিয়া ইসলাম, ফার্সি ভাষা এবং আফগান নারী ও মেয়েদের অধিকারের প্রতি বিদ্বেষী শক্তির উত্থান হিসেবে এবং ইরান একটি অভিন্ন সাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাগ করে নেওয়া অন্য দেশগুলির জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি হিসাবেই মনে করেছিলেন। ইরানি শিক্ষাবিদরা তালিবানের কথা ও কাজ সম্পর্কে যে যুক্তি দর্শিয়েছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটিই আদতে ঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং তালিবানরা ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জাতিগত উত্তেজনা সীমান্ত অঞ্চল থেকে বড় শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্বাস্তুদের ক্রমাগত আগমন আসলে পাকিস্তানের তালিবানদের প্রতিবেশী হওয়ার অসুবিধাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

তালিবানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী অর্থাৎ তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের প্রথম দিকে ইসলামিক মৌলবাদ বিস্তারের ভয় ছিল এবং কাবুলের সঙ্গে কোন ধরনের মিথস্ক্রিয়া থেকে তারা বিরত ছিল। যদিও ধীরে ধীরে চরমপন্থী মতাদর্শগুলি আইএসআইএস-খোরাসানের আকারে ভিত্তি লাভ করে এবং তারা তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা, সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক মিথস্ক্রিয়া অনুসরণ করে। এর পাশাপাশি তারা বিশ্বাস করে যে, এ হেন সম্পৃক্ততা আরও বেশি ক্ষতি প্রতিরোধ করবে। যাই হোক, গত তিন বছরে শুধুমাত্র তাদের জন্য নিরাপত্তার উন্নতি হয়নি। এর পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালিবানের জল সম্পদ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলি প্রতিবেশী সরকারগুলির উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সঙ্কট এই দেশগুলির নিরাপত্তার উদ্বেগকে আরও জটিল করেছে।

আফগানিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে স্বল্প অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে চিনের। চিন শুরু থেকেই তালিবানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে এবং দুই রাজধানীর মধ্যে বিনিময়, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, খনিতে বিনিয়োগ, পরিবহণ বিভাগ সম্প্রসারণ পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা মসৃণ ভাবে এগিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত তিন বছরে আফগানিস্তানে কোন চিনা প্রকল্প গুরুত্বের সঙ্গে কি আদৌ বাস্তবায়িত হয়েছে? চিন কেন ইসলামি আমিরাতকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে? প্রজাতন্ত্রের সময়ের তুলনায় বেজিং এবং কাবুলের মধ্যে সম্পর্ক কি সত্যিই উন্নত হয়েছে?

আফগানিস্তানের দূরবর্তী প্রতিবেশী কথাও ধরা যাক। দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ভারত; উত্তরে রাশিয়া; পশ্চিমে তুর্কিয়ে; এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে পারস্য উপসাগরের আরব রাজ্যগুলিকে আফগানিস্তানের দূরবর্তী প্রতিবেশী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তালিবানরা বিভিন্ন পরিসর জুড়ে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আলোচনায় নিযুক্ত হয়েছে। বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিরও বিনিময় হয়েছে। যাই হোক, গত তিন বছরে ঘনিষ্ঠ বা দূরবর্তী প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউই তালিবানের প্রাথমিক মিত্র হতে পারেনি, কাবুলে ইসলামি আমিরাতকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেনি এবং তালিবানের সঙ্গে সম্প্রসারিত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি।

গত তিন বছর ধরে আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকরা কোন নির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি ছাড়াই প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করেই সন্তুষ্ট বোধ করছেন

কিন্তু আসল সমস্যাটা কোথায়? তালিবানের আঞ্চলিক সম্পর্কের এই স্থবিরতার উৎস কী?

