২৬ জুলাই মলদ্বীপের ৫৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ মুইজ্জু "অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব"-এর গুরুত্বের উপর জোর দেন, এবং দেশটির অর্থনীতিকে সহযোগিতা ও শক্তিশালী করার জন্য ভারত ও চিনকে ধন্যবাদ জানান। এই সর্বশেষ ঘটনাটি তখন ঘটেছে যখন দেশের অর্থনীতি একটি গুরুতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ভাসমান থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে সঙ্কটটি দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়েছে, এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরে যখন মুইজ্জু প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন তখন অর্থনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যেই ছিল। যাই হোক, ক্ষমতায় আসার নয় মাস পরে মুইজ্জু এই চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। সরকার কিছু সংস্কার শুরু করলেও বাহ্যিক ধাক্কাগুলির বিরুদ্ধে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল বা অনাক্রম্য করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে, এবং ভারত ও চিনের মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্য দেশটি নিজেকে অরক্ষিত করে তুলছে।
সংকট তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে
মলদ্বীপের সঙ্কট দীর্ঘকাল ধরে তৈরি হয়েছে এবং তা এর কাঠামোগত সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রায় ১,২০০ দ্বীপের একটি দেশ হিসাবে এর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য কম এবং উৎপাদন ভিত্তি সংকীর্ণ। এর প্রাথমিক আয়ের উৎস হল পর্যটন, আমদানি এবং সবুজ ও সম্পত্তি কর। যাই হোক, একের পর এক সরকার তাদের রাজনৈতিক চাহিদা ও ভোটার-ভিত্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে মেগা-পরিকাঠামো, আবাসন প্রকল্প, সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প, ভর্তুকি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ এবং আমলাতান্ত্রিক সম্প্রসারণের পক্ষে ওকালতি করেছে। বছরের পর বছর ধরে দেশটি ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে অনুদান ও ঋণের মাধ্যমে। যাই হোক, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বাহ্যিক ধাক্কাগুলি এর রাজস্ব ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভকে প্রভাবিত করেছে, যার ফলে আগেকার ইব্রাহিম সোলি সরকার ব্যক্তিগত ঋণদাতা এবং ভারতের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিল। ফলস্বরূপ, মলদ্বীপের মোট ঋণের পরিমাণ ২০১৮ সালের ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এভাবে, রাষ্ট্রের উপর এমন সময়ে আরও বেশি ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছিল যখন দেশটি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন (২০১৩-২০১৮)-এর সময়ে বেসরকারি ঋণদাতা ও চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে।
মলদ্বীপের সঙ্কট দীর্ঘকাল ধরে তৈরি হয়েছে এবং তা এর কাঠামোগত সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রায় ১,২০০ দ্বীপের একটি দেশ হিসাবে এর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য কম এবং উৎপাদন ভিত্তি সংকীর্ণ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমদানি বৃদ্ধি এবং মাছ রপ্তানি ও পর্যটন রাজস্ব হ্রাস-সহ মুইজ্জুর অধীনে অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করেছে। অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা জানা সত্ত্বেও মুইজ্জু বাজেট ঘাটতি বজায় রেখেছিলেন। প্রসঙ্গত, সরকার তার প্রাথমিক দিনগুলিতে বাজেট সহায়তায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য রেখেছিল। তদুপরি, রাজনৈতিক কারণে সরকার ৩০০ জনেরও বেশি মন্ত্রী নিয়োগ করেছে এবং (অভিযোগ অনুসারে) ২,০০০টি রাজনৈতিক নিয়োগ করেছে, যার ফলে প্রতি মাসে ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় হচ্ছে।
তবে, দেশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ উদ্ভূত হয় ক্রমাগত ঋণ নেওয়া এবং পরিশোধের সময় এসে-পড়া ঋণ থেকে। ২০২৪ সালের মার্চে মলদ্বীপের বিস্ময়কর ঋণ-জিডিপি অনুপাত হল ১১০ শতাংশ। মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ঋণগুলির মধ্যে ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, আর্থিক কর্পোরেশন ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের আকারে এই দেশীয় ঋণগুলির সুদের হার উচ্চ এবং পরিশোধের সময় কম। বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে তিনটি বিশিষ্ট ঋণদাতা হল (সারণী ১ দেখুন) বন্ডহোল্ডার, চায়না এক্সিম ও ইন্ডিয়া এক্সিম। উপরন্তু, বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও সার্বভৌম গ্যারান্টি (এসজি) আকারে বৈদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে (টেবল ২ দেখুন) ঋণ নিয়েছে। এই এসজি-গুলির প্রায় ৭০ শতাংশ চিনা ঋণদাতাদের দ্বারা এবং ১৮ শতাংশ ভারতীয় এক্সিম দ্বারা অর্থায়িত। উভয় ক্ষেত্রেই চিনা ঋণের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে যখন ভারতীয় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা বোঝায় যে বেশিরভাগ চিনা ঋণ এবং কিছু বহিরাগত বন্ড পরিশোধিত হচ্ছে।
সারণী ১। মলদ্বীপের কেন্দ্রীয় সরকারের (বিসিজি) ঋণের জন্য বহিরাগত ঋণদাতা
ঋণদাতা
|
২০২১ (এপ্রিল-জুন)
|
২০২১ (অক্টোবর-ডিসেম্বর)
|
২০২২ (এপ্রিল-জুন)
|
২০২২
(অক্টোবর-
ডিসেম্বর)
|
২০২৩ (এপ্রিল-জুন)
|
২০২৩ (অক্টোবর- ডিসেম্বর)
|
২০২৪ (জানুয়ারি- মার্চ)
|
বন্ডহোল্ডার (বহির্দেশীয়)
|
৩৫৭
মিলিয়ন
|
৫৫৯
মিলিয়ন
|
৫০০
মিলিয়ন
|
৫০০
মিলিয়ন
|
৫০০
মিলিয়ন
|
৫০১
মিলিয়ন
|
৫০১
মিলিয়ন
|
চায়না এক্সিম
|
৬১৩
মিলিয়ন
|
৬৬৫
মিলিয়ন
|
৬২৬
মিলিয়ন
|
৫৮৯
মিলিয়ন
|
৫৫৩
মিলিয়ন
|
৫৩১
মিলিয়ন
|
৫০১
মিলিয়ন
|
ভারতীয় এক্সিম
|
১৫
মিলিয়ন
|
৯২
মিলিয়ন
|
১২৯
মিলিয়ন
|
২১৬
মিলিয়ন
|
২৮৩
মিলিয়ন
|
৪০৮
মিলিয়ন
|
৪৩৮
মিলিয়ন
|
সূত্র: ডেট বুলেটিন, (২০২৪, কোয়ার্টার ১), অর্থ মন্ত্রক, মলদ্বীপ
সারণী ২। মলদ্বীপের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি (এসজি) ঋণের জন্য বহিরাগত ঋণদাতা
ঋণদাতা
|
এসজি ঋণের পরিমাণ (এপ্রিল-জুন ২০২২)
|
এসজি ঋণের পরিমাণ (জানুয়ারি -মার্চ ২০২৪)
|
শতাংশ (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪)
|
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক অফ চায়না (আইসিবিসি)
|
৩৭৬
|
২৭৯
|
৩২%
|
এক্সিম ভারত
|
২৯
|
১৫৮
|
১৮%
|
এক্সিম চিন
|
১৯২
|
১৩৭
|
১৬%
|
চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (সিডিবি)
|
১১৬
|
১৩১
|
১৫%
|
ইন্টারনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি)
|
৫৬
|
১১২
|
১৪%
|
ব্রাউনস-চায়না মেশিনারি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোঅপারেশন (সিএমইসি)
|
-
|
৩৯
|
৫%
|
ডংফাং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (ডিইআইসি)
|
২৯
|
১৫
|
২%
|
সূত্র: ডেট বুলেটিন, (২০২৪, কোয়ার্টার ১), অর্থ মন্ত্রক, মলদ্বীপ
সংস্কার ও ঋণ পুনর্গঠন
কাঠামোগত সমস্যাগুলির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধের সময় এসে-যাওয়া ঋণ মিলিতভাবে দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব হ্রাসে অবদান রাখছে। মে মাসের শেষ নাগাদ মলদ্বীপের রিজার্ভ ৪৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবহারযোগ্য। বিশ্বব্যাঙ্ক অনুমান করে যে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঋণের প্রেক্ষাপটে টিকে থাকার জন্য ৫১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক রিজার্ভ প্রয়োজন হবে, আর ২০২৬ সালের জন্য সরকারের রিজার্ভের প্রয়োজন হবে ১.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিছু এসওই এমনকি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করাই বন্ধ করে দিয়েছে, এবং সরকারের ব্যয় কমাতে নয়টি দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
কাঠামোগত সমস্যাগুলির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধের সময় এসে-যাওয়া ঋণ মিলিতভাবে দ্রুত বৈদেশিক রিজার্ভ ও রাজস্ব হ্রাসে অবদান রাখছে।
পরের বছর থেকে যে রিডেম্পশন প্রোফাইলে প্রাধান্য থাকবে বৈদেশিক ঋণের, তা বিবেচনা করে, সরকার ঋণ পুনর্গঠনে ভারত ও চিনের সাহায্য চেয়েছে। চিন ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রস্তাব দিয়েছে, এবং সম্প্রতি মলদ্বীপের সমস্ত সুদ ও মূল অর্থপ্রদানের জন্য পাঁচ বছরের বাড়তি সময় (মুইজ্জুর মেয়াদের শেষ পর্যন্ত পড়ুন) দেওয়ার জন্য তার প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে। যাই হোক, চিনের দেওয়া সার্বভৌম গ্যারান্টিগুলির উপর ঋণ পুনর্গঠন সম্পর্কে কোনও স্পষ্টতা নেই। অন্যদিকে, ভারত গত বছর মলদ্বীপকে ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে, এবং এই বছর আরও ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় এক্সিম এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিতরণ করেছে; তবে মলদ্বীপের জন্য নির্ধারিত ৬৫ শতাংশের বেশি ভারতীয় ঋণ এখনও বিতরণ করা হয়নি। মে মাসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধকে সময় হয়ে যাওয়ার পরে এক বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। মলদ্বীপ উভয় দেশের সঙ্গে মুদ্রা অদলবদল (কারেন্সি সোয়াপ) চুক্তি স্বাক্ষর এবং স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার সম্ভাবনাও অন্বেষণ করছে। ভারতের তরফে তাদের ক্রেডিট লাইন প্রাপ্তিযোগ্য করতে সাহায্য করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
অদূরদর্শিতা এবং মহাশক্তি রাজনীতি
যাই হোক, এই পদ্ধতিটি অপ্রতুল এবং অদূরদর্শী বলে মনে হচ্ছে। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, যা বেশিরভাগ বিদ্যমান ঋণ ও তাৎক্ষণিক রিডেম্পশন প্রোফাইল তৈরি করে সেই অভ্যন্তরীণ ও অ-দ্বিপাক্ষিক ঋণগুলির (যেমন বাহ্যিক বন্ড) ব্যবস্থাপনার জন্য দেশটির কোনও নীতি নেই । নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মুইজ্জু প্রশাসন রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কিছু উদ্যোগ শুরু করেছে। এটি শুল্ক ও কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি আইন পাস করেছে, এবং এর মাধ্যমে ৫১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব পুনরুদ্ধার করবে। সরকার এসওই-র আধুনিকীকরণ এবং অন্যদের দ্রবীভূত বা একীভূত করার মাধ্যমে সংস্কার করতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের পরিবর্তন এবং ভর্তুকির লক্ষ্যমাত্রা ও সরাসরি স্থানান্তরের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। মালের বাণিজ্যিক বন্দরে অর্থপ্রদান মার্কিন ডলারে সংগ্রহ করা হচ্ছে, এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং পরিকাঠামো তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি উন্নয়ন ব্যাঙ্ক শীঘ্রই চালু হবে।
দ্বিতীয়ত, চিনের থেকে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের জন্য মুইজ্জুর আকাঙ্ক্ষা, এবং অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় ও বিভিন্ন মেগা-পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরি করার সুযোগের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের ব্যবহার, এই ঋণের স্তূপ অব্যাহত রাখবে এবং কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলিকে বাড়িয়ে তুলবে। যেমন, মুইজ্জু অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে বাঙ্কারিং, ট্রান্সশিপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা চালু করতে আগ্রহী। এই পরিষেবাগুলিকে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় তাদের বিদ্যমান ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিপক্ষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। মুইজ্জু বিমানবন্দরের সংখ্যা ১৬ থেকে ৩১-এ উন্নীত করছেন এবং দূরবর্তী দ্বীপগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য তিনটি নতুন সেতু নির্মাণ করছেন। সরকার একটি মনোরেল ব্যবস্থা, জলের নিচে টানেল, এবং বেশ কয়েকটি দ্বীপ পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব করেছে। সরকার ১০০,০০০-এর বেশি আবাসন ইউনিট তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে — উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশে ৪০,০০০ এবং রাসমলে ৬৫,০০০। এই প্রকল্পগুলি ঋণ বাড়াবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঋণের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। বিশেষ করে চিনের ঋণ যাঁরা মুইজ্জুর পর ক্ষমতায় আসবেন তাঁদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিনিয়োগ ও তহবিলের এই প্রয়োজনীয়তা মলদ্বীপকে এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতার নিরিখে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ঋণ পুনর্গঠন ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিন মলদ্বীপে রাস্তা ও বাড়ি নির্মাণ এবং পরিকাঠামো উন্নত করা বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাব দিয়ে তার উপস্থিতি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটি ইউটিএফ-এ একটি কৃষি অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে ভারতের কৌশলগত উপস্থিতির মোকাবিলা করতে শুরু করেছে, যেখানে পূর্বেই একটি নৌবন্দর তৈরি করা হয়েছিল। সেইসঙ্গেই চিন কাধধু বিমানবন্দরেরও আধুনিকীকরণ করছে, যেখানে ভারতীয় বেসামরিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল একটি ভারতীয় হেলিকপ্টার চালনা করছে। যাই হোক, মুইজ্জু প্রশাসন এখন বেজিংকে প্রদত্ত ঋণের দ্রুত পুনর্গঠন করতে রাজি করানোয়, চিন দেশটিতে তার উপস্থিতি আরও বাড়ানোর জন্য আলোচনার সুবিধা নেবে। এবং তা যে সব সময় মেগা-পরিকাঠামো প্রকল্পের আকারে হবে, তা নয়।
বিনিয়োগ এবং তহবিলের এই প্রয়োজনীয়তা মলদ্বীপকে এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতার নিরিখে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
অন্যদিকে, ভারত দ্বিতীয় শীর্ষ বৈদেশিক ঋণদাতা হওয়ায়, মলদ্বীপের কর্তৃত্ব ক্রমবর্ধমানভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এইভাবে দেশটি দিল্লির প্রতি আরও সংবেদনশীলতা দেখাতে পারে, এবং এর চিনপন্থী ঝোঁককে কমিয়ে দিতে পারে। ভারতের পক্ষ থেকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ৮ আগস্টের মলদ্বীপ সফর দিল্লির তরফে সঙ্কট থেকে উত্তরণ এবং নিছক কাজের সম্পর্কের বাইরে যাওয়ার প্রয়াসের উপর জোর দিয়েছে। এই সফরটিও ছিল এমন সময়ে যখন এসবিআই-এর ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আরেকটি ট্রেজারি বিল সেপ্টেম্বরে পরিশোধযোগ্য হতে চলেছে৷ দিল্লি এইভাবে সহযোগিতা ও প্রকল্পগুলির নতুন ক্ষেত্রগুলি অন্বেষণ করছে, এবং থমকে-থাকা আড্ডু পুলিশ অ্যাকাডেমি, ভারতীয় কনস্যুলেট, ইউটিএফ বন্দর, এইচআইসিডিপি সম্পর্কে এবং ভারতীয় প্রকল্পগুলির চারপাশে চিনা উপস্থিতি বৃদ্ধির মতো উদ্যোগগুলির বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া আশা করছে৷
মলদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট এখনও পর্যন্ত মুইজ্জুর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে। যাই হোক, একটি স্থিতিস্থাপক অর্থনীতির উন্নয়ন বা অ-দ্বিপাক্ষিক ঋণ মোকাবিলা করার জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। চিন থেকে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড এবং দেশের পরিকাঠামো ও পরিষেবাগুলিতে প্রচুর বিনিয়োগের পরিকল্পনা ইঙ্গিত দেয় যে কাঠামোগত সমস্যাগুলি আরও বাড়তে থাকবে। ফলে এ অঞ্চলে চলতি ভারত-চিন প্রতিযোগিতার জন্য মলদ্বীপ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
দ্রষ্টব্য: ইউএসডি-এর মান অনুমাননির্ভর
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.