Author : Harsh V. Pant

Published on Nov 07, 2024 Updated 0 Hours ago

ট্রাম্পের নির্বাচন মার্কিন নীতিকে অন্তর্মুখী করে তুলবে, যা বিশ্বব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে

ট্রাম্প ২.০: অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততায় বদল আসতে চলেছে

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রতিযোগিতা প্রত্যাশামাফিক হাড্ডাহাড্ডি হল না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনের তুলনায় অনেক ভাল ফল করলেন এবং কমলা হ্যারিস ২০২০ সালের জো বাইডেনের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেন না। এটি ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফার জন্য হোয়াইট হাউসে জায়গা করে দিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তখনই শেষ হয়ে গিয়েছিল, যখন ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্টেট জর্জিয়ার দখল নেন, যেখানে তিনি চার বছর আগে খুব সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। এর পরে যখন তিনি নর্থ ক্যারোলিনাতেও বিজয়ী হন, তখন কমলা হ্যারিসের বিজয়ের সম্ভাব্য পথগুলি হারিয়ে যায়। হ্যারিস পেনসিলভ্যানিয়া, অ্যারিজোনা, মিশিগান, উইসকনসিন এবং নেভাদা-র মতো কোনও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জায়গাতেই জয়লাভ করতে পারেননি, যা তাঁসাফল্যের জন্য অপরিহার্য ছিল। ২০১৬ সালের বিজয়ের বিপরীতে ট্রাম্প এ বার জনমত অর্জনে পপুলার বা জনপ্রিয় ভোট পেতে সমর্থ হয়েছেন। ফলে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম বারের জন্য কোনও রিপাবলিকান এমনটা করতে সমর্থ হলেন। এটিকে একটি ‘অসাধারণ বিজয় ঘোষণা করে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বিজয়ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন যে, আমেরিকা আমাদের একটি অভূতপূর্ব এবং শক্তিশালী জনমত দিয়েছে।

অপমানের লাঞ্ছনা নিয়ে ওয়াশিংটন ছাড়ার চার বছর পর এটি ট্রাম্পের জন্য একটি অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন। অপসারণের পরে হোয়াইট হাউসে পুনরায় ফেরত আসার নিরিখে ১৮৯২ সালে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পরে একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প ইতিহাস গড়েছেন। এমন এক নেতার জন্য যিনি চারটি পৃথক বিচারাধীন বিষয়ে অভিযুক্তনিউ ইয়র্ক সিটিতে ৩৪টি গুরুতর অপরাধের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁর প্রথম মেয়াদে দুবার নিন্দিত হয়েছে এবং ৪০%-এর কম উপযোগী রেটিং পেয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেছেন… এ হেন ট্রাম্পের জন্য এই জয় এক অবিশ্বাস্য সাফল্য।

উভয় পক্ষের বাগাড়ম্বর প্রায়ই প্রচারাভিযানে নিম্ন রুচির পরিচয় দিয়েছে এবং আমেরিকার রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রায়শই স্থায়ী হয়ে উঠেছে।

এটি এক অনন্য নির্বাচনও বটে, যেখানে এক জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুটি হত্যার চেষ্টা এবং একটি ফৌজদারি বিচার চলছে এবং অন্য দিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে শেষ মুহূর্তে বাইডেনের পরিবর্তে হ্যারিসকে তুলে ধরা হয়েছে। উভয় পক্ষের বাগাড়ম্বর প্রায়ই প্রচারাভিযানে নিম্ন রুচির পরিচয় দিয়েছে এবং আমেরিকার রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রায়শই স্থায়ী হয়ে উঠেছে।

তবুও ডেমোক্র্যাটদের এক বিপর্যয়কর ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে রিপাবলিকানরা মার্কিন সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস) নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছেযদিও একাধিক পদ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। এর অর্থ হল, ট্রাম্পের কর্মসূচি আইনসভায় বিশেষ প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে না। ট্রাম্পের বিজয়ের একটি প্রসারিত ভিত্তি রয়েছে এবং সেনেট ও হাউসে বেশ কিছু রিপাবলিকান তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থাকতে চান। তিনি আরও এক বার তাঁর নিজের ভাবমূর্তি অনুযায়ী রিপাবলিকান পার্টিকে আকার দিতে সমর্থ হয়েছেন।

এই নির্বাচনের ব্যাপক গুরুত্বের কথা দর্শিয়ে উভয় পক্ষই তাঁদের ভোটার ভিত্তি সশক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন, যার ফলে ২০২৪ সালে ভোটদানের পরিমাণ আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে সর্বোচ্চ থেকেছে।

কিন্তু হ্যারিস মহিলাদের তরফে যে ব্যাপক সমর্থন পাবেন বলে আশা করা হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। এক্সিট পোলের তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মহিলারা কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করলেও তিনি ২০২০ সালে জো বাইডেন দ্বারা প্রাপ্ত ৫৭% ভোট পাননি।

আশ্চর্যজনক ভাবে, মার্কিন ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ আফ্রিকান-আমেরিকান, লাতিনো এবং এশীয় গোষ্ঠীগুলি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে এবং ট্রাম্পের ককেশীয় সমর্থন সামান্য হ্রাস পেলেও এমনটা ঘটেছে। ই ফলাফল মার্কিন মতদাতাদের পছন্দ সম্পর্কে প্রথাগত প্রজ্ঞার অবসান ঘটিয়েছে এবং মার্কিন রাজনীতি এক নতুন জনতাত্ত্বিক বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে।

রিপাবলিকান পার্টি ব্লু-কলার (শ্রমজীবী মানুষ) ও নিম্ন-উপার্জনক্ষম মতদাতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে এবং ডেমোক্র্যাটরা কলেজ-শিক্ষিত যুবপ্রজন্ম উচ্চ উপার্জনক্ষম গোষ্ঠীর উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা দর্শিয়েছে।

দেশটির রাজনৈতিক পটভূমিতে সাম্প্রতিক বছরে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে এবং এর কারণ হল উভয় রাজনৈতিক দলেরই জনতাত্ত্বিক সমর্থন ভিত্তিতে পরিবর্তন। রিপাবলিকান পার্টি ব্লু-কলার (শ্রমজীবী মানুষ) ও নিম্ন-উপার্জনক্ষম মতদাতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে এবং ডেমোক্র্যাটরা কলেজ-শিক্ষিত যুবপ্রজন্ম উচ্চ উপার্জনক্ষম গোষ্ঠীর উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা দর্শিয়েছে। এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদেরও ডেমোক্র্যাটদের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে।

এই নির্বাচন এ কথা মনে করিয়ে দেয় যে, ডেমোক্র্যাটরা বিপুল সংখ্যক মার্কিন ভোটারদেসঙ্গে সংযোগ হারিয়েছেন এবং তাঁদের কাছে নিজেদের ভোটার ভিত্তি প্রসারিত করার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে মনে হচ্ছে। তাঁরা সম্ভবত হলিউড তারকাদের একটি দল হয়ে উঠেছেন, যাঁদের সঙ্গে মার্কিন খাসতালুকের কোনও যোগাযোগ নেই বললেই চলে!

অন্য দিকে ট্রাম্পের প্রচার হ্যারিসকে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের চোরাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে সমর্থ হয়েছে। এই ক্ষোভের নেপথ্যে থেকেছে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন বৃদ্ধি এবং বিদেশে অস্থিতিশীলতা। বাইডেনের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হ্যারিস সফল হননি।

হ্যারিস এবং ট্রাম্প অভিবাসন, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক সমস্যা এবং বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং মার্কিন ভোটাররা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। ক্ষমতায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ভাবে মার্কিন সম্পৃক্ততা এক নাটকীয় পুনঃঅভিমুখীকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এই বাস্তবতা এক্সিট পোলে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে যে, ইউক্রেন গাজায় বিদ্যমান যুদ্ধের পাশাপাশি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও উত্তরদাতাদের মাত্র ৪% দেশের বিদেশনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেনঅন্তর্মুখী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন আমেরিকার প্রভাব গোটা বিশ্বব্যবস্থার উপর পড়বে।

ক্ষমতায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ভাবে মার্কিন সম্পৃক্ততা এক নাটকীয় পুনঃঅভিমুখীকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির নিরিখে অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভারত যথেষ্ট ভাল অবস্থানে থাকলেও নয়াদিল্লিকে মার্কিন কৌশলগত অগ্রাধিকারের এই পরিবর্তনের জটিলতাগুলির মাঝে সাবধানতার সঙ্গে নিজের পথ খুঁজে নিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব ভারতের সমসাময়িক বিদেশনীতি আঙ্গিকে একটি ভিত্তিপ্রস্তরসমমার্কিন রাজনৈতিক পটভূমির বিবর্তিত বাস্তবতার সঙ্গে ভারতকে অভিযোজিত হতে হবে।

২০১৬ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আরও বড় ব্যবধানে জয়ের মাধ্যমে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন দর্শিয়েছে যে, তাঁর পূর্ববর্তী বিজয়গুলি কোন কাকতালীয় জয় ছিল না এবং এই বিজয় অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে মার্কিন সম্পৃক্ততায় ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +