-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ওভাল অফিসে গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমের সামনে ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তেজনাপূর্ণ ঝগড়া ছিল একটি পরিবর্তনের সূচনা, জাগরণের আহ্বান, একটি ধাক্কা এবং কূটনীতির এক শিক্ষাও বটে। জুরিরা ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের অভ্যন্তরীণ রেটিংয়ে জনসাধারণের অভূতপূর্ব সমর্থনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করলেও বাহ্যিক ভাবে তার প্রতিক্রিয়া আরও স্পষ্ট। এর পরপরই ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্সের মিউনিখ সুরক্ষা সম্মেলনের বক্তৃতা এবং প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে তিরস্কার আসলে অন্য দেশগুলিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের কৌশল সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও ট্রান্স-আটলান্টিক নিরাপত্তার জন্য মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তৃত বলয় এবং সাধারণত উদার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমেরিকা তার পুরনো ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিগুলি হ্রাস করছে এবং এমন একটি নীতির উপর ভিত্তি করে নিজেকে পুনঃস্থাপন করছে, যা এখনও পর্যন্ত তার মিত্রদের সঙ্গে পরীক্ষিত নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের মিত্র, অংশীদার এবং বন্ধুদের তরফে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলিকে সুনিশ্চিত করার জন্য কঠোর আর্থিক নীতির পথে হাঁটছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের অধীনে মার্কিন নীতি পরিচালনাকারী অভ্যন্তরীণ প্রবণতাগুলি সম্ভবত অতীতের যে কোনও প্রেসিডেন্টের আমলের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন পূর্বের তুলনায় উত্তরাধিকারসূত্রে শক্তিশালী মার্কিন অর্থনীতির সাক্ষী। তা ছাড়া, ট্রাম্পের মাধ্যমে আমেরিকা সর্বকালের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। এই সব কিছুর সম্মিলিত প্রভাব হল এমন এক নীতি, যেখানে কূটনীতিকে অর্থনৈতিক বন্ধনের মতো বলে মনে হয় এবং ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিটিই অত্যন্ত থুকিডিডীয়: ‘শক্তিশালীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারে এবং দুর্বলরা তার ভোগান্তি সহ্য করতে বাধ্য হয়।’
ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের অধীনে মার্কিন নীতি পরিচালনাকারী অভ্যন্তরীণ প্রবণতাগুলি সম্ভবত অতীতের যে কোনও প্রেসিডেন্টের আমলের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট।
ওয়াশিংটনের দ্রুত নীতিগত পটবদলের সবচেয়ে অন্ধকার ও দীর্ঘতম ছায়া পড়বে ইউরোপ ও ট্রান্স-আটলান্টিক নিরাপত্তার ভবিষ্যতের উপর। যেমনটা আগেও স্পষ্ট ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপে এমন কোনও নিরাপত্তা কাঠামোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে না, যা ওয়াশিংটনকে মস্কোর বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে। প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশে নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির স্পষ্টতই বিরোধী এবং ন্যাটোর অধীনে তার পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলি এখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। নিশ্চিত ভাবেই এ কথা বলা যায় যে, ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি অর্জনের যে কোনও পথে একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক উপাদান সম্পৃক্ত থাকতে পারে। অতএব, ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর বিরুদ্ধে গ্যারান্টি হিসাবে ইউক্রেনের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছে তার আভাস হল, কোনও স্পষ্ট নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়াই একটি খনিজ চুক্তি। স্পষ্টতই, এই পদ্ধতিটি বেশির ভাগ দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে, যেমনটি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেই হয়েছে।
ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা বিপর্যয়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হল, প্রায় সমগ্র ইউরোপীয় ঐকমত্যের সূচনা, যেখানে সম্ভাব্য শূন্যস্থান পূরণের জন্য ও সম্ভাব্য ব্যবধান পূরণের জন্য দেশগুলি সহমত হবে। বেশির ভাগ ইউরোপীয় নেতা ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা তৈরির উদ্দেশ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে মনে হলেও এ বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাতে সঙ্গ দেয়নি। ইউরোপের তিনটি নেতৃস্থানীয় শক্তি অর্থাৎ ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য এবং একটি ব্লক হিসেবে ইইউ… সকলেই ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য অস্তিত্বগত প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের কেবল নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্বই নিতে হবে না, বরং ইউক্রেনের অংশ নিয়ে আলোচনার দায়িত্বও নিতে হতে পারে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দু’টি বৈঠক - একটি ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসে যা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের পরে ফ্রান্সের তরফে আহ্বান করা হয়েছিল এবং দ্বিতীয়টি সম্প্রতি ট্রাম্প, ভ্যান্স এবং জেলেনস্কির মধ্যে ওভাল অফিসে বাগবিতণ্ডার পরে যুক্তরাজ্য দ্বারা আহ্বান করা হয়েছিল - ইউরোপের পথে কাঁটাসম। এই প্রচেষ্টাগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত ভাবে বাস্তবসম্মত হলেও – যে প্রশাসন অন্যরা কী ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে সে সম্পর্কে অনাগ্রহী - ইউরোপীয় নিরাপত্তা শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টা এই দু’টি স্পষ্ট উপলব্ধি দ্বারা প্রভাবিত হবে। প্রথমত, মার্কিন সামরিক শক্তি এবং অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য আকাশ প্রতিরক্ষার মতো মার্কিন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা স্বাধীনতার পথ ইউরোপের জন্য দীর্ঘ এবং এর জন্য কেবল পৃথক দেশগুলির পক্ষ থেকেই নয়, বরং সমগ্র ইইউ-র পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হতে পারে। কেউ কেউ এটিকে নেহাতই কল্পনা বলে মনে করলেও কেউ কেউ আবার এ কথাও মনে করেন যে, ইউরোপের এই বিচ্যুতিবিন্দুর প্রয়োজন ছিল।
ইউরোপের তিনটি নেতৃস্থানীয় শক্তি অর্থাৎ ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য এবং একটি ব্লক হিসেবে ইইউ… সকলেই ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য অস্তিত্বগত প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের কেবল নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্বই নিতে হবে না, বরং ইউক্রেনের অংশ নিয়ে আলোচনার দায়িত্বও নিতে হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতি তার ইউরোপীয় মিত্রদের বাইরেও প্রভাবিত করবে। দেশগুলি কী ভাবে মার্কিন নীতির সঙ্গে সমন্বয়, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্গঠন করবে তা নির্ভর করবে তাদের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চাহিদা এবং ওয়াশিংটনের উপর তাদের নির্ভরতা পুনঃবিবেচনা করার ক্ষমতার উপর। ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং তার প্রধান চ্যালেঞ্জ চিনের উপর নজর রাখছে, তখন এশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথকে অর্থনৈতিক ভাবে আগ্রাসী ট্রাম্প প্রশাসনকে মোকাবিলা করার দায়িত্ব নিতে হবে। এই পরিবর্তন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান কঠোর দর কষাকষির মধ্যেই ভারত এই বছরের শেষের দিকে সময়সীমা-সহ একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য একটি কার্যকর পথ সুনিশ্চিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য উদ্বৃত্তস্বরূপ একটি দেশ হিসেবে বিপদসীমার সঙ্গে সমঝোতা করা ভারতের জন্য আখেরে লাভজনক হতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দি ইকোনমিক টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +