Author : Ramanath Jha

Published on Jul 01, 2023 Updated 0 Hours ago

সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন মহারাষ্ট্রের শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে

শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির উপর বাড়তি চাপ: জল ও বিদ্যুতের মূল্যের উচ্চ হার

মহারাষ্ট্র স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড কোম্পানি (এমএসইডিসিএল)–র সাম্প্রতিক মূ্ল্যবৃদ্ধি এবং মহারাষ্ট্র সরকারের সেচ বিভাগ দ্বারা একই ধরনের  মূল্যহারের সংশোধন ইতিমধ্যেই তহবিলের অভাবে ভুগতে থাকা শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির (ইউএলবি) কাজ আরও কঠিন করে তুলবে। শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির নাগরিকদের উপর আরোপ করার মতো কর ও চার্জের সংস্থানটি আকারে ছোট, এবং সমস্যাটি আরও জটিল হয় তাদের আর্থিক ভান্ডারের সামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধির অভাবের কারণে।  স্থানীয় কাউন্সিলররা পৌর নির্বাচনের সময় প্রতিক্রিয়ার ভয়ে পুরসভার করের কোনও বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রতিহত করেন। এই রকম পরিস্থিতিতে পৌর সংস্থাগুলি মনে করবে যে তাদের উপর রাজ্য ও আধা–রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি আরও বোঝা চাপাচ্ছে, যা তাদের পক্ষে খরচ চালানো আরও কঠিন করে তুলছে। এর পরিণতি অনিবার্যভাবে রাজ্যের শহুরে জীবনযাত্রার মানের পতন। এই নিবন্ধে পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (পিএমসি)–এর উদাহরণের মাধ্যমে শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির দুর্দশার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি প্রতিটি রাজ্যেই পর্যায়ক্রমে আসে, এবং তা ভারতের শহরগুলির জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।

জলের শুল্ক ও সেচ
সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকারের সেচ বিভাগ পিএমসি–কে বলেছে মহারাষ্ট্র সরকারের মালিকানাধীন বাঁধ থেকে টেনে নেওয়া জলের জন্য তাদের শিল্পের প্রদত্ত হারের সমান মূল্য দিতে হবে। সেচ বিভাগের ‘‌নির্ধারিত প্রক্রিয়া’‌র পরে ২৯ মার্চ ২০২২ তারিখের মহারাষ্ট্র জলসম্পদ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এমডব্লিউআরআরএ) একটি ভিডিও আদেশের মাধ্যমে নতুন হারগুলি আরোপ করা হয়েছে। নির্ধারিত সংশোধিত হারগুলি হাজার লিটারপ্রতি গৃহস্থালির জল ব্যবহারের জন্য ০.৫৫ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ২.‌৭৫ টাকা বাল্ক ওয়াটার ট্যারিফ নির্ধারণ করেছে। তবে শিল্পের মূল্যহার — প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ১১ টাকা, কাঁচামাল হিসাবে জল ব্যবহারকারী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের জন্য ১৬৫ টাকা এবং শিল্প ইউনিটগুলিতে গার্হস্থ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ০.৫৫ টাকা — অনেক বেশি। সেচ বিভাগ এতদিন পৌর সংস্থাগুলির জন্য জল তোলার মোট পরিমাণকে ৮০ শতাংশ গার্হস্থ্য ও ২০ শতাংশ বাণিজ্যিক হিসাবে দুই ভাগে ভাগ করত। এখন এটি ২০ শতাংশ বাণিজ্যিক জলকে দ্বিখণ্ডিত করেছে ১৫ শতাংশ বাণিজ্যিক ও ৫ শতাংশ শিল্প ব্যবহার্য হিসাবে, এবং উভয়ের জন্য পৃথক হার (ভারতীয় মুদ্রায় হাজার লিটার প্রতি যথাক্রমে ২.৭৫ এবং ১১ টাকা) নির্ধারণ করেছে৷ অতএব, পিএমসি–কে ১৫ শতাংশ বাণিজ্যিক জলের জন্য অভ্যন্তরীণ হারের পাঁচগুণ এবং ৫ শতাংশ শিল্পের জলের জন্য ২০ গুণ টাকা দিতে হবে। এই পরিবর্তনগুলির যোগফলের অর্থ হল পৌর সংস্থাগুলির জন্য জলের বিল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে চলেছে৷

পৌর সংস্থাগুলি মনে করবে যে তাদের উপর রাজ্য ও আধা–রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি আরও বোঝা চাপাচ্ছে, যা তাদের পক্ষে খরচ চালানো আরও কঠিন করে তুলছে।

সেচ দফতরের আধিকারিকরা দাবি করেছেন যে পিএমসি তাঁদের বাঁধ থেকে যে জল  সংগ্রহ করে তার জন্য ৪৩ কোটি টাকা দিতে হবে। পৌর কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ বার্ষিক কোটা হল ১১.৫ টিএমসি (হাজার মিলিয়ন বা ১ বিলিয়ন ঘনফুট)। যাই হোক, এই সিদ্ধান্ত দুই দশকেরও বেশি আগে নেওয়া হয়েছিল, এবং তা অপরিবর্তিত থেকে গেছে। ইতিমধ্যে শহরটির জনসংখ্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়েছেন, এবং এখন আনুমানিক ৪.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যাকে পরিষেবা দিতে হয়। অতএব, বরাদ্দ কম থাকা সত্ত্বেও সেচ বিভাগকে প্রায় ২০.৫ টিএমসি জল সরবরাহ করতে হচ্ছে। পিএমসি–র জল সরবরাহ বিভাগ নতুন হার এবং একতরফা শ্রেণিকরণের বিরোধিতা করেছে। তারা যুক্তি দিয়েছিল যে শিল্প এলাকায় সরবরাহ করা জল অত্যধিকভাবে ব্যবহৃত হয়  পানীয় হিসাবে। কাজেই শিল্প হারের ব্যাপক প্রয়োগ অন্যায্য।

প্রতিবেশী শহর পিম্পরি–চিঞ্চওয়াড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (পিসিএমসি)–ও জেলার বাঁধগুলি থেকে জল টেনে নেয়। জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে এই কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয়তাও একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফলস্বরূপ পিসিএমসি তার নাগরিকদের জন্য প্রায় ৭.৮ টিএমসি জল নেয়। যাই হোক, এই বাঁধগুলি শুধু শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির জন্য নয়, বরং যাঁদের ফসলের জন্য জল প্রয়োজন সেই কৃষক সম্প্রদায়ের  চাহিদাও পূরণ করে। তাই শহরগুলিকে তাদের জলকে কৃষির জন্য সুপারিশকৃত বিওডি (জৈবিক অক্সিজেনের চাহিদা) স্তরে শোধন করতে বাধ্য করা হয়েছে, এবং শোধিত জল জেলার কৃষি ব্যবস্থায় সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

শহরগুলি রাজ্যের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু, এবং শুধু তাদের আকারের কারণেই বড় শহরগুলি চাহিদা পূরণ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। একটি অত্যন্ত নগরায়িত জেলায়  উপরে উল্লিখিত দুটি বৃহৎ শহুরে স্থানীয় সংস্থার এলাকায় জেলার জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন, এবং সেই কারণ শহরগুলির জন্য ক্রমশ বেশি করে বাঁধের জলের ব্যবহার অনিবার্য হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ কৃষির অঞ্চল হ্রাস করছে, এবং জেলার সম্পদের উপর বৃহত্তর দাবি রাখছে।

এই বাঁধগুলি শুধু শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির জন্য নয়, বরং যাঁদের ফসলের জন্য জল প্রয়োজন সেই কৃষক সম্প্রদায়ের চাহিদাও পূরণ করে।

শক্তিক্ষেত্রে ছাড়
এমএসইডিসিএল–এর হার সংশোধন উদ্বেগজনক, কারণ বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কাঁধে বিদ্যুৎ বিলের জন্য ২৫০ কোটি ভারতীয় টাকার বার্ষিক বোঝা রয়েছে৷ নতুন ট্যারিফ রেট এই পাওয়ার বিলে আরও ৬০ কোটি টাকা যোগ করবে। রাস্তার আলো, জনসুবিধা ও প্রশাসনিক অফিসগুলির ব্যবহার ছাড়াও পাম্পিং ও জল বিতরণের জন্য উল্লেখযোগ্য খরচ হয়। এমএসইডিসিএল ছাড়ের জন্য পিএমসি–র অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং দাবি করেছে যে শক্তিনিয়ন্ত্রক মহারাষ্ট্র ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (এমইআরসি) এই হারগুলি নির্ধারণ করেছে। পুনের ক্ষেত্রে একটি সান্ত্বনা হল বাঁধ থেকে জল অভিকর্ষের কারণে সরাসরি শহরের ওয়াটারওয়ার্কগুলিতে প্রবাহিত হয়। অনেক শহুরে স্থানীয় সংস্থা এত ভাগ্যবান নয়। তাদের একটি স্টিপ পাম্পিং হেড (প্রবাহের উৎস থেকে উচ্চতা)–এর সঙ্গে লড়াই করতে হয়, যার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক বেশি হয়, এবং তার ফলে বিদ্যুৎ বিল অনেক বেড়ে যায়।

যদিও এমএসইডিসিএল ছাড়ের জন্য কোনও অনুরোধে কর্ণপাত করে না, তবে তারা যখন এমএসইডিসিএল প্রদত্ত সুবিধার জন্য জমি দাবি করে, এবং তার বিছানোর জন্য রাস্তা খননের অধিকার দাবি করে, তখন তারা চায় বেসরকারি নাগরিকের কাছ থেকে নেওয়া হারের একটি ভগ্নাংশ তাদের থেকে নেওয়া হোক। তবে তারা কোনও প্রতিদান দিতে রাজি হয় না। এইভাবে শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলিকেই রাজ্যকে ভর্তুকি দিতে বলা হচ্ছে। এই লেখক একটি পূর্ববর্তী নিবন্ধে বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।

একটি মিউনিসিপ্যাল রেগুলেটর জল ব্যবস্থাপনার তদারকি করতে পারে, এবং এমন মূল্যহার নির্ধারণ করতে পারে যা জল ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত কার্যাদির সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিস্থাপন ও পরিবর্ধনের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ রাজস্বের সংস্থান করবে।

মহারাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরগুলির নিজস্ব জলের উৎস নেই, এবং জলের উৎসের জন্য তারা রাজ্যের উপর নির্ভর করে। যাই হোক মহারাষ্ট্রে ভারতের বৃহত্তম শহুরে জনসংখ্যা রয়েছে, এবং তা আরও বাড়তে চলেছে। যেহেতু রাষ্ট্রীয় নীতি অন্যান্য ব্যবহারের চেয়ে পানীয় জলকে অগ্রাধিকার দেয়, তাই শহরগুলিতে জল সরবরাহ করা হয় তাদের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে জনপ্রতি পানীয় জল সরবরাহের জাতীয় নিয়ম অনুসারে। মহারাষ্ট্রের প্রধানত শহুরে প্রকৃতির কারণে, এবং যেহেতু তা ক্রমেই আরও বেশি শহুরে হয়ে উঠতে থাকবে, এমন একটি ধারণা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যে কিছু নির্দিষ্ট বাঁধ পৌর সংস্থাগুলির কাছে হস্তান্তর করা হবে যেগুলি তাদের প্রয়োজনীয় বার্ষিক জল সরবরাহ করতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপ আধা–রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও পৌর সংস্থাগুলির মধ্যে আমলাতান্ত্রিক বিবাদ প্রতিরোধ করবে, এবং জলাশয়গুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পৌর সংস্থাগুলির কাছে হস্তান্তর করবে। একটি মিউনিসিপ্যাল রেগুলেটর জল ব্যবস্থাপনার তদারকি করতে পারে, এবং এমন মূল্যহার নির্ধারণ করতে পারে যা জল ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত কার্যাদির সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিস্থাপন ও পরিবর্ধনের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ রাজস্বের সংস্থান করবে।

তবে জল খাতে পৌর সংস্থাগুলির অযোগ্যতা কোনওভাবেই গোপন করা যায় না। জল বণ্টন ব্যবস্থার স্থানীয় রাজনীতিকরণ, বছরের পর বছর ধরে জলের মিটার স্থাপনে টালবাহানা, এবং ব্যয় অনুসারে হার নির্ধারণে অনীহা সর্বজনবিদিত। এগুলি ঠিক করা প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত, বড় শহরের রাজনীতি এখন আর স্থানীয় রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। সেখানে রাজ্যের রাজনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ শহরগুলি অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগতভাবে বড় হয়ে উঠেছে। এর ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে যে দুর্বলতা দেখা যায় তার কিছু বৃহত্তর পর্যায়েও দেখা যায়। এই ঘটনাটি স্থানীয় নগর শাসনের জন্য ভাল ইঙ্গিতবাহী নয়।


রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, মুম্বই-এর ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো। তিনি নগরায়ণ — শহুরে স্থিতিশীলতা, নগর শাসন এবং নগর পরিকল্পনা —  নিয়ে কাজ  করেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.