প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তালিবানরা এখনও তাদের শাসন পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ইসলামি আমিরাতকে একটি অন্তর্বর্তী সরকার হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং মূলত কাবুলে তারা এখনও কোন প্রশাসনিক ক্ষমতায় বসেনি যা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। আগের সংবিধান বাতিল করা হলেও নতুন কোন আইন প্রতিস্থাপিত হয়নি। গত তিন বছর ধরে আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকরা কোন নির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি ছাড়াই প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করেই সন্তুষ্ট বোধ করছেন

অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে এবং উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করার জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে একটি দেশকে প্রথমে তার অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিধি নির্ধারণ করতে হবে। গত তিন বছরে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক কাঠামো বা এর উন্নয়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা বা বাস্তবায়ন করা হয়নি, যার ফলে দরিদ্র ও সংগ্রামী মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এমনকি যৌথ অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের আগে আফগান সমাজের মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তালিবানরা আজ যাকে নিরাপত্তা বলে অভিহিত করে, তা হল সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী ও শ্রেণির দমন। তবুও কৃষক থেকে শুরু করে নারী পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নানাবিধ অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে এবং এমন একটি দিনও আসে না, যে দিন দেশের কোনও না কোনও স্থান থেকে সশস্ত্র সংঘর্ষের খবর উঠে আসে না।

অন্য দিকে, তিন বছর পরও তালিবানরা এখনও সে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে এবং প্রতিষ্ঠিত প্রথা, আইন ও ইসলামি রিয়তের সঙ্গে সংঘর্ষের উপজাতীয় ঐতিহ্য প্রয়োগ করে আসলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে চলেছে।

তালিবানরা ভাল করেই জানে যে, তারা কেবল দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন জোট গঠনে বাধা দিয়ে টিকে থাকতে পারে।

তা সত্ত্বেও কাবুল এবং কান্দাহারের শাসকরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বিন্যাস অনুসরণ করেছে। তারা অন্য আফগান রাজনৈতিক ও সামাজিক দল এবং গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিলেও এবং তাদের প্রতিপক্ষকে কঠিন পরিস্থিতিতে রাখলেও নিজেদের প্রতিবেশী সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার একটি মডেল গ্রহণ করেছে। তালিবানরা ভাল করেই জানে যে, তারা কেবল দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন জোট গঠনে বাধা দিয়ে টিকে থাকতে পারে। এই কারণেই তারা সর্বদা বহুপাক্ষিক আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে বা নেহাতই অনিচ্ছায় এই জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে এবং ক্রমাগত তাদের নিকট, দূরবর্তী প্রতিবেশী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে শুধু মাত্র দ্বিপাক্ষিক আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছে।

যাই হোক, মূল বিষয় হল তালিবানের সঙ্গে প্রতিবেশীদের যে সমস্যাগুলি রয়েছে, তা আদতে সম্মিলিত প্রকৃতির। অভিবাসন, আন্তঃসীমান্ত জল, মাদক পাচার, পরিবেশ, চরমপন্থী গোষ্ঠী, নিরাপত্তা অন্যান্য বিষয়ের আঞ্চলিক প্রভাব রয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সর্বদা সর্বাত্মক সমাধান পাওয়া যায় না। অতএব, মনে করা হচ্ছে আফগানিস্তানের নিকটবর্তী দূরবর্তী প্রতিবেশীরা শুধুমাত্র যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জন করবে।

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) আফগানিস্তানের প্রায় সমস্ত প্রতিবেশীকে পূর্ণ সদস্য বা আলোচনার অংশীদার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসসিও-র মধ্যে একটি আফগানিস্তান যোগাযোগ গোষ্ঠী গঠিত হলেও তা এখনও সঠিক ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। যোগাযোগ গোষ্ঠীকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং প্রতিবেশীদের সম্মিলিত দাবি অনুসরণ করা নিঃসন্দেহে বিগত তিন বছরের তুলনায় তাদের জন্য আরও বেশি ফলাফল প্রদান করবেকারণ সম্ভবত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার যুগের অবসান হয়েছে এবং আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করার সময় এ বার ঘনিয়ে এসেছে।

 


মন্দনা তিশেহিয়ার তেহরানের আলামে তাহতাবাই ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব রিজিওনাল স্টাডিজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.