মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের ফলে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ট্রাম্প ২.০-র জমানায় দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তার গতি বজায় রাখবে এবং ওয়াশিংটনের তরফে অস্ত্র বিক্রি প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম পর্যায়ে ওবামা জমানার তুলনায় সামরিক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটানো হয় এবং এমকিউ-৯ আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলস-এর (ইউএভি) মতো সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখাই এই সব কিছু ক্রয় করছে। যদি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম পর্যায়টিকে সূচনাবিন্দু হিসেবে ধরা হয়, তা হলে ট্রাম্প ২.০ জমানায় সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উচ্চতর পর্যায়ের জন্য চেষ্টা চালানো হবে এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক শুধু মাত্র লেনদেনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারত ৭২৪০০টি সিগ সয়্যার অ্যাসল্ট রাইফেল, এএইচ-৬৪ই অ্যাপাশে অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং এমএইচ-৬০ রোমিও সিহক হেলিকপ্টার ক্রয় করেছিল।
প্রসঙ্গ চিন
বেজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কৌশলগত প্রতিযোগিতার উপর ট্রাম্পের মনোযোগ নয়াদিল্লির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে তাঁর মনোভাবকে চালিত করবে, যা ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের সঞ্চারপথকে কেন্দ্রীয় ভাবে আকার দেবে। ইন্দো-প্যাসিফিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ের জন্য উদ্যোগমূলক কার্যকারিতার কেন্দ্রীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে থাকবে। এটি দুই অংশীদারের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে চালিত করবে। কারণ দুই দেশই একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং স্থিতিস্থাপক অঞ্চল গড়ে তুলতে আগ্রহী।
বেজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কৌশলগত প্রতিযোগিতার উপর ট্রাম্পের মনোযোগ নয়াদিল্লির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে তাঁর মনোভাবকে চালিত করবে, যা ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের সঞ্চারপথকে কেন্দ্রীয় ভাবে আকার দেবে।
বাইডেন প্রশাসনের সময় চালু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি (আইসিইটি) সম্পর্কিত মার্কিন-ভারত উদ্যোগটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও বাস্তবায়িত ও সশক্ত হবে। উদীয়মান প্রযুক্তিতে সহযোগিতার সম্প্রসারণ ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি শক্তিশালী উদ্যোগের সাক্ষী থাকবে। সর্বোপরি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান নিয়ে গঠিত কোয়াড অংশীদারিত্বও বিদ্যমান উদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করবে এবং নতুন উদ্যোগের সূচনা করবে। গোষ্ঠীটি যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা এবং গোয়েন্দা ও লজিস্টিকসের মতো ক্ষেত্রে গুরুতর সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালাবে।
ট্রাম্প ১.০ জমানার নেতিবাচক দিকগুলি
তা সত্ত্বেও কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যাবে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে ভারতের মতো দেশগুলির কাছে সামরিক বিক্রয় বৃদ্ধির চেষ্টা চালানো হয়েছিল, যার জন্য প্রত্যক্ষ বাণিজ্যিক বিক্রয়-এর (ডিসিএস) মাধ্যমে কংগ্রেসনাল এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের প্রয়োজন। এই ডিসিএস ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রতিরক্ষা বিক্রয় কৌশল সত্ত্বেও ভারতের মতো ক্রেতা দেশগুলির উপর বাজেটের বোঝা চাপিয়ে দেয়, যে দেশগুলি আসলে ডিসিএস দ্বারা সৃষ্ট চাপগুলিকে কাটিয়ে উঠতে মরিয়া।
এই ধরনের পদ্ধতি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ এবং মোদী সরকারের আত্মনির্ভর ভারত (এএনবি) উদ্যোগের নিরিখে প্রতিকূল হতে পারে।
ভারত প্রযুক্তি হস্তান্তরের দাবি জানাবে
ফলস্বরূপ, ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও চাপের মুখে পড়তে পারে। ভারত দাবি করে এবং জোর দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি অতিরিক্ত বিক্রয় চুক্তি সুরক্ষিত করতে চায়, তা হলে সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আরও দায়বদ্ধ হতে হবে।
তেজস এমকে-১এ-র জন্য জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এক-৪০৪ আইএন ইঞ্জিন সরবরাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী সরবরাহ সমস্যাগুলির অবিলম্বে সমাধান করা দরকার।
নয়াদিল্লি দাবি করতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আরও বৃহত্তর ও কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা জরুরি এবং ভারত চাইবে যাতে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের উৎপাদনকারী ভারতের মাটিতে নির্মাণ এবং উত্পাদনের কারখানা চালু করে। তেজস এমকে-১এ-র জন্য জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এক-৪০৪ আইএন ইঞ্জিন সরবরাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী সরবরাহ সমস্যাগুলির অবিলম্বে সমাধান করা দরকার।
ট্রাম্প ২.০ প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য একটি সুযোগও বটে
সন্ত্রাস দমনের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে ট্রাম্প ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতির ঘোষণা করেছেন যা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে, বিশেষ করে রাওয়ালপিন্ডি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে, তা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নির্ণায়ক হবে। এই সকল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় প্রশাসনে এক উত্তরাধিকার সুনিশ্চিত করতে চাইবেন, যা ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মানিকন্ট্রোল-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.